“কথিত প্রগতিশীলদের প্রতারণা
লিখেছেন লিখেছেন উত্তম বলুন অথবা চুপ থাকুন ০৫ জুলাই, ২০১৪, ১১:৪৩:২১ সকাল
একজন প্রগতিশীল নারী যখন প্রগতিশীল পুরুষদের দ্বারাই বিভিন্ন প্রকারের হয়রানির শিকার হয়, তখন তাকে যদি বলা হয় ইসলামের পর্দার (প্রথা নয়) বিধানের কথা, তখনই সে বলা শুরু করে যে কোন হুজুর কবে যেন কাকে রেপ করেছে, মাদ্রাসার ছাত্রীও তো পর্দা করে, তাকেও তো ইভটিজিঙের শিকার হতে হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
চোখ বন্ধ করে এই কথাগুলো ওইসব মেয়েগুলোর শয়তানি ছাড়া আর কিছুই নয়। হ্যাঁ তাদের হয়রানি করা হয় কিন্তু তারা শুধু সেগুলো দিয়ে সীমপ্যাথী আদায় করতে চায়। তারা লম্পট পুরুষদের চরিত্রটিকে সমগ্র পুরুষ সমাজের উপর লেপন করতে চায়, এই জন্যে যে সকল পুরুষই এমন, তাই এখানে পর্দার কোনকাজ নেই, পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক করতে হবে, ব্লা ব্লা...!
প্রগতিশীল নারীরা যে ব্যাপারটিকে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বলে সেটিকে আমরা মৌলবাদীরা তথা ইসলাম বলে পুরুষদের পর্দা বা হিজাব। অর্থাৎ তারা পর্দার বিধানটির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে কিন্তু শুধুমাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রে। তারা এখানে ইসলামকে টানতে চায় না কারণ ইসলামকে টানলে তাদের নিজেদের দিকে আঙ্গুল তুলতে হয়।
আমাদের অনেক ভাই যেমন মেয়েদের পর্দা হিজাবের গুরুত্ব বুঝে কিন্তু ঠিকই নিজের পর্দার খবর নেই এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাপার রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করে বুঝাতে চায় যে সকল দোষ মেয়েদের, তেমনি এইসব প্রগতিশীল নারীরাও কিছু হয়রানির কাহিনী বর্ণনা করে আর যখনই তাদের পর্দার প্রসঙ্গ আসে, তখনই তারা কোন হুজুর কবে কি করেছে তার ফিরিস্তি বর্ণনা করে!
এদের দুই প্রকারই নিজেদের জাস্টিফাই করতে চায়। কিন্তু ‘আমাকে যে একমাত্র আল্লাহই জাস্টিফাই করতে পারেন’ এটা তারা ভুলে যায়। তারা প্রগতিশীলতা কে বা চিরাচরিত পর্দাহীনতা যেটি এতদিন স্বাভাবিক ভাবেই চলে এসেছে সেটকে দোষ দিতে চায় না। অর্থাৎ আমাদের মা বোনেরা যেভাবে কাপড় পরিধান করে, মাথা ঢাকেন কখনো ঠিকমত ঢাকেন না আবার তারা আল্ট্রামডার্নও না, সোজা ভাষায় বাঙালি নারী বলতে যেই দৃশ্যটি চোখে ভেসে ওঠে সেই অবয়বটিকে ননমাহরাম পুরুষের সামনে উপস্থাপনকে দোষ দিতে চায় না, দোষ দেয় না। আবার তারা ইসলামের বিধানও ঠিকমত মানতে চায় না!
তাদের প্রতারণা এটাই মূলত এটাই যে তারা প্রগতিশীল পুরুষরা যখন অন্যায় করে, তখন তারা নিজেদের প্রগতিশীলতায় দোষ খুঁজে পায় না অথবা দোষ দিতে চায় না কিন্তু কোন কথিত হুজুর কবে কি করেছে, তার উপর ভিত্তি করে ইসলামের পর্দার বিধানকে অবজ্ঞা করে এবং এক্ষেত্রে অকার্যকর বলে বিবেচনা করে। এটাই তাদের চরম প্রতারণা তথা মুনাফিকি। আল্লাহ এদের দুনিয়া থেকে লাঞ্ছিত করা শুরু করেন, যার প্রমাণ অহরহ।
তারা একটা উদাহরণ দেয় যে হিজাবী মেয়েরাও ইভটিজিঙের শিকার হয়, আর অনুসিদ্ধান্ত টানে যে হিজাব অকার্যকর এক্ষেত্রে। জ্বী, আমি নিজেও বোরখা পরা মেয়েদের এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে দেখেছি। আল্লাহর কসম! একমাত্র হিজাবই কার্যকর এক্ষেত্রে। জ্বী আমি যখন তাদের ভাষায় বলব যে ছেলেগুলোর সংযত থাকা উচিত ছিল, তারা মেনে নিবে কিন্তু যখন বলব মেয়েগুলো ওখানে কিভাবে গেল যেখানে এমন ছেলেরা থাকতে পারে, তখনই শুরু হবে কাঠমোল্লা, মৌলবাদী, সেকেলে যতসব অপবাদ। ইসলামে কি স্পষ্ট বিধান নেই যে কোন মেয়ে মাহরাম ব্যাতীত ননমাহরামের কাছে যেতে পারবে না?
কোন মেয়ে বাহিরে গেলে তার সাথে যদি তার বাপ, ভাইয়েরা সর্বদা থাকে তবে কি কোন ইভটিজিঙের ঘটনা ঘটতে পারে? অথবা ননমাহরাম ছেলেদের কাছে যে মেয়েদের একাকী পাঠানো হয়, এটার বিধান কি ইসলাম দেয়? না দেয় না। এরা এটাই পর্দার লঙ্ঘন এর এটাই ওই ইভটিজিঙের শিকার দৃশ্যত হিজাবী মেয়ের পর্দার লঙ্ঘন। মূলত তার বাপ, ভাই তথা মাহরাম পুরুষরাই তার পর্দা লঙ্ঘন করেছে, করিয়েছে। এরা মূলত পর্দার বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট জানে না। এমনকি মডারেট মুসলিমদের অনেককেই দেখেছি যে কাপড়ের পর্দাটুকু জানলেও এর বাইরে যে যে আরো কতগুলো বিধান আছে তা সম্পর্কে অসচেতন!
পরিমল আর পান্নাদের কাছে আপদ মস্তক পর্দা করা মেয়েকে একাকী পড়তে পাঠালে আপনি কি মনে করেন যে আপনি আল্লাহর বিধান হিজাব পালন করছেন? কখনোই না, ওই মেয়ে আর মেয়ের অভিভাবক কেউই আল্লাহ বিধান হিজাব পালন করছে না। করলে কিভাবে সে ননমাহরাম পুরুষের কাছে আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টিগুলোর মধ্যে একটি, অর্থাৎ নারীকে পাঠাতে পারে কোন মাহরাম পুরুষ ছাড়া?? ওই মেয়ের বাপ-ভাইকে কি আল্লাহ ঘরে চুড়ি পরে বসে থাকার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন? তাদের আল্লাহ চরমভাবে এই দুনিয়াতেই লাঞ্ছিত করেছেন। যারা আল্লাহর বিধান পর্দা সম্পর্কে অসচেতন আর দুই টুকরা কাপড় গায়ে পেঁচিয়ে যারা মনে করে যে আমি বা আমার মেয়ে তো পর্দা করছেই, আর দুনিয়ার লোভে মেয়েদের ননমাহরাম পুরুষদের কাছে পাঠায়, জ্ঞান অর্জনের নাম করে, অর্থ উপার্জনের নাম করে, আল্লাহ তাদের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়েছেন চরমভাবে লাঞ্ছিত করে।
ওই সব প্রগতিশীল বোনদের বলছি, আপনারা কি মনে করেন যে আল্লাহ আপনাদের নিরাপত্তা দিবেন যেখানে আপনারা আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করেন, আর যদি নাই করেন তাহলে আপনারা অন্তত বিধান জানতেন অথবা এর সম্পর্কে স্পষ্ট জানার চেষ্টা করতেন এবং কোন কুযুক্তি দিতেন না যে কোন মাদ্রাসায় কি হয়েছে, তাই পর্দার বিধান কার্যকর না। এইসব মুনাফিকি করলে, দুনিয়াতেও ধর্ষিত হতে থাকবেন আপনাদের প্রগতিশীল (মাঝো মাঝে আপনাদের উল্লেখিত হুজুরদের দ্বারা, তারাও নাকি কি যেন করে, পত্রিকায় হয়ত পড়েছেন) পুরুষদের দ্বারা আর আখিরাতে তো চরম অবর্ণনীয় শাস্তি আছেই।
পর্দা কি শুধু আপাদমস্তক কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা? না, সেটা সহ এমন কোন স্থানে একাকী না যাওয়া যেখানে ননমাহরাম আছে, যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করতে পারে। আর প্রত্যেকটা নারীর মাহরাম পুরুষরাও তার বিধানের অংশ। ননমাহরাম নারী দেখলে চোখ নামিয়ে নেয়াই শুধু নয় বরং নিজেদের মাহরাম নারীদের নিরাপত্তা দেয়াও পুরুষদের হিজাবের অংশ। আপনার বোনের, আপনার মেয়ের কি হল, সেই খবর যদি পুরুষ না রাখে, তাদের নিরাপত্তা দিতে অসচেতন থাকে তবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুনের সুসংবাদ! অর্থাৎ হিজাব পর্দার বিধান সমগ্র মানবজাতির নর-নারীভেদে সকলের উপর বিভিন্ন বৈচিত্রতা নিয়ে বর্তায়।
ইসলাম যা বলে তাই যুক্তি। এর বিপরীতে যে যুক্তি দেয় সে হল সোজা ভাষায় শয়তান। কে কি করল, তার উপর ইসলামের বিধানের কার্যকারিতা অথবা অকার্যকারিতা (অসম্ভব) প্রমাণ হয় না। আমার রাসূলুল্লা (স) বলে গিয়েছেন, আমি বিনা সংকোচে মানবো, এই না হলে কি আমি আসলেই মুসলিম হতে পারব আল্লাহ চোখে? কোন হুজুর, কোন পর্দানশীল মেয়েকে রেপ করেছে, এর দোহাই দিয়ে আমি যদি নিজের পর্দার বিধান অমান্য করার পক্ষে যুক্তি দেই তবে সেটা হবে ইবলিশের থেকেও বড় ইবলিশিয়াত, আর অনেক বড় মূর্খতা। আল্লাহ আমাদের শয়তানে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করুক আর আমাদের সঠিক পথ দেখাক। -আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার এই কথাগুলো আমার খুব ভাল লেগেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন