একটি অসামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও বাস্তবতা
লিখেছেন লিখেছেন কাজী লোকমান হোসেন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৩৫:০০ বিকাল
ছোটবেলায় ফাইনাল পরীক্ষায় অনেক বড় বড় রচনা লিখতে হতো আমাদের। বাংলা ও ইংরেজি দুটো সাব্জেক্টেই- এইম ইন লাইফ বা জীবনের লক্ষ্য। ভবিষ্যৎ ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ও বিচারপতিদের ভিড়ে পরীক্ষার হল উপচে পড়ত। পাতার পর পাতা,লুজ পেপারের চড়া-ছড়ি। শিক্ষকরা নাকে চশমা লাগিয়ে সেই বিশাল সাহিত্যে বানান ভুল খুঁজে বেড়াতেন, বাকি কিছু না দেখলেও চলে বিষয়টা এমনি ছিল। একই বই বা গাইড থেকে পড়ে পরীক্ষা দেয়া কয়েকশ ছেলেমেয়ের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিশেষ পার্থক্য থাকার কথা না!
যদিও নিজের ছোটবেলার কথা বলছি, এখনকার ছেলেমেয়েরাও সেই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ও বিচারপতি হওয়ার মরণপণ শপথ থেকে খুব একটা সরে এসেছে বলে মনে হয় না!
মুখস্থবিদ্যার খপ্পরে পড়ে ছোটবেলার সেই রচনা লিখতে গিয়ে আমাদের আসল ‘এইম’ উদ্ঘাটিত না হলেও আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আমাদের খুব সুনির্দিষ্টভাবে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে!
আমাদের জীবনের লক্ষ্য ‘শিক্ষিত’ হওয়া, লুঙ্গি বদলে প্যান্ট পড়া, স্যান্ডেল খুলে শু পড়া; বাইসাইকেল ফেলে নিদেনপক্ষে একটা ‘টয়োটা করলা’ কেনা, এবং এসবকিছুর জন্য প্রথমে একটা ‘ভালো’ চাকরিতে ঢোকা, এখন এটাই সবার স্বপ্ন!
ভাবি, আপনার ছেলে বাসায় নেই? গেছে কই? অফিস ট্যুরে সিঙ্গাপুর? বাহ! বাহ! ও কোথায় আছে এখন? কোন টেলিকম? বেতন কত? ওরে ব্বাপস!! ও আসলে ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালো ছাত্র ছিল তো! এসএসসি, এইচএসসিতে গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া। আগেই জানতাম ও অনেক ভালো কিছু করবে!
আমাদের দেশের নব্বই ভাগ ‘ভালো’ শিক্ষার্থী এইটুকু পড়ে চোখ কচলে তাকাবে, আহা! এমন একটা চাকরি কি আছে তার কপালে? পরের সেমিস্টারে কোমরবেঁধে পড়াশোনা করতে হবে! হুঁ হুঁ বাবা, দ্যাখো কী রেজাল্ট করি এবার! আর ইদানিং চাকরির বাজারে ইংরেজির যা কদর! স্পোকেনের কোর্সটাও শুরু করতে হবে এবার! গ্রাম থেকে আসা ক্ষ্যাত ছেলেগুলার চেয়ে ইংরেজি ঢের ভালো তার এমনিতেই, একটু চর্চা করলে আর কেউ দাঁড়াতে পারবে না!
লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে যে- মধ্যযুগের প্রবাদ। তার মানে মধ্যযুগেও লেখাপড়ার উদ্দেশ্য সেই গাড়িঘোড়াতেই ছিল। সময়ের তোড়ে ঘোড়ার জায়গায় মোটর জুড়েছে, কিন্তু লেখাপড়ার উদ্দেশ্য কি পাল্টেছে? আমরা কি আদৌ চাই পাল্টাতে? ঔপনিবেশিক শাসকের কেরানি হওয়ার জন্য প্রবর্তিত যেই শিক্ষাব্যবস্থা, সেখান থেকে এই স্বাধীন দেশের আমরা ঠিক কতটুকু সরে এসেছি? না আসতে পারি নাই , আমাদের আরও অধঃপতন হয়েছে , তথাকথিত সৃজনশীল শিক্ষা ব্যাবস্থার নামে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে ছেলে মেয়েদের , পাঠ্য পুস্তুক হয়েছে চটি বই ,
কিন্তু আমাদের সমাজের তথাকতিত সুশীলেরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভাবে সামান্য বিলাশিতার জন্য এই বিষয় গুলো দেখেও না দেখার ভান করে , সৃজনশীলতার নামে বইয়ে দেওয়া হয় নাস্তিকের কবিতা , যাহা কোন সভ্য সমাজ গ্রহন করতে পারেনা , ধর্ম নিরেপক্ষতার কথা লেখা থাকলেও হিন্দুদের ঠাকুর মা ঠাকুর বাপের নাম লেখা থাকে , থাকবেই না কেন আমাদের দেশের প্রিন্ট মিডিয়ায় ঠাডা পড়ছে তাই কোলকাতা থেকে পাঠ্যপুস্তক ছাপানো হয় ,
আর পরীক্ষা আসলে শুরু হয়ে যায় রাতের আঁধারে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস , যা পরবর্তীতে ফেসবুক তথা অনলাইনে ছড়িয়ে যায় , জানাজানি হওয়ার পর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় অনায়েসে দায় এড়িয়ে প্রমান চেয়ে থাকেন , অতঃপর পরীক্ষার রেজাল্ট হয় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী জি পি এ ৫ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন পায়না , এতে করে গরীব মেধাবী যে ছেলেটা কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে যার জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আকাশ কুসুম চিন্তা করা সেই ছেলেটা হয়ে যায় ভুক্তভুগি ,
আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা কোন এক দানবের হাতে আছে সেটা উপর ওয়ালা ভালো জানেন ,
ফেসবুকে আমি
বিষয়: বিবিধ
১২৮৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভালো লেগেছে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
দোয়া করি এ দুরবস্থার অবসান হোক
আমার মনে হয় ডাক্তার আর শিক্ষক ছাড়া আর কোন এইম ইন লাইফ কেউ কখনও লিখেছে!!
কিন্তু আসলে সবার একটিই এইম সেটা হলো ভাল চাকরি এবং বউ। সে জন্য সকল নিতি নৈতিকতা বিসর্জন দিতে প্রস্তত আমরা।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন