একদিকে প্রসব বেদনা অন্যদিকে মৃত্যু ভয়
লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ২২ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৫৯:৫৩ সন্ধ্যা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভয়ংকর শারীরিক-মানসিক আর বিভীষিকাময় পরিবেশের মধ্যে দিন কাটছে গাজার অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। সন্তান গর্ভে নিয়েই ইসরাইলি বোমার আঘাতে মৃত্যুর কোলে আছড়ে পড়ছেন অনেকেই। গর্ভবতীদের যখন একটু আশ্রয় দরকার তখন তাদের ঘর ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। যখন বিশ্রামে থাকার কথা, তখন তিনি ছুটছেন নিরাপদ স্থানের খোঁজে। সুষম খাদ্য দূরে থাক, বেঁচে থাকার খাবারটুকুও জুটছে না এসব হতভাগ্য নারীদের। নতুন জীবনের স্বপ্নের বদলে মৃত্যু ভয়ে টলমল করে চোখ। হামাস সন্দেহে চার পরিবারকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেছিল ইসরাইল সৈন্যরা। ৩৩ বছর বয়সী একজন গর্ভবতী বের হতে পারেননি। গর্ভের সন্তানসহ বিধ্বস্ত হয়ে গেলেন ইসরাইলি বোমায়। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় নিহতদের প্রতি পাঁচজনে একজন শিশু। সবচেয়ে কমবয়সী শিশু হচ্ছে পৃথিবীর আলো-বাতাস না দেখা ৯ মাস বয়সী গর্ভের ভ্রুণ। কেয়ার জরুরি চিকিৎসা দলের থিও আলেক্সপোলস বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ঘরে থাকতে পারছে না। তারা বাড়ির তুলনায় হাসপাতালকে নিরাপদ মনে করছে। কিন্তু তারা তো বেশিদিন হাসপাতালে থাকতে পারছে না। এখন তারা কোথায় যাবে? গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই।
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন মেনা আলিসা। সেখানেও বিমান হামলা করে ইসরাইল। আলিসা বলেন, ‘বিমান হামলার পরপরই আমার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। আমি আমার পেট চেপে ধরে বসে পড়ি। দুই পায়ের মাঝখানে রক্ত যেন ভেঙে বেরিয়ে আসছে। আমাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য ওরা অনেক ছোটাছুটি করে। কিন্তু কোনো গাড়ি পাওয়া যায়নি। কী ভয়ংকর বিপজ্জনক পরিস্থিতি! তিন ঘণ্টা পর আমাকে পাশের শরণার্থী হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু ওখানের কেউ সন্তান ডেলিভারিতে দক্ষ নয়।’
নবজাতককে জড়িয়ে ধরে আলিসা বলেন, ‘আমি খুবই আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম। যুদ্ধ করে সন্তান জন্ম দিয়েছি।’ আলিসা বর্তমানে নুসিরাতে শরণার্থী শিবির থেকে ২০ মিনিট দূরত্বে আল শিফা হাসপাতালে আছেন।
নুসিরাত ক্যাম্পের আরেকজন রিমা আল হাওয়াইতি (২১)। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দে আমি পড়ে যাই। আমার খুব ব্যথা শুরু হয়।’ নার্সরা বললেন, সময়ের আগেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
৯ মাসের গর্ভবতী আসমা জানালেন, ‘আমি সন্তানের কথা ভেবে খুব ভয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম ও মারা যাবে। বিস্ফোরণের শব্দে আমার মনে হচ্ছিল, দুই কান বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।’ আসমা একটি স্বাস্থ্যবান ছেলের জন্ম দিয়েছেন। নাম রেখেছেন মহসিন। বুরিজ ক্যাম্পের সেলোফা দিয়াবেলা (৩১) বলেন, ‘আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কয়েক ঘণ্টা আগে ওরা আমাদের ঘরে বোমা মেরেছে। বর্তমানে আমি এখানে আছি। আমি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। গর্ভের সন্তান নিয়ে আমি শংকিত। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতো কোনো উপায় নেই।’ গাজায় এমন নারীর সংখ্যা অসংখ্য। যাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে বাঁচা-মরার দো-টানায়।
বিষয়: বিবিধ
৮৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন