ছেলের নির্মমতার শিকার এক মা.....................

লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ০৩ আগস্ট, ২০১৪, ১২:০৬:১১ রাত

গোঁড়ালি থেকে বাম পা কাটা পড়েছে। বাম হাতের কব্জির হাড় ভাঙা। ডান কাঁধে আঘাতের চিহ্ন। দুই হাতেই ব্যান্ডেজ করা। অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন আমেনা বেগম। বেডের পাশে বাকরুদ্ধ অবস্থায় তার স্বামী আবুল কাসেমের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গেলে এ চিত্র দেখা যায়। সোমবার ঈদের দিন সকালে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানাধীন অর্জুনা ইউনিয়নের চররামাইল গ্রামে পারিবারিক কলহে আমেনা বেগমের সৎ ছেলে লোকমান হোসেন রামদা দিয়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এরপর জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসকরা তার বাম পা কেটে ফেলেন। তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। পাষণ্ড ছেলে লোকমানকে আটক করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। এ বিষয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আহতের স্বামী কৃষক আবুল কাসেম জানান, তার আগের স্ত্রীর সন্তান লোকমান হোসেন। ওই স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি আমেনা বেগমকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তাদের সংসারে আর কোন সন্তান হয়নি। আমেনা বেগমের আগে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। ওই পরিবারের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। ওই মেয়েকে তিনি লালনপালন করেন। আর আগের স্ত্রী সুখী বেগমের সন্তানরা তার কাছে থাকে না। পাশের গ্রামে তাদেরকে আলাদাভাবে বাড়ি করে দিয়েছেন। কেউ আবার ঢাকায় গামের্ন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে।

আবুল কাসেম আরও বলেন, তার ছোট ছেলে লোকমান পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। ঢাকার আশুলিয়ায় একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ করে। নেশার টাকা না পেলে লোকমান তার সৎ মাকে প্রায় মারধর করত। ঈদ উপলক্ষে লোকমান গ্রামের বাড়িতে যায়। ঈদের দিন সকালবেলায় তার স্ত্রী আমেনা বেগম রান্না ঘরে লাচ্চা ও পিঠা তৈরি করছিলেন। এসময় লোকমান তার সৎ মার কাছে টাকা চায়। তখন তার স্ত্রী তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে রান্না ঘরে থাকা রামদা দিয়ে পায়ে ও দুই হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আমেনা বেগমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমেনা বেগমের বাম পা কেটে ফেলে দিয়েছেন। বাম হাতের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আবুল কাসেম বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। জীবিকার তাগিদে এখনও কৃষি কাজ করি। চার ছেলে ও তিন মেয়ে থাকা সত্ত্বেও কেউ আমাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে না। এতে আমার অভাব-অনটন লেগেই থাকে। আমার স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন অনেক টাকার দরকার।

ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসী লোকমানকে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছে। আইনের মাধ্যমে যে বিচার হবে তা আমরা মেনে নেবো। যোগাযোগ করা হলে ভুঞাপুর থানার ওসি হারেশ আলী জানান, ‘সৎ মাকে কোপানোর ঘটনায় পাষণ্ড ছেলে লোকমানকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আহতের স্বামী আবুল কাসেম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। লোকমানকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

৮৯০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250314
০৩ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:৪৬
সত্যলিখন লিখেছেন :
250348
০৩ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ও্ইটাকে ঐ রামদা দিয়ে কুপাতাম সেখানে উপস্তিত থাকলে
250360
০৩ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আতিরিক্ত স্নেহের নামে সন্তানকে বেশি সুযোগ দিলে এই ধররে ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। অনেক মানসিক অসুস্থ এবং মাদকাসক্ত সন্তান কে স্রেফ স্নেগ প্রদর্শন করতে গিয়ে চিকিৎসা করান না বা বাধা দেননা অনেক পিতামাতা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File