ছেলে মারে, বলতেও লজ্জা পাই....

লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ১৯ জুলাই, ২০১৪, ১০:২৫:৩১ রাত

আমার বড় ছেলে আমাকে কিল-ঘুষি, চড় মারে। এমনকি ঈদের দিনও সে আমাকে লাথি মেরেছে। ছেলে ও ছেলের বউ শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন করছে, যাতে আমি বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যাই। ছেলে মারে, বলতেও লজ্জা পাই।’

কথাগুলো বলছিলেন নাসরীন আক্তার চৌধুরী। গত ২৩ জুন তিনি ঢাকার ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগেও এসব কথা বলেন।

শুধু তা-ই নয়, এর আগে এই মা ভাটারা থানায় একাধিকবার ছেলে তাঁকে মারধর করছে ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে জানিয়ে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। গত ২৩ মে তিনি শেষ জিডি করেন।

এই মায়ের অপরাধ, তাঁর নামে আড়াই কাঠা জায়গার ওপর একটি দোতলা বাড়ি আছে। রাজধানীর বারিধারার কাছে এ সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। অসুস্থতার জন্য জীবন বীমা করপোরেশনের নিম্ন সহকারীর পদ থেকে থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি।

নাসরীন আক্তার চৌধুরীর স্বামী ব্রিটিশ কাউন্সিলের গাড়িচালক ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি মারা যান। স্বামী যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন বড় ছেলে মায়ের সঙ্গে এত খারাপ ব্যবহার করতেন না।

এই মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। সম্বল বলতে এই বাড়ি। কিন্তু বড় ছেলে ও ছেলের বউ বাড়ির দখল নিতে চায়। ছোট ছেলে বিয়ে করেনি। বড় কোনো চাকরিও করে না। বড় ছেলে আমাকে আর ছোট ছেলেকে বাড়ি থেকে তাড়াতে চায়।’

সরকার গত বছর পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন করেছে। এ আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সন্তান বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য। মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদেরকে প্রবীণ নিবাসে পাঠানো যাবে না। এ আইন লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিনমাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তবে ছেলে ভরণ-পোষণ দেবে, মা নাসরীন সেই আশা বাদ দিয়েছেন। বরং ছেলে, ছেলের বউ ও নাতির মাস খরচের জন্য বাড়ির একটি অংশ ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরও মা হিসেবে ছেলে তাঁকে একটু সম্মান করবে, নিজের বাড়িতে থাকতে দেবে, সে আশাটুকুও তিনি করতে পারছেন না। তিনি প্রাণনাশের হুমকিতে আছেন। তাঁর দাবি, তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বড় ছেলে রানা বাড়ির ভাড়া তুললেও ৪০ হাজার টাকা বিদ্যুত্ বিল দেননি। ফলে বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। গত মাস থেকে বাড়ির ভাড়াটেরা চলে গেছেন। খরচ কীভাবে সামলাবেন, তা-ই নিয়ে তিনি চিন্তায় আছেন।

বড় ছেলে রানা চৌধুরী টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রমাণ সাপেক্ষে মায়ের করা অভিযোগ সঠিক নয়। তবে পারিবারিকভাবে বললে, মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, উচ্চবাচ্য, তর্কবিতর্ক হয়েছে। তার পেছনে কারণও আছে। তবে মায়ের গায়ে হাত তুলিনি।’ তবে বাড়িভাড়া তুলে বিদ্যুত্ বিল পরিশোধ না করার অভিযোগ স্বীকার করেন।

রানা চৌধুরীর দাবি, মা ও ছোট ভাই জনি চৌধুরী বাড়ি ছাড়া অন্য সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাড়ির ভাড়াটেদের তাঁরা থাকতে দিচ্ছেন না। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেই ঝগড়া হচ্ছে।

নাসরীন জানালেন, তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ছেলের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে নিজের ছেলের জন্মদিন বেশ ঘটা করেই পালন করেন এক সন্তানের জনক রানা।

বিষয়: বিবিধ

৯২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

246130
১৯ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:১৭
সবুজেরসিড়ি লিখেছেন : ঐ কুলাঙ্গার সন্তান ধ্বংস হইক . . .
246141
২০ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৩০
ব্লগার সাজিদ আল সাহাফ লিখেছেন : হায়রে অধম! কবে হবি তুই উত্তম???
246158
২০ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:১৮
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : কুলাঙ্গার সন্তান ধ্বংস হোক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File