যাকাত সম্পর্কে শর’য়ী বিধান : স্বর্ণের তোলা ও ভরি নিয়েও রয়েছে নানা অস্পষ্টতা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ২৫ জুলাই, ২০১৪, ০৪:০২:৪৫ রাত
লেখক : মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী
যাকাত শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র, বিশুদ্ধ, প্রবৃদ্ধি, প্রশংসা। (আল-ওয়াসীত)। তবে আল কুরআনের ১৮ সূরার ২৯ টি আয়াতে যাকাত শব্দটির বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। (ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা)। শরিয়তের নির্ধারিত শর্তানুযায়ী কোন ব্যক্তির নিজ সম্পদের একটি নির্র্দিষ্ট অংশ কোন নির্ধারীত খাতে কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া মালিকানা হস্তান্তরকে যাকাত বলে। এটি ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। হিজরী দ্বিতীয় সনে যাকাত ফরজ হয়। যাকাত বছরে একবার আদায় করতে হয়। বছরের যে কোন সময় সম্পদের এক বছর পূর্ণ হতে পারে। ব্যক্তি নিজ নিজ সময় আনুযায়ী পূর্ণ বছর হিসেব করে যাকাত দিবেন। তবে সাহাবায়ে কেরাম বেশিরভাগ রমজান মাসে যাকাত আদায় করতেন। যাকাতদানে যাকাতদাতার সম্পদ কমে না বরং বৃদ্ধি পায় এবং তার অন্তর কৃপণতার কলুষতা থেকে পবিত্রতা লাভ করে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে যাকাত। হযরত আদম আ. এর যুগে নতুন কোন শরীয়তের কোন প্রয়োজন ছিলনা। হযরত নূহ আ. এর যুগে নতুন শরীয়তের প্রবর্তন শুরু হয়। তবে দীন সব সময় এক ও অভিন্ন। কিন্তু বিভিন্ন নবী ও রাসুলের যুগে শরী’য়াহ ভিন্ন ভিন্ন ছিল। এ সত্ত্বেও সালাত ও যাকাত সকল নবী ও রাসূলগণের যুগেই চিরন্তন শর’য়ী বিধান হিসেবে কার্যকর ছিল।
আল কুরআনে যাকাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ যারা যাকাত প্রদান করে না, আর তারাই পরকালে অবিশ্বাসী” (সূরা হা-মীম সাজদাহ,আয়াত: ৭)। “মানুষের ধন-সম্পদে প্রবৃদ্ধি সাধিত হবে বলে তোমরা সুদে যা দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তা-ই বৃদ্ধি পায় ; প্রকৃতপক্ষে তারাই সমৃদ্ধশালী।”(সূরা রুম, আয়াত:৩৯)। “আমি তাদের প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং ভাল কাজের আদেশ দেবে ও মন্দকাজ থেকে নিবৃত্ত করবে। সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর হাতে। (সূরা হাজ্জ, আয়াত:৪১)। “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না ওদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও যে, জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এতো তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করেছিলে। সুতারং যা তোমরা পুঞ্জিভূত করেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর।”(সূরা তাওবা,আয়াত:৩৪-৩৫)। “দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য যারা যাকাত দেয়না এবং আখিরাতকেও অবিশ্বাস করে।”(সূরা হা-মীম আস-সাজদা,আয়াত:৬-৭)। যারা যাকাত দেয় না তাদেরকে এ আয়াতে মুশরিক বলে অভিহিত করা হয়েছে। “তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর।”, “যদি তারা তাওবা করে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই” (সূরা তাওবা, আয়াত : ১১)। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১১০)। এভাবে আল কুরআনে সালাত কায়েম করা ও যাকাত দেয়ার কথা একত্রে ২৫ বার এসেছে। সতন্ত্রভাবে সাতবার এসেছে। (কুরআনের পরিভাষা,পৃ.১২৯)। কুরআনের অপর কয়েকটি আয়াতে ‘যাকাত’কেই বোঝানো হয়েছে ‘সাদাকাতুন ’ বলে। এ দৃষ্টিতে যাকাত ও সাদাকাতুন শব্দ দু’টি একই অর্থবোধক। তবে কোথাও কোথাও ভিন্ন মতেরও উল্লেখ রয়েছে।
যাকাত না দিলে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।“ হযরত আবু হুরায়রাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল স. বলেছেন, যাকে আল্লাহ তা’য়ালা প্রচুর সম্পদ দান করেছেন সে যদি তার যাকাত আদায় না করে তবে কিয়ামত দিবসে তার সঞ্চিত সম্পদ বিশাল আকার বিষধর সাপের আকৃতি ধারণ করবে, যার চোখের উপর দু’টি কালো চিহ্ন থাকবে। সে ব্যক্তিকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ।” (বুখারী) । “স্থলভাগে বা সমুদ্রে সম্পদ নষ্ট হয় একমাত্র যাকাত না দেওয়ার কারণে।” (মাযমাউয যাওয়াইদ)। হাদিসে কুদসীতে উল্লেখ রয়েছে, “যে মালের যাকাত আদায় করবে সে অবশ্যই প্রতিদান পাবে। আর যে তা আদায় করবে না, আমি তার অংশ থেকে (ভিন্ন ভাবে ) আদায় করে নেব।” (আহমাদ,আবু দাউদ ও নাসাঈ)।
যাকাতের প্রকারভেদ : যাকাত চার প্রকার। যথা : ০১. ফসলের যাকাত । ০২.গবাদী পশুর যাকাত। ০৩.সোনা-রূপার যাকাত। ০৪. রোজার যাকাত। যাকে যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর বলা হয়।
যাকাত ফরজের শর্তাবলী : ক. মুসলমান হওয়া। খ. জ্ঞানবান হওয়া। পাগলের ধনের যাকাত দিতে হয় না। যদি তাহার মস্তিষ্ক বিকৃতি সারা বৎসর বিচ্ছিন্নভাবে থাকে।(দুররুল মোখতার, শামী)। গ. বালেগ হওয়া। অপ্রাপ্ত-বয়স্কের মালিকানা সত্ত্বে তাহার যত ধনই থাকুক না কেন উহার কোন যাকাত দিতে হয় না। (হিদায়া )। ঘ. স্বাধীন হওয়া। কারণ, ক্রীতদাসের উপর যাকাত ফরয নয়। ঙ. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। চ. নিসাব পরিমাণ সম্পদের এক বছর পূর্ণ হওয়া । ছ. ঋণ মুক্ত হওয়া।
যাকাত প্রদানের খাত সমূহ : যাকাত প্রদানের আটটি খাতের বর্ণনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,“ (এসব) ‘সাদাকা’ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর-মিসকীনদের জন্যে, এর (ব্যবস্থাপনায় কর্মরত) কর্মচারীদের জন্যে, যাদের অন্তকরণ (দ্বীনের প্রতি) অনুরাগী করা প্রয়োজন তাদের জন্যে, (কোনো ব্যক্তিকে ) গোলামীর (বন্ধন) থেকে আযাদ করা জন্যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের (ঋণমুক্তির) জন্যে, আল্লাহর তায়ালার পথে (সংগ্রামী) এবং মোসাফেরদের জন্যে (এ সাদাকার অর্থ ব্যয় করা যাবে) ; এটা আল্লাহর নির্ধারীত ফরয ; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (সব কিছু) জানেন এবং তিনিই হচ্ছেন বিজ্ঞ, কৌশলী।” (সূরা তাওবা, আয়াত:৬০)। এ আয়াতে ফকির ও মিসকীন দুটি শব্দের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ফকীর শব্দের অর্থ ভিক্ষুক নয়। ফকীর হচ্ছে সে সকল অভাবগ্রস্ত পরিবার যাদের সীমিত আয় দ্বারা তারা স্বচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। পঙ্গু, বেকার, ইয়াতিম, বিধাবা, বাস্তুহারা, অসহায় শ্রেণী এর অন্তর্ভূক্ত। যারা সর্বদা অভাব অনটনে কাটায়, তারাই ফকির। মিসকীন সে সকল অভাবগ্রস্থ দরিদ্রদের বুঝায় যারা আত্মমর্যাদা ও সম্মানবোধের কারণে কারো নিকট অভাব ও দারিদ্রের কথা প্রকাশ করেনা ; অথচ কঠোর শ্রম ও প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও নিজেদের অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনা।
যাকাতযোগ্য সম্পদের বিবরণ : ধন-সম্পদ পবিত্র ও হালাল হতে হবে। হারাম পথে উপার্জিত কিংবা হারাম মালের উপর যাকাত ধার্য্য করা যায় না। স্বর্ণ ২০ দিনার/ মিছকাল বা ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরি (তোলা ) , রূপা ২০০ দিরহাম (৫ উকিয়াহ) বা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরি (তোলা ) / অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসাপণ্য। তৎকালীন সময়ে সাড়ে সাত ভরি (তোলা) স্বর্ণ ও সাড়ে বায়ান ভরি (তোলা) রৌপ্যের মূল্যমাণে সমান ছিল। বর্তমানে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যমান অধিক পরিমাণে ব্যবধান হওয়ায় যাকাতদাতাদের মনে যাকাত না দেয়া ও কম দেয়ার মানসিকতা তৈরী হয়েছে। সারা বছরের খরচাদি বাদে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অর্থাৎ প্রায় ৮৬ / ৮৭.৪৫ গ্রাম সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপ্য অর্থাৎ ৫৯৫ গ্রাম/ ৬১৩ গ্রাম বা মূল্যে সমপরিমাণ সম্পদ থাকে তাকে চান্দ্রবর্ষ (৩৫৪/৩৫৫ দিন) অনুযায়ী শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে হিসেব করে যত টাকা হয় তার যাকাত দিতে হবে। কেননা সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্র বর্ষ ১১/১২ দিন কম। ‘সৌর বর্ষ অনুযায়ী যাকাত দিতে চাইলে শতকরা ২.৫% এর পরিবর্তে ২.৫৮% হারে যাকাত দিতে হবে।’ (ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ যাকাত ; মুফতী শায়খ মুহাম্মদ উছমান গনী)। স্বর্ণ ও রৌপ্য দু’টোই নিসাবের মূল সূত্রের অন্তর্ভূক্ত তাই এ উভয়ের যে কোন একটির মূল্য ধরলেই হবে। বর্তমানে স্বর্ণের মূল্যের তুলনায় রৌপ্যের মূল্য যেহেতু অনেক কম তাই সতর্কতা ও পরহেযগারী হলো অল্পটি নেয়া। এর ফলে যাকাতদাতার সংখ্যা বাড়বে অপরদিকে গরীবের বেশী উপকার হবে। কেননা সামাজিকভাবে মানুষকে ন্বচ্ছলতা এনে দেয়াই যাকাতের একটি উদ্দেশ্য। এছাড়া ইসলামী ফিকহের মূলনীতি হলো, যাকাত ও ওয়াকফের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গরীবদের জন্য অধিক উপকারী সেটিকেই গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যে, তোলা ও ভরি শব্দ নিয়েও রয়েছে নানা অস্পষ্টতা। ‘তোলা’ও ‘ভরি’ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত ওজনের তথা ভরের একক। মূলত তোলা শব্দটির প্রচলন করে ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তারা রুপার তৈরী মুদ্রার প্রচলন করেছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার ঐ মুদ্রার ওজনকে “তোলা হিসেবে প্রমিতকরণ করে। বাংলাদেশে ‘তোলা’র পাশাপাশি ‘ভরি’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়। তোলা ও ভরি একই পরিমাণ কিন্তু নাম ভিন্ন। ভরির ক্ষুদ্রতম একক রতি। ৬ রতি সমওজনে ১ আনা এবং ১৬ আনায় ১ ভরি হয়। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম বা ১ তোলা। ১ তোলা= ০.৩৭৫ ট্রয় আউন্স বা ১১.৬৬৩৮০৩৮ গ্রাম। (উইকিপিডিয়া)। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১ ভরি=১১.৬৬ গ্রাম (প্রায়)। যিনি স্বর্ণের ব্যবসা কিংবা স্বর্ণালঙ্কার তৈরী করেন তাদের কাছে ভরির ওজন ভিন্নতর হয়। গ্রাহকের কাছে বিক্রয়ের সময় তারা পুরো বাজার দর হিসেবে ১ ভরি স্বর্ণ বা রুপার দাম নির্ধারণ করেন। অথচ গ্রাহক যখন ঐ ১ ভরি স্বর্ণ বা রুপা বিক্রয় করেন তখন তাতে অলঙ্কারের আকরিক খাদ নির্ধারণ করে মূল্য প্রদান করেন। তবে স্বর্ণের ক্যারেট অনুায়ী বর্তমান বাজার মূল্য কম বা বেশী হতে পারে। স্বর্ণ সাধারণত : ২৪, ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেটের হয়ে থাকে। ২৪ ক্যারেট ৯৯.৯৯% , ২২ ক্যারেট ৯১.৬০%, ২১ ক্যারেট ৮৭.৫০% এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণকে ৭৫.০০% খাঁটি বলা যায়। এটি আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত। অলঙ্কারের গায়ে লেখা কোড গুলো হলো- ‘৯৯৯৯’ মানে ২৪ ক্যারেট, ‘৯১৬’ মানে ২২ ক্যারেট, ‘৮৭৫’ মানে ২১ ক্যারেট এবং ‘৭৫০’ মানে ১৮ ক্যারেট। তাই অলঙ্কার ক্রয়ের সময়ে এর গায়ে খোদাই করা সংখ্যাটি দেখা যেতে পারে। স্বর্ণের ক্যারেটের উপর নির্ভর করে দামের পার্থক্য হতে পারে। তাই যাকাত দেয়ার সময় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
উট, গরু-মহিষ,ছাগল-ভেড়া,দুম্বা ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয। তবে যে সকল পশু গৃহেই আহার্য খায় কিংবা গৃহাস্থলি কাজে নিয়োজিত তাদের উপর যাকাত ধার্য হয় না। (এহইয়ায়ে উলুমূদ্দীন)। শুধু চারণ ভূমিতে প্রতিপালিত পশুর উপর এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে পালিত পশুর যাকাত ধার্য করা হয়।
নগদ টাকা, বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা, ট্রাভেলাস চেক, ব্যাক চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে অর্ডার, পোষ্টাল অর্ডার, মানি অর্ডার, শেয়ার সার্টিফিকেট, কোম্পানী শেয়ার, ডিও লেটার, সঞ্চয় পত্র, সিকিউরিটি মানি, জামানত, প্রাইজবন্ড, ট্রেজারী বন্ড , ব্যাংকে বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানে রাখা আমানত যেমন- বীমা, এফ ডি আর, ফিক্সড ডিপোজিট, পোষ্টাল সেভিংস, বিশেষ সঞ্চয়, পেনশন স্কিম, স্বেচ্ছা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ডিভিডেন্ট, ফেরত পাওয়ার যোগ্য প্রদত্ত ঋণ, শোপিচ ও মূল্যবান পাথর, ব্যবসায়িক নার্সারী, হার্টিকালচার,বীজ উৎপাদন খামার, কৃষি খামার, বনজ বৃক্ষ খামার, ফলজ বৃক্ষ খামার,ঔষধি গাছের খামার, চা বাগান, রাবার বাগান, ফুল বাগান,তুলা/রেশম/আগর/অর্কিড , মুরগীর খামার, মাছের খামার ইত্যাদি যাকাতযোগ্য সম্পদ।
যাকাতমুক্ত সম্পদ বা দ্রব্যাদি : দোকান ঘর, কৃষি বর্হিভূত জমি, ব্যবসা বাণিজ্য বা শিল্প কারখানার জন্য ঘর (মিল,ফ্যাক্টরী, গুদাম), বসবাসের বাড়ী, পোশাক পরিচ্ছেদ, কাগজ (বই, কলম, ও ছাপানো অন্যান্য জিনিস), ঘরের তৈজসপত্র ও দোকানের আসবাবপত্র, অফিসের যাবতীয় আসবাবপত্র, এক বছরের কম বয়সের গরু, গৃহপালিত পাখি, বা হাঁস-মুরগী, ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি ও মেরামতের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র, অস্ত্রসস্ত্র, যুদ্ধে ব্যবহৃত পশু, পচনশীল ও গৌণ কৃষিজাত দ্রব্য, বীজ হিসেবে ব্যবহৃত শস্য, বছরের মাঝে অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ, ব্যবসার জন্য নয় এমন পুকুরের মাছ, পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত পশু ও যানবাহন, দাতব্য বা সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ যা জনগণেল উপর ও কল্যাণে নিয়োজিত, সরকারি অর্থ বা বায়তুল মাল। মূল্যবান সুগন্ধি, মণিমুক্তা, লোহিতবর্ণ প্রস্তর, শ্বেত পাথর এবং সমুদ্র হইতে আহরিত দ্রব্যসামগ্রীর উপর যাকাত নেই। (বিস্তারীত দ্রষ্টব্য, বুখারী,মুসলিম, তিরমিযি,আবু দাউদ, কিতাব আল যাকাত)।
যে যে ক্ষেত্রে যাকাত প্রদানযোগ্য নয় : ক. মা, বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, এবং তদূর্ধ । খ. ছেলে, মেয়ে, নাতী-নাতনী । গ. স্বামী ঘ. স্ত্রী ঙ. ধনী চ. অমুসলিম।
দারিদ্র্য সমস্যা সমাধানে যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। ইতিপূর্বে যে সব দেশে পুঁজিবাদী অর্থনীতির আনুসরণ কিংবা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সে সব দেশেও দারিদ্র্যতা দূরীভূত হয়নি। অর্থাৎ মানুষের তৈরী মতবাদ দিয়ে কোন সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। যাকাত দেয়া নামায ও রোযার মতোই ফরয। আমরা সঠিক নিয়মে যাকাত দিবো। যাকাত দিতে উৎসাহিত করবো। গরীব-দু:খী মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যাবো এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
http://www.dailybnbnews.com/823
বিষয়: বিবিধ
১৯১৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি কি এই আবদুল কাহহার নেসারী?? যুগান্তরে পড়লামতো তাই দিলাম। যানাবেন প্লিজ
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন