পানিবন্দী মানুষের পাশে দাঁড়ান
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:২২:১৯ রাত
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪
জীবনের শুরু হয়েছিল পানি দিয়ে। পানির অপর নাম সর্বদাই জীবন। আল-কুরআনে পানির আরবি (আল-মা) প্রতিশব্দটি ৬৩ বার ব্যবহৃত হয়েছে। জীবন বাঁচাতে পানি ও খাদ্যের বিকল্প নেই। আবার পানি কখনো কখনো মরণের কারণ। বিভিন্ন সময়ে পানি বন্যা আর নদী পথের দুর্ঘটনা সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। ভূ-পৃষ্ঠের যেমন ৭০ ভাগই পানিতে ঢাকা, তেমনি আমাদের শরীরেরও ৭০ ভাগ পানি। পানি ব্যতীত খাবারে পরিতৃপ্তি আসে না। নিরাপদ পানি ব্যবহার না করলে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তরাঞ্চলের অনেকগুলো জেলায় গত তিন সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে কয়েকশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্বিতল বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাদান। বন্যায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ হবে কি-না এবং নির্দিষ্ট সময়ে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। পশু ও মুরগীর খামার ভেসে গেছে পানির তোড়ে। মাছের পুকুরগুলো পরিণত হয়েছে বিশাল জলাশয়ে। একটু বিশুদ্ধ পানি পেলে কয়েকজন ভাগাভাগি করে পান করছে। খাবারের অভাবে হাজারো মানুষ কান্না করছে। বাড়ির ছাদ ও টিনের চালায় বসবাস করছে অনেক বানভাসি মানুষ। রাতের অন্ধকারে যেই স্থান টয়লেট হিসেবে ব্যবহার হয়, দিনের আলোয় সেটিই আবার বিশ্রাম ও খাবার ঘর। প্রতিবেশী দেশ পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে এভাবেই আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে। নিজের অজান্তেই শিখতে হচ্ছে সহিংস চরিত্র। অহিংস পরম ধর্ম বলা হলেও নেই তার বাস্তব প্রয়োগ। পানির উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বৈরিতা সৃষ্টি হয়েছে। ‘জাতিসংঘের কর্মকর্তা মি. হাসেমের মতে, একবিংশ শতাব্দিতে তেলের পরিবর্তে পানিই হবে রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রধান উপাদান। তেল নয় পানির কারণে দেশে দেশে যুদ্ধ বেঁঁঁধে যেতে পারে।’ (নিরাপদ পানি : প্রেক্ষাপট অতীত থেকে বর্তমান)।
‘দি ইকোনমিস্ট’ ম্যাগাজিনের-২০০০ সালের বিশেষ সংখ্যায় পানির উপর প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে পানির প্রচ- ঘাটতিতে পড়বে ৪শ’ কোটি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পানির উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারার কারণেই ইংল্যা-ে শিল্প বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল। ‘হাইড্রোলিক’ ব্যবস্থার উৎকর্ষের কারণে রোমানদের সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল। পানির প্রয়োজনে ঘটেছে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন। তার প্রমাণ চিলির নোর্তকিচোর জনগোষ্ঠী গ্রীষ্মকালীন খরা মোকাবেলা করার জন্য পানি সংগ্রহের এক জটিল পদ্ধতি তৈরি করে। এর নাম দেয় ড্যাম বা রিজার্ভার। বাংলাদেশ গ্রীষ্মকালীন সময়ে পানি না পাওয়ায় ফসল বুনতে পারছে না আর বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির কারণে ফসলী ক্ষেত-খামার, ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছরই কম বা বেশি এমন চিত্র ফুটে ওঠে। ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্র বটে তবে তাদের আচরণ বন্ধুসুলভ নয়! কলামিস্ট জালাল উদ্দীন ওমর লিখেছেন, ‘ভারত নেয় দেয় না কিছুই।’ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিসহ কোন চুক্তিই রক্ষা করছে না তারা। বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি দিচ্ছে না। তাদের ইচ্ছামতো বাংলাদেশ কখনো মরুভূমি কখনো সাগর। প্রয়োজনের সময় পানি দেয় না আর অপ্রয়োজনে যথেষ্ট পরিমাণে পানির দেখা মেলে। মরু অঞ্চলে পানি স্বপ্লতার কারণে কম পানি গ্রহণকারী উট এবং ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। তেমনিভাবে বাংলাদেশও মরুকরণ হতে চলছে। ভারত সরকার ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে পানিতে মারছে। আমাদের ১৭টি নদী শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে বাঁধগুলো ছেড়ে দিয়ে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে লাখ লাখ মানুষের ঘর-বাড়ি। এজন্য কি কারো দায়বদ্ধতা নেই? রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এর বিরুদ্ধে কেন কথা বলা হচ্ছে না, কোন স্বার্থে সে দাবি তোলা হয় না এ প্রশ্ন সবার মাঝে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
‘শেরপুর টাঙ্গাইল শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, তিনজনের মৃত্যু’, ‘পাঁচ জেলায় বন্যার অবনতি, খাবার ও পানির সঙ্কটে বানভাসি মানুষ’, ‘বন্যায় সারাদেশে ৪ জনের মৃত্যু, পরিস্থিতি অবনতি’, ‘নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত দুর্ভোগ চরমে’-এ ধরনের শিরোনাম বলে দেয় দেশের মানুষ কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী কম হওয়ায় ত্রাণ বিতরণকারীরা হিমশিম খাচ্ছে। কোথাও কোথাও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ত্রাণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ ১ সেপ্টেম্বরের দৈনিক প্রথম আলোর এক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, জামালপুরের পোগলদিঘা ইউনিয়নের ওসমান গণি বলেছেন, ‘১৫ দিন ধরে পানিতে, একবার কেউ খোঁজ নিল না। দিল না একটু ত্রাণ।’ খাবার পানি, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় অনেক জনপ্রতিনিধি তাদের এলাকায় যেতে চাইলেও যেতে পারছেন না। কেউ কেউ সামান্য সময়ের জন্য এলাকায় অবস্থান করলেও খুব দ্রুতই আবার এলাকা ত্যাগ করার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ভোটের সময় নেতারা ঠিকই কর্মীর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। আর কর্মীরা নেতার পিছু ছাড়ে না যতক্ষণ না নেতা তাদেরকে যেতে না বলেন কিংবা অর্থকরী না দেন। অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের মাঝেই এমন নির্বাচনী ভালোবাসা বা রাজনৈতিক ভালোবাসা ফুটে ওঠে। যার কারণে নেতারা বিপদের মুহূর্তে কর্মীদের পাশে থাকেন না।
দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দি। সব এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো হচ্ছে না। নেতারা ত্রাণের ভয়ে ইচ্ছে করেই দূরে থাকছেন। বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা হিসেবে চাল দেয়ায় অনেকেই নতুন করে বিপাকে। জীবন বাঁচাতে বেশি বেশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা প্রয়োজন। ৫৩টি মেডিকেল টিম গঠন হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এক্ষেত্রে আরো কিছু টিম গঠন করা হলে বানভাসি মানুষরা বেশি উপকৃত হতে পারে। প্রতিদিনই নতুন করে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যেসব এলাকার রাস্তাঘাট ঝুকিপূর্ণ, ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেসব স্থানগুলো চিহ্নিত করে পাইলিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে পানির নিচে। পদ্মায় কয়েকদফা পানি বেড়েছে। কোথাও কোথাও নদ-নদীর পানি সামান্য কমে গেলও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা ও ফরিদপুর অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। বন্যার্ত মানুষরা নানা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। পেটে পীড়া, ডায়রিয়া, আমাশয়, ঠা-াজনিত রোগ ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। মানুষের চেয়ে গবাদিপশু বেশি কষ্টে দিন পার করছে। মানুষের খাদ্য হিসেবে শুকনা ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হলেও গো খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জে ৮ হাজার তাঁত শিল্প ও হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে। কৃষকরা গরু-বাছুর-মহিষ এবং ফসলের ক্ষেত হারিয়ে পাগলপ্রায়। পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা বিপদের মুহূর্তে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না। মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কোথায় থাকবে কী করবে, কী খাবে তা জানা নেই। মানুষ বিপদে পড়লে জ্ঞান লোপ পায়। পাঠকরা কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হবেন, নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় গরু হারানোর বেদনা স্বাভাবিক বেদনার চেয়ে অনেকগুণ বেশি কষ্ট। বাবা-মা কিংবা সন্তানের মৃত্যুর পর তাদের কবর দেখে পরিবারের সদস্যরা নিজেদের স্থির রাখতে চেষ্টা করেন। কিছুটা হলেও তারা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে প্রিয় ব্যক্তিটির কবরটিও যখন নদীতে ভেঙ্গে যায়, তখন বেদনার মাত্রা বেড়ে যায়। বানভাসি মানুষের কান্নায় নোনা জল মিঠা পানির সাথে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যখন বন্যার্ত মানুষের পাশে যেতে ভুলে যান সেই সময়ে সংবাদকর্মীরা মানুষের কান্নার ভিডিও প্রচার করে প্রকৃত অবস্থাটি বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। সে দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের পক্ষে স্থির থাকা কঠিন। এ দৃশ্য দেখে অনেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এটাই সংবাদকর্মীদের রাতজাগা পরিশ্রমের সার্থকতা।
পরিবেশ দূষণের প্রধান চারটি কারণের মধ্যে বানভাসি মানুষের মধ্যে তিনটিই বিদ্যমান। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ মাটি দূষণের ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ। নালা নর্দমার পচা পানি বিভিন্ন রোগের জীবাণুর বাহন হিসেবে কাজ করে। যেমন কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি। প্রত্যেক মানুষ যাতে নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারে সে অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। নদী ভাঙ্গন আর পানিবন্দি মানুষরা সুখের জন্য কাঁদে না! জন্মদিন পালন করার জন্য কাঁদে না! কাঁদে বাঁচার জন্য! কাঁদে নিরাপদ পানির জন্য! কাঁদে এক মুঠো খাবারের জন্য। জনগণের বাঁচা-মরা নিয়ে যেই সরকার চিন্তিত নয়, সেই মূলত অভিভাবক নয়। ক্ষমতার সাধ যারা ভোগ কেেছ তাদের কেউ নিজ পরিবারকে নিয়ে কাঁদে, কেউ মনে মনে কেক কেটে উৎসব করে, কেউ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়তে গড়তে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানুষ তাদেরকে ক্ষমতার ভয়ে শ্রদ্ধা করে, ক্ষতি করতে পারে এ চিন্তায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অভিনয়ের অংশ হিসেবে সালাম করে।
বাংলাদেশে পানি প্রবেশের মূলপথ তিনটি, অথচ নির্গমনের পথ মাত্র একটি। যখনই পানির প্রবাহ নদীসমূহের ধারণ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে, তখনই বন্যা সংঘটিত হয়। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। অপরদিকে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ আমাদের অন্যান্য নদী দ্বারা প্রবাহিত পানির শতকরা ৯০ ভাগই বাইরে থেকে আগত। পাউবির হিসাবে বলা হয়েছে, নদী ও নদী অববাহিকা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভূমি সংরক্ষণ, ভূমি পনিবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধার এবং মোহনা নিয়ন্ত্রণ, নদীর তীর সংরক্ষণ, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ, নদী ভাঙ্গন হতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শহর, বাজার, হাট এবং ঐতিহাসিক ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ সংরক্ষণের কথা উল্লেখ থাকলেও দু’এক জায়গায় নামমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। অথচ বন্যা-খরা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ নোটিশ জারি করেই যেন পানি উন্নয়ন বোর্ড তার দায়ভার শেষ করছে। বন্যার্ত মানুষরা বলছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম দেখলে মনে হয়, পানি বাড়িয়ে দেয়াই যেন পাউবির মূল কাজ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবারে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি উত্তরাঞ্চলে আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন তারা। সেই সাথে বাড়তে পাড়ে নদী ভাঙ্গনের প্রকোপ। ব্রহ্মপুত্র , দুধকুমোর ও তিস্তা দিয়ে যে পানি বাংলাদেশে আসছে তা মূলত ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বিভিন্ন নদীরই পানি। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত যে কোন ভয়াবহতা হ্রাসের উপর গুরুত্বারোপ করা। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি, ভূমির সুপরিকল্পিত ব্যবহার, পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, দুর্যোগ প্রতিরক্ষা সুব্যবস্থাপনা, গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্ট দুর্ভোগ অনেকাংশেই প্রশমিত করা যায়।
বন্যার্ত এলাকায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রবল স্রোতের মুখে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তেমন প্রতিকার হচ্ছে না। পানি আরো বৃদ্ধি পেলে যেসব রাস্তা ও বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে-দ্রুতই তা মেরামত করা দরকার। রোগ যাতে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে পূর্ব থেকেই সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তেমনি ভাবে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে বালির বস্তা আর খাবার বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেয়ার পূর্বেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত করা বেশি প্রয়োজন। ঝালকাঠির কবিরাজ জয়নাল হোসেন কাঁটা-পোড়া-ঘায়ের মলম বিক্রি করতে গিয়ে প্রায়শই বলে থাকে, ‘শরীরের কোথাও কেটে গেলে ৫ টাকার একটি মলম হাজার টাকার উপকারে আসতে পারে। রক্ত পড়া বন্ধ হবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। রক্ত ঝড়ার মুহূর্তে টাকার বান্ডেল ও বস্তা কাটা স্থানে লাগালে কোন উপকারে আসবে না। তেমনি বাঁধ ছুটে যাওয়ার পরে বালির বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা না করে সময় থাকতে প্রস্তুতি নেয়া অপরিহার্য। জনগণ বিপদে পড়লে সেবা দিবেন এই মানসিকতা না রেখে জনগণের বিপদ না আসে সে অনুযায়ী কাজ করা দরকার।
চলতি বছরে বহুগ্রাম নদীর গর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় পাউবো ও এলজিইডি মন্ত্রণালয়কে কে দায়ী করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাউবো যেসব সøুইচ গেট তৈরি হয়েছে তা অধিকাংশ অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয়। ফলে বেরীবাঁধগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তাদের অফিস ঘেরাও করেছে এলাকাবাসী। এটি ইতিবাচক কোন সংবাদ নয়। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত বসবাস, অবৈধ স্থাপনা, দখল হওয়া খালগুলো পুনঃরুদ্ধার ও সংস্কার না করা, নর্দমা পরিষ্কার না করা, ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়া, যখন-তখন রাস্তা কেটে ফেলাকে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করেছেন নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের খাতায় ৪৩টি খালের নাম থাকলেও ১৭টি খালের অস্তিত্ব নেই। যারা সব সময়ে সরকারি দলে তারাই এ খালগুলো দখলে নিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে রাজধানীর সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকবে। গত চার বছরে প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। এজন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা উচিত। সড়ক পথে জানজট আর উত্তারাঞ্চলে জলজ-এ নিয়ে কাটে মানুষের দুর্বিষহ জীবন। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, পানিবাহীত নানা রোগসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দেশের সাধারণ মানুষ। সরকার এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা নিবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক : কলামিস্ট
http://www.dailyinqilab.com/2014/09/04/203120.php
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন