“ফিতরাহ যখন ফিতনাহ”
লিখেছেন লিখেছেন উত্তম বলুন অথবা চুপ থাকুন ০২ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৪৮:৫৮ বিকাল
কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে, কোন এক ব্যাচের প্রথম ক্লাসে ছেলে মেয়েরা আলাদা হয়ে সারি করে বসেছে। এরকম দেখে তাদের এক শিক্ষক বলল, “মনটা আরো বড় করো, এখন তো আর তোমরা ছোট নেই যে আলাদা বসবে!”
তাহলে ওই শিক্ষক বলতে চাচ্ছেন যে মনটা বড় করতে হলে, মুক্তমনা হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে মেয়ে পাশাপাশি বসতেই হবে। আর যারা শিশু তাদের মন ছোট, তারা এখনো সংকীর্ণমনা, তাই তারা আলাদা আলাদা বসে। অথচ আমরা বাংলা ব্যাকরণে পাই যে, শিশুর কোন লিঙ্গ নেই। আর শিশুরা একসাথে বসলে না বসলে ব্যাপারটা যতটুকু না গুরুত্ববহন করে তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ববহন করে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েরা একসাথে উঠাবসা করলে, যা এককথায় শয়তানি কাজকর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়।
মানুষের সহজাত ফিতরাহ যে তারা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আসক্ত। এখন শয়তান এই ফিতরার হালাল উপায়গুলো আচ্ছাদন করে রাখে আর হারামের দিকে নিয়ে আমাদের ফিতারাকে ফিতনায় পরিনত করে। খুব অল্প কিছুদিন যে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করেছি, সেখানে আমার মাথায় একটা কথা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, “ভার্সিটি লাইফটা অনেক মজার, ইনজয়ের। এখানে ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু থাকবে। তাদের কারো সাথে তোমার প্রণয়ও ঘটতে পারে।”
ভার্সিটি পড়ুয়া অনেক ভাইয়েরা রসিয়ে রসিয়ে তাদের কীর্তিকলাপ বলত আর ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সকলেই হেসে কুটিকুটি হত। তাদের মনে ঢুকিয়ে দেয়া হত যে এখন তুমি তোমার বিপরীত লিঙ্গের সাথে যে রকম লুতুপুতু করতে চাচ্ছ কিন্তু পারছ না, তা তুমি ভার্সিটি লাইফে অনায়াসে করতে পারবে। -_- আমার একটা বড় বোন, কয়েক বছর আগে তিনি ভার্সিটিতে চান্স পান নি। এই কারণে তার মন খুব খারাপ। আমি তাকে বললাম, এতে তো ভালোই হয়েছে, আর পড়ালেখার ঝামেলা নেই, আর এত পড়ে কিই বা করবেন। তিনি উত্তর দিলেন যে ভার্সিটি লাইফটা পড়ালেখা ছাড়াও অনেক ইনজয়ের, সেটা তিনি মিস করবেন। এখন বুঝতে পারছি যে লুতুপুতু করার সুযোগ হারানোর কারণেই তিনি আতিসয় দুঃখিত হয়েছিলেন!
দ্বীনদার ভাই থেকে শুরু করে জাহিল ভাইদের, সাথে নিজেকেও দেখেছি এই লুতুপুতুতে আক্রান্ত হতে। দ্বীনদার ভাইরা রাগ করবেন না। এই লুতুপুতু হল একধরনের ফ্রি-মিক্সিং যেটা কথার মাধ্যমে হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল জগতে এটা মূলত কথা নির্ভরই। আজ ফিতরাগুলো সমাজে ফিতনা রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। ফ্ল্যাশ মব তারই একটা উদাহরণ। এতদিন মেয়েদের সাথে হাসাহাসিই করা যেত আর এখন সকলের সামনে কোমর দুলিয়ে নাচাও সম্ভব। এর একটা ব্যাপার খেয়াল করেন যে মিড়িয়া ব্যাপারটি হাইলাইট করছে, মানুষের মনে এটিকে হালাল বানানোর এবং এটিকে সমাজের সাথে মিশিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তারা পারছেও, আমাদেকের মেরুদন্ডহীন অভিভাবকদের কল্যাণে।
এইসব মেরুদন্ডহীন অভিভাবকরা একটা জিনিস আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। তা হল তাদের যে পাত্রে রাখা হবে তারা সে পাত্রের আকার ধারণ করবে। এখন তাদেরকে ইসলাম জোর করেই গেলাতে হবে, তাদের যদি উদার, বাকস্বাধীনতা টাইপের গণতান্ত্রিক কথা দিয়ে ইসলাম গেলাতে চান, যেটা মডারেটরা বলে থাকে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করবে। তাদের কে বনী ইসরাইলদের মত ফেরাউনের মুখে ইসলাম গেলাতে হবে। না হলে কখনোই বাবারা তাদের মেয়েদের পরিমলদের কাছে পড়তে পাঠানো বন্ধ করবে না। মায়েরা কখনোই নিজেরা বোরখা পরে মেয়েকে বেপর্দা রাখা বন্ধ করবে না।
একশ্রেণীর মানুষ লম্পট হয়ে গিয়েছে, আরেক শ্রেনীর মানুষ লম্পট হওয়ার পথে আর আরেক শ্রেণীর মানুষ লাম্পট্যে আকৃষ্ট। আপনি জাহিল ছেলেদের আড্ডার মাঝে একদিন বসতে পারলেই বুঝতে পারবেন সেখান কি নিয়ে আলোচনা হয়। আর মেয়েদের ব্যাপারটা ঠিক বলতে পারব না। তবে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমার কলেজে দুই শ্রেণীর মেয়ে পড়ত। যাদের একশ্রেণী ক্লাসে আসত আর ক্লাস করে চলে যেত। এদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। আরেক শ্রেণীর মেয়েরা ছেলেদের সাথে কথা বলতে আগ্রহী হত। লুতুপুতু, ফ্রেন্ডশীপ করত। এভাবে টিফিন শেয়ার, হবিজাবি আরো কতকিছু্ যে শেয়ার আল্লাহু আ’লাম। এমন ছেলেকেও চিনি যে আমার সাথে আগ বাড়িয়ে কখনো কথা বলে নি কিন্তু আমার এক কাজিনের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গিয়েছে। উল্লেখ্য যে আমার মামাতো বোনও আমার কলেজেই পড়ত। সেই বোনকেও দেখেছি যে এই লুতুপুতু রোগে মোটামুটি আক্রান্ত!
একটা সময় হয়ত অনেক বেশি মূর্খ ছিলাম। তবে এদের মত লুতুপুত আমার কখনোই পছন্দ ছিল না। কারো সাথে একটু হেসে কথা বলা মানেই তাদের লুতুপুতু শুরু। এইসব জাহিল মেয়েগুলো কিসের আকর্ষণে লুতুপুতু করে? এইসব জাহিল ছেলেগুলো কিসের আকর্ষণে লুতুপুতু করতে চায়? সকলেই উত্তর জানেন। জ্বীন শয়তান এবং মানুষ শয়তানগুলো ফ্রি-মিক্সিং এবং প্রেম ভালোবাসার নামে যে কতবড় জাহিলিয়াত ছড়াচ্ছে, এই দেশে তার সর্বশেষ সংস্করণ ফ্ল্যাশ মব। নাটকের নামে মেয়েদের স্পর্শ করা যায়, নাচের নামে মেয়েদের স্পর্শ করা যায়। গানের নামে সাধরণভাবে মেয়েদের হাতে জুতার বাড়ি খাওয়া টাইপের কথাগুলোতেও মেয়েদের থেকে হাততালি পাওয়া যায়। শয়তানের আর কি লাগে!
এইসব ছেলেমেয়েগুলো জাস্ট ননসেন্স। এদের গুনার সময় আমার থাকত না কিন্তু এদের সংখ্যা এত বেশি যে এদের গুনতেই হবে, ফেলে দিতে পারবেন না। খুঁজে দেখুন আপনার ছোট ভাই বোনদের মধ্যে, নিকট আত্মীয়দের মধ্যেও এই রোগ আছে।
শয়তান আমাদের ফিতরাকে কলুষিত করে সেগুলোকে হারামের দিকে নিয়ে যায়। তথাকথিত আধুনিকতার নামে ছাড় দিতে দিতে তারাও ধ্বংসের পথে আর আমরা জেনেও কিছু করতে পারছি না, উপরন্তু আমাদের নিজেরাই বিয়ে না হওয়ার কষ্টে জর্জরিত। এমতাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা এবং পরিবারের লোকদের সচেতন করার চেষ্টা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর নাই।
আপনাকে ‘না’ বলার সামর্থ্য থাকতে হবে। জাহিলদের মুখের উপর বলতে হবে যে এটা হারাম, এটা লম্পটদের কাজ। এইরকম বান্দরামী বান্দররাও করে না। আপনি কি কখনো দেখেছেন যে ছেলে বান্দর মেয়ে বান্দর নির্বিশেষে সকল বান্দর রাস্তা-ঘাটে এইভাবে নাচানাচি করতে? না দেখন নি। এইগুলো কিসের আলামত? অভিভাবকদের প্রশ্ন করছি, আপনারা কি এখনো বুঝতে পারছেন না? না বুঝলে আর কি করার! জাহান্নাম বলে আল্লাহ একটি জিনিস বানিয়েছেন আর সেটার জ্বালানীর জন্য অনেক লম্পট লোক দরকার। আবার জান্নাতও আল্লাহ বানিয়েছেন, যেখানে থাকার জন্য অনেক তওবাকারী লোকের দরকার। হে অভিভাবকেরা, সিদ্ধান্ত আপনাদের যে কোনটা বেঁছে নিবেন।
আপনার ছেলেকে বা মেয়েকে আমরা উপদেশ দিলে সেটা গুরুত্ববহ হবে না বরং আপনি (অভিভাবক) আদেশ উপদেশ দিলে সেটা গুরত্ববহন করবে।
আজ উম্মাহর মেয়েদেরকে কুফফাররা লাঞ্ছিত করছে। তারা আমাদের পর্দানশীল মেয়েদের পর্দা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ইরাকে, সিরিয়ায়, আরাকানে, কাশ্মীরে আমাদের বোনদের ধর্ষণ করা হয় আর আমরা কিছুই করতে পারি না, বলতে পারি না, ভাবতেও পারি না। আর এখানে আমরা সেই কুফফারদের নকল করি। তাদের সকল কিছু একেবারে সকল কিছু নকল করার যে প্রস্তুতি নিচ্ছি, তা কত বড় বিপদে আমাদের ফেলছে তা কি উপলব্ধি করতে পারছেন না? এর বিরুদ্ধ আপনার বাস্তবতা কি? কি জবাব দিবেন আল্লাহকে? এই ফ্ল্যাশ মবের অনুকরণ কাদের অনুকরণ, সেটা জানলেই বুঝা যায় যে আমরা কতবড় জাহিলিয়াতে আছি। এই ফ্ল্যাশ মবরত অবস্থায় কোন ছেলে বা মেয়ে মারা গেলে সে কি জান্নাতি না জাহান্নামি হবে, আপনার সাধারণ বিচার কি বলে? আজকে অভিভাবকদের আসলেই তাদের ছেলে মেয়ের চরিত্র নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই। আল্লাহ এদের হিদায়াহ দাও। আত্নীয় স্বজনদের মাঝে যাদেরই এমন দেখেছি, তারাই আবার কেউ যদি চরিত্র হিফাজতের জন্য বিয়ে করতে চায় অথবা দ্বিতীয় বিয়ে করে তাদের কটু মন্তব্য না করে থাকে না।
যেই ছেলে আল্লাহর ভয়ে, নিজের নফসকে পবিত্র রাখতে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে কখনোই লম্পট, চরিত্রহীন না। লম্পট সে সব ছেলে মেয়ে যারা নিজেরা ফ্ল্যাশ মব করে, যারা দেখে, যারা দেখে মজা পায় এবং সমর্থন করে তারা। লম্পট তারা যারা ছেলে মেয়েদের পাশাপাশি বসাকে বড় মনের পরিচয় বলে। মূলত সকল রকমের পর্দাহীনতাই লাম্পট্য আর চরিত্রহীনতা।
কথাগুলো প্রত্যেকের অভিভাকদের কাছে পৌছলে খুব ভালো হয়। আল্লাহ যেন পৌছে দেন তাদের কাছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উত্তম বলুন অথবা চুপ থাকুন -দারুন নাম >- >- >-
মন্তব্য করতে লগইন করুন