তিন মিনিটের অপারেশন!
লিখেছেন লিখেছেন মিঃ কপিপেস্ট ১৭ জুন, ২০১৪, ১১:০১:৫৬ রাত
সোমবার ঘড়ির কাটায় বিকেল ৪টা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদুল্লাহ কলাভবনের দক্ষিণ গেটের সামনেই একটি আম গাছের নিচে বেদিতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের ২০-২৫ নেতাকর্মী। ওই স্থানেই বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের নবাব আব্দুল লতিফ হলের সেক্রেটারি রাসেল মাহমুদকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি।
বেলা দুইটা থেকেই তাকে এভাবেই আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর কিছুটা পশ্চিম-দক্ষিণে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্র্মীরা। তাদের কিছুটা পেছনে একটি বন্ধ চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন রাজশাহী শহর থেকে আসা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক ৪টা বেজে ৬ মিনিট! ঠিক সেই সময়ে প্যারিস রোডে দেখা যায় পুলিশের তিনটি ভ্যান। এক মিনিটের মধ্যেই তারা শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে ছাত্রলীগের পাশেই এসে থামিয়ে দেয় তাদের ভ্যান। পুলিশ গাড়ি থেকে নামার আগেই তাদের সামনে দিয়ে শিবির নেতা রাসেলকে হাত ধরে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ভিতরে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া।
এসময় তাদের সঙ্গে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, কাউসার আহমেদ কৌশিক, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুষ্ময়, ছাত্রলীগ কর্মী রিনেট, মিজান ও ডন। তারা ভেতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নামে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার তানভির হায়দার চৌধুরী ও মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনসহ অন্তত পঁচিশ জন পুলিশ।
ওই ভবনের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থান করা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতারা যখন রাসেলকে ভবনের ভেতরে নিয়ে যায় তখন সময় ঠিক ৪টা ৭ মিনিট। এর মাঝেই ভবনের বাইরে (দক্ষিণ গেটের সামনে) দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতা হঠাৎ করেই চলে যান ভবনের পূর্ব গেটে। সেখানে গিয়ে আগে থেকেই তালাবদ্ধ করে রাখা ভবনের গেট খুলে ফেলেন তারা। এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও কোনো কিছুই আঁচ করতে পারেননি সাংবাদিকরা।
এভাবেই কেটে যায় আরো দুটি মিনিট। বাইরে সাংবাদিক, পুলিশ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীরা তখনও ঠাণ্ডামাথায় গল্প চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ওই ভবনের নিচ ও তৃতীয় তলায় চলছিল দুটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এসময় হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল-তুহিন চলে যায় ভবনের ভিতরে। সাংবাদিকরাও কিছুটা ভবনের ভিতরে যেতে থাকেন। সময় তখন ঠিক ৪টা বেজে ১০ মিনিট।
ভবনের ভেতর থেকে তখন পরপর দুটি গুলির আওয়াজ ভেসে আসে। শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সাংবাদিকরা চলে যান ভবনের ভেতরে। এসময় তাদের সামনে দিয়ে চাপাতি হাতে দৌঁড় দেয় রুনু। ভবনের নিচ তলায় পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা পিস্তুল হাতে পালিয়ে যেতে দেখেন কিবরিয়াকে।
এছাড়া বিভিন্ন ছোট ছোট ধারালো অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের নেতা কৌশিক, রিনেট, মিজান, ডন, সুষ্ময় দৌঁড়ে গিয়ে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। রাসেলকে ভবনের ভিতরে ঢুকানো থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ নেতারা পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে সময় ব্যয় হয় মাত্র তিন মিনিটি! এই অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায় ছাত্রলীগের অপারেশন।
ওই স্থানে থাকা একাধিক সাংবাদিক জানান, তারা গিয়ে ওই ভবনের নিচ তলায় সিঁড়ির নিচে শিবির নেতা রাসেলকে নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখেন। এ সময় তাদের সামনে দিয়ে হেটে চলে যায় তুহিন। পরে রাসেলের ডান পা গোড়ালী থেকে বিচ্ছিন্ন, ডান হাতের রগ কাটা ও দুই পায়ে হাটুর উপর দুটি অস্ত্রের আঘাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপারেশন শেষে রাসেলকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তার শরীরে একাধিক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে গত রাতেই। এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে শিবির রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে মঙ্গলবার আধাবেলা হরতাল পালন করে।
ঘটনার বিভৎষতা সম্পর্কে ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘দিনের বেলা ক্যাম্পাসের ভেতরে তাও আবার সাংবাদিক ও পুলিশের সামনে এমন ঘটনা সত্যিই ভাবিয়ে তোলে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের চিন্তা হয়।’
ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান বলেন, ‘এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা অন্য কারো মাঝে আতঙ্কের কিছু নেই। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
সুত্রউৎসঃ শীর্ষ নিউজ
বিষয়: বিবিধ
১১৯৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলে ইমরান ২০০
মন্তব্য করতে লগইন করুন