গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি-২ ঈদে নিশিচরদের দৌরাত্ম (রি-পোস্ট)
লিখেছেন লিখেছেন গ্যাঞ্জাম খান ০৬ জুলাই, ২০১৪, ০৬:১৫:১২ সন্ধ্যা
ঈদে নিশিচরদের দৌরাত্ম
প্রতি বছরের মত আবারো আমাদের মাঝে গত হয়ে গেল এবারের ঈদুল ফিতরের উৎসব। এ ঈদে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ তাদের আর্থিক সংগতি অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের ঈদের নতুন জামা কাপড়, পোষাক আষাক সংগ্রহ করেছে। গ্রামীন সমাজে ঈদের দিনে নতুন জামা কাপড় পরিধান করে ধনী গরীব, উচু নিচু সব বেদাভেদ ভুলে একই জামায়াতে শরীক হয়ে নামাজ আদায় করা মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে সমাজ ও দেশের একটি অন্যতম প্রধান জাতীয় উৎসব। এ ঈদের জামায়াতে নেই কোন ধনী গরীবের ব্যবধান। উচু নিচু সবাই একই কাতারে শামিল হয়ে নামাজ আদায় করে। নামাজের পর সবাই একে অপরের সাথে কোলা কোলি করার মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যায় নিজের সামাজিক অবস্থানগত স্ট্যাটাস! ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন সমাজে এই রেওয়াজ অত্যন্ত কার্যকরভাবে পূর্বের ঐতিহ্য চালু রয়েছে।
এবারের ঈদে দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব যথেষ্ট পরিলক্ষিত হয়েছে। সম্ভবত নিকট অতীতে কোন ঈদের একদিন পরেই হরতাল হওয়ার রেকর্ড নেই। এই হরতালে রক্তপাত ও খুনাখুনির ঘটনাও ঘটেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে বেঘাত ঘটেছে।
যারা ঈদুল ফিতরের প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা করেন তাদের সংখ্যা সমাজে খুবই কম। মুসলমানরা এক মাস সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন করার মাধ্যমে নিজেদের আত্মিক পরিশুদ্ধির যে শিক্ষা অর্জন করে বা একমাস এবাদত বন্দেগীর যে চর্চা করে থাকে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই রমজান মাসের পর তা পরিত্যগ করতে দেখা যায়।
এবারের ঈদে আমাদের এলাকাতে একটি ব্যতিক্রম ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের পূর্বদিন অর্থাৎ চাঁদ রাত বলতে যে সময়টাকে বুঝানো হয় সেই রাতের ঘটনা। আমাদের এলাকা বিদ্যুতায়ন হয়েছে ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নামের এনজিও কোম্পানীই মূলতঃ বিদ্যুৎ বিতরণ করে এলাকাতে। দুটি আলাদা সমাজ নিয়ে আমাদের এলাকায় দু’টি পাড়া রয়েছে। এই দু’টি পাড়াতে বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য কর্তৃপক্ষ একটি ১০ কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফরমার দিয়ে প্রায় ৪০ টি মিটারের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে আসছিল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফিউস তার জ্বলে যেতে যেতে এক পর্যায়ে ট্রান্সফরমারটিই হঠাৎ চাদঁ রাতের ১২ টার সময় বিকট শব্দে ব্লাস্ট হয়ে গ্রাহকদের রাতের অন্ধকারে বারোটা বাজিয়ে রাখে।
এই অনাকাংখিত দুর্গতির কারণে এলাকার প্রায় ৪০ টি মিটারের অধীনে ৬০ টির অধিক পরিবারে ঈদের একদিন আগে থেকেই বিদ্যুৎবিহীন প্রায় এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায়। এর ফলে ঈদের আনন্দটা বিশেষ করে জুনিয়র বয়সের ছেলে মেয়েদের দিনের বেলায় যেমন তেমন রাতের বেলায় একটু পানশে নিরানন্দ ও নিরামিষ হয়ে যায়।
অবশ্য বেরসিক বিদ্যুতের কারণে বেশির ভাগ মানুষ সাময়িকভাবে বেকায়দায় পড়লেও এলাকার দু’চার জন বিশেষ পেশার মানুষের পোয়া-বারো অবস্থা!এই বিশেষ পেশার নিশিচরদের পেশাগত দক্ষতার চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে বিদ্যুৎবিহীন এক সপ্তাহ সময়ে। এসব নিশিচরদের জাদুর কাটির ইশারায় কখন পুরাতন নষ্ঠ ট্রান্সফরমার গায়েব হয়ে গেছে কেউ টের পায়নি। হাতের কাজে দক্ষ এসব নিশিচরদের নিত্য নতুন সাফল্যজনক কর্মকান্ড বেশ দক্ষতার সাথেই সম্পাদন করেছে এ সময়টাতে। নিশিচরদের এক সফল মিশনে এলাকার একজন হাড় কিপ্টার ঈদের আনন্দটা চোখের জ্বল হয়ে জোয়ারে তার গোয়াল ঘরের ষাড়ের শুন্যতা পূরণ করেছে। এই হাড় কিপ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গাভীর দুধের সাথে পানির মিশ্রণ করে দুধে বরকত করতে গিয়ে পানির পর্যাপ্ত পরিমাণে অভাব থাকলেও ষাড়ের মুত দিয়ে হলেও দুধের পরিমাণ পাচঁ কেজি ওজন করা চাই! বেরসিক নিশিচরেরা এই হাড় কিপ্টার ষাড়টাকেই তার্গেট করেছিল।
পল্লী বিদ্যুতের মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শক যাচাই বাচাই করে গোটা ট্রান্সফরমারের দায়ভার এলাকাবাসীর উপর চাপিয়ে দিল। পুরাতন ১০ কেবির পরিবর্তে ২৫ কেবির ট্রান্সফরমার প্রয়োজন হবে টোটাল চাহিদার যোগান দিতে। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ফতওয়া দিয়ে গেলেন ২৫ কেবি ট্রান্সফরমারের জন্য গ্রাহকদেরকে সম্মিলিতভাবে (এক লক্ষ আশি হাজার) ১৮০০০০ টাকা দিতে হবে। না হলে আজীবন অন্ধকারে থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের। মনে হয় ডাল মে কুচ কালা হে। এলাকার মানুষ এবার মনে হয় নিশিচরদের কুরসি বা কেদারা ভার্ষণের কপ্পরে পড়তে যাচ্ছে। শুরু হলো দেন দরবার। কয়েকজন এলাকাবাসী পরামর্শ করে নতুন এক পন্থা আবিস্কার করলেন টাকা কমানোর জন্য। কোন এক রাজনৈতিক দলের কর্মীর মাধ্যমে পরামর্শ নাজিল হলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা সংসদ সদস্যের রিকমান্ডেশন নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলে অর্ধেক টাকা মওকুফ!
শুরু হলো দরখাস্ত নিয়ে দোড় ঝাপ।
এলাকার একজন তেধড় টাইপের যুবকের কুত কুতে জিজ্ঞাসু স্বভাবের কারণে শুরু হলো অনুসন্ধান। এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসলো শাপ তুলতে একেবারে কেচো।
জনপ্রতিনিধি!
নাকি নিশিচরদের আঞ্চলিক রাজা?
১৮০০০০ টাকার অর্ধেকেরই বেশি চলে যাবে নাকি নিশিচরদের আঞ্চলিক রাজার পকেটে!!!
অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে তাই ঘটনার বাকী অংশ না বলে এখানেই শেষ করছি।
(লেখাটি গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি আইডি দিয়ে বিডি ব্লগে আমার প্রথম পোস্ট)
এখানে লেখাটির লিংক আছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাগো দেশের মাথা মোটা লোকগুলোর মাথায় কুনো মগজ নেই। ডিএনএ পরীক্ষায় ধরা পইরছে তাগোর মাথায় গোবরের স্তুপ আছে মস্তবড় এক্কান।
আপনার আঞ্চলিক ভাষা বেশীরভাগ সময় আমি বুঝিনা। এবারের টা কিছুটা বুঝছি মনে হয়। এজন্য ধৈন্না। রমজান মুবারক
ছিচকে চোর আর বদনা চোরেরা হাতের কামডা ভালভাবে রপ্ত কইরবার হারে ন। হের লিগ্যা তারা বার বার ধরা খায়। মুই কতবার তাগোরে কইছি আমার নামে প্রতিষ্ঠিত ক্যাচিং শেল্টারে ভর্তি হওনের লিগ্যা হাতের কামডা ভালভাবে রপ্ত করণের লিগ্যা। মাগার হেতারা ওস্তাদের কথা হানে দেয় ন।
আল্লাহ আন্নেরে বাছাইছে, মোর আঞ্চুলিক ভ্যাষা চমজিবার হারেন ন।
বাসায় কইলে সবাই হাসে
মন্তব্য করতে লগইন করুন