নীল অসুখ
লিখেছেন লিখেছেন লেখার আকাশ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৩০:১৮ সকাল
বেড রুমের দরজাটা বন্ধ করে, পরিবার থেকে কিছু সময় নিজেকে মুক্ত করে চুপচাপ বিছানায় বসে মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে বিশ্রাম করছিলাম। অনলাইনে কিছু দেখতে দেখতে এভাবে বিশ্রাম করতে ভাল লাগে।
হঠাৎ আমার চোখ চলে গেল সামনের দিকে। ড্রেসারের সাথের বিশাল আয়নাটায় একটা প্রতিবিম্ব দেখা দিচ্ছে। ফার্নিচারটা ঠিক বিছানার সামনে। কি দেখলাম জানি না! খেয়াল করলাম দু'চোখ পানিতে ভরে উঠছে! উত্তর খুঁজতে মনযোগ দিলাম দৃশ্যটিতে। আয়নায় দেখা যাচ্ছে বিছানায় ঠেস দিয়ে বসে একজন সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাতের ফোনটি পড়ে আছে কোলের উপর।এবার সে অত্যন্ত সুক্ষভাবে তার চেহারাটি পর্যবেক্ষণ করছে। সে দেখলো যে ঐ মুখটার উপর দু:খের একটা কালো ছায়া পড়ে আছে। আঁধারের রংটা ছড়িয়ে আছে কপালের কুন্চনে, দু'চোখর নিচে। কষ্টের ভারে নিম্নমুখী দু'ঠোটের কোনা। ক্লান্ত চিবুক পরিশ্রম করে উর্ধ্বমুখি করে রেখেছে।
মনে হলো এ যেন আমার মুখচ্ছবি নয়! অন্য কেউ। পরিচিত কাউকে অনেকদিন পর দেখলে যেমন লাগে তেমন লাগছিল। বুঝেছি আয়নার সামনে দাঁড়াই প্রতিদিন কিন্ত নিজেকে দেখি না। শুধু নিশ্চিন্ত হয়ে নেই যে বাইরে কারো সামনে যেন অপ্রস্তুত না হতে হয়।
আজও তো চোখ ফিরিয়েই নিয়েছিলাম। কিন্ত আনমনে নিজের কাছেই ধরা পড়ে গেলাম। কারো দু:খ দেখলে ভিতরটা ছটফট করে। কি করলে শান্ত হবে সে চেষ্টা করতে ইচ্ছে হয়। আজ নিজের মুখটা দেখে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। প্রশ্ন জাগল, কি কারন? কিসের অভাব?
অতীতে ফিরে গেলাম। মনে পড়ল, কারো সামনে পড়লে অনেক সময়ই তারা প্রশ্ন করত, হাসছ কেন? জবাবে বলতাম, আমার মুখটাই হাসি-হাসি। বেখেয়ালে যে এত হেসে যেতাম তা তাদের কৌতুহল না হলে জানতে পেতাম না।
আর এখন? তারা জানতে চায়, আর ইউ ওকে? আমিও হাসি টেনে বলি, হ্যাঁ, ভালই তো আছি? কেন? ওরা বলে, ইট সিমস লাইক ইউ আর নট ইউরসেলফ। কেয়ারিং এর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে এগিয়ে চলি।
নাকি নিজের অজান্তেই পিছনে পড়ে যাই? ফিরে যাই আপন জিজ্ঞাসায়- নিজেকেই উত্তর দেই। না, কোন অভাব তো চোখে পড়ে না। এমন একজন জীবনসাথি পেয়েছি যার শুকরিয়া আদায় করতে গেলে তার জন্য পুরো আরেকটা লেখার সূচনা করতে হবে। আর বাচ্চাগুলো নিয়েছে অভিবাবকের ভুমিকা। তুমি খেয়েছ? যদি বলি না, বলবে তাহলে তো তোমার ক্ষুধা লেগেছে। কি খাবে? ওষুধ খেয়েছ? অনেক হয়েছে, এবার একটু রেস্ট কর। এমনিভাবে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
আক্ষেপ কিসের তবে? চাওয়া-পাওয়ার অন্ক কষার থেকে দায়িত্বকেই গুরুত্ব দিয়েছি বেশি। সর্বক্ষন চেষ্টা করেছি আবেগকে পরাভূত করে দায়িত্ব পালন করে যেতে। অথচ এখন আবেগ আমাকে পরাজিত করতে চায়। কখনো মনে হয় দেশের মাটিতে গিয়ে বসবাস করি। স্বজনদের মুখগুলো দেখলে আর দু:খ থাকবে না। কিন্ত পরক্ষনেই বুঝি যে অন্তর প্রশান্ত হলে পৃথিবীর সর্বত্রই শান্তি।
অনেক সময়ই নিজের ভাল না থাকার জন্য দোষারোপ করতে ইচ্ছে হয় আশেপাশের সবাইকে। তারপরই দেখি একটা আংগুল তাদের দিকে নির্দেশ করলে বাকি চারটা আমার দোষগুলিরই গুনগান করছে।
আচ্ছা, নীল রংয়ের ওষুধগুলো দিয়ে কি নীল কষ্ট ঢেকে রাখা যায়? আমার মনে হয়, যায় না। ওসব দিয়ে হয়ত মস্তিষ্কের রাসায়নিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করা যায়। চোখের পানি হয়ত শুকিয়ে ফেলা যায়। কিন্ত প্রতিনিয়ত অর্ন্তদহন? তা কি দিয়ে নিভবে?
আমার রবের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। অন্তর ভরে রাখতে চাই তারই স্মরনে। কিন্ত জানি না কিভাবে দূর হবে এই ঘন অন্ধকার? কি উপায়ে দূর হবে এই নীল অসুখ?
বিষয়: বিবিধ
১২৯৮ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রাগের ইমো দেখে তো ভয় পেলাম! লেখগুলোও ভয় পেয়ে কোথায় যে গেল?
___________
লেখার আকাশ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও গঠনমূলক মন্তব্যর জন্য। ভাল থাকবেন।
>- >- >-
দেখি এবার হারিকাপু-ভাইয়া কি করতে পারে!?
হা হা হা
মন্তব্য করতে লগইন করুন