আশুরার পূব রাত ও ইমাম হুসেন রা:এর ঐতিহাসিক ভাষন

লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ২৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:০৩:১৩ দুপুর



ইমামের ব্যক্তিত্ব ও আত্মত্যাগর স্মৃতি যুগযুগ ধরে ইসলামী আন্মাদোলনের কর্মীদের জন্য মুক্তির প্রেরণা যোগাবে। জালিম শাসক গুষ্ঠির অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস ও চেতনা যুগাবে।শহীদরা কেয়ামত র্যন্ত অমর থাকবেন এবং শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদেরকে এমন জৌলুসসহ হাজির করবেন যে স্বর্গীয় বাহনে উপবিষ্ট নবী রাসূলরাও তাদেরকে সম্মান দেখানোর জন্য নীচে অবতরণ করবেন ।আশুরার পূর্ব রাত আসমান জমিনে থম থমে ভাব বিরাজ করছে।পৃথবী যেন এক মহাপ্রলয়ের অপেক্ষ।চারদিক শত্রু বাহিনীদ্বারা পরিবেষ্টিত।ইমাম বুছতে পারলেন অনেকের চোখে মূখে ভয়ের ছাপ।তিনি খুব ভেবে চিন্তে এক চরম সিদ্ধান্ত নিলেন-তিনি তার কাফেলার মধ্যে যাদের নিয়্যতে বিন্দু পরিমান গোলমাল আছে তাদের কাছ থেকে মুক্ত হতে চাইলেন ।তিনি সবাইকে একস্থানে সমবেত করলেন এবং শাহাদাতের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় ভাষণ দিলেন।

তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, "আমি আমার সঙ্গী সাথীদের চেয়ে কোন সাথীকে অধিক নেককার এবং আমার আহলে বাইতের চেয়ে কোন পরিবারকে অধিক উত্তম মনে করি না । মহান আল্লাহ তোমাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।" ভয়াবহ আশুরার পূর্বাভাস নিয়ে ঘনিয়ে এলো অন্ধকার । ধৈর্য্যর মূর্ত প্রতীক ইমাম হোসেন (আঃ) সকলকে কাছে ডাকলেন । বললেন, ভায়েরা আমার! জেনে রাখো আজকের এই রাত হবে তোমাদের শেষ রাত । আমার সাথে থাকলে তোমরা কেউ রেহাই পাবে না । আগামীকালই আমাকে ও আমার পরিবার পরিজনকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হবে । এমনকি আমার দুধের বাচ্চাকেও এরা রেহাই দেবে না । ভাইসব, "তোমরা ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারো । আমার হাতে তোমরা যে বায়াত করেছো, তা আমি ফিরিয়ে নিলাম । তোমরা এখন মুক্ত । আমার জন্যে শুধূ শুধু তোমরা কেন প্রাণ দেবে ? শত্রুরা শুধু আমাকে চায়, তোমাদেরকে নয় । এখন আন্ধকার রাত । যার ইচ্ছা চলে যাও , কেউ দেখতে পাবে না ।" ইমাম ভাষণ শেষ করে তার ভাই আব্বাসকে প্রদীপ নিভিয়ে দিতে বললেন । যখন অন্ধকার হয়ে এল তখন ইমামের সাথে আসা অনেক লোক সঙ্গোপনে ইমাম বাহিনী ত্যাগ করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল। সবাই পার্থিব লাভের আশায় মক্কা থেকে ইমামের সাথে যোগ দিয়েছিল । যখন আলো জালানো হল তখন দেখা গেল মুষ্টিমেয় কিছু লোক মাত্র রয়ে গেছেন । এদের সংখ্যা একশো জনেরও কম । আত্মত্যাগের আদর্শে বলীয়ান বিশুদ্ধ অন্তরের এই মর্দে মোমিনদের দিকে তাকিয়ে ইমামের প্রশান্ত মুখটা উজ্জল দ্বীপ্তিমান হয়ে উঠল । মহাকালের মহাত্যাগের জন্যে এরকম বিশুদ্ধ হৃদয়গুলোই তার প্রয়োজন ছিল । তবুও তিনি তার সাথীদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন গেলে না ? এ প্রশ্ন শুনে আহলে বাইতের সদস্যরা বলে উঠলেন, একি বলছেন হযরত ! আমরা আপনাকে একা ফেলে কিভাবে চলে যাবো ? লোকের কাছে গিয়ে কীভাবে মুখ দেখাবো ? আমরা কি বলব মহানবী (সঃ) এর সন্তানকে আমরা একা ফেলে চলে এসেছি । তা কখনো হবে না । নিজের জীবন দিয়ে দেব তবুও আপনাকে ছেড়ে যাব না । আপনার সাথে থেকে শহীদ হব । মুসলিম বিন আউসাজা দাঁড়িয়ে বললেন, প্রিয় ইমাম একি বলছেন আপনি । আপনাকে দুশমনদের হাতে ফেলে রেখে পালিয়ে যাবো ? খোদা আপনার পরে যেন আমাদের জীবিত না রাখেন । আমরা যুদ্ধ করবো । গায়ে শক্তি থাকা পর্যন্ত দুশমনের গায়ে তলোয়ার চালাবো, বর্শা চালবো । ওগুলো ভেঙ্গে গেলে পাথর মেরে মেরে যুদ্ধ করবো । সাঈদ বিন আবদুল্লাহ হানাফী বললেন, প্রিয় ইমাম ! খোদার কসম আপনাকে রেখে আমরা কোথাও যাবোনা । আপনার জন্যে যদি নিহত হই এবং জীবন্ত দগ্ধ হই এবং তা যদি ৭০ বারও হয় তবুও আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না । আপনি মরে যাবেন আর আমরা বেচে থাকব এ কি করে হয় ! যুহাইর ইবনে কাইন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, হে মহানবীর প্রিয় সন্তান, আপনি ও আপনার পরিবারকে রক্ষার জন্যে আমাকে যদি হাজারবারও মেরে ফেলা হয় তাহলেও আমি আপনাকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করব । এভাবে ইমামের বিভিন্ন সঙ্গী সাথী ইমামকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন , নিজেদের আন্তরিকতা প্রকাশ করতে লাগলেন । সঙ্গী সাথীদের এরকম দৃঢ়তা দেখে ইমামের চেহারা মোবারক এক অভূতপূর্ব প্রফুল্লায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল । তিনি মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন । ইমাম হোসেন (আঃ)এর ভাষনের পর সবাই ছত্রভংগ হয়ে মশগুল হলেন এবাদতে । কেউ সেজদায়, কেউ নামাজে, কেউ মুনাজাতে । কারবালার প্রান্তর সিক্ত হয়ে উঠল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শহীদদের অশ্রুতে । দুনিয়ার সব ফেরেশতা যোগ দিলেন তাদের এই প্রার্থনায় কারবালার প্রান্তর সিক্ত হয়ে উঠল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শহীদদের অশ্রুতে । দুনিয়ার সব ফেরেশতা যোগ দিলেন তাদের এই প্রার্থনায় ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346928
২৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:০৯
আনোয়ার আলী লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ।
346936
২৩ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২১
মুন্সী কুতুবুদ্দীন লিখেছেন : আল্লাহু আকবার

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File