“Stop Television & Start Imagination”
লিখেছেন লিখেছেন উত্তম বলুন অথবা চুপ থাকুন ০২ জুলাই, ২০১৪, ১২:০৫:১৭ দুপুর
ধরুন কোন পুরুষের তার স্ত্রীকে কোন কারণে আর ভালো লাগছে না অথবা সহ্য করতে পারছে না, তখন সে স্ত্রীর নামে মিথ্যা যে কোন ধরনের অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করে। অথবা তার অন্য কোন মেয়েকে ভালো লেগেছে কিন্তু সমাজ মানবে না তাই তার স্ত্রীকে বিদায় করার কুটকৌশল আঁটে এবং স্ত্রীকে নির্যাতন করে মনে ঝাল মিটায়।
এটা এমনও হতে পারে যে বিয়ের আগে একটা মেয়ে হয়ত সেজেগুজে সুন্দরভাবে থাকত, সুঘ্রাণ বইত। কিন্তু বিয়ের পর তো সে সারাদিন সেজেগুজে বসে থাকতে পারবে না। অথবা আগের সৌন্দর্য নষ্টও হয়ে যেতে পারে, তাছাড়া সারাদিন সংসারের কাজগুলো করার পর সে হয়ত তার আগেকার মত পরিপাটিও থাকতে পারে না। তখনই পুরুষের মোহ যায় ছুটে! ‘সারাদিন ঘরে বসে করেছোটা কি!’ টাইপের কথা বের হয়। বিয়ের আগে হয়ত সে কত রঙিন স্বপ্ন দেখে রেখেছে, তা এখন মিলছে না দেখে সে হতাশ। তার উপর এখন সিনেমা-নাটক এইসবে তো কত রঙিন স্বপ্ন আর সকলেও বৌই সুন্দরী, তা বিয়ের আগে হোক আর পরে। এইসব দেখে ছেলেরাও ঠিক তেমন আশা করতে বাধ্য হয়ে যায়। আর যখন বিয়ের পর রান্না-বান্না করা বৌ ঘামে জর্জরিত হয়ে আর নাটকের নায়িকাদের মত থাকতে পারে না তখনই ওই সব ছেলেগুলোর মাথা হয়ে যায় নষ্ট। স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট তারা খুব কমই ধারণ করতে পারে। তার উপর রাস্তা ঘাটে এত সুন্দরী মেয়েদের বেপর্দা ছড়াছড়ি। তারপর আবার সে নাটক-সিনেমা দেখছে, অশ্লীল, অশালীনতাও দেখছে। এগুলো দেখে যখন সে বিপর্যস্ত হয়, অথবা পরকিয়া করে, সে তার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়, নির্যাতন করে এবং দ্বিতীয় বিয়ের সামর্থ্য থাকলেও অনেকে সমাজের কারণে করতে পারে না এবং এসবে কারণে গুনাহগার হতে থাকে।
ব্যাপরটি মেয়েদের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ণ ভাবে আরো অনেক ভয়ংকর। সিরিয়াল-সিনেমা দেখে মেয়েরাও অনেক রঙিন স্বপ্নের জাল বুনে। তারা অনেক বেশি আবেগ দিয়ে এই স্বপ্নগুলো বুনে। তারা সর্বদাই দেখে কত সুন্দর (!) পোষাক পরে থাকে নাটক-সিনেমার নায়িকার (এখানে তাদের আরো অনেক রকম ব্যাপার সম্পর্কিত)। তারা অভিজাত হতে চায়। দেখবেন গরিব নায়কটিও সিনেমা শেষে বড়লোক হয়ে যায়, আর বাস্তবে কিন্তু তা নাও হতে পারে। কিন্তু বিয়ের পরে যখন আর তারা এসব পায় না, তখন? আর তাদের দ্বিতীয় বিয়েরও সুযোগ নেই। অথচ পরপুরুষের কাছাকাছি আজ তারা সহজেই যেতে পারছে এবং এখানে অন্য কাউকে ভালো লাগা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
যা যা বললাম সব কিছু প্রায় বিয়ের পরের ক্ষতিগুলো নিয়ে। বিয়ের আগেও এই সবের অনেক ক্ষতি, তা আপনারা কম বেশি জানেন। এর সমাধান কি? আমি যদি বেশি বেশি মেয়ে দেখি বা তাদের স্বংস্পর্শে আসি, তবে বেশি বেশি তাদের ভালো লাগবে, তেমনি আমি যদি বেশি বেশি পুরুষদের দেখি বা তাদের স্বংস্পর্শে আসি তবে বেশি বেশি তাদের ভালো লাগবে, এটা অস্বাভাবিক নয়, তবে এটা ভয়াবহতার কারণ। এখন এই স্বংস্পর্শ বা দেখাদেখি টিভিতেই হোক আর বাস্তবেই হোক না কেন, সেগুলো আপনার মনে একপ্রকার কৃত্রিম চাহিদা তৈরী করে আর তার বাস্তব ফলাফল ভয়বাহ। আর বর্তমানে তো বিকৃত চাহিদাই তৈরী করে চলছে!
সমাধান হল এইসব বন্ধ করতে হবে এবং তা খুব সহজ না যেহেতু আমরা দারুল কুফফারে আছি। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা চেষ্টা চালাতে পারি আর আল্লাহর কাছে দুয়া করতে পারি। তা হল নাটক-সিনেমা পুরোপুরি বন্ধ। আপনাদের ছোট সন্তানদের জন্যও। তারা এখন থেকেই বেপর্দা মেয়ে দেখেও বড় হচ্ছে, তাও একজন দুইজন নয় এতএত বেপর্দা মেয়ে। আর নাটক, সিনেমা, খবরের কাগজে কিসের দিকে ডাকে তা তো আর খুলে বলা লাগবে না! আপনি পারবেন আপনার ছেলেকে কিশোর বয়সেই চার চারটা বিয়ে করিয়ে ঘরে বসিয়ে খাওয়াতে? পারবেন না। তাহলে কেন তাকে এত এত বেপর্দা মেয়ে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছেন? সেও একজন মানুষ আর তারও নফস আছে। কেন শয়তানকে তার ভিতর ঢুকার সুযোগ দিচ্ছেন আর কেন তার চাহিদাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন? অথবা আমরা নিজেরাই কেন নিজেদের চাহিদাকে মনের অজান্তেই বাড়িয়ে নিচ্ছি, শয়তানকে আমাদের ভিতরে ঢুকার সুযোগ দিচ্ছি?
তেমনি আপনার মেয়ের বেলায়ও। তাদের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যায় আর তারা নাটক-সিনেমা দেখে কতসব স্বপ্ন দেখে, নফস কষ্ট পায় আর তাদের ভিতর শয়তান ঢুকে তাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের দিয়ে টাকা উপার্জনের শিক্ষা অর্জনের নাম করে এতগুলো ছেলের মাঝে ছেড়ে দিয়ে আপনারা কি দায়িত্বাবান অভিভাবক ভাবেন নিজেদের? তাদেরও নফস আছে। না হলে কেন তারা লুকিয়ে লুকিয়ে এত কষ্ট করে প্রেম করতে যায়, বুঝা উচিত।
আমরা অনেকে বলি ভাইয়েরা কেন সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চায়, বুঝা উচিত যে ভাইয়েরা এতএত ধরণের সুন্দরী মেয়ে দেখেছে যে তারা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করত চায় (ফিতরাহ) আবার একাধিক বিয়ে করারও ইচ্ছা রাখে! কারণটা ওই যে, সকল মেয়ে তো নিকাব পরে বসে থাকে না, তারা এখন রাস্তাঘাটে ঘুরেও বোড়ায়। আর ভাইদের উচ্চাকাঙ্খা বড়িয়ে তোলে।
তেমনি শোনা যায় যে বোনেরা ব্যাংক ব্যালেন্স চায়, এর কারণ এই যে তারা এভাবেই নিজেদের সুরক্ষা চায়। এত অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে তারাও চায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চাইতে।
সকল কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু টিভি দেখে দেখে, গান শুনে শুনে তাদের মাথা গেছে বিগড়ে! তাদের কাছে সুন্দরের সংজ্ঞা বদলে গেছে, সৎ এর সংজ্ঞা বদলে গেছে আর তদের ভিতর আবর্জনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ভাই, বোনেরা গানবাদ্য, বেপর্দা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কেননা টিভিতে বেপর্দা নারী দেখাও কিন্তু নিজের বেপর্দাই। আর এই টিভি আমাদের অনুধাবন শক্তি নষ্ট করে দেয়, আর আমাদেরকেই উল্টো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। আমাদে মস্তিস্কে প্রভাব রাখে।
আর আল্লাহর সাথে যোগাযোগ বাড়ান। সিজাদর দৈর্ঘ্য বাড়ান। আল্লাহর সাথে কথা বলুন। কারণ তিনি এগুলো খুব পছন্দ করেন। আপনার দুঃখগুলো তাকে বলুন, তাকে জানান, তার কাছে আপনার চাওয়াগুলো বলুন। তার সাথে নেটওয়ার্ক লাইনটা শক্তিশালী করুন। অনুধাবন করুন, নিজের মনের টিভিতে, আকাশের টিভিতে, ইনশা’আল্লাহ আল্লাহর সাহায্য তো অতি নিকটে। আর এই সবে অভ্যস্থ হতে থাকলে আল্লাহর দেয়া আপনার জন্য নির্ধারিত জীবনসঙ্গী কে আপনি আপনার সবচেয়ে আকাঙ্খিত হিসেবেই পাবেন আর সাথে সাথে অনেক সমস্যা আপনা আপনি সমাধানন হয়ে যাবে আর সবচেয়ে বড় কথা হল আপনি দুনিয়াইতে সেই প্রশান্তি পেতে থাকবেন। আপনার আর দুনিয়া ভালো লাগবে না, সকল কিছু তখন আল্লাহর জন্যই চাওয়া হবে, ইনশা’আল্লাহ। আল্লাহু আ’লাম।
So, Stop Television & Start Imagination!
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন