তাওবার গুরুত্ব ও তাওবাকারীর পরিচয়:
লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ১২ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:১২:৫৮ রাত
আল্লাহ তা’আলার দরবারে বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহ তা’আলার নিকট তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন। আল্লাহ তা’আলা নিজেই মুমিনদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন-
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور : ٣١]
“হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তাওবা [প্রত্যাবর্তন] কর, নিশ্চয় তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা নূর আয়াত: ৩১]
আর যারা তাওবা করে না, তাদের আল্লাহ তা’আলা যালেম বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَمَن لَّمۡ يَتُبۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ١١ ﴾ [الحجرات: ١١]
“যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী”।
উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক তাওবাকারী তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই সফলকাম। দ্বিতীয়- যারা তাওবা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই অত্যাচারী ও জালিম। এ দুই ভাগের মধ্যে কোন তৃতীয় ভাগ নাই। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন ভাগের অন্তর্ভূক্ত হবো?
বান্দা যখন কোন অপরাধ করে আল্লাহর নিকট ফিরে যায় এবং তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অধিক খুশি হন। যেমন, আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان راحلته بأرض فلاة فانفلتت منه وعليها طعامه وشرابه فأيس منها فأتى شجرة فاضطجع في ظلها قد أيس من راحلته فبينما هو كذلك إذ هو بها قائمة عنده فأخذ بخطامها ثم قال من شدة الفرح : اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح ” . رواه مسلم .
“আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি তার বাহন সাওয়ারী নিয়ে কোন জনমানব শূন্য প্রান্তরে অবস্থান করছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারীটি পালিয়ে গেল। সাওয়ারীটির সাথে ছিল তার খাদ্য ও পানীয় বস্তু। লোকটি সাওয়ারীটি খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়া-তলে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার সাওয়ারীটি তার পার্শ্বে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে অধিক খুশিতে তার সাওয়ারীর লাগাম চেপে ধরে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার রব! লোকটি অধিক খুশিতে উল্টা-পাল্টা বলে ফেলল”।
মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এই পৃথিবীতে চলার পথে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ অনেক ভুল করে বসে। ছোট ছোট গুনাহ করতে করতে অনেক সময় তাঁরা জানা-অজানা অনেক বড় বড় গুনাহও করে থাকে। অনেক মানুষ তাঁদের গুনাহের দিকে তাকিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়ে।কিন্তু আল্লাহ তায়ালার গর্বের এই সৃষ্টির হতাশা কাটাতে আল্লাহ তায়ালা তাওবার ব্যবস্থা করেছেন।তাওবার মাধ্যেমে আল্লাহ একজন মানুষকে নিস্পাপও করে দেন।নিচে তাওবার গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।
মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই মুমিনদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন-
وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ
[النور: ٣١]
হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তাওবা [প্রত্যাবর্তন]কর, নিশ্চয় তোমরা সফলকাম হবে। [সূরা নূর আয়াত: ৩১]
আর যারা তাওবা করে না, আল্লাহ তাদের জালেম বলে আখ্যায়িত করেছেন।তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,وَمَن لَّمۡ يَتُبۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ [الحجرات: ١١]
যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী।
উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক- তাওবাকারী, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই সফলকাম। দ্বিতীয়- যারা তাওবা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই অত্যাচারী ও জালিম। এ দুই ভাগের মধ্যে কোনো তৃতীয় ভাগ নাই। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন ভাগের অন্তর্ভূক্ত হবো?
বান্দা যখন কোনো অপরাধ করে আল্লাহর নিকট ফিরে যায় এবং তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অধিক খুশি হন।
আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان راحلته بأرض فلاة فانفلتت منه وعليها طعامه وشرابه فأيس منها فأتى شجرة فاضطجع في ظلها قد أيس من راحلته فبينما هو كذلك إذ هو بها قائمة عنده فأخذ بخطامها ثم قال من شدة الفرح: اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح
(مسلم رواه)
আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার তাওবায় ওই ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি তার বাহন সাওয়ারী নিয়ে কোন জনমানব শূন্য প্রান্তরে অবস্থান করছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারিটি পালিয়ে গেল। সাওয়ারিটির সাথে ছিল তার খাদ্য ও পানীয় বস্তু। লোকটি সাওয়ারিটি খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে সে দেখতে পেল তার সাওয়ারিটি তার পার্শ্বে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে অধিক খুশিতে তার সাওয়ারির লাগাম চেপে ধরে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার রব! লোকটি অধিক খুশিতে উল্টা-পাল্টা বলে ফেলল।
সুতরাং প্রতিটি মুসলিমকে মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমাদের হিসাব নেয়ার আগে আমরা আমাদের নিজেদের হিসাব করে নিব। আল্লাহ আপনার হিসাব করার পূর্বে আপনার হিসাব আপনি করুন। তাতে আপনার হিসাব দেয়া সহজ হবে।
যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে বা অথবা কমপক্ষে মাসে একবার তাওবা করুন এবং আপনি আপনার হিসাব করুন। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন কোন কাজ করছেন কি, যা সঠিক আক্বীদা পরিপন্থী/দ্বীনের স্তম্ভ সালাত কায়েমে আপনার কোন দুর্বলতা আছে কি? ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি যথাযথভাবে আদায় করছেন কি? আপনি কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন কি?
এখনো তাওবা দ্বারা ক্ষমা করা হয়। তবে তাওবা কাকে বলে, তাওবার অর্থ কি এবং তাওবা কবুল হওয়ার শর্ত কি? তা আমাদের অনেকেরই জানা নাই। তাই আমরা নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো আলোচনা করব। আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।
তাওবা শব্দের অর্থ: প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অনুতাপ করা প্রভৃতি।
পারিভাষিক অর্থে, কোনো পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পর অনুতাপ-অনুশোচনা করে সেই পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই পাপকাজ ছেড়ে ভালো কাজে ফিরে আসাকেই তাওবা বলে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও ভালো কাজ করে আল্লাহ তায়ালা তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আর যারা তাওবা করে এবং নেক কাজ করে আল্লাহর প্রতি তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা (সূরা ফুরকান-৭০/৭১)।
এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং মহান আল্লাহ তওবাকারীদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে অত্যন্ত ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতি পাপকাজ করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক এটা আল্লাহ তায়ালা চান না। তাই তার হাবীব বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে তাওবা করার সঠিক নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন- হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারো (সূরা নূর-৩১)।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিন বান্দাদের সফলকাম হওয়ার জন্য আহ্বান করেন তাওবার মাধ্যমে। কারণ আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রভূ তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যিনি প্রভূ তাঁর অন্যতম গুণ হল ক্ষমা করা। তাই মহান আল্লাহ গাফুরুর রাহীম।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ কর- তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ তো ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান (সূরা মায়েদা-৭৪)।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের আহ্বাণ করে বলেন,তোমরা কি পাপ কাজের মাধ্যমে ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হয়েছো। তোমরা পাপ করার পর আল্লাহর দরবারে ফিরে এসো, আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং সঠিক পথের দিশা দেবেন। আল্লাহ চান তার প্রিয় বান্দারা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে জান্নাতের অমিয় সুধা পান করুক।
মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন- হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। আশা করা যায়, আল্লাহ তোমাদের ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি মার্জনা করে দেবেন এবং সেই জান্নাতে স্থান দেবেন। যাঁর পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত (সূরা তাহরীম-৮)।
মহান আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে মুমিন বান্দাদের সত্যিকারভাবে সহীহ নিয়্যাতে অন্তরের অন্তস্থল থেকে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাচ্ছেন। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে দুনিয়ার জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায় আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং মাফ করার পর জান্নাতের মাঝে স্থান দেবেন, যাঁর পাদদেশে নহর প্রবাহিত।
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন- আল্লাহর কাছে তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা, যারা অজ্ঞতাবশত খারাপ কাজ করে এবং সাথে সাথেই তাওবা করে। আল্লাহ তাআলা তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী ও হেকমতওয়ালা (সূরা নিসা-১৭)।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ খারাপ কাজ তথা পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করার জন্য আহ্বান জানান। তাদের তাওবাই প্রকৃত তাওবা, যারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আর আল্লাহ এমন মুমিন বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।
তাওবা আল্লাহর ইবাদত:
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাকারী, করুনাময়। (সূরা বাকারাহ-১৯৯)।অন্যত্র আল্লাহ ইরশাদ করেন- আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। (সূরা ফুস্সিলাত-৬)।
আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন- জেনে রাখুন, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। (সূরা মুহাম্মদ-১৯)।তাওবার কারণে গুনাহ মাফ হয়, বৃষ্টি বর্ষণ হয়, সন্তান ও সম্পদ দ্বারা সাহায্য করা হয় এবং জান্নাতের অধিকারী করা হয়।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর (নূহ -আঃ) বলেছেন- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।(সূরা নূহ-১০/১২)
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। (সূরা নূহ-২৮)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা (আদম ও হাওয়া আ.)-এর তাওবা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন- তারা উভয়ে বলল হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। (সূরা আরাফ-২৩)
হযরত মূসা (আ.) থেকে অনিচ্ছায় প্রকাশিত কিবতী-হত্যার ঘটনার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন- তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর যুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা কাসাস-১৬)
উপরে অনেক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো মহান আল্লাহ তাওবা কবুলকারী। এ জন্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওবার প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করে তাঁর উম্মতদের তাওবার প্রতি উৎসাহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০বার তাওবা করে থাকি (মুসলিম)।
এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওবার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে তার উম্মতদের তাওবা করার প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁর কোনো গুনাহ ছিল না। তারপরও তিনি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করতেন। তাঁর এই তাওবার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের শিক্ষা দিতেন ও (আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়ার জন্য) আল্লাহর প্রশংসা করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদীসে বলেন, মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করেন (তিরমিযী)।
এ হাদীস দ্বারা উম্মতের সব সময় তাওবা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারণ কার মৃত্যুযন্ত্রণা কখন শুরু হয় তা কেউ বলতে পারে না। তাই প্রতিটি মুমিন বান্দার উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর ক্ষমাপ্রার্থনার উত্তম সময় হলো ফরজ নামাজ শেষে ও শেষ রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে তাওবা করাই উত্তম। কারণ ওই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অত্যান্ত প্রিয়।
হযরত আনাস (রা.) বলেন,আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বনী আদম, তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে ও আমার আশা পোষণ করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, তোমার থেকে যা কিছুই প্রকাশ পাক, এতে আমি কোন পরোয়া করি না। হে বনী আদম, তোমার গুনাহ যদি ঊর্ধ্বগগন পর্যন্ত পৌছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি সামান্য পরোয়া করি না। হে বনী আদম, তুমি যদি আমার কাছে দুনিয়া ভরা গুনাহ নিয়ে আস, অতঃপর শিরকে লিপ্ত না হয়ে আমার সাথে সাক্ষাত কর, আমি তোমার নিকট যমীন ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।(তিরমিযী)
সাদ্দাদ বিন আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বন্দার জন্য সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হচ্ছে:
اللهم أنت ربى ، لا إله إلا أنت ، خلقتني و أنا عبدك و أنا على عهدك ووعدك ما استطعت ، أعوذبك من شر ما صنعت ، أبوء لك بنعمتك علي ، وأبوء لك بذنبي ، فاغفرلي ، فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت .
যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দিনের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে দিনেই সে সন্ধ্যার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তা পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রাতের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে রাতেই সে সকাল হওয়ার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী। (বুখারী)
আল্লাহর জন্যে সদকা এবং বেশী বেশী তাওবা জাহান্নাম থেকে নাযাতের কারণ: ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: হে নারীগণ, তোমরা সদকা কর এবং বেশি বেশি তাওবা কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী দেখেছি। তাদের থেকে এক মহিলা বলল: কী কারণে আমরা অধিকাংশ জাহান্নামী? তিনি বললেন: তোমরা বেশি বেশি লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। আমি তোমাদের মত আকল ও দ্বীনে ত্রুটিপূর্ণ কাউকে দেখিনি, যে বিজ্ঞলোকদের উপর বিজয়ী হয়। ওই মহিলা বলল: আমাদের আকল ও দ্বীনে ত্রুটি কী? তিনি বললেন, দুজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান, এবং তোমরা কতক দিন অবস্থান কর, যাতে তোমরা নামায আদায় কর না। (মুসলিম)।
তাওবা সবচেয়ে বড় যিকর । বান্দার উচিত এ যিকর বেশি বেশি করা।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। ‘আল্লাহর শপথ’ প্রতি দিন আমি সত্তরবারের চেয়েও অধিক আল্লাহর ইস্তিগফার ও তাওবা করি (বুখারী)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পরও তিন বার ইস্তিগফার করতেন। (মুসলিম) হে আল্লাহ তাআলা! আমাদেরকে বেশি বেশি করে ইস্তিগফার ও তাওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহ তা’য়ালার কাছে ওই মুমিন বান্দা প্রিয়, যে পাপকাজ করার পর মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা করে। আর তাওবা করার পাশাপাশি পাপকাজ থেকে ফিরে আসে। পাপকাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে পাপীদের মধ্যে উত্তম।
তাওবা শব্দের অর্থ : প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অনুতাপ করা প্রভৃতি।
পরিভাষায় : কোনো পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পর অনুতাপ-অনুশোচনা করে সেই পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই পাপকাজ ছেড়ে ভালো কাজে ফিরে আসাকেই তাওবা বলে।
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন :- যারা তাওবা করে, ঈমান আনয়ন করে এবং ভালো কাজ করে আল্লাহ তা’য়ালা তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আর যারা তাওবা করে এবং নেক কাজ করে আল্লাহর প্রতি তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা (সূরা ফুরকান-৭০/৭১) এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা’য়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং মহান আল্লাহ তওবাকারীদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কারণ আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতিকে অত্যন্ত ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতি পাপকাজ করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক এটা আল্লাহ তা’য়ালা চান না। তাই তার হাবীব বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তাওবা করার সঠিক নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন :- হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবাই তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারো (সূরা নূর-৩১) এ আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিন বান্দাদের সফলকাম হওয়ার জন্য আহ্বান করেন তাওবার মাধ্যমে। কারণ আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রভূ তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যিনি প্রভূ তাঁর অন্যতম গুণ হল ক্ষমা করা। তাই মহান আল্লাহ গাফুরুর রাহীম। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন : তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ তো ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান। (সূরা মায়েদা-৭৪) এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের আহ্বান করে বলেন, তোমরা কি পাপ কাজের মাধ্যমে ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হয়েছো। তোমরা পাপ করার পর আল্লাহর দরবারে ফিরে এসো, আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং সঠিক পথের দিশা দেবেন। আল্লাহ চান তার প্রিয় বান্দারা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে জান্নাতের অমিয় সুধা পান করুক। মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন : হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। আশা করা যায়, আল্লাহ তোমাদের ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি মার্জনা করে দেবেন এবং সেই জান্নাতে স্থান দেবেন। যাঁর পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত। (সূরা তাহরীম-৮) মহান আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে মুমিন বান্দাদের সত্যিকারভাবে সহী নিয়্যাতে অন্তরের অন্তস্থল থেকে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাচ্ছেন। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে দুনিয়ার জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায় আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং মাফ করার পর জান্নাতের মাঝে স্থান দেবেন, যাঁর পাদদেশে নহর প্রবাহিত। আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন : আল্লাহর কাছে তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা, যারা অজ্ঞতাবশত খারাপ কাজ করে এবং সাথে সাথেই তাওবা করে। আল্লাহ তা’আলা তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী ও হেকমতওয়ালা (সূরা নিসা-১৭) এ আয়াতে মহান আল্লাহ খারাপ কাজ তথা পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করার জন্য আহ্বান জানান। তাদের তাওবাই প্রকৃত তাওবা, যারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আর আল্লাহ এমন মুমিন বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।
তাওবা হলো আল্লাহর ইবাদত : মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :- আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাকারী করুনাময়। (সূরা বাকারাহ-১৯৯) অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন : আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। (সূরা ফুস্সিলাত-৬) আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন : জেনে রাখুন, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। (সূরা মুহাম্মদ-১৯)
তাওবার কারণে গুনাহ মাফ হয়, বৃষ্টি বর্ষণ হয়, সন্তান ও সম্পদ দ্বারা সাহায্য করা হয় এবং জান্নাতের অধিকারী করা হয় : মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর (নূহ-আঃ) বলেছেন : তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ-১০/১২) মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মু’মিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। (সূরা নূহ-২৮)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা (আদম ও হাওয়া-আঃ-এর তাওবা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন : তারা উভয়ে বলল : হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। (সূরা আ’রাফ-২৩)
হযরত মূসা (আঃ) থেকে অনিচ্ছায় প্রকাশিত কিবতী-হত্যার ঘটনার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন : তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর যুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা কাসাস-১৬)
উপরে অনেক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো মহান আল্লাহ তাওবা কবুলকারী। এ জন্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওবার প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করে তাঁর উম্মতদের তাওবার প্রতি উতসাহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করে থাকি। (মুসলিম) এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওবার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে তার উম্মতদের তাওবা করার প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁর কোনো গুনাহ ছিল না। তারপরও তিনি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করতেন। তাঁর এই তাওবার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের শিক্ষা দিতেন ও (আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়ার জন্য) আল্লাহর প্রশংসা করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদীসে বলেছেন : মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করেন। (তিরমিযী) এ হাদীস দ্বারা উম্মতের সব সময় তাওবা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারণ কার মৃত্যুযন্ত্রণা কখন শুরু হয় তা কেউ বলতে পারে না। তাই প্রতিটি মুমিন বান্দার উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর ক্ষমাপ্রার্থনার উত্তম সময় হলো ফরজ নামাজ শেষে ও শেষ রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে তাওবা করাই উত্তম। কারণ ওই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অত্যান্ত প্রিয়।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা’আলা বলেন : হে বনী আদম, তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে ও আমার আশা পোষণ করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, তোমার থেকে যা কিছুই প্রকাশ পাক, এতে আমি কোন পরোয়া করি না। হে বনী আদম, তোমার গুনাহ যদি ঊর্ধ্বগগন পর্যন্ত পৌছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি সামান্য পরোয়া করি না। হে বনী আদম, তুমি যদি আমার কাছে দুনিয়া ভরা গুনাহ নিয়ে আস, অতঃপর শিরকে লিপ্ত না হয়ে আমার সাথে সাক্ষাত কর, আমি তোমার নিকট যমীন ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব। (তিরমিযী)
সাদ্দাদ বিন আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বন্দার জন্য সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হচ্ছে :
اللهم أنت ربى ، لا إله إلا أنت ، خلقتني و أنا عبدك و أنا على عهدك ووعدك ما استطعت ، أعوذبك من شر ما صنعت ، أبوء لك بنعمتك علي، وأبوء لك بذنبي ، فاغفرلي ، فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت .
যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দিনের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে দিনেই সে সন্ধার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তা পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রাতের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে রাতেই সে সকাল হওয়ার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী। (বুখারী)
আল্লাহর জন্যে সদকা এবং বেশী বেশী তাওবা জাহান্নাম থেকে নাজাতের কারণ : ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : হে নারীগণ, তোমরা সদকা কর এবং বেশী বেশী তাওবা কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী দেখেছি। তাদের থেকে এক মহিলা বলল : কী কারণে আমরা অধিকাংশ জাহান্নামী? তিনি বললেন : তোমরা বেশী বেশী লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। আমি তোমাদের মত আকল ও দ্বীনে ত্রুটিপূর্ণ কাউকে দেখিনি, যে বিজ্ঞলোকদের উপর বিজয়ী হয়। সে বলল : আমাদের আকল ও দ্বীনে ত্রুটি কী? তিনি বললেন, দুজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান, এবং তোমরা কতক দিন অবস্থান কর, যাতে তোমরা নামায আদায় কর না। (মুসলিম)
তাওবা সবচেয়ে বড় যিকর বান্দার উচিত এ যিকর বেশী বেশী করা : হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। ‘আল্লাহর শপথ’ প্রতি দিন আমি সত্তুরবারের চেয়েও অধিক আল্লাহর ইস্তিগফার ও তাওবা করি। (বুখারী) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পরও তিন বার ইস্তিগফার করতেন। (মুসলিম)হে আল্লাহ তা’আলা ! আমাদেরকে বেশী বেশী করে ইস্তিগফার ও তাওবা করার তাওফীক দান করুন। আমীন
বিষয়: বিবিধ
১৫৬১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এর বড় লিখা কি মনোযোগ থাকে !! তাই মাঝ থেকে থেকে পড়েছি ।
দুই পর্বে দিলে ভাল হতো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন