ভারতীয় টিভি চ্যানেলের আগ্রাসনের রকমফের ও আমাদের করণীয়

লিখেছেন লিখেছেন মিঃ কপিপেস্ট ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৩৭:০২ রাত

ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো আমাদের অনেক ক্ষতি করছে- এ বিষয়ে মনে হয় কারো কোন দ্বিমত নেই। এই চ্যানেলগুলোর অবাধ প্রচারণা আমাদের সাংস্কৃতিক, পারিবারিক-সামাজিক অঙ্গনকে আঘাত করছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা অর্থনৈতিকভাবেও।

আসুন দেখা যাক, এদের বাধাহীন প্রচারণায় আসলেই আমরা কি কি ভাবে ও কোথায় কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছই

১) শিশুদের ক্ষেত্রেঃ

বর্তমানে ডোরেমন নামক হিন্দি ডাবিং-কৃৎ কার্টুন ছবিতে ছোট ছোট বাচ্চাদের ব্রেন এক কথায় ওয়াসড। আমার মেয়ের কথাই যদি বলি, সেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে গোঁ ধরে টিভিতে ডোরেমন চালিয়ে দেওয়ার জন্য। আর একবার সেটা চালানোর পর, তা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এর কোন ব্যতিক্রম নেই। নিত্য ঘটনা।

এই কার্টুনটা দেখে দেখেই ও টুকটাক হিন্দি ভাষা শিখে ফেলেছে, মাঝে মাঝে ওর মুখে দুই একটা হিন্দি শব্দ শুনে আমি রীতিমত অবাক হয়ে যাই। সেদিন আমি আমার মেয়ের সাথে মজা করতে করতে ওর বালিশে শুতে গেছি, এমন সময় ও পট করে বলে ফেলল “শো মাত”! শুনে আমি পুড়াই টাসকি! আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকাতেই ও বলল, নোবিতা বলে বাবা!

যদিও আমি কোন ভাষা শেখার বিপক্ষে না এবং আমি চাই আমার মেয়ে অনেকগুলো ভাষা শিখুক, তা যদি হয়- উর্দু, আরবি, তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই! কারণ আমি বিশ্বাস করি, যে ব্যক্তি যত বেশি ভাষা জানবে তার ব্রেন তত বেশি ক্রিয়াশীল থাকবে। কিন্তু বর্তমানে হিন্দি ভাষার যে প্রচলন আমাদের পরিবার তথা সমাজের উপর পড়েছে তাকে এককথায় একে “আগ্রাসন” বলা যেতে পারে। এখানে একটা কথা কিন্তু না বললেই না, আর সেটা হলো, ভারতের পশ্চিম বাংলা থেকে বাংলা ভাষা কিন্তু হারিয়ে যেতে বসেছে আর সেটা ঘটছে এই আগ্রাসনের কারণেই। আর এটা বুঝতে পেরে, দক্ষিণ ভারতের মানুষজন হিন্দি ভাষাকে বর্জন করছে রীতিমত পণ করে। এই পণটা ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা বোঝাতে আমি আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছি-

২০১০ সালের অক্টোবর মাসের কোন একদিন, ব্যাঙ্গালোরের ছোট্ট একটা উড়িয়া (ওড়িশা) রেস্টুরেন্টে আমরা খেতে বসেছি, দশ-বার বছরের ছোট ছোট ছেলেরা খাবার পরিবেশন ও টেবিল পরিষ্কার করছিল আর যেহেতু আমরা মাস খানেক ধরে ওদের ওখানেই নিয়মিত খাচ্ছি, আড্ডা দিচ্ছি, তাই ওদের সাথে আমাদের একটা সম্পর্কও দাঁড়িয়ে গেছে। আমি একটা ছেলের সাথে হিন্দিতে কথা বলছিলাম, হটাৎ করেই আর একটা ছেলে দ্রুত এগিয়ে এসে ওকে রাগত স্বরে কানাড়া (কর্নাটকের ভাষা) ভাষায় কি যেন বলল? তারপর সেই ছেলেটা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে, নিজ মনে কাজ করতে থাকলো। আমি, ওই ছেলেটা কি বলেছে তা বুঝতে না পারলেও কিছুটা আন্দাজ করে রেস্টুরেন্টের উড়িয়া মালিককে জিজ্ঞাসা করলাম, ও কি বলল? তখন উড়িয়া লোকটি আমাকে বলল, ওই ছেলেটি যা বলেছে তার হিন্দি অর্থ দাড়ায়, “হিন্দি মাত বোল, কানাড়া বোল”!

নিজেদের ভাষাকে রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে? ভাবা যায়? আর আমরা?

অপরদিকে আমরা আপাতদৃষ্টিতে মনে করছি, আমাদের শিশুরা হিন্দি ভাষা শিখছে তাতে কি হয়েছে? ভাষা শেখা তো ভাল? হ্যাঁ! তাতে তেমন কিছুই হয়নি বা ঘটেনি কিন্তু যখন আমার মেয়ে বাইরে বেড়াতে যেয়ে টিভিতে দেখা বিজ্ঞাপনের পণ্যটাই কেনার জন্য পণ করছে, তখনি আসল ঘটনাটা ঘটছে! আর এটাই রয়েছে হিন্দি প্রচারণার অন্তরালে!

১) মেয়ে বা গৃহবধূদের ক্ষেত্রেঃ

স্টার প্লাস, জী বাংলা এই সব ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলো কি প্রচার করছে? তারা প্রচার করছে- হিংসা, বিদ্বেষ, কূটনামী, পারিবারের ভাঙ্গন, বৌ-শাশুড়ির ক্যাচাল, ননদ ভাবীর ঝগড়া, জায়ে-জায়ে পাল্টাপাল্টি, সাজগোজ, বড়লোকি, পরকীয়া আর আছে ত্যানা প্যাঁচানি! একটা ছোট ঘটনাকে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে কিভাবে বছর পার করা যায় তা জানতে চাইলে অবশ্যই এই চ্যানেল গুলো দেখতে হবে। ভবিষ্যতে হয়ত দেখা যাবে, ত্যানা পেঁচিয়েই “বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা” করার কারণে এইসব চ্যানেলের মালিকদের কেউ নোবেল পুরষ্কারও পেয়ে গেছেন!

বর্তমানে বাংলাদেশে ঘরে ঘরে এইসব চ্যানেলের অবাধ প্রচার।আপনি খুব কম বাসাই পাবেন, যেখানে টিভি চলছে কিন্তু ভারতীয় কোন চ্যানেল চলছে না! আর এর গ্রাহক কারা? তারা সবাই আমাদের কাছের মানুষ। আমাদেরই মা, বোন, বৌ, মেয়ে, মাসি, পিসি। আর এরাই হলো এর মূল গ্রাহক, প্রধান টার্গেটও! প্রয়োজনে ঘরে ঘরে ঝগড়া হবে, তবুও এইসব অনুষ্ঠানের নামে ত্যানা পাঁচানি দেখা বন্ধ করা যাবে না কিছুতেই।

সিরিয়ালের নামে যে পচা অনুষ্ঠান গুলো তারা দেখছে, তার আউটপুট কি? তারা কি এগুলো দেখে হিন্দি ভাষা শিখছে, বাচ্চাদের মত? উত্তর হল, না। যদি ভাষাটাও শিখত, তাহলেওনা কিছু একটা বলা যেত? একটা কাজ হত? কিন্তু তা তো শিখছে না এরা, এই দর্শককূল একটা হিন্দি লাইনের অর্ধেকটাও বলতে পারবে না। গ্যারান্টি। তাহলে কি শিখছে এরা? যতসব আজে বাজে জিনিস- হিংসা, ক্যাচাল, পারিবারিক দলাদলি আর ড্রেস আপ।

সব ঘটনার অন্তরালেই আর একটা ঘটনা থাকে, এরও আছে, আর তা হল অর্থনীতি। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের প্রসার, ব্রেনওয়াস! এরাও তাইই করছে। না হলে, সানি লিওন-এর নামে হাজার হাজার টাকা দামের ড্রেস বাংলাদেশের মার্কেট গুলোতে কিভাবে প্রকাশ্যে বিক্রয় হয়? আবার সেগুলো পরিবারের সবাই মিলে উৎসাহের সহিত কেনাও হয়? পড়ে গর্ব করার পাশাপাশি ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেওয়া হয় –এই দেখো, আমি সানি লিয়ন পড়েছি! মাথা নস্ট!

অথচ আমরা সবাই জানি সানি লিওন; কে, কি তার পেশা? কি তার কর্মকাণ্ড? বেশ্যারও অধম সে, আমারা যাদের বেশ্যা বা পতিতা হিসেবে চিনি জানি, তাদের অধিকাংশই এই পেশায় এসেছে নিতান্তই বাধ্য হবে বা কপাল দোষে বা পেটের দায়ে এবং তাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাকে একটা নির্দিষ্ট এরিয়ায় এবং গোপনে। অপরদিকে সানি লিয়ন’রা এই পেশায় এসছে শখ করে, পয়সা কামাতে, বড়লোকি দেখাতে, পুঁজিবাদের প্রকটরুপ হিসেবে। শুধু তাইই নয়, তারা তাদের কর্মকান্ড ভিডিও করে তা বিশ্ব ব্যাপী বাজারজাত করছে, মানুষকে দেখাচ্ছে। মানুষের স্বাভাবিক যে লজ্জা থাকে সেটাও তাদের নেই, নারীর কথা নাইবা বাদই দিলাম।

অতি নিকটেই পূজা ও ঈদের জমজমাট বাজার বসতে যাচ্ছে দেশে। কেউ কি আছেন, আমাদের বানিয়াশান্তা, টাঙ্গাইল বা মাদারিপুরের কোন পতিতা’র নামের সাথে মিল রেখে “কমলা ড্রেস” বিক্রি করবেন? কিনবেন? আছেন কেউ? জানি উত্তর হবে, না! বলবেন, কি সব লজ্জার কথা বলছেন? একজন বেশ্যার নামের কোন পোশাক কি মেয়েদের কিনে দেওয়া যায়? বলি, তাহলে সানি লিওন কে? জবাব দেন? আপনি কি ব্রেন ওয়াসড নন?

৩) পণ্যের বাজার দখলের ক্ষেত্রেঃ

আসুন এবার দেখা যাক, কিভাবে তারা ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলোর বদৌলতে বিনা পয়সায় আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার- ভারতের উৎপাদিত শিল্প পন্য দিয়ে দখল করছে এবং কিভাবে আমাদের দেশের সমগোত্রীয় পণ্যকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দিয়ে সেইসব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লোকসান গুনতে বাধ্য করছে? মাথা উঁচু করে দাড়াতে দিচ্ছে না।

আচ্ছা ধরুন, আমি সাবান কিনতে দোকানে যেয়ে কোন সাবানটা চাইবো? নিশ্চয় লাক্স? হ্যাঁ, আমি এই সাবানটাই কিন্তু চাইবো এবং চাওয়া মাত্র দোকানদার তা এগিয়ে দিবে একটা কথাও না বলে? বলুন তো, এটা কেন ঘটবে? এর মূলে আছে লাক্সের ব্যাপক ও ভিন্ন মাত্রার প্রচার ব্যবস্থা। এই লাক্স সাবানের সমগোত্রীয় কিন্তু কয়েকটি দেশিয় সাবানের ব্র্যান্ড আছে, যেমন মেরিল, কেয়া, তিব্বত, স্যান্ডালিনা কিন্তু আমরা তা না চেয়ে দোকানদারে কাছে সরাসরি লাক্স সাবান চাচ্ছি এবং কিনে সন্তুষ্ট হচ্ছি। এর মূল কারণ লাক্সের ব্যাপক মাত্রার ও পরিবর্তনশীল বিজ্ঞাপন আমাকে এটা করতে বাধ্য করছে। আবার একই প্রচার ব্যবস্থা ও নিত্যনতুন মডেল, নায়িকাদের মাধ্যমে আমাকে এই সাবানের উপর বিরক্ত বা অভ্যস্ত হওয়ার কোন সুযোগই দিচ্ছেনা ইউনিলিভার। অপরদিকে যেহেতু বেশী বিক্রি হচ্ছে আর তাই ইউনিলিভার দোকানদারের ডিসপ্লের সবচেয়ে প্রাইম জায়গাটা কিনে নিয়ে লাক্সের ডিসপ্লে করছে, আর একটু বেশী লাভ হচ্ছে দেখে দোকানদারও ক্রেতার নিকট অন্য ব্যান্ডের সাবান বিক্রয় করার জন্য পুশ করছে না। উইন উইন সিচুয়েশন! কিন্তু এই কৌশলে মার খাচ্ছে আমাদের দেশীয় কোম্পানি গুলো। দেশীয় ব্র্যান্ডের সাবান গুলো ক্রমাগত দোকানের ডিসপ্লে থেকে সরে যাচ্ছে। কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান পাচ্ছে। আর লাক্স তাদের বাংলাদেশের প্রচারণার মূল কাজটা হিন্দি চ্যানেল গুলো দিয়েই সেরে নিচ্ছে এবং সরকার ও দেশীয় টিভি চ্যানেল গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এবার দেখা যাক কিভাবে ভারতীয় ও বহুজাতিক ব্র্যান্ড গুলো ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলোয় বিজ্ঞাপন চালিয়েই বাংলাদেশে ফ্রি প্রচারণা চালানোর অবাধ সুযোগ পাচ্ছে? ধরি, স্কয়ার তার মেরিল ব্র্যান্ড সাবানের বিজনেস প্রমোশনের জন্য সাবানের ২৮ টাকা খুচরা মূল্যের উপর ১০% তথা ২ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করছে। এই টাকা সে খরচ করছে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল গুলোতে, বিলবোর্ড, রিটেইল মার্কেটিং-এ ভাগ ভাগ করে। ধরে নিচ্ছি, এই বিজ্ঞাপন ব্যয় থেকে মেরিল ১০ এর মধ্যে ৩ আউটপুট বা মাইল এজ পয়েন্ট পাচ্ছে এবং মাসিক ১০০ ইউনিট বিক্রির জন্য (১০০ X ২.৮০) = ২৮০ টাকা খরচ করতে পারছে।

অপরদিকে, লাক্স সাবানের জন্য ইউনিলিভার সমপরিমাণ অর্থ খরচ করে মাইল এজ পয়েন্ট ৩ পাওয়ার পরেও উপরি হিসেবে পাচ্ছে আরও ৫ পয়েন্ট, যা সে পাচ্ছে ভারতীয় চ্যানেল গুলোর মাধ্যমে, একদম ফ্রি অফ কষ্টে। আর যেহেতু সে বেশী বিক্রি করছে, সেহেতু সে বেশী টাকাও বিজ্ঞাপনে ব্যয় করতে পাচ্ছে। যদি তার মাসিক বিক্রিত ইউনিট ১,০০০ হয়, তাহলে সে এবাবদ (১,০০০ X ২.৮০) = ২,৮০০ টাকা খরচ করতে পারছে। যা মেরিলের ১০ গুণ। এর ফলে বিজ্ঞাপনে আরও বেশী পরিমাণে টাকা খরচ করছে ইউনিলিভার, ফলে সে আরও ২ পয়েন্ট এক্সট্রা পাচ্ছে। তাহলে সে সর্বমোট মাইল এজ পয়েন্ট পাচ্ছে ৩+৫+২= ১০, যেখানে মেরিল পাচ্ছে ৩; এই রেশিও দিন দিন বাড়তেই থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ লাক্স আমাদের দেশে ফ্রি বিজ্ঞাপন প্রচারের এই সুযোগটা পাচ্ছে।

৪) দেশীয় টিভি চ্যানেল গুলোর প্রেক্ষিতেঃ

ভারতীয় টিভি চ্যানেলের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশীয় সরকারী বেসরকারি টিভি চ্যানেল গুলোও। উপরে যে ৫ পয়েন্ট ফ্রি পাচ্ছে বললাম, সেটা পেতে কিন্তু ইউনিলিভারকে বাংলাদেশে বর্তমানের চেয়ে বেশী টাকা খরচ করতে হত টিভি বিজ্ঞাপন ব্যয় বাবদ, আর তার পুরোটাই পেত আমাদের চ্যানেল গুলো।

এতে করে আমাদের দেশীয় চ্যানেল গুলো একদিকে যেমন আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে আশানুরূপ টিআরপি’ও পাচ্ছে না এবং মার্কেট শেয়ার হারাচ্ছে ক্রমাগত।

৫) সরকারের আয়ের প্রেক্ষিতেঃ

এবারেও সেই ফ্রি ৫ পয়েন্ট, এই পয়েন্ট পেতে ইউনিলিভারকে যে পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট বাবদ দিতে হত, সেটা তারা আমাদের না দিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় সরকারকে সেইদেশের টিভি চ্যানেল গুলোতে অতিরিক্ত প্রচারনার জন্য।

উফ! এতক্ষণ যে এত প্যাঁচাল পাড়লাম তা থেকে কি বুঝলাম? বুঝলাম, ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলো আমাদের দেশে শুধু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই চালাচ্ছে না, তারা অর্থনৈতিক আগ্রাসনও চালাচ্ছে। এটা আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবো ততই আমাদের জন্য ভাল।

শুনে রাখুন, এই ভাল কিন্তু ভারতীয়রা ভালই বোঝে, আর তাইতো তারা তাদের দেশে আমাদের একটা চ্যানেলকেও প্রচার করার জন্য কেবল অপারেটরদেরকে অনুমতি দেয়নি, ভবিষ্যতেও দিবে না। বিশ্বাস রাখুন!

এথেকে উত্তরণের উপায় কি? আছে! একটা উপায় আছে। আর সেটা হলো, আমাদের সবগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল গুলোকে টেরিস্টরিয়াল সুবিধা দানের মাধ্যমে সরাসরি দেশব্যাপী প্রচার করার সুযোগ করে দেওয়া এবং ক্যাবল অপারেটর মুক্ত করা। আর মানুষ বিনামূল্যে ১০-১২ টা বাংলা চ্যানেল দেখার সুযোগ পেলে শুধু শুধু আর টাকা খরচ করে ক্যাবল লাইন লাগাবে কেন?

তারপর বাদবাকি কাজ- যা করার তা আমরা আমজনতাই করুম, এক লগে ঘ্যাচাং করে ডিস কানেকশন কেটে দিয়ে এন্টেনা দিয়ে টিভি দেখুম ……

প্রায় কাছাকাছি বিষয়ে লেখাঃ ভারতীয়দের নৈতিক অবক্ষয় ও আমাদের ভোগান্তি

সুত্রঃ সুকান্ত কুমার সাহা

বিষয়: বিবিধ

২১৬৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

249386
২৯ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৫০
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আসলে বাংলা সিনেমা বা নাটকের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়–এদেশে যখন বিটিভি চালু হয় তখন ভারতীয়রা আমাদের টিভি বিশেষত নাটিকা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ত।

ভারতীয় টিভি তারা তেমন দেখতো না, খালেদার সময় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটা জরীপের সময় যখন প্রশ্ন করা হয় যে, পশ্চিম বঙ্গের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?

তখন তারা নির্দ্বিধায় জবাব দিয়েছিলো—পশিচম প্রধানমন্ত্রীর নাম খালেদা জিয়া।

এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো? বাংলাদেশী টিভির প্রভাবেই তারা প্রভাবিত হয়েছিলো বলেই তারা তাদের প্রধানমন্ত্রীর নামও ভুলে গিয়েছিলো।

তাই মিডিয়া যা খাওয়াবে আমরা নিরুপায় হয়ে তাই খেতেই বাধ্য, এটাই বাস্তবতা। ভালোমন্দের বাছবিচার তখন থাকেনা।

এখন যেমন পাখি ড্রেসের প্রভাব, এটার জন্য কি আমাদের সন্তানরাই দায়ী নাকি যারা এটা পরিকল্পিতভাবে বাজারজাত করেছে, তারাই দায়ী? এ পোশাক বাজারজাত না করে অন্য যেটাই আসতো বাজারে আমরা সেটাই লুফে নিতাম, যারা রেডিমেড পোশাকের বাইরে পোশাক বানাতে আগ্রহী নই?

তাই আমাদের জনগণ অথবা নারী বা পুরুষ কারুর দোষ নেই–দোষ হচ্ছে মিডিয়াম্যানদের যারা এসব তৈরি করে আমাদের যা খাওয়ায় আমরা তাই খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।

সুতরাং স্টার জলসাসহ সব ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করলে আমাদের লাভছাড়া ক্ষতি হবেনা। আমি তথ্যমন্ত্রণালয়ের অফিসার হিসেবে ফিল্ম সেন্সরবোর্ডের কাজও জানি কিভাবে ফিল্ম ছাড়পত্র পায়।

আর ভারতীয় সিরিয়াল বিশেষত জলসা আর জিবাংলার নাটকের মান ৪০%ও নেই–কাহিনীর ধারাবাহিকতা এবং বাস্তবতা ও সমাজের সাথে সঙ্গতিহীন বানোয়াট কাহিনী সাজিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব ও এডভেঞ্চার সৃষ্টি করে আকর্ষণ তৈরি করা হয় মাত্র। আর অভিনয় হয় নিখুঁত বলেই আমরা দেখি।

বন্ধ হলে আমরা সেই আগের মতোই আমাদের টিভি দেখতেই বাধ্য হবো; তবু ডিস লাইন কেউ কেটে দেবোনা জিবাংলার দুঃখে!!
৩০ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
193818
হতভাগা লিখেছেন : 'তাই আমাদের জনগণ অথবা নারী বা পুরুষ কারুর দোষ নেই''

০ দোষ আমাদেরই । আমাদের মনমানসিকতা এরকম যে দেশীয় কোন জিনিসে আমরা নাঁক সিঁটকাই ।

দেশী পন্য ও স্টারদের আমরা পঁচাই+অসন্মান করি - এটা বাস্তব ।
৩০ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
193842
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : তারপরও জোর করে যা-ই খাওয়াবেন আমরা খেতে বাধ্য
249472
৩০ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
হতভাগা লিখেছেন : কপিপেস্ট যে দিছেন হিন্দি সিরিয়ালের বিপরীতে - ভাবী জানে ?
১০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:৫৮
196886
মিঃ কপিপেস্ট লিখেছেন : নারে ভাই জানে না
১০ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
196959
হতভাগা লিখেছেন : আগে জানতে পারে নাই , এখন জানছে । তাই ১০ দিন পর রেসপস আসছে ।
১৩ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪৪
197856
মিঃ কপিপেস্ট লিখেছেন : হুম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File