বাংলাদেশের গণমাধ্যম
লিখেছেন লিখেছেন বঙ্গবীর ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:৪৪:১৯ রাত
জনগণের কাছে সংবাদ, মতামত ও বিনোদন পরিবেশন করা হয় যে সব মাধ্যমে তাকে সহজ কথায় গণমাধ্যম বলা হয়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সাধারণত আমরা ৩ ক্যাটাগরিতে বিন্যস্ত করতে পারিঃ
১। প্রিন্ট মিডিয়া ২। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ৩।ইন্টারনেট কেন্দ্রিক বিভিন্ন যোগোযোগ মাধ্যম।
১।প্রিন্ট মিডিয়াঃ দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্র-পত্রিকা হলো এর অন্তর্ভূক্ত। অতীতে এই পত্র পত্রিকাগুলোর প্রকাশের পেছনে মহ্য উদ্দেশ্য কাজ করতো। তথা ধর্মপ্রচার, সামাজিক সংস্কার, রাজনৈতিক সচেতনতা, মৌলিক মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয় ছিল এর মূল লক্ষ্য। এসবের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষকগণ ছিলেন ধর্মপ্রচারক ও সমাজসঙস্কারক, জ্ঞানিগুনী, নির্লুভ, পীরবুজযুর্গ, যারা ভোগ করেনি শুধু মানব সেবায় ত্যাগ করেছেন সবকিছু। মাওলানা মওদুদী, মা. আকরাম খান, ভাষানী, তর্কবাগীশ, মু. আলী জিন্নাহ, ফজলুল হক, সোহাওয়ারর্দী থেকে ধরে কাজী নজরুল ইসলাম, শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত আজকের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও কবি সকলে এই মহান ব্যক্তিদের আবিষ্কার। আলজামিয়ত, আলহেলাল, দৈনিক আজাদ, তরজুমানুল কুরআনসহ আরও অনেক পত্রিকার উদাহরণ দেওয়া যায়। একসময় এটি ছিল ধর্মপ্রচারের একটি অন্যতম বাহন। জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতনের মুক্কম যেমন অস্ত্র ছিল তেমিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও মহানাদ। ধুমকেতু ও হক কথার উদাহরণ দেওয়া যায়।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিস্তারে এর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। কিন্তু সেটি আজ অপসংস্কৃতি বিস্তারে শয়তানের প্রধান সহযোগী। পত্রিকায় অর্ধনগ্ন, নগ্ন ছবির ছড়াছড়ি, যৌন উদ্দীপক গল্প, মডেলিং এর বিভিন্ন পোজ, বিভিন্ন পর্নো নায়িকাদের জীবনী সম্বলিত কদর্জ কাহিনী ও ছবি প্রকাশ করে পাঠককে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন আজগোবি, উদ্দেশ্যমুখী, জাতিবধ্বংসী ও উসকানীমূলক খবর ছাপা হয়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয়, গোয়েন্দা ও পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রাজবন্দীর ব্যক্তিত্ব ও মানহানীকর রিপোর্টগুলো প্রকাশের মাধ্যমে হলুদ সংবাদিকতার প্রকাশ ঘটে।সব পত্রিকা মুক্তচিন্তা, নিরপেক্ষতা, দেশের সার্বভৌমত্ব, বাক স্বাধীনতা ও জনগণের পক্ষে শক্তির দাবিদার। বাস্তবে কি তাই ? খবরকে কি খবরের মত পরিবেশন করে ? নাকি পত্রিকার পলিসির মেশিনে কাটছাট করে নিজস্ব রং মাখিয়ে প্রচার করে ? মুক্ত চিন্তা সেতো মোবাইল কোম্পানির মত শর্তযুক্ত সুবিধা। পত্রিকাগুলো রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক আবর্তিত হচ্ছে। যে পত্রিকা যে দলের তার পক্ষে সাফাই গায়। অন্য দলের বদনামের ফিরিস্তি প্রকাশ করে। এদেশের মানুষকে বিভিন্ন দলে, মতে ভাগ করে ফেলেছে।শাহবাগের পেতাত্মাদের যাতে বাংলাদেশে সমাধৃত করা যায় সে জন্য কি না পরিশ্রম করেছে। আপনার মুক্ত চিন্তা ও বাক্ স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ মতামত হজম করার মত কোন পত্রিকা বাংলার জমিনে পয়দা হয়নি। ইদানিং ব্রহ্মনী সংস্কৃতি চালু হয়েছে এসবের বদৌলতে। লেখার বিষয়বস্তু নয় লেখকের পরিচয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েই চলে সম্পাদকীয় নীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডক্টর, প্রফেসর, সচিব, রাজনৈতিক দলের সভাপতি, সেক্রেটারী, রাষ্ট্রদূত এধরণের ব্যক্তিদের লেখা ঈশ্বরের বাণীর মত প্রকাশ করে। আসলে এই লাইনে সক্রেটিসের সংখ্যা বেশি। এই জন্য মানুষের কাছে এদের নাম সাংঘাতিক।সামান্য টাকার জন্য যেমন পুলিশ গ্রেপ্তার করে, ঠিক এরাও অল্প টাকায় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির কাপড় খোলে। দালালী, বাটপারী, প্রতারণা, চামচামী, হুমকী দিয়ে পণ আদায়ে পুলিশকে ডিঙ্গিয়ে গেছে।দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে শান্তিপূর্ণ মিছিলে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষিত হওয়ার দৃশ্য দেখা যায় না, দেখায় যে প্রতিবাদিরা সন্ত্রাসী। গাছ কাটার, ইটের গুড়ি, লাঠির সরেজমিন প্রতিবেদন, সরকারের জনপ্রিয়তা, বিরোধী দলের অগ্রহনযোগত্যার আজগুবি জনমত জরিপ এরা প্রকাশ করে।
২। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বিবরণ ও সচিত্র প্রতিবেদন সহ মানব জীবন ও সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্য অবহিত করে থাকে। রেডিও, টেলিভিশন এর উদাহরণ। যেহেতু সংবাদপত্রের চাইতে এর শক্তি হাজার গুণ বেশি। মানবসভ্যতায় এর প্রভাব আকর্ষণে জাদুর মত, ধ্বংসে এটমের চেয়ে ক্ষতিকর। এই মিডিয়া চাইলে অসম্প্রদায়িকতা, গণঐক্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগ, ধর্মের প্রতি অনুরাগ, মাতাপিতার প্রতি ভালবাসা, দেশের প্রতি আনুগত্য ও দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের জন্য অনবদ্ধ্য অবদান রাখতে পারত।কিন্তু আজ এদের বদৌলতে ব্যক্তি হিসেবে আমি বিশ্বাসে নাস্তিক বা সংশয়বাদী, কর্মে শয়তান, নাচ গানে ইনডিয়ান, পোষাকে ইংলিশিয়ান, ঘরের আসবাবপত্র থেকে ধরে সবকিছু মিলিয়ে মস্ত বড় প্রগতিবাদী, ইসমার্ট, জেন্টালম্যান হয়েছি। নাচেগানে, অভিনয়ে, বিজ্ঞাপনে নারীর বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শনই এদের প্রধান কাজ।পিরিয়ডের প্যান্টির বিজ্ঞাপন কি এই সভ্যতার কলঙ্ক নয় ? সংকোচ নয় সচেতনতা বলে বেহায়াপনাকে আমদানি করতে চায় এরা। যৌবন সেভ করার কুফল, বয়সন্ধিকালকে লাম্পট্টের দ্বারা যথোচ্ছভাবে ভোগের মাধ্যমে কাজে লাগানোর সুফল বুঝাচ্ছে সুন্দরভাবে। একতরকারীতে রসনা পরিতৃপ্ত হয় না বলে পরকীয়ার পদ্ধতি, ঘরভাঙ্গার কৌশলগুলো ভালোভাবে দেখাচ্ছে। এই মিডিয়াই আংকেল-আন্টি নামক ইথারের মাধ্যমে পবিত্র সম্পর্কের মানব সন্তানকে প্রেমের ন্যাকামোতে হাবুডুবু খাওয়াচ্ছে। অনৈতিক চরিত্রে, টুপি, দাড়ি, জোব্বা, পাগড়ীর ব্যবহার ও মসজিদের ইমাম, মৌলভী, পীর, বুজর্গের দুষ্ঠ চরিত্রের অভিনয়ের মাধ্যমে কুমলমতি শিশুদের মনে অবিশ্বাস ও ঘৃণা সৃষ্টি করাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাত্যাহিক খবর-পরিবেশনেও লুকোচুরি খেলছে।বিরুধী দলের শান্তিপূর্ণ বিশাল সমাবেশকে দেখানো হয় বিশৃংখলাপূর্ণ কয়েকশত মানুষের সমাগম হিসেবে। আশ্চর্যের বিষয় জামাত-শিবির লক্ষাধিক মানুষের মিছিল ও সমাবেশ হলেও তা দেখানো হয়না। কিন্তু ১৫/২০ জনের একটি দল যদি গাড়ি ভাঙ্গে সেটি বারবার প্রদর্শিত হয়। ইদানিং ঘটে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া "অন্যান্য আসন” এর তাৎপর্য কি ? অতীতের নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে রাজনৈতিক এতিম, শ্রোতার চাইতে বক্তা বেশি ধরনের রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত আসন সমগ্র দেশের মধ্যে ১-৫ পর্যন্ত প্রাপ্তদের অন্যান্য ধরে হিসেব করা হতো।কিন্তু এবারে জামায়াত চেয়ারম্যান ৩৬, ভাইস চেয়ারম্যান ১১৭, মহিলা ৩৪টি আসন পাওয়ার পরো অন্যান্যতে ধরা হলো কেন ?আর টকশো সেতো বিশেষ একটি দলের তার কাজকে যুক্তি ও কুটচালের মাধ্যমে জায়েজ করা বা উহাকে গ্রহনীয় করে তোলা। টকশোতে দেখবেন বামপন্থী ৩/৪ জনে ডানপন্থী এমন একজন যিনি মধ্যম মানের অথবা সরকার পন্থী ৩/৪ জন বিরোধী দলের ১ জন।যেহেতু পরিচালকই প্রশ্নের অবতারণা করেন সেহেতু তিনি বিষয় ঠিক করেন, মোড়ঘোরান, কথাও বেশি বলেন, বিরোধী ব্যক্তি একটু জমাতে পারলেই স্টপ করে অন্যকে সুযোগ দেন।মিডিয়ার বর্তমান অবস্থা এমন যে, এখন বাকশালের মতো পত্রিকা নিষিদ্ধ করতে হচ্ছে না।মিডিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাকে কিভাবে পথ চলতে হবে? আমার এক বন্ধু সাম্প্রতিক সরকারের সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে সাংবাদিকদের নিরবতার জন্য বিষ্ময় প্রকাশ করলে আমি বলি এরা কি আগে কোনদিন সরকারের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছে ? বরং যে সব মিডিয়া প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে বন্ধের জন্য সরকারকে উৎসাহের ইন্ধন যুগিয়েছে।তখন বন্ধু বলল, এটাতো তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমি বললাম, গোলামের কাজই হলো অনুগত থাকা।কোন দাসের নৈতিক ভিত্তি নেই যে, সে তার প্রভূর বিরুদ্ধে তার কাজের প্রতিবাদ করবে।
৩।ইন্টারনেট কেন্দ্রিক মিডিয়া বিভিন্ন যোগোযোগ মাধ্যমঃ ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ই-মেইল কেনন্দ্রিক সারা বিশ্বে বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। সবকিছুই সহজে কাছে পাওয়া যায়।বিভিন্ন ব্লগে লিখতে পারা যায়।অনেক বন্ধুদের সাথে বন্ধুকত্ব করা যায়।উপরোক্ত দুটি মাধ্যম থেকে এটি খুব দ্রুত। বিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনার খবর উপরোক্ত দুই মাধ্যমের কয়েক ঘণ্টা আগে এখানে পাওয়া যায়। পত্রিকার খবরও এখানে পাওয়া যায়।সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি আপনার স্বাধীন মতটি যখন ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক। অন্ত্ত মত প্রকাশে আপনি স্বাধীন, যা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বপ্নের চেয়েও কঠিন।অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে, দিনের পর দিন। অনেক সময় লেখার সাইজ একটু বড় হলেও বাদ। আপনার লেখাকে কাটছাট করতে মোটেও দ্বিধা করবে না, যদিও আপনার স্বাধীন চিন্তা পদদলিত হয় তাতে কিছু আসে যায়না।আসলে শর্তের মধ্যে লেখনী শক্তির বিকাশ ঘটে না। তাই আমি নিজে স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য এই মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছি। যদিও সরকার এখানেও নজরদারি বাড়াচ্ছে চাচ্ছে এটাকে খাঁচাবন্দী পাখি বানাতে। ইনশাআল্লাহ এটাতে সরকার সফল হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন