ক-জন পঞ্চাশোর্ধ কিশোরীঃ একটি পূণর্মিলনী
লিখেছেন লিখেছেন মেরুদেশী ১৮ জুন, ২০১৪, ০৮:১৭:২৬ রাত
(পৃথিবীটা গোল)
প্রায় ৪০ বছর পর ওদের দেখা।
মাঝে ছাড়াছাড়ি, বন্ধনহীন, প্রায় ভুলে থাকা।
বিয়ে, সন্তান ,স্বামী, চাকুরী এসব নিয়েই ছিল ওরা মহাব্যস্ত।
সব ফেলে আজ মিলনের টানে ৩/৫/১৪ এ দিবসটিতে হলো একত্রিত।
কি উচ্ছ্বাস আর কথার ফুলঝুড়ি,
একেবারে সেই ষোড়শী- কিশোরী!!
কে কার আগে জানাবে মনের অভিব্যক্তি,
ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিময় কীর্তি!!
এ যেন এক বহমান ঝর্নার কলকল দৃশ্য,
৪০ বছরের অন্তরাল; মূহুর্তে হয়েছে অদৃশ্য!!
সে কি গল্প, গুঞ্জন, আর হাসির রোল,
যাপিত জীবনে ঘুরতে আবারো প্রমানিত হলো পৃথিবীটা গোল!!
কে বলবে ওরা পঞ্চাশোর্ধ!
এখনো ছুটেছে কিশোরীর মত, তেমন-ই স্বতঃসিদ্ধ!!
(কতসুর, কতগান মনে পড়ে গেল-বল ভাল আছোতো?)
মুটিয়ে যাওয়া ফিগার, কাঁচাপাকা চুল,
কেউ নানী, কেউ দাদী সব যেনো এলোমেলো-
না, ওসব কিছুইনা, ওরা আগেরই মত বনফুল।
হৃদয়ের বয়স বাড়েনি ওদের, আগেরই মতো রঙ্গিন ঝলোমলো!!
ওরা একটু-ও নয় অচেনা!
ঐতো টোলপড়া গালে নীরু একদম চেনা!
তুই ছিলি সবার মধ্যমনি তোকে ঘিরেই যত জটলা,
সুরেলা কন্ঠে মাতিয়ে রেখেছিস, করেছিস কত হল্লা।
Horsetail বাঁধা লাকি, গোলগাল মুখখানি,
পিন্ডি থেকে ফিরে আসা এক ঝটপটে তরুনী।
ঘুরে বেড়াতো ছোট্ট শহর চাঁদপুরের আনিকানি,
ও নাকি এখন হয়েছে নানী!!
আর লম্বা কেশ দুলিয়ে হেঁটে যেত যে খুকু,
আজকের সেলিব্রেটি, সে ছিল একেবারে শুঁটকো।
লেখাপড়ায় ছিল ভারি মনোযোগ,
এছাড়া যেন ছিলনা কোন অনুযোগ!!
ডাগর ডাগর চোখের কাবেরী-
সে যুগের লাক্স সুন্দরী।
ঝক্ঝকে দাঁতে হেসে হেসে
সবাইকে নিয়ে নিতো আপনার পাশে!!
আর আমাদের সবার নুরুন্নাহার!
নাচ, গান, আবৃত্তি আর অভিনয়ে যার জুড়ি মেলাভার।
দেখতে এখনো নাদুসনুদুস ছোটখাটো,
ডেকেছে সবে বামুন সুন্দরী,ভাগ্যি ডাকেনি বাট্টো!!
এখনো চেনা যায় ইপু, মিরা আর কল্যানী,
১৬ বছরেই আছিস্ তোরা এতটুকু বদলাসনি।
মিষ্টি হাসির খোদেজা!
মজা করাই ছিল তোর মজা!!
ইপুর পটপট বলে যাওয়া, দম না ফেলা, খই ফোটামুখে,
রেলগাড়ী যেন এক খানা!
দেখলেই বোঝা যায় এখনো আছিস্ সুখে
মনের বয়সে বাড়িসনি এতটুকু আগেরই মত টনটনা!!
শান্ত, শিষ্ট মীরা-
বয়স বাড়েনি দেহেতেও যার একে বারে হীরা।
শুধু শুনে যেতেই ভালবাসে, একটু একটু মুচকি হেসে,
কি দারুন দেখতে! মেদ ভুরি কিছু নেই, পাক ধরেনি কেশে!!
ভোলা যায় নারে খোদেজা!
উপনাম দিয়ে একে ওকে ডেকে কি-ই না করেছিস মজা!!
নানী হয়েছিস, দাদী হয়েছিস মনেইতো হয়না,
এখনো দেহ খানি কান্তা রাঙানো মাখানো কাঞ্চা সোনা!!
এসেছে আরো এ পূনর্মিলনে-
প্রশস্ত হৃদয়ের কল্যানী এসেছে অসুস্থ শরীরে বয়ে,
ভালবাসার স্রোতে সাঁতরে সাঁতরে আজো উঠেছে সে নেয়ে!
মিথ্যে হয়েছে বয়স তার এসেও মধ্য গগণে!!
আজ এ পূনর্মিলনে ফিরে পাওয়া জীবনে নতুন দিশারী,
হয়ে থাক সবে চিরকাল ধরে পঞ্চাশোর্ধ কিশোরী!!
(হায়গো আমার ছোট্ট বেলার খেলার সাথী কই.........)
আরো ছিলি তোরা নিলুফা, চম্পা, তনিমা, গৌরী, মনি,
গুয়াখোলা রোডের সেলিনা আর মিশন রোডের শেলী,
কেন এলিনা? কোথায় হারালি?
কি এত ব্যস্ততা ছিল রেখে এ পূনর্মিলনী?
আছিস তো ভাল? ছেলে মেয়ে আরো নাতী নাতনী নিয়ে?
আশা করি আজো তোরাও আছিস্ পঞ্চাশোর্ধ কিশোরী হয়ে!!
মনে আছে কি আমার ও কথা? হয়তোবা না-
স্মৃতিরপাতায় জ্বলজ্বল সব কিছুইতো হারাবার না।
তবে মাঝে কেন এত ছাড়াছাড়ি আর দূরত্ব; সীমানা?
আসলে সত্য ক্বোরআনেরবানী- ‘কমবে সময় বাড়বেনা বয়স’ আমরাই তা বুঝিনা!!
(আবার হবে গো দেখা- এ দেখাই শেষ দেখানয় তো!)
৪০ বছর পর আমাদের এ মিলনমেলা।
কত না হিসাব, কতনা ব্যাখ্যা, কতনা আনন্দ খেলা।
কার কতটা বাড়ী আর কি করে ছেলে মেয়ে, কে কিনেছে গাড়ী!
মিছে হয়ে যাবে এসব কিছুই যখনই দিতে হবে পাড়ি।
আঁকড়ে থাকা, উপাচারে ভরা এ ইহলোক ছাড়ি,
কি করেছি পুঁজি! কতটা হয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্স আজ কিনতে আসল বাড়ি?
সেখানেও হবে দেখা আমাদের ঝর্ণার অবগাহনে,
সবুজ ফরাশে, মুখোমুখি বসে, হেলানো উচ্চাসনে!!
আঙ্গুর, খেজুর, খাদ্য, পানীয়ফুল, পাখি ভুরিভুরি,
না জানি বৃথা হয়ে যায় সবই-
জোড়া জোড়া সঙ্গী মিলবে তথায় সবই সমবয়স-ই,
যদিনা নিতে পারি আমলিয়াতের কড়ি ডান হাতগুলো ভরি!
চলনা হয়ে যাই চিরকাল ধরি পঞ্চাশোর্ধ কিশোরী!!
(আবার হলো যদি দেখা সখা প্রাণের মাঝে আয়)
আবারো হোক দেখা, আয়, আয় আয়,
বন্ধু, আবারো হোক দেখা, এ কামনায়-
যেন এমনি পূনর্মিলন ঘটে চিরস্থায়ী অচলায়তনে,
যা শেষ হবেনা, ফুরাবেনা কভু বহতা নদীর মত অনন্ত আননে!
এখোরেনো সময় আছে সে পাথেয় করে নিতে পুঁজি;
আয়না সবে একটাই বিধান আঁকড়ে ধরে সে পথটাই খুঁজি!!
বারবার এ পূনর্মিলনে সত্য ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় আমরাও কিছু করি,
সুস্থ, সবল, শঙ্কামুক্ত, সুন্দর এক সমাজ গড়ি!!
কে বলবে আমরা পঞ্চাশোর্ধ নারী?
এখনো তেমনি স্বভাবসিদ্ধ চঞ্চলা কিশোরী!!
বিষয়: সাহিত্য
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন