একটি সেমিনারঃ অনেক জিজ্ঞাসা! (প্রশ্নঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক কার গোলামী করেন?)

লিখেছেন লিখেছেন মেরুদেশী ১৯ জুন, ২০১৪, ০৮:৫০:৩৩ সকাল

গত ২৯/১১/২০১৩ইং শুক্রবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত একটি সেমিনার হয়ে গেল,”ইসলাম ও নারীঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ”-এই শিরোনামে। এতে আলোচ্য বিষয় ছিলঃ ১।কর্মস্থলে নারীঃ ইসলামের দৃষ্টিকোণ, ২।নারীর প্রতি সহিংসতারোধে ইসলামী শিক্ষা, ৩।নারী শিক্ষা বিস্তারে মহিলা সাহাবীদের ভূমিকা, ৪।কর্মস্থলে দরিদ্র নারী, ৫।পরিবার গঠনে নারীর ভূমিকা, ৬।শিশু-কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা প্রদানে মায়ের ভূমিকা, ৭।মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব শিক্ষাঃআদব, শিষ্টাচার ও মূল্যবোধ, ৮।মহান মুক্তিযুদ্ধে নারী ইত্যাদি। জানা গেছে, “পর্দার গুরুত্ব”-এ বিষয়ের উপরও একটি প্রবন্ধ ছিল, কিন্তু তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

যা হোক, একেবারে সরকারের শেষ সময়ে এসে নারীদেরকে নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মহাপরিচালকের এমন একটি অ্নুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কাজী হাবিবুল আউয়াল, সচিব, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রায় আড়াইশত মহিলাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এমন একটি সমসাময়িক প্রেক্ষাপট সমন্বিত সেমিনার সাধুবাদ পাবারই যোগ্য। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্নরূপ। আজ আমার কলম ধরার পেছনে উদ্দেশ্য এটাই-সেদিনের পুরো বিষয়টি পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চাই। সম্মানিত পাঠকবৃন্দই তাহলে সিদ্ধান্ত দেবেন, “ইমাম সমাবেশে নৃত্য পরিবেশনা উপহার দানকারী” একজন আলেমের বেশধারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মূলত কার গোলামী করছেন? কাকে খুশি করতে প্রতিনিয়ত কিছু মুখস্থ বুলি আওড়াচ্ছেন? উপরন্তু কার নির্দেশে সরকারী কোষাগার তছরূপ করে ইসলামী অনুষ্ঠানের আহবান করে সুকৌশলে ইসলামের পিঠেই ছুরিকাঘাত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন?

আপনারা সবাই জানেন, এই মহাপরিচালক জনাব সামীম মোঃ আফজাল সম্প্রতি একটি ইমাম সমাবেশে ব্যালেনৃত্য/বলড্যান্সের প্রদর্শনী ঘটিয়েছিলেন, যা বহুল আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। এবারের কৌশল একটু ভিন্ন। এবার মুসলিম নারীদের অনুষ্ঠানে বেপর্দা-ইসলামী জ্ঞানহীন নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও পাশাপাশি নিজের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ও অবান্তর বক্তব্য পেশ ছিল সেরকমই দৃষ্টিকটু ও সমালোচিত। প্রায় খোলামেলা, ইসলামের বিপরীত চিন্তায় বিশ্বাসী ঐসব নারীদের প্রতিনিধিত্ব এহেন সেমিনারের জন্য ছিল একটি চপেটাঘাত! ইসলামকে কটাক্ষ করার একটি হীন প্রচেষ্টা! যেমন, তিনি বিশেষ অতিথিরূপে রেখেছিলেন আফরোজা হক রীনা, সভাপতি, জাতীয় নারীজোট। তিনি ঐ সেমিনারেরও সভাপতিত্ব করেন। কপালে টিপ পরিহিতা উর্ধ্বাংগ মুক্ত (উপরের অংগ) এ নারীকে প্রথম দর্শনে মনে হবে একজন হিন্দু মহিলা-“হিন্দু মহিলা” বলতে কোন বিদ্বেষের কথা বলছিনা, হিন্দু হিন্দুর মত চলবে তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়, কিন্তু একজন মুসলমান নামধারী নারী যদি স্বেচ্ছায় হিন্দুর বেশে চলে, আবার মুসলিম বলে দাবী করে তবে অবশ্যই আপত্তি আছে। কারণ এরাই সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়, একথায় কোন দ্বিমত নেই। কেননা পর্দার শর্তের মধ্যে রয়েছে, এমন কোন পোষাক পড়া/সাজসজ্জা করা যাবেনা, যা ভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করবে, যেমন ক্রস, টিপ, শাখাপড়া ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে কুরআন বলছে,”জাহেলী যুগের মত সাজগোজ করে প্রদর্শন করে বেরিও না”(সূরা আহযাবঃ ৩৩)। উপরন্তু তার বক্তব্যও ছিল বকলম মুসলিমের মত, জ্ঞানের গভীরতা অর্থাৎ কখনও কুরআন বুঝে পড়েছেন কিনা সন্দেহ। প্রবন্ধ পাঠকালে পর্দা প্রসঙ্গ এলেই “এসব সবাই জানে”-বলে থামিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার। সেমিনারের মডারেটর ছিলেন পরপর ডঃ ফেরদৌসী বেগম, সাবেক ডীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহানাজ বেগম, বিশেষ প্রতিনিধি, ডেইলী ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এঁদের কথা আর কি বলব! খুব করুণা হচ্ছিল মহাপরিচালকের প্রতি। বোঝা গেল তাঁর চিন্তাধারার দৈন্যদশা-যেখানে একজন ইসলামপ্রিয় নারীর নাম তার তালিকায় আসেনি। ইসলামপ্রিয় নারী এজন্যই বলছি যাকে দেখলে বোঝা যাবে, তিনি ইসলামের অনুশাসন মেনে চলেন, বক্তব্য শুনলে মনে হবে তিনি কুরআন চর্চা করেন। প্রকারান্তরে দেখা গেছে, ইনারা কেহই সেমিনারের আলোচ্য বিষয় অনুসারে বর্তমান প্রেক্ষাপটকে তুলে আনতে পারেননি। এমনকি কোন সিদ্ধান্তেও একমত হতে পারেননি। মূলতঃ উপর দিকে থুথু দিলে নিজের গায়েই পড়ে- একথা কে না বোঝে?

সেমিনারের নিয়মানুযায়ী প্রবন্ধকারদের প্রবন্ধ পাঠের পর তার উপর চলবে আলোচনা, পরে আসবে সুপারিশমালা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অনুষ্ঠানে মহাপরিচালকের কর্মাকান্ড ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। যেমন একটি বিষয় ছিল, তিনি মুখে বলছিলেন পুরুষেরও পর্দা আছে (তাঁর আমন্ত্রিত অতিথিদেরকেই বাঁচাতেই যেন একথাটির অবতারণা করছিলেন), অথচ তিনি নিজেই বসেছিলেন মহিলাদের মাঝখানে ঘনিষ্টভাবে এবং প্রায়ই তাদের কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে কিছু বলছিলেন, যা ছিল দৃষ্টিকটু। মুক্ত আলোচনার নামে তিনি নিজের কিছু নির্দিষ্ট বক্তব্য বারবারই তুলে ধরছিলেন। ইসলাম সম্পর্কে কিছু রেখে কিছু ঢেকে এপাশ ওপাশ করে বুঝাতে গিয়ে নতুনরূপে কিছু একটা যেন দাঁড় করাতে চাচ্ছিলেন, যা ছিল সাধারণের বোধগম্যহীন। যার ফলে তিনি জনৈক অংশগ্রহণকারীর প্রশ্নের জালে আটকে যান। একাধারে (সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) গোলাম আযম, মওদূদী, ডাঃ মতিয়ার, ডঃ ইউনুস, ১৩ দফা, শাপলা চত্বর, জামায়াত, হেফাজত ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে তিনি বহু কিছু বোঝাতে চাচ্ছিলেন। যেমন তিনি বলছিলেন, এরা কেউ মা্দ্রাসা শিক্ষিত আলেম নন, এদের সাহিত্য বাংলা বাজারের নোটবিশেষ, এরা ঈমান চুরি করছে, এরা সমকামীতার সাপোর্ট দিয়ে নোবেল বিজয়ী হয়েছে ইত্যাদি। মূলত এসবই ছিল সেদিনের সেমিনারের বিষয়সূচীর বাইরের কথা, যা তিনি তার বিভিন্ন লিখনীতেও লিখেছেন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও বলে যাচ্ছেন। এভাবে একই পুরনো তথ্য, মুখস্থ বুলি উপস্থিত সুধীজনদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক সে কারণেই হয়ত সাহসী সেই অংশগ্রহণকারী হিজাবী বোনটি বুদ্ধিমত্তার সাথে শেষের ১৫ মিনিট তাকে আটকে দেন বিভিন্ন প্রশ্নবানে। আমার মনে হচ্ছিল, হয়ত এটা সময়ক্ষেপন অথবা ভুল ধারনা মাথায় নিয়ে বেরোনোর হাত থেকে নিষ্কৃতি দান। তবে একথা সত্য, যাদেরকে ঘায়েল করতে মহাপরিচালক ওইসব নাম/শব্দগুলো তুলে এনেছিলেন তাদের সম্পর্কে জানার কৌতুহল বেড়ে গেল বৈকি। সেদিন মহাপরিচালকের আয়োজিত সেমিনারটি সেমিনারের জন্যই নয়, বরং প্রধান লক্ষ্য ছিল উল্লেখিত ঐসব ব্যক্তিবর্গ ও বিষয়াদির বিরুদ্ধে বলে কিছু একটা উদ্দেশ্য হাছিল করা, যার ফলে তিনি বারবারই বলছিলেন আলেম না হলে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া যাবে না। তখনই ঐ প্রতিবাদী বোনটি বলে ফেললেন, “তাহলে আপনার আয়োজিত এ সেমিনার ব্যর্থ-বৃথা প্রমাণিত হল-সেমিনারের নামে প্রহসন হল কারণ এখানে কোন আলেম দ্বারা প্রবন্ধপাঠ, আলোচনা, মডারেশন, সভাপতিত্ব –কোনটিই হয়নি, অথচ আপনি বলে যাচ্ছেন এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত হচ্ছে।“ এরূপ বাকবিতন্ডায় পরিশেষে সেমিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালার পরিবর্তে আমাদের মনে জেগে উঠল কিছু প্রশ্নমালা-১।তবে কি এসব বিতর্কিত নারীদের থেকেই শিখতে হবে ইসলাম কী? ২।এসব নারীরাই করবে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব? ৩।এতগুলো ইসলামপ্রিয় মা-বোনদের মাঝে প্রতিনিধিত্বকারী এসব মডারেটরদের উপস্থিতি নতুন কোন মডারেশনের ইঙ্গিত কি? ৪।ইসলামের মৌলিকত্বকে ঘুরিয়ে দেয়ার নুতন কোন ষড়যন্ত্র কি? ৫।সেমিনারের আড়ালে সরকারী পয়সায় নিজের মতামত জাহির করার অপপ্রয়াস কি?

মহাপরিচালকের মতে, মাদ্রাসায় শিক্ষিত ব্যক্তিই আলেম। ডাক্তার, প্রফেসর তথা বস্তুবাদী শিক্ষায় শিক্ষিতরা নাকি আলেম হতে পারেননা। অথচ আমরা জানি আলেম অর্থ এলেম অর্জনকারী। বস্তুবাদী শিক্ষার পাশাপাশি যারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেন তারা আরো ভাল আলেম হতে পারেন। বস্তুত জ্ঞান অর্জনের শেষ নেই, বিশেষ করে কুরআনী জ্ঞান। সুতরাং যিনি মাদ্রাসায় না গিয়েও সর্বদা জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত, আর যিনি মাদ্রাসা থেকে একটি ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট অর্জন করে চর্চাহীন অবস্থায় পতিত, তাদের মাঝে কে উত্তম? মহাপরিচালক একজন সরকারী চাকুরীজীবী, একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধান উপরন্তু একজন প্রাক্তন বিচারক, অথচ তার ভূমিকায় ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার এই যে হীন প্রচেষ্টা, অহেতুক অন্যের গীবত গেয়ে ইসলামের মৌলিক সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা- প্রশ্ন জাগে এসবই কার মনোরঞ্জনের জন্য? সেদিন সেই মুহূর্তে আল কুরআনের দু’টি আয়াত আমার খুব মনে পড়ছিল- ১।“তাহলে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অস্বীকার করবে? তাতে তোমাদের দুনিয়ার জীবনে লাঞ্চিত হতে হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। তোমরা যা কর সে ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা গাফেল নন।“ (সূরা বাকারাঃ ৮৫) এবং ২।“এবং (হে রাসূল! আপনি) বলে দিন, (যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই) কাজ করতে থাক। আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ঈমানদারগণ অচিরেই তোমাদের কর্ম লক্ষ্য করবেন। আর অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে এমন সত্ত্বার দিকে যিনি সকল অদৃশ্য ও প্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি তোমাদেরকে সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন।“ (সূরা তওবা:১০৫)।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File