দীর্ঘ অপেক্ষমান নিজামীর রায় হলো না..............
লিখেছেন লিখেছেন রেড সিগনাল ২৪ জুন, ২০১৪, ০৪:৪৮:১৩ বিকাল
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আবার অপেক্ষমাণ রেখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আজ মঙ্গলবার এই মামলার অপেক্ষমাণ রায় ঘোষণা করার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা নিজামী ‘অসুস্থ’ হওয়ায় তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া সম্ভব নয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।
এরপর এ বিষয়ে শুনানি শেষে তৃতীয় দফায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখার আদেশ দেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ বেলা ১১টার দিকে এজলাসে আসেন ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য।
এরপর নিজামীর অনুপস্থিতিতে আজ রায় ঘোষণা করা হবে কি না, তা নিয়ে শুনানি হয়। ওই শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. আলী ও আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। ওই প্রতিবেদেন অনুসারে নিজামী অসুস্থ। আইন পর্যালোচনা করে আসামির অনুপস্থিতিতে রায় প্রদান আমরা যুক্তিসংগত মনে করছি না। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রায় দেওয়া হবে। মামলাটি রায়ের জন্য আবার অপেক্ষমাণ রাখা হলো।’
একই সঙ্গে জেল কর্তৃপক্ষকে নিজামীর বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
নিরাপত্তা: আজ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় আট হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।
নিরাপত্তাব্যবস্থার অংশ হিসেবে আজ ট্রাইব্যুনালের দুটি প্রবেশপথে র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাইরে টহল দেয় পুলিশের সাঁজোয়া যান (এপিসি)।
ট্রাইব্যুনালের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। একই সঙ্গে তল্লাশিও চলে।
মত্স্য ভবন থেকে হাইকোর্ট ও দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
দীর্ঘসূত্রতা: ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলাটি প্রথম দফায় রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তত্কালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর।
৫৩ দিন পর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শোনেন।
২৪ মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়।
গতকাল সোমবার বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশে বলেন, মঙ্গলবার নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
গতকাল রাত আটটার দিকে নিজামীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। কারাগারে নিজামী ‘অসুস্থ’ হওয়ায় তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে আনা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আজ তৃতীয় দফায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখলেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন ছাড়াও নিজামীর বিরুদ্ধে মামলাটিতে দীর্ঘসূত্রতার আরও কারণ আছে। এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণই চলেছে প্রায় দেড় বছর। এ ছাড়া নিজামী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি হওয়ায় তাঁকে সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হতো। এ জন্যও এই মামলার কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। গত ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ: ১৯৪৩ সালে সাঁথিয়ার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নিজামী একাত্তরে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের (জামায়াতের তত্কালীন ছাত্র সংগঠন, বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবির) সভাপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক বাহিনী আলবদরের প্রধান ছিলেন।
নিজামীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, একাত্তরে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা বা রাজধানীর নাখালপাড়ায় পুরাতন এমপি হোস্টেলে আটক মুক্তিযোদ্ধা রুমী, বদি, জালাল, সুরকার আলতাফ মাহমুদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে স্থাপিত রাজাকার-আলবদরের ক্যাম্পে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের যে নীলনকশা বাস্তবায়িত হয়, তার সঙ্গে নিজামীর সম্পৃক্ততা ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, এসব অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পেরেছে, একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের জন্য নিজামীর দায়ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তবে আসামিপক্ষের দাবি, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এসব অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়নি। এ জন্য নিজামীকে খালাস দেওয়া উচিত।
ফিরে দেখা: নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের দশম মামলার রায় দেবেন।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল-১ জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বর্তমান নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় দিয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনালে বিএনপির নেতা ও ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র পলাতক এম এ জাহিদ হোসেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে।
আর ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা, বিএনপির নেতা আবদুল আলীম, জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদ, পলাতক চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলার রায় দিয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ।
ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত নয়টি মামলার রায় দিলেও আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে একটির। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার আপিলের রায় দেন সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগ, মৃত্যুদণ্ডের ওই রায় ১২ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। সাঈদীর আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে গত ১৬ এপ্রিল। এর রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর আজ নিজামীর মামলার রায়
বিষয়: বিবিধ
১১১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন