মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা সাত লাখ টাকা ! ............
লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৫৩:০৭ সন্ধ্যা
জনশক্তি ব্যবসার নামে উচ্চ মূল্যের ভিসা বিক্রির বিরুদ্ধে সরকারের সর্বাত্মক কঠোর অবস্থানের পরও থামানো যাচ্ছে না ভিসা বাণিজ্য। চলছে উচ্চ মূল্যে রিক্রুটিং এজেন্সির ভিসা বিক্রি। প্রায়ই অভিযোগ আসছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোতে। আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু তারপরও থামানো যাচ্ছে না এই ধরনের প্রতারণা। আবার অনেক ক্ষেত্রে সাত-আট লাখ টাকা দিয়ে ভিসা কিনেও তা স্বীকার করছেন না বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা। কিন্তু ঠিকই নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা এই ভিসাগুলো নিয়ে বিদেশ গিয়ে হচ্ছেন প্রতারিত। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া একটি অভিযোগ অনুসারে, ঢাকার বনানী আল বারাকা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদি আরবের ৪৩টি ভিসার প্রতিটি সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। সৌদি আরবের আল-কুদস এর ‘লিডিং রিয়াদ ট্রেডিং ও কনট্রাক্টিং’ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে এই ভিসাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই ভিসাগুলোর মাধ্যমে ৪৩ ব্যক্তি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকা ত্যাগ করেছেন। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ভিসাপ্রাপ্তদের নাম ঠিকানার তালিকাও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, এক্ষেত্রে নিয়োগানুমতি ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি আয়কর এবং ওয়েজ আর্নার ট্যাক্স। আরেকটি অভিযোগে বলা হয়েছে, আল-বারাকা ইন্টারন্যাশনাল ও রাজীব ওভারসিস সৌদি আরবের সেদার গ্র“প থেকে আরও ৪০০টি ভিসা সংগ্রহ করেছে। যার প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
এগুলোর স্ট্যাম্পিং প্রক্রিয়াধীন আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানালেন, সাধারণত এই ধরনের অভিযোগ একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে করে থাকে। এক এজেন্সি আরেক এজেন্সির দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা যৌথ কারবারে বনিবনা না হলেই মন্ত্রণালয় বা বিএমইটিতে এ ধরনের অভিযোগ আসে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোনো ধরনের অনুমোদন বাকি থাকলে বা জাল করা হলে তখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভিসা বিক্রির অভিযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণ করা যায় না। এ ধরনের তথ্যের সত্যতাও পাওয়া গেল। কথা হলো সাত লাখ টাকায় ভিসা সংগ্রহ করা মো. লানজো মিয়ার বড় ভাই মঞ্জু মিয়ার সঙ্গে।
মঞ্জু এ প্রতিবেদককে বললেন, ‘আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া ছোট ভাইকে বিদেশ পাঠাতে পেরেছি। ভিসা ও অন্যান্যসহ প্রায় আট লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। টাকা বেশি লেগেছে। কিন্তু তাতে কী। ছোট ভাই যেতে পেরেছে এটাই বেশি।’ মঞ্জুর কাছে প্রশ্ন ছিল, এত বেশি টাকা নেওয়া তো প্রতারণা। আপনি তো চাইলে অভিযোগও করতে পারেন। জবাবে মঞ্জু তাৎক্ষণিক উল্টো সুরে বললেন, ‘কিসের অভিযোগ। ছোট ভাই সরকারি সব লোককে বলেছে, নির্ধারিত ফি’র একটুও বেশি লাগে নাই। শুধু খুশি এজেন্সিকে যা দিয়েছি তাই নিয়েছে।’ জানা যায়, উচ্চ মূল্যে ভিসা সংগ্রহ করে বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হওয়া বন্ধ করতে বর্তমান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকারমোশাররফ হোসেন দৃঢ় অবস্থান নেন।
কারণ বেশি টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করেও অনেকে নির্ধারিত পাঁচ বছরে খরচের টাকাই তুলতে পারেন না। তখন তারা দেশে না ফিরে অবৈধভাবে সেসব দেশে অবস্থান করেন। আবার যে কাজ ও বেতনের কথা বলে পাঠানো হয় তা না দেওয়ার ঘটনা তো আছেই। এসব বন্ধ করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর ‘জিটুজি’ একটি পদ্ধতি কয়েকটি ক্ষেত্রে চালু হয়। এখন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ ও কয়েকটি দেশে নারী শ্রমিক প্রেরণ করা হচ্ছে এ পদ্ধতিতে। যার সুফল ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। মাত্র ৩৮ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া যেতে পেরেছেন শ্রমিকরা।
কিন্তু মালয়েশিয়ায় এই জিটুজি পদ্ধতিতে ব্যর্থ করতেও ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের দালালচক্রের কোটি টাকা ব্যয় করার অভিযোগও আছে।মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে ভিসা প্রতারণা এখন বন্ধ হলেও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য সব দেশের ক্ষেত্রেই এজেন্সিগুলো আগের মতোই উচ্চমূল্যে ভিসা বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
৯০৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন