খালেদার ঈদ: একাল সেকাল…

লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ০৩ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৫৭:৪১ দুপুর



ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আরেকটি ঈদ কাটলো অনেকের মাঝে একা হয়ে, বিষন্নতায়। এবারও তিনি ছিলেন পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যবঞ্চিত। প্রতি ঈদের মতো এবারও তার কষ্ট দেখে নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন কাছের নেতা-নেত্রীরা।

আলাপে তারা বলছিলেন, দুই সন্তান- তারেক রহমান (বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) ও আরাফাত রহমান কোকাকে ছাড়া খালেদার ঈদ গত কয়েক বছর ধরেই বেশ কষ্টের। শারীরিক অসুস্থতার চেয়েও তাকে মানসিক কষ্ট বেশি ঘায়েল করে এমন সময়গুলোতে।

সূত্র জানায়, তারেক লন্ডনে ঘরোয়াভাবে ঈদ কাটিয়েছেন। স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান, কন্যা জাইমা রহমানসহ কাছের কয়েকজনকে নিয়ে দিনটি কেটেছে তার।

অন্যদিকে, কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন কোকো। সেখানেই মন্ত্রিপাড়ার বাসায় স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে ঈদ কাটিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

বড় ভাই তারেক সম্প্রতি ওমরাহ পালনের সুযোগে মায়ের সান্নিধ্য পেলেও সেই সৌভাগ্য হয়নি কোকোর।

মালয়েশিয়ায় কোকোর খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখেন এমন একজন বাংলানিউজকে জানান, মা-ভাইয়ের ওমরাহকালীন সময়টিতে অস্থির ছিলেন কোকো, কেঁদেছেনও তিনি। কষ্টের কথা বলছিলেন স্ত্রীকে। এক নজর মাকে দেখতে চাইছিলেন ছোট ছেলে।

ভিন্ন সূত্র জানায়, ঈদের আগে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও তারেক খুব বিষন্ন ছিলেন ঈদের দিনটিতে। কোকোর মতো তিনিও কেঁদেছেন।

খালেদা, তারেক, কোকো- প্রত্যেকেই কাছের মানুষদের সঙ্গে পুরোনো দিনের ঈদের স্মৃতিচারণ করেছেন।

জিয়া পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং বিএনপির সিনিয়র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, মা-ছেলে তিনজনই কিছুটা চাপা স্বভাবের। নিজে থেকে কিছু বলতে চান না। আমরা একটু কাছের বলে প্রসঙ্গ তুলি। তখন টুকটাক নিজেদের অনুভূতির কথা বলেন।

সেকালের ঈদ: জনতার সঙ্গে, পাশে দুই ছেলে তারেক-কোকো ছাড়াও প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন

এই নেতা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই তিনজন আলাদা ঈদ করছেন। বছরের দুইটা ঈদই তাদের খুব মন খারাপ করে কাটে।

তিনি বলেন, দুই ছেলে কষ্ট পান মায়ের একাকিত্বের কথা ভেবে। কারণ, তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঈদ কাটাচ্ছেন। কিন্তু মা খালেদার জীবন এখন অন্যরকম। কাজ ও দায়িত্বের অংশীদাররাই তার আশেপাশে রয়েছেন। আর সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের মানুষ খালেদা নন।

খালেদার খুব কাছে যাওয়া নেতাদের মধ্যে একজন হলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা। তিনি বাংলানিউজকে এ প্রসঙ্গেই একবার বলেছিলেন, ঈদের দিনে হাসির আড়ালেই থাকে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) কান্না।

শিরীন বলেন, আমরা তাকে চিনি, তাই তার কান্নাও বুঝি। যে মা তার ছেলেদের কাছে পান না, তার ঈদ কেমন কাটে বলাই বাহুল্য। তবু তিনি দেশবাসীকেই নিজের পরিবারের সদস্য মেনে খুশি থাকার চেষ্টা করেন।

শুক্রবার ফেসবুকে নিজের ওয়ালে খালেদা জিয়ার পুরোনো কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন শিরিন। এর মধ্যে একটি ছবি সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

এতে দেখা যায়, খালেদা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মাটিতে বসে মাটির সানকিতে খাবার খাচ্ছেন। তার পাশে মাথায় টুপি পরে বসে আছেন ছেলে তারেক রহমান। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বসেছেন খালেদার কোল ঘেঁষে। পেছনে রয়েছেন বিএনপির সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।

জানতে চাইলে শিরীন বাংলানিউজকে বলেন, এটা নব্বইয়ের আন্দোলনের আগের একটি ঈদের ছবি। ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তার বাইরে আরও কয়েকজন হাই-প্রোফাইল নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ছবিটিতে খালেদা জিয়াকে এমনভাবে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে। নানাজন নানা মন্তব্য করছেন।

এ ছবির বিপরীতে গত মঙ্গলবারের সর্বশেষ ঈদ-উল ফিতরের চিত্র একদমই আলাদা। কয়েক বছর ধরে খালেদা জিয়ার ঈদের দিনটি একই রকম কাটছে। তিনি সকালে নির্ধারিত স্থানে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এবার তার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

সকাল ১১টা থেকে অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরিতে আসেন খালেদা। কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বটাই এগিয়ে আনা হয় তাই। কিন্তু পায়ের চিকিৎসা চলছে বলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না তিনি।

এক পর্যায়ে খালেদা তার নির্দিষ্ট আসনে বসেন। নেতাকর্মী, জোটের শরিক দলের নেতা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন তিনি।

একালের ঈদ: বর্ণাঢ্য আয়োজনে নেতাকর্মী ও অতিথিবেষ্টিত থাকলেও দুই ছেলে ও পরিবারের সান্নিধ্য বঞ্চিত

কিন্তু কোনো কোনো নেতাকর্মীর অতিরিক্ত আবেগে বিভিন্ন সময় তাকে বিব্রতও হতে হয়েছে। সবাই নিজ আবেগ দেখানোয় ব্যস্ত ছিলেন।

অনেকেই ধাক্কাধাক্কি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছিলেন। কেউ কেউ বারবার স্টেজে উঠে আসছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। একজনকে দেখা গেল, খালেদা জিয়ার হাতে লাল গোলাপের কলি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

একজন দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে খালেদার ছবি তোলায় সময় নিচ্ছিলেন অনেকখানি। অনেকেই টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়তে নানা ফন্দি-ফিকির করছিলেন।

সিএসএফ(চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স) বারবার এসব বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে হস্তক্ষেপ করছিলেন। কিন্তু কাজ হচ্ছিল না খুব একটা।

খালেদারও দৃষ্টি এড়ায়নি বিষয়টি। এক সময় তিনিই পাশে দাঁড়ানো দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দিকে তাকিয়ে বলেন, কেউ কেউ বার বার আসছে। অন্যরা কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে?

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দলের সিনিয়র এক নেতা উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, নেতাকর্মীদের আবেগ ম্যাডাম বোঝেন। তিনি সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ পেতে চান। তবে নেতাকর্মীদেরও উচিত, কাণ্ডজ্ঞান বজায় রেখে চলা।

তার কথা শেষ না হতেই দেখা গেল, চোখে রোদচশমা পরা এক ভদ্রলোক শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সারিতে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাকে কিছুতেই সরানো যাচ্ছিল না। এতে উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যরা হাসির রোল তোলেন। কিন্তু সেই ব্যক্তির তাতে ভ্রু-ক্ষেপ দেখা গেল না।

ঈদের তৃতীয় দিন গল্পচ্ছলে অপর সিনিয়র নেতার কাছ থেকে পাওয়া গেছে খালেদার অতীতের ঈদের স্মৃতি। তিনি বলেন, এই খালেদা জিয়ার ঈদ এতোটা ফর্মাল ছিল না। নিজের হাতে ছেলেদের জন্য রান্না করতেন তিনি ঈদে। অতিথি আপ্যায়নও করতেন।

ব্যস্ততা ও বয়স একই সঙ্গে যখন বেড়ে গেল, তখনও নিজে থেকে সবার খোঁজ নিতেন তিনি- বলেন এই নেতা।

তিনি বলেন, স্বামী জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে খালেদা জিয়ার ঈদ, স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলেদের নিয়ে ঈদ, আর ছেলেদের সান্নিধ্যবঞ্চিত হয়ে বর্তমানের ঈদের চিত্রের মধ্যে যোজন যোজন ফারাক। এক খালেদাই জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই দেখলেন। ঈদের দিনটিতে সেটাই ভাবি মনে মনে। আর কষ্ট হয় তার জন্য।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250392
০৩ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:০০
হতভাগা লিখেছেন : বলা যায় না , সামনের ঈদ হয়ত কাশিমপুরে কাটাতে হতে পারে।
250410
০৩ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৪
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : সামনের ঈদ আরো কঠিন হতে পারে।
250412
০৩ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৪১
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : এটাই পৃথিবীর নিয়ম, আজ ফকির তো কাল...
250435
০৩ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৪২
আমি মুসাফির লিখেছেন : যারা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন তারা অন্তত কোন মানবিকতা সম্পন্ন কোন মানুষ হতে পারে না।
রাজণীতি মানে এই নয় যে তার সাথে পারছি না বলে তাকে ঘর ছাড়া করতে হবে।
আমাদের দেশে একমাত্র আওয়ামীরাই এই নিকৃষ্ট সংস্কৃতি সমাজে ও রাষ্ট্রে চালু করেছে।
250447
০৩ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:১০

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 9368

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> আমি মেঘ হবো লিখেছেন : হতভাগা লিখেছেন : বলা যায় না , সামনের ঈদ হয়ত কাশিমপুরে কাটাতে হতে পারে।

Happy) Happy) Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor একদম কারেক্ট। লুটপাটের টাকা দিয়ে এরকম করাই যায়।
250506
০৩ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩০
শেখের পোলা লিখেছেন : এমন বহু মা ই পুত্রকন্যা বঞ্চিত আবার এমন বহু বাপও আবার কয়েক লক্ষ্য যুবকও সব বঞ্চিত হয়ে ঈদের দিনটি কাটান৷ তাদের কষ্ট হিসাবে আসেনা৷ কারণ তারা বড়ই অখ্যাত৷ সবার জন্য সমবেদনা থাকলো৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File