গল্প ------------ একটি প্রেম ও একটি পরিবারের ইতিকথা
লিখেছেন লিখেছেন কাজী লোকমান হোসেন ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৫৬:৪৮ দুপুর
আজাদ দরিদ্র কৃষকের এক মাত্র ছেলে , বাবা কৃষক বলে ছেলেকে তেমন পড়ালেখা করাতে পারেনি , তাই সারাদিন আড্ডা দিত , তার বাবার জমিজামা তেমন নেই বললে চলে , তার বাবা দুই বিয়ে করেছেন , প্রথম ঘরে ছেলে মেয়ে না হওয়ার কারনে ২য় বিয়ে করেন , ঐ ঘরেই জন্ম আজাদের , তারা দুই বোন এক ভাই , একমাত্র ছেলে একটু বড় হলে বাজারে একটি চায়ের দোকান দিয়ে বসিয়ে দেন তার বাবা , , প্রথম কয়েকদিন ভালোভাবেই ব্যাবসা করে যাচ্ছিলো আজাদ ,প্রতিদিন দুপুর বেলা দোকান বন্ধ করে আজাদ ও তার সমবয়সী মোরশেদ , টুটুল , মহিন এরা বাজারের পাশে থাকা গার্ল স্কুলের মেয়েদের পিছে ঘুর ঘুর করতো , কখনো কখনো মেয়েদের হাই হ্যালো বলে খিল খিল করে হেসে দিতো , এক এলাকার ছেলে হলেও আমরা নিতান্তই তাদের বখাটে বলে জানতাম , তো এই রকম হাই হ্যালোর মাঝে সুমি নামের একটা মেয়ের সাথে আজাদের রিলেশন হয়ে যায় , সুমি নিম্ম মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে , বাবা প্রবাসী , মেয়েটা দেখতেও একদম খারাপ না , মোটামুটি ফর্সা উচ্চতা স্বাভাবিক । চলতেছিল তাদের প্রেম চুপি চুপি , এদিকে সুমির বাবা প্রবাস থেকে এসে দেখে মেয়ের বয়স হয়েছে তাই বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে , সুমি বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি , তাই সে আজাদ কে তার বাবার তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার বিষয় বলে দেয় , আজাদ কি করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সুমি পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে , আজাদ রাজী হয়ে যায় । পরের দিন বিকেল বেলা সুমি তার নিজের স্বর্ণালংকার এবং মায়ের কিছু স্বর্ণ সহ জামা কাপড় নিয়ে ফটো তোলার নাম দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় , এই বিষয়গুলো জানে আজাদের সমবয়সী বন্ধু মহল যথাক্রমে মোরশেদ , টুটুল ও মহিন , পরে আজাদের হাত ধরে সে পাড়ি দেয় সুদূর চট্টগ্রাম , এইদিকে এলাকায় জানাজানি হয়ে যায় , আমার কাছে বিষয়টা হাস্যকর মনে হল , পরে তার বাবা এলাকার কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তি বর্গের সাহায্য নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় আজাদ ও বন্ধু মহলের নামে নারী অপহরণের মামলা করে , ব্যাস দুই দিন পর সবাই ধরাশায়ী বাংলাদেশ পুলিশের কাছে , আজাদ আর সুমিকে চট্টগ্রাম থেকে ট্র্যান্সফার করা হয় লক্ষ্মীপুর , আর তার বন্ধুদের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে, লক্ষ্মীপুর জর্জ কোর্টে তাদের মামলার নথী পত্র যাওয়ার পর তাদের কে কোর্টে চালান করে দেয় জেলা পুলিশ বিচার শুরু হওয়ার পর মেয়ের বাবা যথারীতি তার মেয়েকে অপহরণ করার জন্য আজাদ ও তার বন্ধুদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করে , কিন্তু বাঁধ সাজলো তার নিজের মেয়ে , মেয়ে বলল আমাকে কেউ অপহরণ করেনি আমি স্বজ্ঞানে আজাদের হাত ধরে পালিয়েছি , এবং আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে , মেয়ের কথা শুনে তার বাবার রক্ত চক্ষু মুহূর্তেই অগ্নি লীলায় পরিণত হয়ে গেল, এর পর মোরশেদ , টুটুল আর মহিন জামিনে বেরিয়ে যান , । তখন বিচারক তার বাবাকে বিয়ে মেনে নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন মেনে নিবো তবে এই ছেলেকে তার পরিবার থেকে ত্যাজ্য করে দিতে হবে , আজাদ তার বাবার একমাত্র ছেলে তার উপর দুইটি বিয়ের উপযুক্ত বোন কিভাবে তার বাবা তাকে ত্যাজ্য করবে ? পরে এক পর্যায়ে সুমি তার নিজের বাবাকে অস্বীকার করতে বাধ্য হয় , সে বলে আমার এখন এই ছাদের নিছে একজন বাবা আছে আর তিনি হলেন আজাদের বাবা , এই কথা বলার পর কোর্ট মুলতবী ঘোষণা করে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে , এই দিকে আজাদের মামলা ডিল করতে গিয়ে তার বাবা একমাত্র ফসলী জমিটাও বিক্রি করে দেয় , তারপর অবশিষ্ট থাকে ঘর বিটে , পরের তারিখে বিচারক কোন রকম সিদ্ধান্তে না পোঁছাতে পেরে তাদের কে জেলে থাকার নির্দেশ দেন , এই দিকে আজাদের পরিবারের একমাত্র সম্ভল ঘর বিটে টুকুও বিক্রি করতে , হয় , দুই বছর পরে মেয়ে জামিন পায় কিন্তু আজাদ জেলেই থেকে যায় , তারপর আজাদের লক্ষ্মীপুর গ্যাং এর মুন্না বাহিনীর মুন্নার সাথে জেলে দেখা হয় এবং তার জেলে যাওয়ার ঘটনা বলে , মুন্না আশ্বাস দেন জেল থেকে বাহীর হলে তাকে বাহীর করে মেয়েকে তার বাবার কাছ থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসবে , বেচারা সন্ত্রাসী হলেও কথা রেখেছেন , জেল থেকে বাহীর হয়েই তার দল নিয়ে মেয়েকে আজাদদের বাড়িতে দিয়ে গেল , এখন শুনেছি তারা নাকি সুখী , এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সমাজের কাছে , এই বাস্তব গল্পে যে ঘটনা ফুটে উঠেছে সেখানে একটা ছেলে গরীব বলে তার প্রেম এবং বিয়ে করা বৌ কে শুধু মাত্র সামাজিক স্ট্যান্ডার্ডের কারনে অস্বীকার করে তাকে তিন বছর এবং তার বৌ কে দুই বছর জেল খাটিয়েছে সমাজের মানুষ রুপি জানোয়ার গুলো , কিন্তু কোন সুফল বয়ে এসেছে ? বরং আজাদের পরিবার হয়েছে গৃহহীন , তার দুই বোনের বিয়ে হয়েছে দুইজন আরও নিম্মমানের ছেলের কাছে , এভাবে নিঃশেষ হয়ে গেলো একটি পরিবার , কিন্তু আমাদের সমাজের মানুষ রুপী কিছু সুশীল যদি আগেই বিষয়টা আড় চোখে না দেখে সমাধানের চক্ষুঃতে দেখতেন তাহলে এইভাবে একটি পরিবার নিঃশেষ না হতেও পার .....................
.....................সমাপ্ত ..................।
বিষয়: বিবিধ
৪৬১২ বার পঠিত, ৫১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সমাজের চারপাশে ঘটে যাওয়া নির্মম বাস্তবতার অংকন এই লেখা।
একগুয়েমী আর মিথ্যা অহমিকার কারণেই এমন পরিস্হিতির শিকার হয় মানুষ।
উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ .....
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লিখাটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
বালেগা কন্যা স্বীয় সন্তান নিয়ে প্রেমিক স্বামীর জামিন চাচ্ছে বিবাদীর মাধ্যমে,তবুও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে- এমন হুকুম বিচারকের। দের বছর হাজত খেটে বেড়িয়ে আসে পরে।
(নিজের দেখা ঘটনা এটা,ময়মনসিংহের নারী ও শিশু কোর্টের বিচারক ইয়াসমিন তখন এতো খামখেয়ালী করতো।২০০৬ইং)
আর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বিলুপ্তি কামনা করি আমি।
কিন্তু এই লিখার যে উপসংহার ও দায়ভার টানলেন - তা আমার জন্য হজম করা কষ্টকর ছিল।
মূলতঃ একটা সমাজ, পরিবার, আইন আদালত ইত্যাদি বিনির্মানে রাষ্ট্রের ভূমিকা বড়। রাষ্ট্রের দায় দায়িত্ব হল মানুষের জন্য কল্যানকর যা কিছু - তা নিশ্চিত করা। আর যা কিছু ইভিল, যা কিছু অনাহুদ হয়রানী মূলক - তা দুর করা কিংবা হয়রানী হতে মানুষকে মুক্ত রাখা।
চিন্তা করে দেখুনঃ
১। রাষ্ট্র, পিতামাতাকে তাদের ১৬/১৭ বছরের মেয়ের - বিয়ে দেওয়াকে যেমন হারাম করেছে, ঠিক তেমনি ঐ মেয়েটিকে নিজে থেকে - তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করাকে ও হারাম করেছে। অথচ ঐ বয়সে ছেলে ও মেয়েকে পরস্পরের সন্মতিতে লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে বহির্ভুত সম্পর্ককে মাসের পর মাস চালিয়ে নেওয়াকে হারাম করে নি - টেকনিক্যালী 'বয়সের দোষ / ন্যাচারাল ইত্যাদি' বলে হালাল করতে সমাজকে বোঝাচ্ছে বা মোটিভেট করছে - এবং এই জন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা আইনে রাখেনি।
ফলাফল স্বরূপ ছেলে ও মেয়ে বিয়ে করে সম্পর্ক মেইনটেইন (যা মূলতঃ স্রষ্টার চোখে হালাল) করে জেল জরিমানা হয়রানী শিকার হল ও ভূসম্পত্তি হারালো।
অথচ তারা যদি স্রষ্টাকে অস্বীকার করে স্রষ্টার প্রতি বিদ্রোহ করে বিয়ে বহির্ভূত ভাবে ঐ একই কাজ কর্ম লুকিয়ে চুরিয়ে চালিয়ে যেত এবং ধরা খেত - তবে রাষ্ট্র ও মিডিয়া তাকে ফ্রি রাখতো, এমনকি কোন চেয়ারম্যান কিংবা কোন জাজ যদি তাকে মাস খানেক ও জেলে রাখার চেষ্টা করতো সরকারের সর্বস্তরে তার ইমপেক্ট পরতো, মানবতাবাদীরা কান্নাকাটি করতো, সংবাদপত্র আর্টিকেল লিখে ভাসিয়ে দিত।
২। আমার উপরের কমেন্ট মানে এই নয় যে - আমি ছেলেটির প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতিশীল - কারন ফার্স্ট ইন্সট্যান্সে সে গার্লস স্কুলের সামনে যা করছিল - তা ভুল (যদিও সে হয়তো তা জানতো না - কারন রাষ্ট্র, মিডিয়া, পরিবার, ধর্ম ও সমাজ তাকে তা শেখায় নি - বরং তাকে প্ররোচিত করেছে অমন হারাম কাজ করতে)।
আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত , তবে আমার এই ব্লগ পোস্টের মূল কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে সামাজের শিক্ষিত মানুষ গুলো কোন একটা ঘটনার সঠিক সমাধান না দিয়ে আরও জটিল করে একটি পরিবারকে নিঃশেষ করে দেওয়ার যে প্রয়াস চালিয়েছেন তার প্রতি ঘৃণা করা ) )
অাপনি সমাজকে/মেয়ের বাবাকে দায়ী করছেন। মেয়ের বাবার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কি আপনি টের পান? এ মেয়েকে বড় করতে কত বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়েছে তার বাবা মাকে? তাদের স্বপ্ন স্বাদ আহলাদ এভাবে ধ্যুলিস্যাৎ করে দিকে গার্লস স্কুলে/কলেজে আড্ডা মারা বখাটেরা আর মেয়ের বাবা হাসি মুখে সেটা মেনে নিবে?
নো ব্রাদার , এখানে বখাটে কিংবা নষ্ট মেয়ের পক্ষে সাপাই গাওয়া হয়নাই , এখানে এত কিছু করার পর তাদের ঝুঁটি অটুট থাকা এবং এর ফলে একটি পরিবার নিঃশেষ হয়ে যাওয়াকে হাইলাইট করা হয়েছে ) )
বাস্তব নিয়ে মাথা গামানোর উনাদের সময় আছে??
ফেরারী মন লিখেছেন : আফরা লিখেছেন : এ সব কিছুর মূলে হচ্ছে সঠিক শিক্ষার অভাব । তাদের বাবা মা তাদের সঠিক শিক্ষা দিত তাহলে তারা কখনো এরকম বেয়াড়া হত না । ধন্যবাদ ।
মন্তব্যটির সাথে শতভাগ একমত তাই নতুন করে কিছু লিখলাম না।
কি বোঝাতে চেয়েছেন..কি মেসেজ দিয়েছেন?
মডুরাও লটকিয়ে দিয়েছে!!!!!
একটি মেয়ে পালিয়ে গেল....আর আপনি তার বাবার দোষ দিলেন!
বাবা-মা আমাদের জন্য কত কষ্ট করেন...আপনিও তো একদিন বাবা হবেন..তখন বুঝবেন!
এমন একসিডেন্ট রোধ করা জরুরী..হয়ে গেলে সমাধানের পথে যাওয়া ভাল...তবে উতসাহিত করার কোন কারণ দেখি না।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন