আল্লাহ চালাইলে চলে, না চালাইলে নিজেরা চালাই
লিখেছেন লিখেছেন শ্রান্তপথিক ৩১ মার্চ, ২০১৫, ০৬:৪৮:১০ সন্ধ্যা
বেশ আগের কথা। বাড়ীর পাশে এক জেঠার ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। টিনের ছাদ নির্মাণ হয়ে গেছে। শুধু চারপাশের বেড়ার কাজ চলছে। সময়টা ছিল বৃষ্টির দিন। এমনিতে মিস্ত্রিদের সাথে গল্প-গুজব করতে দারুণ মজা। তার ওপর বৃষ্টির দিন। থেমে থেমে বৃষ্টি আসছে। মিস্ত্রিদের সাথে বসে গল্প করছি। এমন সময় জীর্ণ পোশাক পরিহিত এক শীর্ণ প্রোঢ় ব্যক্তি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমরা বসে থাকা ঘরে এসে উঠলেন। এমন বৃষ্টির দিনে তার হাতে একটা ছাতাও নেই। সহজেই বুঝা যায়, তার অর্থনৈতিক দৈন্যের ব্যাপারটি। এই আগন্তুককে আমরা কেউ চিনতে পারলাম না। কিন্তু আমার জেঠা বলে উঠলেন। আরে! আপনি? কেমন আছেন? বুুঝলাম, অত পরিচিত না হলেও মোটামুটি পরিচিত। কথাবার্তার এক পর্যায়ে জেঠা জিজ্ঞাসা করলেন-এখন কি করছেন? প্রৌঢ় বললেন, শরীরের এই অবস্থা দেখে কি মনে হয়, কোন কিছু করার মত অবস্থায় আছি।
-তাহলে ছেলে-পুলেরা কি করছে?
-- সবাইকে বিয়ে-শাদি দিয়ে দিয়েছি। সবাই আলাদা হয়ে গেছে। যে যার মত কাম-কাজ করে, বৌ-সন্তানাদি নিয়ে ঘর- সংসার করছে।
-আপনাদের (প্রৌঢ় ও তার স্ত্রী) দেখা শুনা করে না?
--না (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
-তাহলে, আপনাদের চলে কেমনে?
প্রৌঢ়ের উত্তর: আল্লাহ চালাইলে চলে, না চালাইলে নিজেরা চালাই।
প্রৌঢ়ের কথা কথা শুনে আমরা বেশ কয়েকজন হেসে ফেললাম। এক মিস্ত্রি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহ চালাইলে চলে’-কথাটা বুঝলাম। কিন্তু ‘না চালাইলে নিজেরা চালাই’-কথাটা তো বুঝলাম না।
প্রৌঢ়ের উত্তর: নিজেরা চালাই মানে-“উপোস থাকি”।
সেইদিন ওই প্রৌঢ়ের জীবনের কঠিন বাস্তবতার কথা বুঝিনি। তার কথাটাকে নিছক কৌতুক হিসেবে নিয়েছিলাম। অনেক জায়গায় এই কথাটাকে কৌতুক হিসেবে উপস্থাপন করে অনেক লোক হাসিয়েছি। কিন্তু আজ সময় আমাকে প্রৌঢ়ের ওই কথার মর্মার্থ হারে হারে বুঝিয়ে দিয়েছে।
সেইদিনের ওই প্রৌঢ়ের দীর্ঘ নিঃশ্বাস যে একদিন আমার বুকের বুকের মধ্য থেকে বের হবে-তা কখনই ভাবিনি। তবে একটা কথা হারে হারে বুঝতে পারছি “সময় বড় নিষ্ঠুর”।
বিষয়: বিবিধ
১০৮২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ক্লান্ত- শ্রান্তপথিক ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন