ব্ন্ধুরা আমার লিখা নাটকটি কেমন হয়েছে? (বিপন্ন জনপদ)

লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ২০ জুন, ২০১৫, ১০:৫৬:৪৩ রাত

[তাহওহীদুর রহমান মানিক টগবগে একজন যুবক। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। ইসলামী মন-মানষিকতার আলোকে গড়ে উঠা গোটা পরিবারটাই যেন শান্তি আর স্বদেশ প্রেমের মূর্ত প্রতিক। অসুস্থ বাবার কাছে বসে আছে তাওহীদুর রহমান মানিক। কথা হচ্ছে দেশ ও জাতীর দুরাবস্থার কারন নিয়ে। একজন মুক্তিযোদ্ধা পিতার এই বেদনার্ত আর্তনাদে তার হৃদয় ভারাক্রান্ত। ]

[১ম দৃশ্য]

মাহবুবুর রহমানঃ ছেলেটা কোথায় যে গেল। দেশের এই অবস্থায় এক মুহুর্ত্যের জন্যও কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। আল্লাহ! তুমি এই দেশের উপর তোমার খাস রহমত নাযিল কর হে মালিক।

[সালাম দিয়ে ছেলে মানিকের প্রবেশ]

মানিকঃ আব্বু! তোমার শরীরটা এখন কেমন?

মাহবুবুর রাহমানঃ আলহামদুলিল্লাহ! ভাল বাবা। আমার জন্য কোন চিন্তা কোরো না। তোমার পরীক্ষা যেন ভাল হয় সেই দিকে খেয়াল রাখো। জানি না চলমান রাজনীতি দেশটাকে কোন দিকে নিয়ে যায়।

মানিকঃ বাবা দেশের এই দুটি বড় রাজনৈতিক দলই দেশের জন্য সাখের করাতে পরিনত হয়েছে। আপনি কারো কাছে ভাল কিছু আশা করতে পারেন না। কারন এদের না আছে আদর্শ, না আছে দেশপ্রেম। এদের কাছে ভাল কিছু আশা করার অর্থই হলো মূর্খতা। দেশ ও জাতীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়াই তাদের কাজ।

মাহবুবুর রাহমানঃ তাইতো ভাবছি, এমন দিন দেখবো বলে কি এদেশ স্বাধিন করেছিলাম? কোথায় আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা! এ চেতনাকেও দূরাচার পাপাচারেরা ছিনতায় করে বিকৃত করে ফেলেছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্থাৎ, মানুষের অন্ন-বস্র আর বাসস্থানের নিশ্চয়তাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলমন্ত্র। কিন্তু আজ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার।

মানিকঃ বাবা এসব বলে কি লাভ? শুধুই কষ্ট পাও। দোয়া করো আল্লাহর কাছে। প্রেসক্রিপশনটা দাও। আমি একটু বাইরে বেরুবো – ওষুধগুলো নিয়ে আসবো।

মাহবুবুর রাহমানঃ না বাবা! তোমাকে বাইরে যেতে হবেনা। এতক্ষণ সেটা-ই বলছিলাম। একদিকে প্যাট্রোলবোমা, অপরদিকে বোমা হামলাকারী নাম দিয়ে পুলিশী নির্যাতনের স্বীকার হওয়া। এর চাইতে না খেয়ে বিনা চিকিত্সায় মরে যাওয়াই শ্রেয়।

মানিকঃ আব্বু একজন মুক্তিযোদ্ধার মুখে এমন কথা মানায়না। তুমি না বলতে আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায় নি। অনেক বীজয় আমাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। আমাদের তা অর্জন করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে ভেদাভেদ ভুলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।

মাহবুবুর রাহমানঃ কিন্তু এক দিকে দারিদ্রতা, অপর দিকে দেশীয় মুখুশের আড়ালে ভিনদেশী শত্রুদর ওৎ পেতে থাকা। দেশের মধ্যে বিশৃংখলা আর অনৈক্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে তত্পর। নানা সামাজিক অপশক্তিগুলো তাদের কৃড়ানক হয়ে কাজ করছে। কিভাবে করবে লড়াই? বিশ্বাষ করবে কাকে? বিশ্বাস যেনো তীরবিদ্ধ পাখী।

মানিকঃ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমাজিক অস্থিরতা সহ মানুষের অন্তরগুলো উদ্বিগ্ন। মানবতা আজ বিধ্বস্ত। নিপীড়িত মানুষগুলো মুক্তির আশ্বাদ থেকে বঞ্চিত। এটা যেন গ্রহণকাল।

অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ানো নয়। মিথ্যার দাসত্ব থেকে জাতীকে মুক্ত করতেই নতুন করে লড়াই করার কোন বিকল্প নাই।

মাহবুবুর রাহমানঃ বয়সের ভারে ন্যুজ! কি করে সাথ দেব তোমাদের? একটা সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেখানে নিজের দেশটাকেইতো সাজাতে ব্যর্থ হলাম। সুন্দর একটা সকালের প্রত্যাশায় দিন গুণছিলাম; কিন্তু সবুজের বুকে লাল বর্ণের সূর্যটা শুধু পতাকায় আবদ্ধ হয়েই রয়ে গেল।

মানিকঃ সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়ায় এবং ক্ষমতা লোভীদের হাত থেকে দেশ রক্ষার এ আণ্দোলনে তোমার নৈতিক সমর্থণ আমাদের মানসিক শক্তি যোগাবে আব্বু। শুধু দেহের নয়, মনের শক্তিও অনস্বীকার্য।

মাহবুবুর রহমানঃ হৃদয়টা জুড়িয়ে গেলরে বাবা। আবার কি হালে মানবতা হাসবে? মানুষ বেঁচে থাকার আকর্ষণ ফিরে পাবে? আল্লাহ তোমাদের সাথী হোউন। নির্ভীকতা মানুষকে মর্যাদাবান করে।

যাও তাহলে। আমার ওষুধ নিযে এস। তোমাদের এ আন্দোলনে শারিরীকভাবে অংশ না নিতে পারলেও নৈতিক সাথী হিসাবে নাম লিখে নিও। আমি তোমাদের সাথে আছি।

মানিকঃ আল্লাহ তোমাকেসহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমার একটু বাইরে যাওয়া লাগবে। ফেরার সময় তোমার ওষুধ নিয়ে আসবো ইন-শা-আল্লাহ।

মাহাবুবুর রহমানঃ ফী আমানিল্লাহ। [প্রস্থাণ]

স্বগুক্তিঃ সমাজটা এত দ্রুতগতিতে ভাঙ্গছে যে, গ্রামীণ জনপদ থেকে শহর, মহল্লা সর্বত্রই ভাঙ্গনের খেলা। এ অবস্থায় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তণের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। আল্লাহই ভাল জানেন জাতীর ভাগ্যলিপিতে কি লিখে দিয়েছেন তিনি। সমাজে নেমে আসা নৈরাজ্য নিরাশা আর এই দৈত্ব শাসনের কালো ছোবল থেকে কবে কি করে পরিত্রাণ মিলবে তাও তিনি জানেন।



[দ্বিতীয় দৃশ্য]

একটি ছোট পথশিশু বাসে পেট্রোল বোমা মেরে ভাগছে। পিছুপিছু বেশকিছু লোক তাকে ধরার জন্য দৌঁড়াচ্ছে। কারণ বোমা হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরুস্কার রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

মানিকঃ এই ছেলে তুমি দৌড়াচ্ছ কেন?

পথশিশুঃ ভাই আগে বোমা মারলে লোকজন ছোটা ছোটি করে পালাতো! এখন দেখছি ওরা আমার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে।

মানিকঃ এবার পালাবে কোথায়? তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারলেই এক লক্ষ টাকা।

পথশিশুঃ তুমি আমকে ধরিয়ে দিবে?

মানিকঃ হ্যা দেব। এক লক্ষ টাকা কি চাট্টিখানি কথা? [ মানিকের কথা শুনে ছেলেটি হাসতে লাগলো]

কিব্যাপার তুমি হাসছো যে? পুলিশের হাতে একবার পড়লে বুঝবে কত ধানে কত চাল।

পথশিশুঃ ভাল চান তো ছেড়ে দেন নইলে আমি আপনার নামই বলে দেব। বলবো ইনি আমাকে এক হাজার টাকা দিয়েছে বোমা মারতে।

মানিকঃ ওরে বাবা এতো সেরের উপর শোয়াসের। কি বলিস তুই এটা? বুঝেছি! তুই আমার দাদারও বাবা।

[ছেলেটি যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই মানিক বলল] এই শোন! তুই বোমা মারার কাজ কাদের জন্য করিস একটু বলবি?

পথশিশুঃ সরকারী দল বিরোধী দল সবার জন্যই করি। তুমি যদি টাকা দাও তেমার জন্যও করবো। তবে অহন যাই। ওরা এসে ধরে ফেলতে পারে। জয় বাংলা! বাংলাদেশ জিন্দবাদ।

মানিকঃ দেখলেনতো কেমন ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাকা খেলোওয়াড়? [একজন লোক সামনে থেকে এসে ছেলেটিকে ধরে ফেলবে]

ওমা ধরা পরে গেলো? আমাকে ভাগতে হবে- এ ঝামেলায় জড়ানো যাবেনা। [প্রস্থান]

১ম ব্যক্তিঃ কোথায় পালাবে বাছাধন? একটু নড়াচড়া করলেই হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙ্গে তারপর পুলিশে দিব। এক লক্ষ টাকা...। হাঃ হাঃ হাঃ।

[আপর এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে ছেলেটিকে ফেলে দিয়ে তার উপরে বসে তাকে কনভেন্স করতে চাইবে]

২য়ব্যক্তিঃ এই ছেলে! পুলিশ এলে বলবি আমি তোকে ধরেছি, ৫০ হাজার আমার বাকি ৫০ হাজার তোর ঠিকানা মত পৌছে দিব। হাঃ হাঃ

পথশিশুঃ তাহলে এক কাজ করো। তোমরা দুজন আমার শরীর ম্যাসাজ করতে থাকো- যে ভাল ম্যাসাজ করবে, আমি তার নাম বলবো। [উভয়ে খুব সুন্দর করে ম্যাসাজ করতে থাকবে, ততোক্ষনে পুলিশ এসেযাবে]

পুলিশঃ এদিকে বোমা হামলাকারী কাউকে ভাগতে দেখেছো তোমরা?

টুকাইঃ স্যার এরা দুজনেই বোমা হামলা করে ভাগতে চাইছিলো আমি দেখে ফেলছি। তাইতো যাতে না বলে দেয় সেজন্য আমার শরীর ম্যাসাজ করছে। স্যার ওদের নিয়ে যান আর আমার দুই লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে দিন। আমি এক লক্ষ টাকা আপনাদের দুজনকে দিয়ে দিবো।

ব্যক্তিদয়ঃ শালাতো বহুত টাউট! স্যার এই ছেলেই বোমা মেরে ভাগছিল! আমারা ওকে ধরেছি।

পুলিশঃ চুপ! তোরা তিনজনই প্রেট্রুল বোমা মেরে ভাগছিলে আমরা তোমাদের হাতে-নাতে ধরে ফেলেছি। এই হচ্ছে বোমা।

কনস্টেবল! হাতকড়া লাগাও। [দুতিনটি প্রেট্রুল বোমা আগেই পুলিশ সাথে করে নিয়ে আসবে এবং বের করে সাংবাদিকদের দেখাবে। ]

কনস্টেবলঃ স্যার আগের মত আমাকে ঠকাবেন না। দুই লাখ আপনার আর একলাখ আমার হাঃ হাঃ হাঃ [সাংবাদিকরা ছবিঁ তুলতে থাকবে পর্দা পড়বে]



[তৃত্বীয় দৃশ্য]

[একজন পাগল যাত্রাভিনয় করবেন যদিও সে একসময় অভিনেতা ছিল এখন সে পাগল। তার কথাগুলো বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল।]

পাগলঃ হু হু হাঃ হাঃ হাঃ । ঐ তো বাংলার মসনদ আমাকে ডাকছে। ঐ ইসলাম বিদ্বেষী শয়তানীকে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলার মসনদ আমি দখল করবো। আর যে আমার পথে বাধা হয়ে আসবে, তাকে আমি কতল করিবো। হাঃ হাঃ হাঃ। আজ বাংলার আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা যে কোন মূহুর্তে তুফান আসতে পারে। আর ঐ তুফানকে রূখে দিয়ে ইসলামের সূশীতল বৃষ্টি বর্ষণ করতেই আমাকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে হবে। হাঃ হাঃ হাঃ [প্রস্থান]

কামাল ও শাহিনের প্রবেশ

কামালঃ শালার কথা শুনেছিস? কতপাগল দেখলাম এমন পাগল কোথাও দেখিনী। যে বাংলার মসনদে বসতে চায়।

শাহিনঃ কেন এর আগে এমনই একজন পাগল সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছিল। সেও তো দেশের মালিক বলে চিৎকার করছিল।

কামালঃ পাগলে কি না কয় ছাগলে কি না খায়। এবার বল, নেতা যে লিস্ট করতে বলেছিল লিস্টা করেছিস কিনা?

শাহিনঃ হ্যা লিস্ট করেছি তার মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধার নামও রয়েছে।

কামালঃ সে কে?

শাহিনঃ মাহবুবুর রহমান।

শাহিনঃ ঐ ব্যাটার নাম তো লিস্টের পথম থাকা উচিত। ওর ছেলেটা নাকি শিবির নেতা। শিবির নেতার বাপ যদি মুক্তিযোদ্ধাও হয় তবুও সে রাজাকার। দখছিস না? ওরা কাদের মোল্লাকে শহিদ বলে আমরা মানবতা বিরোধী বলেই জনগণের সামনে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আরও প্রমাণ করলাম ধর্ষক অগ্নীসংযোগকারী এবং ক্ষুণী হিসাবে। চল তাকে একটু সাবধান করে দিয়ে আসি।

শাহিনঃ কি বলবি গিয়ে তাকে ?

কামালঃ তাকে বলবো “তার ছেলকে যাতে সাবধান করে দেয়। কোন মিছিল মিটিং এর জন্য যদি লোক জড় করে তাহলে লাশ হয়ে ঘরে ফিরবে, না হয় গুম হয়ে যাবে ইলিয়াসের মত।

পাগলঃ হাঃ হাঃ হাঃ এই পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর। এখানে স্বার্থপর মানুষগুলো স্বার্থের জন্য সব করতে পারে। বোমা মেরে মানুষ হত্যার মত জঘন্য অপরাথ করতেও এরা দ্বীধা করেনা। আমার নিষ্পাপ ছেলেটা ওদের বোমার শিকার হয়ে মারা গেল। ও ছিল আমার একমাত্র অবলম্বন। মানুষের মূল্য কি টাকা দিয়ে হয়? হাঃ হাঃ হাঃ প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশি হাজার টাকা দিয়েছেন।

আমি যাব তার কাছে। বলবো, আপনার ছেলেকে যদি আমি হত্যা করি? আশি হাজার টাকায় আপনার ক্ষতিপুরণ হবে?

[কামাল ও শাহিনের প্রবেশ]

কামালঃ শালার কথা শুনেছিস? কি সব বাজে বকছে। এদেশ নাকি এই পাগলের।

শাহিনঃ কেন এর আগে এমনই একজন পাগল সচিবালয় ঢুকে পড়েছিল। সেও তো প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে প্রলাপ করছিল।

পাগলঃ এই তোরাতো সোনার ছেলে তাই না? হাঃ হাঃ, তোরাইতো টাকা এবং ক্ষমতার জন্য নিজেদের মা-বাবাকেও ধোঁকা দিতে পারিস! তাদের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করতে পারিস। এদেশ মায়ের মত। মাকে ভাল না বাসতে পারলে মানুষ হবি কি করে? যাই... প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পয়সাকে কাজে লাগানো দরকার না। কি বলিস হাঃ হাঃ হাঃ। [প্রস্থান]

কামালঃ পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়।

বাদ দে। নেতা যে লিস্ট করতে বলেছিল লিস্টা করেছিস?

শাহিনঃ হ্যা লিষ্ট করেছি তার মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধার নামও রয়েছে।

কামালঃ সে কে?

শাহিনঃ মাহবুবুর রাহমান।

শাহিনঃ ঐ ব্যাটার নামতো লিস্টের পথম থাকা উচিত। ওর ছেলেটা নাকি শিবির নেতা। শিবির নেতার বাপ যদি মুক্তি যুদ্ধ করেও থাকে তবুও সে রাজাকার। দেখছিস না? ওরা কাদের মোল্লাকে শহীদ বলে, আর আমরা বলি মানবতা বিরোধী, ধর্ষক, অগ্নী সংযোগকারী, খুনী। চল তাকে একটু সাবধান করে দিয়ে আসি।

শাহিনঃ কি বলবি গিয়ে তাকে?

কামালঃ তাকে বলবো “তার ছেলকে যাতে সাবধান করে দেয়। কোন মিছিল মিটিং এর জন্য যদি লোক জড় করে তাহলে লাশ হয়ে ঘরে ফিরবে। না হয় গুম হয়ে যাবে ইলিয়াসের মত।

[আবার রুটি হাতে পাগলের প্রবেশ]

পাগলঃ এই খাবি তোরা? খা খা। এই দ্যাখ তোদের জন্য জিলাপী এনেছি। খা। হাঃ হাঃ হাঃ। জানিস আমি সমগ্র বাংলাকে জ্বালিয়ে দেব। এই দ্যাখ দেয়াশলাই এনেছি। হাসিনা যেমন পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে ভিতরে ভিতরে দেশটাকে জ্বালিয়ে ছারখার করছে। আমি গোপনে নয়, জ্বালাবো। কেন জানিস? আমিতো রাজনীতির কুটিলতা আমি এখনো শিখি নি।

[জিলাপী মুখে ভরে দেয়াশলায়ের একটি কাঠি জ্বালায়ে ওদের গায়ে দিতে গেলে ওরা ওকে মারধর করবে]

কামালঃ শালা পাগল! তুই আমাদের জ্বালাতে চাস! তোর এত বড় সাহস? মার শালারে!

শাহিনঃ এ্যানাফ যথেষ্ট হয়েছে। চল এবার রাজাকার মাহবুবুর রাহমানকে টাইট করে আসি।

[দুজনে মিলে ইচ্ছামতো মেরে পরে ওকে ফেলে রেখে চলে যাবে]

পাগলঃ দেখেছো তোমরা? এই সোনার ছেলেরাই নাকি এদেশের ভাগ্য বদলে দেবে। অথচ এরাই আমার নিষ্পাপ ছেলেটাকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমি আজ পাগল – আমাকে পাগল করা হয়েছে। আজকে যারাই সত্য কথা আর অণ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে তারা হয় জেলে যাবে, নয়তো আমার মত পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরবে। আমি ছাড়বো না। সবাইকে জ্বালিয়ে মারবো....। জ্বালিয়ে মারবো।



[৪র্থ দৃশ্য]

[মাহবুবুর রহমান শুয়ে আছে হঠাত পুলিশ সরকারী দলের কয়েকজন ক্যাডারসহ মাহবুবুর রহমানের বড়ীতে রাতের অন্ধকারে হানা দেয়। তাকে মারধর এবং আপমান অপদ্স্ত করে। টাকা পয়শা না পেয়ে সবকিছু ভেঙ্গে চুরে চল যায়।]

মাহবুবুর রহমানঃ একি আপনারা এত রাতে আমার বাড়ীতে, কি চান?

পুলিশঃ আপনার ছেলের নামে ওয়ারেন্ট আছে। কোথায় সে বের করে দিন। নইলে আপনাকে বেঁধে থানায় নিয়ে যাব। কই জলদি করুন।

মাহবুবুর রহমানঃ এটি কি মগের মুল্লুক নাকী, যাকে খুশি তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাবেন?

কামালঃ মগের মুল্লুক না, হাসিনার মুল্লুক। এখানে রাজাকারদের স্থান নেই। তোর পোলাকে বের করে দে; নইলে আমরা জানি কি করে বের করতে হয়। [কলার ধরে]

মাহবুবুর রহমানঃ খবরদার যদি আমাকে রাজকার আলবদর বলবে। আমি মুক্তিযোদ্ধা। এদেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। সবুজের বুকে লাল সূর্য্য খঁচিত পতাকা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমরাই অর্জন করেছি।

[ওরা সবাই হাসিতে ফেটে পড়বে]

শাহিনঃ তুমি কি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চাইতে বড় মুক্তিযোদ্ধা? যাকে বীরউত্তম উপাধী দেয়া হয়েছে। আমাদের সরকারের বিরুদ্ধ যেই কথা বলবে সেই রাজাকার আলবদর আল শামস।

মানিকঃ আমরাতো মেজর জিয়াকেও পাকিস্তানের চোর বলে থাকি। হাঃ হাঃ হাঃ

শাহিনঃ আর মেজর জলিলকে? তাকেও তো রাজাকার বলি। সালা! যুদ্ধ করলেই কি মুক্তিযোদ্ধা হয় নাকি? প্রথমে জাতির পিতা এবং তার কন্যা বঙ্গমাতা শেখ হাসিনাকে সম্মান করতে শেখ। তারপর দেখা যাবে তুমি মুক্তিযোদ্ধা, নাকি রাজাকার।

পুলিশঃ মানিক কোথায় বল? [রাইফেল তাক করে]

মাহবুবুর রহমানঃ জানিনা।

পুলিশঃ [লাথী মেরে ফেলে দিয়ে] ভালই ভালই বল; নইলে কিভাবে বের করতে হয়, তা আমরা জানি।

শাহিনঃ [রাইফেল দিয়ে কয়েকটি বাড়ি দিতেই শাহিন রাইফেল ধরে] ধীরে অফিসার, ধীরে।

আঙ্কেল! একটা সমঝোতায় আসা যাক। আপনি এক লক্ষ টাকি দিয়ে দেন আমরা সোজা চলে যাই। আপনাকে বিরক্ত করবো না। তবে হ্যা, কাউকে বলতে যাবেন না যেন, নইলে গায়েব করে দিব।

মাহবুবুর রহমানঃ হাঃ হাঃ হাঃ ! তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ? দেশের প্রতি একনিষ্ঠ একজন মুসলমান কখনো ভয় করে না।

কামালঃ আচ্ছা! [বলেই রাইফেলটা পুলিশের কাছ থেক নিয়ে বুকে ধরবে]

মাহবুবুর রহমানঃ ঐ রাইফেলটার যতটা গুলি রয়েছে সবকটি আমার বুকে বিদ্ধ করে দাও। আমিতো ৪৫ বছর আগেও শহীদ হতে পারতাম। আল্লাহ আমাকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছেন, এটা আমার জন্য সৌভাগ্য। কিন্তু আফসোস! আজ তারাই আমাকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছি।

কামালঃ [রাইফেল দিয়ে গুতা মেরে ফেলে দিয়ে] আজ জীবন দান করে গেলাম, কিন্ত তোর ছেলেকে জিন্দা রাখবোনা, যদি কোন মিছিলে দেখি। চল! [আসবাবপত্র ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে প্রস্থান করবে ওরা । সাথে সাথেই ছেলে মানিকের প্রবেশ]

মানিকঃ একি আব্বু! তোমার শরীরে রক্ত ?

মাহবুবুর রহমানঃ ওরা তোকে দেখেনিতো?

মানিকঃ কারা?

মাহবুবুর রহমানঃ ওরা এদেশের সোনার ছেলে।

মানিকঃ বাবা!

মাহবুর রহমানঃ হ্যা খোকা! তাই যদি না হবে একজন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে কেউ কি রক্তাক্ত করে বিনা অপরাধে?

মানিকঃ বিনা অপরাধে! না বাবা না, অপরাধ তুমি করেছো। ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। যুদ্ধ করে আজ দেশকে হায়েনাদের হাতে তুলে দিয়েছো।

মাহবুবুর রহমানঃ হে আল্লাহ তুমি আমার একমাত্র অভিভাবক! তোমার কাছেই আমার আরজি রইলো। এদেশ, এদেশের মানুষকে তুমি এই জালিমদের হাত থেকে রক্ষা কর।

মানিকঃ বাবা শুধু দোয়া করেই দায়িত্ব শেষ হবে না। দাওয়ারও অত্যাধিক প্রয়োজন। দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা না হয়। আমি ওদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দিবনা। যে হাত দিয়ে আমার বৃদ্ধ বাবাকে রক্তাক্তকরেছে এ হাত আমি দুমড়ে মুচড়ে দেব। শুধু সময়ের প্রতিক্ষা। [প্রস্থান]

মাহবুবুর রহমানঃ বাবা মানিক--- যাসনে বাবা! ওরা তোকে ছাড়বে না মেরে ফেলবে। হে আল্লাহ! এখন আমি কি করবো? [কাঁদতে থাকবে!]

[পথ শিশুটির প্রবেশ]

পথশিশুঃ আঙ্কেল! মানিক ভাইকে পুলিশে এই মাত্র ধরে নিয়ে গেল।

মাহবুবুর রহমানঃ আমি জানতাম ওরা রাস্তায় উৎ পেতে আছে। মানিক বাহিরে না গেলেও বাসায় এসে তাকে ধরে নিয়ে যেত। ইয়া মাওলা! এখন আমি কি করবো? আমাকে সাহায্য করো।

পথশিশুঃ মানিক ভাই আপনার ছেলে আপনি সত্যি ভাগ্যবান আঙ্কেল। আজ মানিক ভাই না হলে আমার মা ভাল হয়ে উঠতো না। আমি মাকে বাঁচানোর জন্য টাকার বিনিময়ে বোমা মেরেছি গাড়িতে। কত মানুষ মারা গিয়েছে আহত হয়েছে।

মাহবুবুর রহমানঃ [ছেলেটির মুখ চেপে ধরে] চুপ কর। এসব বললে তোকে যে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে।

পথশিশুঃ আঙ্কেল! আপনার সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে! আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি, যে ডাক্তার আমার মায়ের চিকিৎসা করেছেন। জানেন আঙ্কেল! মানিক ভাইকে ঐ ডাক্তার খুব পছন্দ করেন। [প্রস্থান]

মাহবুবর রহমানঃ ঐ ডাক্তার আমার বন্ধু। চল আমাকে তার কাছে নিয়ে চল। হয়তো সে মানিকের জন্য কিছু একটা করতে পারবে। [উভয়ে প্রস্থান]



[৫ম দৃশ্য]

[মানিককে পুলিশের সহযোগিতায় সরকারী দলের ক্যাডাররা মেরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে রাস্তায় ফেলে রেখেছে। খবর পেয়ে পিতা মাহবুবুর রহমান সেখানে পৌঁছেন। যুবক ছেলের লাশকে ধরে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। তার আর্তনাদে অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছে।]

মাহাবুবুর রহমানঃ মানিক – মানিক- হু হু হু! [কাঁদতে থাকবেন] ওরা তোকে বাঁচতে দিলনা বাপ। তোকে ছাড়া আমি কিভাবে বাচবো বল, তুই ছাড়া আমার আর কে আছে, যাকে অবলম্বন করে বাঁচবো।

পথশিশুঃ আঙ্কেল! আপনি কাদবেন না। আমি আছি আপনার সাথে! সবসময় থাকবো।

মাহবুবুর রহমানঃ এখন আমি কি করবো বলতে পারিস? [পুলিশের প্রবেশ]

পুলিশঃ আপনি এখন আমাদের সাথে থানায় চলুন। ময়না তদন্তের পরেই আপনার ছেলের লাশ দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হবে। আমাদের প্রাথমিক ধারনা হলো ছেলেটি বাসে বোমা মারতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়েছে।

মাহবুবুর রহমানঃ [পুলিশের জামা ধরে] খবরদার যদি এমন জঘন্য মিথ্যে কেস সাজনো হয়! আমি তোকে মেরে ফাসিঁর কাষ্ঠে ঝুলবো। আমার ছেলেকে তোরা হত্যা করেছিস। এই তো ওর পায়ের মধ্যে চারটে গুলি করা হয়েছে। আমি তোদের ছাড়বো না।

পুলিশঃ এই! একে গাড়িতে উঠাও।

মাহাবুবুর রহমানঃ না আমি আমার ছেলের লাশ তোদের হাতে দিয়ে ওর অপমান হতে দেব না। না ওকে নিও না।

পুলিশঃ পাগলের প্রলাপ শোনার সময় নেই। চল। [তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে লাশ নিয়ে যাবে ]

একজন সাংবাদিকঃ আপনার কি মনে হয় আপনার ছেলে গাড়িতে প্রেট্রোল বোমা ছুড়তে গিয়ে পুঁড়ে মরেছে?

পথশিশুঃ আপনাদের কি তাই মনে হয়? মানিক ভাই এমন বাজে কাজ করতে পারে না। তিনি খুবই ভাল মানুষ ছিলেন! তার বিরোধীরা তাকে ক্ষুন করেছে।

মাহবুবুর রহমানঃ এদেরকে এসব বলে লাভ নেই বাবা! এরাতো সরকারের দালাল। আমার মত অসহায়দের পক্ষে এরা কখনো লিখবেনা। কখনো না। আমাকে লড়তে হবে। আরও একটা যুদ্ধের দরকার। সবাইকে লড়তে হবে। যারা দৃষ্টির আড়ালে থেকে দেশ এবং জাতির বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই চালিয়ে যেত হবে।

পাগলঃ যুদ্ধে যাবার এই তো সময়! হাঃ হঃ হাঃ । যুদ্ধের জন্য টাকা চাই। টাকা কোথায় পাবে? আমি তো আশি হাজার পেয়েছিলাম তুমি কিচ্ছু পাবেনা। হ্যা, কিচ্ছু পাবে না। হাঃ হাঃ হাঃ। আমি দেশবাসিকে জানাতে চাই এখনো সময় আছে সব কিছু শেষ হয়ে যায় নী। সবাইকে মাঠে নেমে আসতে হবে। এদের দেশ বিরোধী ষঢ়যন্ত্র থেকে দেশকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দেরী হলে আর কিছুই করার থাকবেনা। এসো হাতে হাত রেখে লড়ি; কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশটাকে সত্রুমুক্ত করি।

[একটা দেশাত্ববোধক গান বাজবে পর্দা পড়তে থাকবে।]

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326968
২১ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৩৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২১ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:১৫
269210
এসো স্বপ্নবুনি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।আজকাল মন্তব্যকরতেও বন্ধুরা র্কপনতাকরেন।
327012
২১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:২৫
শফিউর রহমান লিখেছেন : এতবড় লেখা একবারে!
বড় লেখা দেখে অনেকেই পড়ে না। আমিও পড়ি নি, যদিও আগে পড়া আছে।
সুন্দর।
২১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৪৪
269267
এসো স্বপ্নবুনি লিখেছেন : অনেকধন্যবাদ।একদৃশ্যকরে পোষ্টকরলে হয়তো ভাল হতো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File