[b]লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু[/b]

লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ০৮ জুন, ২০১৪, ০৬:৫৩:১৯ সন্ধ্যা

(এক)

সুউচ্চ সবুজ পাহাড়!পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরণাটি নামছে।যেন একটা সুবিশাল কাঁচের আয়না ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে ছড়িয়ে পড়ছে।হাজার অজগরের একসাথে ফুঁশে আসার মত শব্দ আর ছুটন্ত ঘোড়ার বেগে পানি এগিয়ে আসার দৃশ্যটা, সত্যি নাবী মুসা আলাইহিসসালাম ও তার সাথীকে মুগ্ধ করেছে।ঝরণার পাশেই বিশাল গাছটির তলায় তিনি বসে পরলেন।

মুসা আলাইহিসসালাম সাথীকে বললেন,অনেকটা পথ হেটে এসেছ!নিশ্চয়ই তুমি ক্ষুধার্ত।এস খেয়ে নেয়া যাক সামনে অনেক পথ যেতে হবে।সাথী খাবারের পুটোলি থেকে দুটো রুটি বের করে মুসা আলাইহিসসালামের সামনে পরিবেশন করলেন।মুসা আলাইহিসসালাম জিঙ্গেস করলেন' তুমি যে বললে দুটি রুটি তৈরী করতে গিয়ে আল্লাহর কুদরাতে অনিচ্ছা সত্যেও তিনটে রুটি বনে গেছে?সাথীটি ছিলেন লোভী,তিনি রাস্তায় চলতে চলতে অতিরোক্ত রুটি টি খেয়ে ফেলেছেন,অথচ আল্লাহর নাবীকে মিথ্যে বললেন।

কি আশ্চার্য্য রুটি টি, কি করে যে অদৃশ্য হয়ে গেল আমি মোটেও টের পাইনী।মুসা আলাইহিসসালাম নিরব রইলেন।খাবার শেষে উভয়েই নতুন উদ্যমে হাটতে লাগলেন।

ঘন বন দুধারে বড় বড় গাছ মাঝ খান দিয়ে সরু পথ।কিছু পথ অতিক্রম করার পর উভয়েরই নজরে পরলো একটি উচু যায়গায় স্বর্ণমুদ্রা বুঝাই তিনটি পাত্র।মুসা আলাইহিসসালাম তাঁর সাথীকে বললেন তুমি একটি পাত্র নাও আমি নিজেও একটি নেব!অতিরিক্ত পাত্রটি রেখে দাও হয়ত এটির হকদার অন্যকেউ।সাথী অট্টহাসি হেসে জিঙ্গেস করলেন-কিকরে বুঝলেন এটির হকদার অন্যকেউ? মুসা আলাইহিসসলাম বললেন' যেহেতু তুমি দুটি রুটি তৈরী করতে গিয়ে তিনটি রুটি হয়েগেল সেহেতু এখানে আল্লাহর কোন হেকমত নিহিত রয়েছে।আপনি না নেবেন তো ভাল কথা!আমি এটি এখানে রেখে যাবনা!সাথীর এ কথা শুনে মুসা আলাইহিসসালাম কিছুক্ষন নিরব রইলেন,তারপর বললেন'তোমার এবং আমার গন্তব্য এক হতে পারেনা।অতএব তোমার মত তুমি আমার মত আমি।মুসা আলাইহিসসালাম অনত্র চলে গেলেন।

লোভী লোকটি স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি তিনটি পাত্রই বহু কষ্টে সঙ্গে নিয়ে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তণের উদ্দেশ্যে রওনা হল।হঠাত্ দেখতে পেলেন দুজন অশ্বেরোহী দ্রুত ঘোড়া হাকিয়ে তার নিকট আসলেন।তাদের দুজনকে দেখে তারপিলে চমকে উঠলো।দুজনের হাতে ধবধবে চকচকে ধারালো তরবারী।এই-পাত্র তিনটি দিয়ে দে!নইলে কল্লা যাবে।লোভী প্রচন্ড শক্তি দিয়ে চিত্কার করে বললো"না জীবন গে্লেও স্বর্ণমুদ্রাভর্তি পাত্রের একটিও তোমাদেরকে দিব না। দশ্যুদয় অতি নির্দয় ভাবে তরবারীর আঘাতে ধর থেকে মাথা নামিয়ে দিল এবং স্বর্ণমুদ্রার পাত্র তিনটি সাথে নিয়ে ঘোড়া হাকিয়ে চলতে লাগলো।চলতে চলতে উভযেই ভাবছে- স্বর্ণমুদ্রার পাত্র হলো তিনটি, আমরা হলাম দুজন,অতএব তিনটি পাত্রই একা কি ভাবে হস্তগত করা যায়?একজন অপরজনকে হত্যার পরিকল্পণা করতে করতে লোকালয়ের কাছাকাছি পৌছে গেল।

(দুই)

বড় আকারের কয়েকটি উচু পাথর জনবসতীপূর্ণ লোকালয়কে আড়াল করে রেখেছে।কতগুলো সবুজ গাছ যায়গাটির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে নিরবে দাড়িয়ে রয়েছে।দশ্যূদয় ঘোড়া দুটিকে একটি গাছের সাথে বাঁধলো।একজন বলে উঠল বন্ধু খুব ভোগ লেগছে-যাওনা, এখান থেকে এক দুটি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে কিছু খাবার নিয়ে এস।অপর জন বললো-আমিও তাই ভাবছিলাম বন্ধু!তুমি বস আমি যাব আর আসবো।এবার যিনি রইলেন"তিনি তার তরবারী পাথেরের সাথ ঘসে ধার দিয়ে তিখ্ণ করছেন। অপরজন খাবারের সাথে বিশ মিশিয়ে কিভাবে স্বাথীকে হত্যা করা যায় এই পরিকল্পনা করেই –খাবার নিয়ে ফিরে এলেন।মূহুর্ত্যে লোভ নামক দানবটি উভয়ের মধ্যে সমান ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।একজন তরবারীর আঘাতে অন্যজনকে দ্বিখন্ডিত করলো অপরজন বিষমিশানো খাবার খেয়ে মরে পরে রাইলো পথের ধারে।আল্লাহর ইচ্ছায় কয়েকদিন পর আল্লাহর নাবী মুসা আলাইহিসসালাম ঐ পথ দিয়েই আপন নিবাসের দিকে ধীরে শান্তমনে যাচ্ছিলেন।পথের ধারে দুজন ব্যাক্তির মৃতলাশ পরে থাকাতে দেখলেন এবং দুরে সেই স্বর্ণমুদ্রার তিনটি পাত্র দেখেই বুঝতে তাঁর কষ্ট হলোনা পকৃত ঘটনাটি কি ঘটেছিল।আরও কিছু দুর অগ্রসর হলে তিনি তার সাথীর মৃতদেহটিও পরে থাকতে দেখলেন।তিনি আফসোস করলেন' এই ভেবে-উত্তম তো সেই ব্যক্তি যে সংযমী,,আর অধম হলেন সেই লোক যে অতি লেভী।নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের স্বভাবতই অধীক লোভ।পাপ থেকে বাচতে হলে মানুষকে যে চারিত্রিক মৌলিক দুষনিয় গনাবলী পরিত্যাগ করা জরুরী তাহলো-ক্রোধ,হিংসা-দ্বেষ,লোভ,কার্পণ্য,রিয়া প্রদর্শনেচ্ছা গীবত-পরনিন্দা,চোগলখুরির মত মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলি।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File