নামের আগে হাজী ও নামাজি
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ২০ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৩৭:১২ সন্ধ্যা
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সালাত ও হজ দুটি বিষয়। হজ প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে একবার ফরজ। আর নামাজ আদায় করতে হয় দৈনিক পাঁচবার। হজ করে আসার পরে নামের শুরুতে হাজী ও আলহাজ শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এক্ষেত্রে এমন কথাও প্রচলিত আছে যে, একবার হজ করলে হাজী আর দুইবার বা সাতবার হজ করলে আলহাজ বলা হয়। প্রকৃত অর্থে এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। দীর্ঘকাল থেকে নামাজ আদায় করলেও নামের আগে নামাজি বা মুসল্লি শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায় না। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, মৌলিক কোনো বিষয় না লিখে কেন এই সামান্য বিষয় নিয়ে লিখছি? এ বিষয় নিয়ে কেন বাড়াবাড়ি করছি?
হজ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলেও এখন যেন ফ্যাশনের মতো রূপ নিয়েছে। কতিপয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, মাওলানা পরিচয়ধারী ব্যক্তিসহ ইমাম, বক্তা ও পীরদের মাঝে হাজী বা আলহাজ শব্দের ব্যাপক প্রচলন লক্ষণীয়। কেউ কেউ অতি উত্সাহী হয়ে ‘ডাবল হাজী’ শব্দটিও ব্যবহার করে থাকেন। এভাবে সূরা ফাতিহা মুখস্থ বলতে পারলেই যদি তাকে ফাতিহায় হাফেজ বা হাফেজে ফাতিহা বলার প্রচলন শুরু হয়, তাহলে এক সময় প্রকৃত নাম খুঁজে পেতে দীর্ঘসময় লেগে যাবে। ডাবল আর ট্রিপলবাজ না হয়ে নিয়তকে বিশুদ্ধ করা দরকার। ডাক্তার হতে হলে যেমন এমবিবিএস পাস করতে হয়, প্রকৌশলী হতে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করতে হয়, তেমনিভাবে আলহাজ বা হাজী হতে হজ করতে হয়। হজের মতো একটি বিষয়কে নিছক দুনিয়ার অন্যান্য কাজের মতো মনে করা মারাত্মক গোনাহের কাজ।
ইবাদত করেই যদি উপাধি লাগানো হয়, তাহলে যারা শুধু শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করে তাদের কি জামাতি বলা হবে? মোটেই নয়। অনেকজনকে এভাবেই বলতে শুনেছি, “সব বক্তার নামের আগে আলহাজ আছে, আমার নামে থাকবে না তা হয় না”, “হজ করলে মাহফিলের প্রোগ্রাম বেশি পাওয়া যায়”, “টাকা-পয়সায় তো আর কম নেই, এখন হজ না করলে মানুষ খারাপ বলে”, “অল্প বয়স হলেও হজ করে আসা উচিত। মানুষে বিশ্বাস করে তাড়াতাড়ি। পাশাপাশি ব্যবসাটাও ভালো হয়।”
হজ একটি মৌলিক ইবাদত তা যেন ভুলে যেতে বসেছি। হজ কবুল হওয়ার অনেক শর্ত রয়েছে। সে সব শর্তের দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। অন্যান্য ইবাদতের মতো হজ করার মধ্যেও অহঙ্কার রয়েছে। নামের আগে হাজী ও আলহাজ শব্দ ব্যবহার করাটা অধিকাংশ সময় অহঙ্কারের ব্যবহারিক রূপ। সওয়াবের পরিবর্তে যদি পাপ হয় তাহলে অর্থ, সময় ও জীবন সবই নিষ্ফল। অথচ গর্ব-অহঙ্কার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ কোনো আত্ম-অহঙ্কারী দাম্ভিক মানুষকে ভালোবাসেন না।” (সূরা লোকমান: ১৮)। “নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে কখনো পছন্দ করেননি।” (সূরা নিসা: ৩৬)। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (স.) বলেছেন— যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম)।
মানুষ অহঙ্কার করার অধিকার রাখে না। অহঙ্কার আল্লাহর চাদর। এটাকে টানাহেঁচড়া করা উচিত নয়। কাউকে হাজী সাহেব বললে সমাজে তার প্রভাব বেড়ে যাবে, আস্থা বাড়বে। সেই আস্থাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় প্রতারণার জাল ফেলবে, মানুষের মুখের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকবে, এমন নিরর্থক চিন্তা করা নিতান্তই বোকামি ছাড়া কিছু নয়। হজ করতে অর্থ ও শারীরিক শক্তির প্রয়োজন রয়েছে। যা সালাত ও সওমের জন্য প্রয়োজন হয় না। যারা হজ করতে যাবেন তাদের এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
প্রত্যেক ইবাদতের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইবাদত কবুলের শর্তসমূহ পূরণ করলে আশা করা যায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদের অহঙ্কারমুক্ত করে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমীন।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
http://www.dailybartoman.com/details.php?id=14820
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই নিয়ে একবার এক আত্মিয় একজনের নাম লিখার সময় আমাকে বলে হাজি লিখতে। আমি প্রশ্ন করি সেক্ষেত্রে আমার নামের আগে তো নামাজি লিথতে হবে। কারন আমি দিনে পাঁচবার ফরজ আদায় এর চেষ্টা করি আর রতিনি একটা ফরজ আদায় করে সেটা লিখবেন!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন