সাপ্তাহিক নামাজীর জন্য শুভ সংবাদ নেই
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ০২ জুলাই, ২০১৪, ০৪:২৭:৩০ রাত
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী
বাংলাদেশ একটি বৃহত্তম মুসলিম দেশ। প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় পাওয়া যায় তার নেক কাজের মাধ্যমে। নেক কাজের মধ্যে সালাত হলো অন্যতম ইবাদাত। সালাত একটি প্রক্রিয়ার নাম। আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। ঈমানের পর ইসলামের প্রধান স্তম্ভ ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে সালাত। ঈমান আনার সাথে সাথেই প্রত্যেক বালেগ ও আকেল লোকের উপর সালাত আদায় করা ফরজ। নামায এর আরবী শব্দ সালাত। সালাত এর আভিধানিক অর্থ দোয়া করা, ক্ষমা চাওয়া, কারো গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনা করা, কারো দিকে মুখ করা, অগ্রসর হওয়া এবং নিকটবর্তী হওয়া। কুরআনের পরিভাষায় সালাত এর অর্থ হলো, আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেয়া, তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়া, তাঁর কাছেই চাওয়া এবং তাঁর নিকটবর্তী হওয়া। শরীয়তে ইহার অর্থ : এক বিশেষ পদ্ধতিতে আল্লাহর গুণগান করা, যাতে রুকু ও সেজদা রয়েছে। সহীহ হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী মুসলমান ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত। প্রতি ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। অনেকেই অজ্ঞতা বশত কিংবা অবহেলা করে শুধু জুমার সালাত আদায় করতে মসজিদে যান, যা অনুচিত। কেউ শুধু শুক্রবার জুমার সালাত, কেউ জানাযা, কেউ ঈদের সালাত, কেউবা রমজান মাসে সালাত আদায় করেন। এ রকম সাপ্তাহিক, বার্ষিক বা মৌসুমি নামাজীর জন্য শুভ সংবাদ নেই। অনিয়মিত নামাযিদের হয়তোব ধারণা যে, জীবনের শেষ প্রান্তে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। সারাক্ষণ শুধু মসজিদে বসে আল্লাহকে ডাকবে। এমন চিন্তার লোক নিতান্তই বোকার স্বর্গে বাস করছেন। শিক্ষা গ্রহন করাও ফরয তবে সালাতের মতো নয়।
হযরত উবায়দা ইবনুস সামেত (রা.)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলে করীম (স.)বলতে শুনেছি, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উপর ফরজ করেছেন। যে লোক উহা যথাযথ আদায় করবে এবং উহার অধিকার ও মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে, উহার হক নষ্ট হতে দেবেনা তার জন্য আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তিনি তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন।(বাদায়ে উসসানায়েও)। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমার হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স.)বলেছেন, যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। যার পবিত্রতা নেই, তার নামায নেই। যার নামায নেই তার দ্বীন নেই। গোটা শরীরের মধ্যে মাথার যে মর্যাদা, দ্বীন ইসলামে নামাযের সে মর্যাদা।(আল-মুজামুস সগীর)। যারা প্রত্যহ নিয়ম-কানুন মেনে সহীহভাবে সালাত আদায় করে তাদের হাতে জান্নাতের চাবি। মহানবী স. বলেছেন, “সালাত বেহেস্তের চাবি।”
এ রজব মাসে মহানবী স. এর মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। মহান আল্লাহ তাকে উপহার হিসেবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত দিয়েছিলেন। পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত উম্মতের জন্য কষ্ট হবে তাই কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারী পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সওয়াব পাবেন।
অনেকেই ধর্মীয় পরিচয় হিসেবে কাগজ-কলমে বা বায়োডাটায় ইসলাম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে ইসলামের নির্দেশ পালন করেন না। যা সর্বদাই অনুচিত। আমাদের সৃষ্টিকর্তা একজনই। তিনি হলেন আল্লাহ। তাঁর আইন না মেনে মানুষের তৈরী আইন মেনে চলা এক ধরনের সীমালঙ্ঘন। কেহ সঠিকভাবে সালাত আদায় করতে না জানলে তাকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। নেক কাজে সহযোগীতা করলে সহযোগীর সওয়াব মোটেই কমবেনা। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-“তোমরা নেক কাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারেই একে অপরকে সহযোগিতা কর,পাপ ও বাড়াবাড়ির কাজে একে অপরের সহযোগিতা করোনা,সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর (সুরা-আল মায়েদা: ০২)। সালাতের সংশ্লিষ্ট ফরজগুলো নিয়ে কোন দ্বিমত না থাকলেও সুন্নতের আমল নিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। মাযহাব ওয়ালাদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও মাযহাব যারা মানেন না তাদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি এক রকম। এ ক্ষেত্রে মহানবীর সালাত আদায় পদ্ধতি কেমন ছিল সেটা জেনে আমল করাই সুন্নাহ পদ্ধতি।আল্লাহ সবাইকে সহীহ জ্ঞান দান করুন। আমীন।।
* সিনিয়র শিক্ষক, গজমহল ট্যানারী উচ্চ বিদ্যালয় হাজারীবাগ, ঢাকা – ১২০৯।
বিষয়: বিবিধ
১১১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন