যুগের বাস্তবতায় নারীর পোশাক কেমন হওয়া চাই?
লিখেছেন লিখেছেন সুষুপ্ত পাঠক ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ১০:১৪:০৭ রাত
চীনের একটা প্রদেশ বোরখা নিষিদ্ধ করেছে। অনতি বিলম্বে বাংলাদেশে কবে বোরখা নিষিদ্ধ করা হবে জানি না। চীন সরকার হয়ত জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই এই ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশে নারীর নিজের জীবন রক্ষার্থে বোরখা নিষিদ্ধ করতে হবে। চোখ-মুখ ঢেকে রাস্তা পাড় হওয়াই যেখানে বিপদজনক সেখানে এই বস্তা পরে লঞ্চ-স্টিমারে চড়া মানে স্বেচ্ছায় নিজের জীবনকে ”ভাগ্যের” হাতে ছেড়ে দেয়া। পদ্মায় লঞ্চ ডুবিতে সাঁতরে যারা পাড়ে আসতে পেরেছিল তাদের সবাই পুরুষ। নারীদের সে রকম সুযোগ থাকলেও এরকম ”ইসলামী” পো্শাকই প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছিল। ঘরের বাইরে বের হতে হলে এমন পোশাক পরে বের হতে হবে যেটা পরে দৌড়াতে, উঁচু কিছু টপকাতে, সাঁতার কাটতে, লাফ দেয়ার মত সুযোগ আছে সেরকম কিছু। বাংলাদেশের রাস্তায় হরতাল হয়, হঠাৎ করেই রাস্তার কোন গন্ডগোলে প্রাণ নিয়ে দৌড়াতে লাগে- বোরখা-শাড়ি পরে কি সেটা সম্ভব? রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে নারীর মৃত্যুও দুর্লভ নয়। পোশাক আসলে ঘরের বাইরে প্যান্ট শার্টই হতে পারে আদর্শ। তবে আমরা ইসলাম ও ভেঁতো বাঙালীর সংমিশ্রণে মেয়েদের বুকে কাপড় না থাকলে লালা ঝরাতে থাকি। একদিনে আমাদের চোখ সইবে না। আশা করা যায় এসবে আমরা এক সময় অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারবো।
যারা বাঙালী প্রেমি ও ইসলাম প্রেমি তারা কি বলতে পারবেন কোনটা বাঙালীর পোশাক আর কোনটা ইসলামী পোশাক? বাঙালীর সেই অর্থে হাজার বছর ধরে কোন নির্দিষ্ট পোশাক নেই। আজকে যে শাড়িকে আমরা চিনি সেটা মূলত জোঁড়াসাকোর বিখ্যাত ঠাকুর বাড়ির গিন্নিদের কাছ থেকে এসেছে। অনেক আঁতেল বাঙালী পাজামা-পাঞ্জাবী পরে নিজেকে বাঙালীয়ানা ভাবতে ভালবাসে। কিন্তু আদৌ এটা বাঙালী নিজস্ব পোশাক নয়। শাড়ির কথা আগেই বলেছি। আজকের বাংলাদেশের নারীর প্রধান পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে সেলোয়ার-কামিজ। এই পোশাকও বাঙালী নারীর পোশাক নয়। বাংলাদেশে ব্যাপক হারে শাড়ির বদলে সালোয়ার-কামিজ পরার চল এসেছে একটা সাম্প্রদায়িক লক্ষ্যকে পুরন করার জন্য। এখনো মহিলাদের তাবলীগ জামাত সালোয়ার-কামিজ পোশাককে “ইসলামী পোশক” বলে প্রচার করে। শাড়িকে তারাই “হিন্দুয়ানী” পোশাক নাম দিয়েছে। ”ইসলামী পোশাক” বলতে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। সারা দুনিয়ার সকল মুসলমান একই রকম পোশাক পরতে হলে আসলে আরব বা আফগান পোশাক পরতে হবে। কিন্তু সেটা কিছুতে ইসলামী পোশাক হয়ে যায় না। আবু জাহেলের পোশাক আর হযরত মুহাম্মদের পোশাকে কোন পার্থক্য ছিল না। মরুভূমির জন্য সহনীয় পোশাকই তারা পরতেন। আবু বকর, ওমররা ইসলাম গ্রহণের আগে যা পরতেন ইসলাম গ্রহণের পরও তাই পরতেন। তাহলে ইসলামী পোশাকটা আসলো কোত্থেকে? আসলে আমাদের এখানে ইসলামী পোশাক বলতে যেটা পরিচিত সেটা একটা ধান্দাবাজীর পোশাক। জোব্বা-রুমাল আর গালে দাড়ি রেখে দুনম্বরী কাজ করতে খুব সুবিধা। এই লেবাস দেখে এখনো মানুষ সহজে বিশ্বাস করে ফেলে। প্রতারণ আর বাটপারী করতে তাতে খুব সুবিধা হয়।
এসবই ঘৃণিত উদ্দেশ্য মানুষের। পোশাক আসলে নির্ধারিত হয়ে যায় যুগ, প্রয়োজন আর বাস্তবতার নিরিখে। আজকের যুগে নারী ঘরে যেমন বাইরেও সমান ভূমিকা রাখছে। তাকে জীবিকা বেছে নিতে হচ্ছে। এখন আর পুরুষের একার রোজগারে সংসার চলছে না। তাই বহু পুরুষ শফির ওয়াজকে সমর্থন করলেও বাস্তবতার জন্য ঘরের বউকে বাইরে বের হতে বাধা দেবার সুযোগ পাচ্ছে না। যে নারীকে এখন পাল্লা দিয়ে পুরুষের সঙ্গে লোকাল বাসে উঠতে হয় তাকে অবশ্যই একটা কম্ফটেবল পোশাকই বেছে নিতে হবে। লঞ্চ ডুবিতে নারীই ছিল সবচেয়ে বড় অসহায়। সমাজ ও ইসলাম তাকে চাপিয়ে দিয়েছিল গায়ে অতিরিক্ত কাপড়। আমরা এখনো নারীর গায়ে যথেষ্ঠ কাপড় রক্ষিত আছে কিনা তাই নিয়ে দিবানিশি টেনশানে ভুগি। পোশাকই নাকি নারীকে ধর্ষণ করায়। আমাদের আদিবাসী নারীদের পোশাক বিবেচনা করলে তো সেখানে রোজই ধর্ষন হবার কথা। আদিবাসী নারীর যে ধর্ষনের খবর কাগজে আসে তার সবই বাঙালী ছেলেদের দ্বারা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীই নিজ সংস্কৃতির কারণে বুকের উপর বাড়তি (ওড়না জাতীয়) কাপড় ব্যবহার করে না। সেসব দেশের ছেলেদের নিজের ঘরের মা-বোনকে এসব পরতে দেখতেই অভ্যস্ত। আমাদের পাশের কোলকাতাও এসব আজকাল ধাতব্যের মধ্যে নেয় না। নিশ্চিত করেই সেখানকার মেয়েরা অনেক বেশি চলাফেরায় সুবিধাজনক পোশাক পরিধান করে। বাংলাদেশ মূলত মধ্যবিত্তের সেন্টিমেন্ট ও ইসলাম নারীকে বাস্তায় ঢেকে রাখতে চেষ্টা করে। “অশালীন পোশাক” আর চলাফেরার সুবিধাজনক পোশাক এক কথা না। প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনাকে যারা অবাধ যৌনতা বুঝে তারাই নারীকে বস্তায় পুরে ”শালিন” করতে উদ্যত।…
বিষয়: বিবিধ
১৩৩০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পোষাক কখনোই মানুষের মেধা-মননকে বেধে রাখে না। তাই প্রগতিশীল-চেতনায় যারা উদ্বুদ্ধ তাদের আলোচনা করা উচিৎ অন্যান্য বিষয়ে – যা জাতিগতভাবে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন