খয়েরী রং'য়ের পাঞ্জাবীটা
লিখেছেন লিখেছেন মেঘবালক ১৭ জুলাই, ২০১৫, ০৩:০৪:৪৭ দুপুর
প্রায় আরও এক সপ্তাহ আগে থেকেই রনু তার বাবার কাছে নিয়মিত আবদার করে আসছে এই ঈদে তার নতুন পাঞ্জাবী চাই। বড় বোন শিমু ধমক দেয় -চুপ কর। তোর এত চাওয়া কেন?আমার কিছুতো চাই না। রনু অভিমান করে চলে গেল।
রহমত প্রামানিক অত্যান্ত কষ্টে আজ এতদুর। একটা ছেলে তিনটে মেয়ে। বড় মেয়ে'র নাম শিমু। রনু,জুই ও তামান্না'এবং স্ত্রী জাহানারা বানু'কে নিয়েই সংসার। প্রতিবারের মত এবারেও ঈদ আসছে তার সাথে ছেলে-মেয়েদের আবদার সকাল সন্ধ্যা।
কিন্তু রহমত প্রামানিক নিরুপায় হয়ে বিকেলে পথের পাশে গিয়ে বসে নিরবে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ছেড়ে দিল। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল শহরে কাজের খোঁজে। গ্রামে কাজ নেই তা নয়। শহরের কাজে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া যায় সে আশায়। একসাথে ছেলে মেয়েদের নতুন কাপড় নিয়ে ফেরার জন্য উৎসুক হয়ে রওনা দিল। কয়েক দিন পর কোন কাজ এবং নতুন জামা না পাওয়ার ক্ষোভ দুঃখ ও ভীষণ যন্ত্রণা আর লজ্জা নিয়ে বাড়ির পথে চলল আবার রহমত প্রামানিক।
এদিকে প্রামানিক'কে খুঁজে না পাওয়ায় ছেলে-মেয়ে এবং রহমত প্রামাণিকের স্ত্রী খুব চিন্তিত। কোথায় গেলো রাগ করে কেউ জানে না। আজ রাত পেরুলেই ঈদের সকাল। চিন্তাটা আরো বেড়ে গেলো কারন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।
গভীর রাতে জানালার কাছে খস খস শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো শিমু'র মা'য়ের। ভীত সন্ত্রস্ত গলায় প্রশ্ন করলো; কে? ফিস ফিস শব্দে জবাব এল। আমি!! শিমু'র মা তারাতারি দরজা খুলে বাহিরে এল। অন্ধাকরে চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে একটা ছায়া হেঁটে আসছে। প্রামাণিক তার স্ত্রীর পিছন পিছন ঘরে এল।
রহমত প্রামাণিক কিছু জানতে চাওয়ার আগেই শিমু'র মা নিজ থেকে বলল; ছেলেটা ডুকরে ডুকরে কেঁদে কিছুক্ষণ আগেই ঘুমালো। রনু কেঁদে কেঁদে বলছিল। বাবা আমার নতুন জামা চাইনা তুমি ফিরে এসো। আমি আর কখনো নতুন জামার জন্য আবদার করবো না। শিমুও একা ঘরে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে অনেক্ষণ। আজ দু'দিন যাবৎ কেউ কোন খাবার মুখে দিচ্ছে না।
রহমত প্রমাণিক যতটা অপরাধবোধ নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে ফিরলো তার থেকে বেশী বোঝা নিয়ে। এখন ছেলে-মেয়েদের কি বলে সান্তনা দিবে।
বাকি রাত আর ঘুম এলো না চোখে। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের চোখ দিয়েও পানি ঝরলো। ওদিকে কথা বলতে বলতে শিমু'র মা'ও কাঁদলো। এত রাতে সন্তানদের আর ডাকলো না। ভোর হতেই প্রথমে মেয়েটা ঘর থেকে বের হলো এর পর পাশের ঘর থেকে রনু জুই ও তামান্না এল পরে। বাবাকে দেখেই তাদের মনে হলো আজ ঈদের দিনে আরেকটা ঈদের দিন পেল।
সেমাই কেনার টাকা নেই ঘরের কিছু ভাতের চাল দিয়ে ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরী করেছে শিমু আর জুই। তা দিয়েই সেমাই মত কিছু তৈরি করবে। তাদের এই অভাবী আয়োজন দেখে রহমত প্রামাণিক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। বড় মেয়ে সান্তনা দিয়ে বলল "আব্ব আপনি এখন গোসল করেন ঈদের নামাজে যেতে হবে"
মেয়ের কথায় সুবোধ ছেলের মত নামাজে যাওয়ার জন্য তৈরী হলেন কিন্তু কি পড়ে যাবেন? এমনটা ভাবতে ভাবতেই শিমু পুরনো সেই খয়েরী রং'য়ের পাঞ্জাবীটা এনে দিল।
রহমত প্রামাণিক সেই কয়েক বছরের পুরনো পাঞ্জাবীটা পড়েই ঈদগাহের দিকে ভরাক্রান্ত মন নিয়ে রওনা দিল।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন