তাকওয়া ও আত্মসুদ্ধি একটি অপরটির পরিপূরকঃ
লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ০১ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৩২:৫৪ রাত
প্রারম্ভিক কথাঃ ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য তাকওয়া।তাকওয়া বা আল্লাভীতি মুমিন জীবনের ভূষণ।মানব জীবনে তাকওয়া এমন একটি মহত্গুণ যা মানবকে যাবতীয় কুকর্ম হতে রক্ষা করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে।কিন্তু এ গুণটি অর্জন করতে হলে সর্ব প্রথম আত্মার পরিশুদ্ধতার আশু প্রয়োজন রয়েছে।তাকওয়া নামক গুণটি বাসকরে অন্তর আত্মায়,এজন্য অপরিশুদ্ধ আত্মায় তাকওয়া বসবাস করতে পারেনা।কারন অন্তরের সঠিকতই আষল সঠিকতা।যার অন্তর কুলষিত তার সব কিছুই কুলষিত। এজন্যই রমযান মাসে রুযা ফরজ করা হয়েছে যাতে এই মাসে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তাকওয়ার মত বিশেষ গুণটি মানুষ অজর্ণ করতে পারে।
আরবি রমাদান শব্দটির অর্থ-দহন হওয়া,জ্বলা,ভস্মহওয়া অর্থাত';রুযা রাখার ফলে একদিকে মানুষ ক্ষুধা তৃষ্ণায় জ্বলতে থাকে এবং আপরদিকে বেশি বেশি নেক আমলের কারনে আল্লাহ মানুষের গুণাহ গুলো জ্বালিয়ে ভস্মিভুত করে দেন।এভাবেই একমাস ধরে আত্মার পরিশদ্ধতার কাজ চলতে থাকে এবং যারা এমাসকে গুরুত্বসহকারে কাজে লাগিয়ে এবং সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মাকে পরিশদ্ধ করতে পারলো আর তার অন্তর আত্মায় তাকওয়া নামের মুল্যবান বস্তুটির বসবাসের যায়গা করে দিল সেই সফলতা অর্জন করলো।
এজন্য আল্লাহর রাসুল সঃ তার বক্ষদেশে ইশারা করে বলতেন"তাকওয়া এখানে,অর্থাত মানুষের দেহের ভিতর কাল্ব নামে একটি বস্তু রয়েছে;আবার সেই বস্তুটির ভিতরে বাসকরে রুহ এবং পবৃত্তি বা নাফস।পবৃত্তি হচ্ছে মানুষের দেহের চাহিদা সূমহ যা সে পাওয়ার জন্য আকাংখ্যা করে।আল্লহ পবিত্র কুর আনেও এবিষয় আলোকপাত করেছেন-
(৭) মানুসের নফসের ও সেই সত্তার কসম যিনি তাকে ঠিকভাবে গঠন করেছেন৷
(৮) তারপর তার পাপ ও তার তাকওয়া তার প্রতি ইলহাম করেছেন৷
(৯) নিসন্দেহে সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি তার নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে ।
(১০) এবং যে তাকে দাবিয়ে দিয়েছে সে ব্যর্থ হয়েছে৷( সুরা আশ্শামস-) আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে সফলতার চাবিকাঠি হচ্ছে কল্বকে পরিচ্ছন্ন রাখা।রাসুল সঃ বলেছেন"মানব এদেহে এমন একটি মাংস পিন্ড রয়েছে যার ঐ অংশটি খারাপ তার সবকিছুই খারপ।আর যার ঐ অংশটি ভাল তার সবকিছুই ভাল।বিষয়টি আরও পরিস্কার করেছেন-হযরত লুকমান হেকিম।হযরত লুকমান হেকিমের জ্ঞান প্রজ্ঞার খ্যাতি যখন সর্বত্রছড়িয়ে পরেছিল তখন তার মনিবের কাছেও বিষয়টি পৌছেছিল।তার মনিব তার হেকমত ও বুদ্ধি যাচাইয়ের জন্য তার একটি পরিক্ষা নেওয়ার পরিকল্পণা নিলেন"তিনি হেকিমকে বললেন' তুমি যে মেষগুলি পালণ করে থাকো তা থেক একটি মেষ জবেহ কর এবং মেষটির শরীর থেকে উর্ত্কৃষ্ট অংশটুকুন আমার সামনে এনে রাখো।তিনি একটি মেষ জবেহ করলেন এব মেষটির বুকচিরে কাল্ব অর্থাত কলিজাটা এনে একটি পাত্রে মনিবের সামনে রাখলেন।এরপর অনুরুপ আর একটি মেষ জবেহ করতে নির্দেশ দিলেন এবং তা থেকে নিকৃষ্ট অংশটি তার সামনে হাজির করতে বল্লেন"তিনি আবারও অপর মেষটির বুকচিরে কাল্ব অর্থাত কলিজাটা এনে পূর্বের ন্যায় রাখলেন।উপস্থিত লোকজন অবাক হয়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো।মনিব তাকে কারন জিগ্গাসা করলে তিনি বলেন' প্রত্যেক জীবের গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হচ্ছে তার কাল্ব এবং নিকৃষ্ট বস্তুও এটি।এই বস্তু যার উত্কৃষ্ট বা পরিচ্ছন্ন সেই উত্তম।মনিব তার বুদ্ধির ভূয়ষী প্রশংসা করলেন।
আত্মা, দেহ এবং নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও পূত-পবিত্র রাখা বা সংশোধন করার অর্থই হচ্ছে আত্মশুধি।
আমল, ঈমানকে পরিপূর্নকরার পূর্ব শর্ত হচ্ছে -নিজের পরিশুদ্ধতা, আত্ম তৃপ্ততা ও পূত-পবিত্ররাখা।
মূলতঃ পাপ,আল্লাহ বিমুখতা,হারাম কাজে জীবন অতিবাহিত,আর বিলাসিতার কারনে অন্তরস্মূহ মরিচীকা পরে কুলুষিত যার ফলে ইসলামের নূর নফস থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে বিদায় নেয়, তখন আর আল্লাহর ভীতী হৃদয়ে খেলা করে না, আমল-ঈমান-জম্ম-মৃত্যু-জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে সেই কুলষিত আত্মা চিন্তাকরার শক্তি হারায়।তাই সব কার্যে নিজেকে পূত-পবিত্র রাখার প্রধান শর্তই হচ্ছে আত্মশুদ্ধি তথা অন্তরাত্মার প্রশান্তি যা আল্লাহর স্মরনে, ভয়ে ভীত।
আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ যে ব্যক্তি আত্মাকে পূত-পবিত্র রাখল, সে সাফল্য লাভ করল । আর যে ব্যক্তি আত্মাকে কলুষিত করল, সে ধ্বংস হয় গেল। (সূরা শামসঃ১০-১১)
আল্লাহর স্মরণেই অন্তরাত্মার প্রশান্তি মেলে (সূরা আলাঃ১৪-১৫)
হাদীসে আছে--মানবদেহে এমন এক টুকরা মাংস আছে, সে মাংস টুকরা যখন য্থার্থরুপে পবিত্র হয়, তখন সমস্থ দেহই পবিত্র হয়, আর সে মাংস টুকরা যখন অববিত্র হয়ে পড়ে , তখন সমস্থ দেহই অপবিত্র হয়ে যায়। আর তা হল কাল বা অন্তর। (বুখারী; মুসলিম)
আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারলে মানবাত্মা পরলোকে পরমাত্মা মহান প্রভুর দীদার ও দর্শন লাভে ধন্য হবে। মহান আল্লাহর সাথে বান্দার ঘনিষ্ঠ ও সুনিবিড় সম্পর্ক স্থাপনই আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্য
প্রিয় নবী (সঃ) বলেনঃ তোমরা এমন অনুভূতি নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন আল্লাহকে দেখতে পাও।অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে দেখতে পান।তাই ঈমানকে সুদৃঢ় ও মজবুত করার জন্য আত্মশুদ্ধিরএকান্ত প্রয়োজন। কেন যত বর বাধা- অসুবিধা হোক না কেন, ঈমানের উপর অটল থাকা খুবই জরুরি। এটা অত্মশুদ্ধি ছাড়া সম্ভব নয়।
তাই, আত্মশুদ্ধির মূল উদ্দেশ্যই হলো পাশবিক চরিত্রকে দমন করে মানবিক চরিত্র সৃষ্টি করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।কাজেই ইনসানে কামিল পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার জন্য আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা যেমন অপরিসীম তেমনি ভাবে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তাকওয়ার গুণে গণ্ণানিত হওয়া অত্যাবশ্যকিয়।এজন্যই তাকওয়ার আর এক অর্থ আত্মশুদ্ধি।
এবার আসুন তাকওয়া কি জেনে নেইঃ
তাকওয়ার পরিচয় : শাব্দিক অর্থে তাকওয়া শব্দের অর্থ ভয় করা, বিরত থাকা, রক্ষা করা, আত্মশুদ্ধি, পরহেজগারী, নিজকে কোন বিপদ ও অকল্যাণ থেকে সম্ভাব্য সকল উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা বা কোন অনিষ্ট হতে আপনাকে দূরে রাখা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে ‘সকল প্রকার অন্যায় ও অনাচার বর্জন করে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ মত জীবন যাপনের মাধ্যমে আল্লাহকে প্রতিনিয়ত ভয় করে চলাকে তাকওয়া বলে।' যিনিই এ অতীব মহত গুণের অধিকারী তিনিই মুত্তাকী বলে অভিহিত।
ইসলাম মানুষকে যে সব চিন্তা,তত্পরতা,কথা,কাজ প্রভৃতি বিষয় নিষেধ করেছে,তা পরিহার করে তথা যাবতীয় মন্দ,অশ্লীল ও অকল্যাণকর দিক বর্জন করে কল্যাণময় দিকগুলো গ্রহণ করাই তাকওয়ার বাস্তবতা।
তাকওয়ার গুরুত্ব : তাকওয়ার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,‘‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চলতে থাক (তাকওয়া অবলম্বন কর), তাহলে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড বা যোগ্যতা ও শক্তি দান করবেন, তোমাদের ভুলত্রুটি ও গুণাহরাশি ক্ষমা করবেন। কেন না আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল।’’ (সূরা আল-আনফাল ২৯) তাকওয়া অবলম্বন করার সুফল ও পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার ভয় করে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে, তার স্থান হবে জান্নাত।’’ (সূরা-আননাযিয়াত ৪০-৪১)।
ইসলামী জীবন-দর্শনে তাকওয়াই সকল সত্গুণের মূল।তাকওয়া একটি মহত্চারিত্রক বৈশিষ্ট্য।মানুষের ব্যক্তি ও সামাজিক চরিত্র গঠনে তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।ব্যক্তি চরিত্র গঠনে তাকওয়া একটি সুদৃঢ় দুর্গস্বরূপ। যার মধ্যে তাকওয়া বিদ্যমান সে সর্বদা আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করে। আর যে আল্লাহকে হাজির-নাজির মনে করে, সে কোন পাপ কাজে জড়াতে পারে না। অপর পক্ষে যে তাকওয়া শূন্য তার দ্বারা সকল অপকর্ম করাই সম্ভব। সুতরাং তাকওয়া সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, পরিশুদ্ধ ও সত্জীবন যাপনের মূল কথা।
ব্যক্তি জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :
১. ব্যক্তি চরিত্র গঠনে : মানুষের ব্যক্তি জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যক্তি চরিত্র গঠনে তাকওয়ার বিকল্প নেই। যে মুমিনের হৃদয়ে তাকওয়া আছে, সে কোন অবস্থাতেই প্রলোভনে পড়ে না এবং নির্জন থেকে নির্জনতর স্থানেও পাপ কাজে লিপ্ত হয় না। কারণ, সে জানে সবাইকে ফাঁকি দেয়া গেলেও আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া যায় না। তাই চরিত্র গঠনে তাকওয়া একটি সুদৃঢ় দুর্গস্বরূপ।
২. ইবাদতের মূল বস্তু : তাকওয়া হচ্ছে ইবাদত-বন্দেগীর মূল বস্তু। ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতার কোন মূল্য নেই, যদি সেখানে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় না থাকে। যেমন আল্লাহর ঘোষণা ‘‘আল্লাহর নিকট তোমাদের কুরবানীর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু এ থেকে অর্জিত শিক্ষা সংযমের অভ্যাস তাকওয়া।’’ (সূরা আলহাজ্জ : ৩৭)।
৩. ঈমানের পরিপূর্ণতা : আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে ভয় না করলে, ঈমানের পরিপূর্ণতা আসে না। তাই আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেন ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ না করে মৃত্যু বরণ করো না। ’’ (সূরা-আল ইমরান-১০২)।
৪. আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ : আল্লাহর সান্নিধ্য, নৈকট্য ও সহায়তা লাভের জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন : ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, জেনে রেখ আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।’’ (সূরা-আল বাকারাহ : ১৯৪)।
মর্যাদার মাপকাঠি : আল্লাহর নিকট তাকওয়াই হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা লাভের মাপকাঠি। আল্লাহ ঘোষণা করেন : ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাবান, যার মধ্যে বেশি তাকওয়া আছে।’’ (সূরা-আল হুজুরাত : ১৩)।
৬. জীবনের সাফল্য : তাকওয়ার গুণই মানুষের ইহ-পরকালীন জীবনে সামগ্রিক সাফল্য বয়ে আনবে। আল্লাহ বলেন : ‘‘নিশ্চয়ই তাকওয়াবানদের জন্যে রয়েছে সফলতা।’’ (সূরা আন-নাবা : ৩১)।
৭. আত্মার পরিশুদ্ধি : মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি ও পরিশোধনের জন্য তাকওয়া একান্ত অপরিহার্য। হৃদয়ে তাকওয়া থাকলে সে মানুষ কোন অন্যায়-অশ্লীল কাজ করতে পারে না এবং কোন পাপ চিন্তা তার আত্মাকে কলুষিত করতে পারে না।
৮. নিষ্ঠায় : তাকওয়া ব্যক্তি মানুষের চরিত্রে, তার আকীদা-বিশ্বাসে, কাজ-কর্মে, আচার-আচরণে, ইবাদত-বন্দেগীতে এবং দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার সৃষ্টি করে। তাই সে হয় সকল কাজে অতীব আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান।
৯. ঈমানের মজবুতি : তাকওয়া মানুষের ঈমানের মজবুতি ও পূর্ণতা এনে দেয়। যে ব্যক্তি যত তাকওয়া সম্পন্ন, তার ঈমান তত বেশি মজবুত। সে জীবনে-মরণে কখনো তাকওয়া থেকে এতটুকু বিচ্যুত হয় না। সে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং তাকওয়ার সাথে জীবনযাপন করে।
১০. জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ : তাকওয়া মানুষকে জাহান্নামের ভয়াবহ কঠিন শাস্তি হতে মুক্তি দান করে। মহানবী (সা.) এ বিষয়ে বলেন: ‘‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল হলো আল্লাহর ভয়।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘সে দু'টো চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না : (ক) যে চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরায়, (খ) আর যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারায় রত থেকে কাঁদে। (তিরমিযি)
১১. জান্নাতে দু'টি উদ্যান লাভ : মুত্তাকীরা নিশ্চিতভাবে জান্নাত লাভ করবে, তাকওয়ার মানদন্ড অনুযায়ী কেউ কেউ দু'টি উদ্যান লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য দু'টি উদ্যান রয়েছে।’’ (সূরা-আল-রাহমান : ৪৬)।
১২. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ : তাকওয়ার গুণ অর্জিত হলে মানবজীবনের সবচেয়ে বড় নিয়ামত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘‘আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।’’ (সূরা-আত-তাওবাহ : ৪)।
সামাজিক জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :
১. সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণের প্রধান উপকরণ : একটি সমাজকে সুন্দর, সুষ্ঠু, পুত-পবিত্র, পরিশুদ্ধ সর্বপরি সমৃদ্ধশালী করতে হলে ইসলামী আখলাকের প্রধান গুণ তাকওয়া একান্ত প্রয়োজন। একজন তাকওয়াবান মুমিনের জীবনে সুনাগরিকের সকল গুণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অবশ্য তাকওয়াবান মানুষ না হলে, একটি সুন্দর, শান্তিময় সমাজ গড়ে তোলা যায় না। তাই সমাজের সকল সদস্যকে তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করা অপরিহার্য।
২. সামাজিক শৃক্মখলায় তাকওয়া : সমাজে শান্তি-শৃক্মখলা রক্ষায় তাকওয়া একান্ত অপরিহার্য। কেননা তাকওয়াবান মানুষ তার কাজ-কর্মে আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান। আর আন্তরিক ও নিষ্ঠার সাথে সমাজের সদস্যগণ যদি দায়িত্ব পালন করেন, তবে সে সমাজ অবশ্যই শান্তি ও শৃক্মখলাময় হতে বাধ্য।
৩. সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে তাকওয়া : সামাজিক জীবনে সামাজিক মূল্যবোধে তাকওয়া অপরিহার্য তাকওয়া সমাজের মানুষের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। তাই একজন তাকওয়াবান মানুষ কখনও অপরের অধিকার হরণ করে না, অপরকে কষ্ট দেয় না, অন্যায়-অনাচার থেকে নিজে বেঁচে থাকে, সমাজকে এ থেকে বাঁচায়। সমাজের অনিষ্ট ও অকল্যাণ হয় এমন কাজ তার দ্বারা হয় না।
৪. সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তাকওয়া : সামাজিক ন্যায়বিচার ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য তাকওয়া একান্ত প্রয়োজনীয় গুণ। তাকওয়াবান মানুষ সমাজে কখনো ন্যায়-নীতির বিপরীত কোন কাজ হতে দেয় না এবং সেও করে না। আল্লাহ বলেন : ‘‘তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর। কেন না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা তাকওয়ার খুব নিকটবর্তী। (সূরা -আল মায়িদাহ : ৮)।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা ও আস্থা : সামাজিক নিরাপত্তা, পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টির জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। তাকওয়াবিহীন সমাজে সামাজিক আস্থা ও নিরাপত্তা গড়ে উঠে না।
৬. আত্ম-সামাজিক উন্নয়নে তাকওয়া : আত্ম-সামাজিক উন্নয়নের জন্য তাকওয়া একটি বড় গুণ। যদি সমাজের লোকদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ থাকে, তবে সমাজের সদস্যরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সমাজের আত্ম-সামাজিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষতার জন্য কাজ করে থাকে। আর দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মূল উৎস হচ্ছে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি। তাই আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির জন্য তাকওয়াবান হওয়া অপরিহার্য।
৭. সুনাগরিকতার গুণ অর্জনে তাকওয়া : সুনাগরিকতার প্রধান গুণ-বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। আর তাকওয়া থেকেই নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগরিত হয়।
৮. সামাজিক সাম্য, সম্প্রীতি ও সংহতিতে : সামাজিক সাম্য, সম্প্রীতি ও সংহতি সৃষ্টিতে তাকওয়ার বিকল্প নেই। তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মানুষের মনে অপর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মর্যাদা ও শ্রদ্ধা-স্নেহ সৃষ্টি করে। মানুষে মানুষে সাম্য, সম্প্রীতি ও সংহতি গড়ে তোলে। যাবতীয় ভেদ-বৈষম্য ও পার্থক্য দূরীভূত করে আল্লাহর বান্দা হিসেবে সকলে মিলেমিশে জীবনযাপন করে।
৯. সামাজিক মর্যাদায় : সমাজে সর্বোত্তম ব্যক্তিগণ সমাদৃত হয় ও মর্যাদা পায়। আর সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব অর্জনের জন্য তাকওয়ার গুণ অর্জন করা একান্ত দরকার।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলতে পারি তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ। আর যে সমাজের মানুষের মধ্যে এ গুণ অর্জিত হয়, সে সমাজ হয় সুখী সমৃদ্ধশীল। তাকওয়াবান মানুষ কখনও ব্যক্তি ও সমাজকে ফাঁকি দেয় না। তাই মানুষ ব্যক্তি জীবনে যেমন হয় সততার অধিকারী তেমনি সমাজ জীবনে হয় কর্তব্যনিষ্ঠ। এ জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠা একমাত্র তাকওয়া দ্বারাই সম্ভব।আল্লাহ আমাদের তাকওয়া ভিত্তিক সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃক্মখল সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কাজে আত্মনিয়োগের তাওফিক দান করুন!আমিন।
সমাপ্তি
বিষয়: বিবিধ
২২৯৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার লেখা। তাকওয়ার গুরুত্ব বুঝতে ও অনুধাবন করতে অনেকেই আমরা পারিনা। আল্লাহ কুরআনের শুরুতেই বলেছেন, "এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশ।" (২:১) অর্থাৎ আল্লাহ'র ক্ষমা ও পুরষ্কার লাভের অন্যতম শর্ত হলো তাকওয়া অবলম্বন করা। আল্লাহ আমাদের তাকওয়া ভিত্তিক সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কাজে আত্মনিয়োগের তাওফিক দান করুন। আ-মী-ন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন