ছুপা যুক্তিবাদী!

লিখেছেন লিখেছেন সুষুপ্ত পাঠক ১৪ জুন, ২০১৪, ১২:৫১:০৮ দুপুর

যুক্তি দিয়ে যখন মানুষ বিচার করবে তখন সেটা এক তরফা হতে পারে না। হনুমানের সূর্যকে বগলের তলায় এনে রাখা আর নবীর আঙ্গুল দিয়ে চন্দ্র দ্বিভন্ড করা এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় কি করে? যুক্তি ও বিজ্ঞান দিয়ে এই দুটো ঘটনা অবাস্তব ও অসম্ভব। হয় আমাকে দুটোকেই বিশ্বাস করতে হবে নয়ত দুটোকেই অবিশ্বাস করতে হবে। কোন শিক্ষিত মানুষ প্রকাশ্যে ভূত বিশ্বাস করার কথা স্বীকার করতে চাইবে না কিন্তু জ্বিনকে বিশ্বাস করতে তাদের সামান্য বাঁধছেও না! জ্বিন আর ভূতের যে ধারনা তাতে খুব একটা পার্থক্য নেই। এরা মানুষের উপর ভর করতে পারে। খালি চোখে দেখা যায় না। নানা ছুল ধরে মানুষকে ভয় দেখায়। পার্থক্য মানুষ মরে ভূত হয়, জ্বিন নাকি আলাদাই একটা জাতি! অবশ্য এই দুটোর আছর ছাড়াবার জন্য ওঝা আছে। সেই ওঝারা নানা রকম মন্ত্র বা সুরা পাঠ করে মানুষের উপর থেকে ভর ছোটায়। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষকে বলতে শুনেছি, ভূত বলতে কিছু নাই কিন্তু জ্বিন আছে।

-তাই নাকি?

-অবশ্যই! কোরআনে জ্বিন জাতি নিয়ে একটা সুরা আছে। রসূলপাকের কাছে অনেক জ্বিন ইসলাম পর্যন্ত গ্রহণ করেছে। কোরআনে বলা আছে একমাত্র জ্বিন ও ইনসানের বিচার হবে কেয়ামতের ময়দানে...।

কি অকাট্ট যুক্তি! কোরআনে যেহেতু লেখা আছে তাই আর কোন যুক্তি চলে না!

বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে জগতের অদৃশ্যমান কত প্রাণী (ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস) আবিস্কৃত হয়ে গেলো তবু জ্বিন জাতি বলে এমন সুসভ্য (!) একটা জাতির অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান হলো না! এটা কেমন করে সম্ভব হলো? অনেকে বিজ্ঞের মত হেসে বলে, ভাই, বিজ্ঞান চাইলেই তো জ্বিন দেখতে পারবে না। আল্লাপাক তাদের দেখাবে না।… কেন ভাই, দেখালে কি সমস্যা? এ তো সাত আসমানের বেহস্ত আর দোজগ খোঁজার ব্যাপার না যে আল্লাপাক মানুষের জ্ঞানকে সেখানে সীমাবদ্ধ রেখে দিবে। এত রাখঢাগ গুড়গুড় কেন? যেখানে কত বুর্জগ লোক গরু-ছাগলের মত জ্বিন পোষে পর্যন্ত! এমন কি পোষা কুকুরের মত জ্বিন চালান দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়। বিজ্ঞান যেখানে দূর মহাকাশে প্রাণের সন্ধানে মহাকাশ যান পাঠাচ্ছে তখন মানুষেরই আশেপাশে ঘোরা জ্বিন নামের একটা অস্তিত্বকে খুঁজে পাচ্ছে না!

মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেক কোরআন তাফসিরকারক জ্বিন নিয়ে মহা ফাঁপরে পড়েছিলেন। অনেকে মৌন ছিলেন এ ব্যাপারে। কেউ বলেছেন এই জ্বিন মানে হচ্ছে যাযাবর বেদুইনদের একটা জাতি। বলাই বাহুল্য সবাই এতে একমত হতে পারেননি। তবে আরবদের নানা রকম কুসংস্কারের কথা মাথায় রাখলে “জ্বিন” বলতে আরবের ভূতপ্রেতনীকেই মনে হয়। কোরআন আসলে সেটাই বুঝিয়েছে। আরবরা জাদুটোনায় বিশ্বাস করতো। জাদুর প্রকপ এতটাই ছিল যে প্রত্যেক আরব নিজের জন্য একটা ছদ্মনাম বেছে নিত। বিশ্বাস করা হতো নকল নামে জাদু করলে জাদু কাজ করে না! এহেন জাতি যে জ্বিনের মত অতিপ্রাকৃত একটা সত্ত্বাকে বিশ্বাস করবে এতে অবাক হওয়ার কি আছে? ভারতবর্ষের কুসংস্কার থেকে যেমন ভূতপ্রেত, রাক্ষসখাক্কস, ব্রাহ্মদৈত্যর জন্ম, আরবের জাদুটোনা থেকে তেমনি জ্বিনের জন্ম। ধর্ম মানুষকে কতটা নির্বুদ্ধি হতে বাধ্য করে তার প্রমাণ হাজার বছর আগের অজ্ঞ, কুসংস্কারগ্রস্ত মানুষের বিশ্বাসকে আজকের যুগেও অবলীলায় মেনে নেয়া!

আমরা দেখেছি ভারতে রামের জন্মভূমির সত্যতাকে খুঁজে বের করার জন্য অযোধ্যতার মাটি খোড়া হয়েছে। একটা উপন্যাসের নায়কের রক্তমাংসের অস্তিত্ব মাটি খুঁড়ে পৃথিবী এফোঁড় ওফোঁড় করে ফেললেও কিছু লাভ হবে না। অনুরূপভাবে ইব্রাহিমের ঐতিহাসিক সন্ধান মরুভূমির বালু সেঁচে ফেললেও কোন অস্তি উঠে আসবে না। যীশু বা ঈসা হচ্ছে রামের মতই আরেক কল্পিত চরিত্র। আর্যরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই গেছে সেখানেই তাদের কাহিনী-পুরাণ সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। দেশকালে তা কিছুটা পাল্টে গেলেও কাহিনী পুরোপুরি পাল্টে যায়নি। তাই মুসা ও শ্রী কৃষ্ণের জন্ম ও বেড়ে উঠা প্রায় একই রকম। ইসলামের নবী আরব ঈশ্বর “আল্লা” ও ঈসা, মরিয়ম, মুসাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজের নবীত্বকেই অসত্য প্রমাণ করেছেন।

বলছিলাম যুক্তির কথা। অন্যের ধর্মের মহাপুরুষদের অতি মানবীয় গল্প শুনে যারা হাসাহাসি করেন কিন্তু স্বধর্মের অলৌকিক ঘটনাকে “মুজেজা” বলে সমস্ত যুক্তিতর্ককে পাশ কাটান তারা আসলে নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করেন।যে যুক্তিগুলো তিনি অন্যের ধর্মের অলৌকিক ঘটনার বেলায় ব্যবহার করেন সে যুক্তিগুলো নিজের ধর্মের বেলায়ও ব্যবহার করে দেখেন না কেন? আমি আসলে বলতে চাচ্ছি আমরা সবাই যুক্তিবাদী, কেবল স্বধর্ম ব্যতিত!...

প্রকৃত যুক্তিবান মানুষের কোন দুর্বলতা থাকতে পারে না।যুক্তি কখনো আপনা পাতে বেশি ঝোল দেয় না।যুক্তি নির্মম সত্যকে খুঁজে বের করে আনে।… তাই এরকম ছদ্ম যুক্তিবাদীদের বেশিরভাগ “যুক্তি”ই আসলে সাম্প্রদায়িক বিষেদাগার।আজকাল সাম্প্রদায়িক বিষেদাগারও বুঝা কঠিন হয়ে গেছে।একমাত্র নাস্তিক ব্যতিত ধর্মের সমালোচনা করার প্রকৃত অধিকার বোধহয় কারুর নেই।…

বিষয়: বিবিধ

১১৫৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

234709
১৪ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:৫২
চক্রবাক লিখেছেন : পিলাচ পিলাচ পিলাচ
234756
১৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:১৪
সুষুপ্ত পাঠক লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File