অন্যের সম্পদ দখল করা জুলুম
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী ০১ জুলাই, ২০১৪, ০৪:১৬:৩৪ বিকাল
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার নেছারী
ইসলামে সম্পদের ধারণা পাশ্চাত্যের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুর মালিক আল্লাহ। পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি মানুষ। তাদের সম্পদের অধিকার প্রদান করা হয়েছে, যাতে করে তারা অপরকে বঞ্চিত না করে সৎ উদ্দেশ্যে তাদের সম্পদ ব্যবহার করতে পারে। হালালভাবে উপার্জিত সম্পদের বরকত ভিন্ন। বৈধভাবে উপার্জন ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত। অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ ভোগ করলে দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। দলবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ কেউ রাতারাতি বহু সম্পদের মালিক হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা ব্যক্তিগতভাবে জমির ব্যবসা করেন বা হাউজিং ব্যবসার জন্য সরকারি অনুমোদন নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যের জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জমি দখলের প্রবণতা দেখা যায়। 'জোর যার-খাস জমি তার'_ এ নীতি সামনে রেখে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। 'দাঁড়াতে পারলে বসতে চায়, বসতে পারলে শুইতে চায়'_ এ অভ্যাস কাজে লাগিয়ে সামান্য জমি ক্রয় করে আশপাশের জমি দখলের নানা ফন্দি অাঁটে। কারও কারও বৈশিষ্ট্য হলো, যে জমির পূর্ণ কাগজপত্র নেই, সরকারি খাস জমি, প্রকৃত মালিক দেশের বাইরে থাকে, বহুজন লোক একই জমির মালিকানা দাবি করে_ এমন জমি ক্রয় করা। কে বেশি জমি দখল করতে পারল এক্ষেত্রেও চলে প্রতিযোগিতা। আবার কেউ কেউ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে আত্মীয়তার মাধ্যমে জনবল তৈরি করে সাধারণ দুর্বল মানুষের ভিটেমাটি দখল করে। আবার কেউ থানা-পুলিশকে প্রতি মাসে মাসোয়ারা দিয়ে নতুন আবাসন গড়ার নামে পরিবেশ নষ্ট করে খাল ও নদী ভরাট করে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদকে বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়। স্বাভাবিকভাবেই ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতা থাকে। নামের আগে-পরে মাওলানা, হাজি, শাহ, সাহেবজাদা, পীরসহ নানাবিধ শব্দকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে। এ ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক কাজ যারা করেন তাদের বিরত থাকা উচিত। কেননা এদের কারণে সমাজের ভালো লোকগুলো আজ অসম্মানিত হচ্ছে। এসব কর্মকা- জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। জুলুম, জালিম ও মাজলুম_ এ তিনটি আরবি শব্দের সঙ্গে কম-বেশি সবাই পরিচিত। অত্যাচার, নিপীড়ন, সীমালঙ্ঘন, কোনো বস্তু যথাস্থানে স্থাপন না করা জুলুমের কোরআনিক অর্থ। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় বিধিবিধান লঙ্ঘন করে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা, হক ও বাতিলের ব্যাপারে হক ছেড়ে বাতিলের অনুরক্ত হওয়াকে জুলুম বলে। যে জুলুম করে সে জালিম, আর যার ওপর জুলুম করা হয় তাকে মাজলুম বলা হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কারও সম্পদকে অন্যায়ভাবে জবর-দখল করে সে নিঃসন্দেহে জালিমের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, 'জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে।' (সূরা আশুরা : ২২৭)। 'যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।' (সূরা আশুরা : ৪২)। জোর-জবরদস্তি করে সামান্য পরিমাণ জমিও যদি কেউ আত্মসাৎ করে তবে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। কেননা হজরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুলুম করে অপরের এক বিঘা জমি আত্মসাৎ করবে, কেয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক জমি ঝুলিয়ে দেয়া হবে। (বোখারি ও মুসলিম)। বোখারি শরিফের আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) ইয়েমেনের শাসনকর্তা হিসেবে হজরত মুআজকে (রা.) প্রেরণকালে বলেছিলেন, 'তুমি মজলুমের অভিশাপকে ভয় করবে। কেননা মজলুমের আর্তনাদ ও আল্লাহর মাঝে কোনো অন্তরায় থাকে না।' এছাড়াও অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে, এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য। জুলুম ও অন্যায় থেকে বেঁচে থাকার জন্য একটি আয়াত বা হাদিস মেনে চলাই তার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। জবর দখল, জোর-জুলুম থেকে বিরত থাকার জন্য তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মানুষ পরকালকে ভয় করলে সে জুলুম করতে পারে না। 'যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম'।
বিষয়: বিবিধ
২৬৩০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন