সত্যের সন্ধানে: ঈশ্বরের আদি সূচনা

লিখেছেন লিখেছেন সুষুপ্ত পাঠক ০৬ জুন, ২০১৪, ১০:৫৬:১২ রাত

আমরা এখন দেখবো যীশুর জন্ম রহস্য, সে সঙ্গে দুনিয়ার সমস্ত ধর্মের নিউক্লিয়াসকে।কেমন করে জন্ম নিল অবতাররা।আর এজন্য যে সভ্য ও ইতিহাসে মহান ও অমর হয়ে আছেন সেই আর্য জাতির কাছেই আমাদের যেতে হবে।ইতিহাস বলছে মধ্য এশিয়ায় এই আর্য জাতির বাস ছিল। এরা ভ্রাম্যমান জীবন যাপন করতো।পরে এদের বিভিন্ন শাখা পূব-পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে।পশ্চিমে পারস্য সাম্রাজা, ইতালিতে রোম সাম্রাজা, স্পেন,, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও মূল মধ্য এশিয়া ছেড়ে সমুদ্র পাড়ি দেয়। আর্যদের একটি শক্তিশালী শাখা হিমালয় পাড়ি দিয়ে পাঞ্জাব এসে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষে এরাই ব্রাক্ষণ।

আর্যদের নিজস্ব ধর্ম ছিল।যাযাবররা পদব্রজে বেরিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরিত হয়েছে নিজেদের সহায় সম্বল নিয়ে।সেখানে তাদের ধর্মগ্রন্থও ছিল।সেটা লিখিত থাক বা মুখে মুখে, তারা (আর্যরা) যেখানেই গেছে সেই ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় পুরান সঙ্গে করেই নিয়ে গেছে। এরা মূলত শক্তির পূজারী ছিল।সূর্য ছিল তাদের কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী।সূর্য আলো দিয়ে অন্ধকার দূর করে।ফসল ফলায়।সমস্ত সৃষ্টির মূল্যে সূর্য।একেই সঙ্গে সূর্যের সংহার মূর্তির সঙ্গেও আর্যরা পরিচিত ছিল। তাই সূর্য দেবতার মাঝে তারা ত্রিমূর্তি দেখতে পেয়েছিল।সৃষ্টিকর্তা-পালনকর্তা-শাস্তিদাতা- এ হচ্ছে ত্রিমূর্তি। (আমরা এখন স্মরণ করতে পারি ভারতবর্ষে হিন্দু বিশ্বাস মতে ঈশ্বরের তিন রূপ, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব!)।

আর্যরা বিশ্বাস করতো সূর্য আকাশের পুত্র।আর সূর্যের মাতা হলেন পৃথিবী।প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর যখন সূর্য উত্তর দিকে যাত্রা করতো আর্যরা মনে করতো সেদিন সূর্য তার মাতার গর্ভ থেকে বেরিয়ে পূর্ব দিকে উদয় হচ্ছে।সূর্যের জন্মদিন তাই ২৫ ডিসেম্বর। (খেয়াল রাখুন, যীশুর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর!)

সূর্যের জন্মবার্তা বয়ে আনে সকালের একটি তারকা যা ভোর ও সূর্য উঠার আগে আকাশে দেখা দেয়, মানুষ ভাবতো অন্ধকার ভেদ করে সূর্য উদয় হচ্ছে, এই অন্ধকারকে কালক্রমে পাহাড়ের গুহা, অন্ধকার কারাগার কল্পনা করা হয়েছে কবির কল্পনায়।আমরা এই পর্যায়ে যীশু ও শ্রী কৃষ্ণের জন্ম সময়ের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করতে পারি। বিষ্ণু পুরান অনুযায়ী শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর এবং তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়!তার জন্ম সময়ের ঘটনা মিলে যায় যীশুর জন্ম সময়ের পরিস্থির সঙ্গে।মিলে যায় মুসা নবীর জন্ম সময়ের ঘটনার সঙ্গে।হিন্দু ধর্মে শক্তিদেবকে বিড়াট এক মাছের গিলে ফেললেও তিনি জীবন্ত বেরিয়ে আসেন, যেমন ইউনুস নবী মাছের পেট থেকে বেরিয়ে আসেন!চন্দ্র দ্বিখন্ডের ঘটনা মোটেই নতুন কোন ঘটনা নয়। মাতঙ্গ নামক এজন বুদ্ধ শিষ্য নাকি আগেই চন্দ্র দ্বিখন্ড করেছিলেন!( মনে হচ্ছে চন্দ্র দ্বিখন্ড করা একটা ফ্যাসান ছিল অবতারদের!)।

রাশিচক্রে সূর্য যখন মেষ রাশি অতিক্রম করতো তখন আর্যরা মেষের পূজা করতো।পরবর্তীকালে এটাই হয়ে দাঁড়ায় ঈশ্বরের মেষপালক-এ তো সহজ অনুমান।বেদের আর্যরাও মনে করে রাশিচক্রের শেষ সূর্য দেবতা।ক্রুশ প্যাগনদের কাছে কোন অপরিচিত চিহ্ন ছিল না।যীশুর আজকের যে চেহারা তা স্পষ্ট করে ইউরোপীয়ান মূর্তি।এই যীশু একদিনে গড়ে উঠেনি।মানুষের রূপে সে পূজীত হবার আগে ভেড়ার রূপে অতীতে তাকে স্মরণ করা হয়েছে।চার্চের গোপন নথিতে তার প্রমাণ রয়েছে। আর এই মেষ আর্যদের সূর্য পুরান থেকেই জন্ম নিয়েছিল।

সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে আর্যদের ছিল নিজস্ব ব্যাখা। কেন জগত সৃষ্টি হলো- তার উত্তর দিয়েছিল আর্যরা।কালক্রমে গল্পের চরিত্র বা পটভূমি পাল্টে গিয়েছে কিন্ত মূল থিম একই রয়ে গিয়েছে। আজকের সর্বশেষ ধর্ম বলে দাবীকারী ধর্মও সেই প্রাচীন সূর্য পুরনাকেই গ্রহণ করেছে। বেদ রচিত হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ১৫০০ বছর আগে (আনুমানিক)।হিন্দু ধর্ম সৃষ্টি তত্ত্ব বলছে, শিব, মহেশ্বর ব্রহ্মাকে প্রলোভিত করে স্বর্গ থেকে ডুমুর গাছের একটি ফুল ফেলে দেন। ব্রহ্মা তার স্ত্রী শতরূপার দ্বারা মন্ত্রনা পেয়ে ফুলটি আত্মসাৎ করতে চান এই লোভ চিন্তা করে যে, এর মাধ্যমে সে অমর হতে পারবে।ফুলটি ব্রহ্মা গ্রহণ করলে শিব রেগে যান এবং ব্রহ্মাকে অভিশাপ দেন যাতে সে দু:খ-দুর্দশায় আক্রান্ত হন। (আমরা বোধহয় এবার আদম ও হাওয়ার গন্ধম ফল ভক্ষন ও আল্লার অভিশাপ লাভের গল্পটাকে এখন স্মরণ করতে পারি!)

মানুষের পাপ ও তার ফল ভক্ষনের নতিজা সব সমাজই জোরসে প্রচার করেছে। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার একমাত্র ব্যাখ্যা ছিল মানুষের পাপ। নূহের মহপ্লাবণ ক্ষুদ্র উপজাতিদের মধ্যেও প্রচলিত ছিল। যেখানে নলখাগড়ার বন মানুষকে বার্তা দেয় মহাপ্লাবণের যেখানে জোড়া জোড়া প্রাণী রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।মহাপ্লাবনের কাহিনী হিন্দু ধর্মেও প্রচলিত আছে।একইভাবে স্বর্গ ভ্রমণ মোটেই চমকে দেয়ার মত কোন ঘটনাই না।বাইবেল বলছে পর্বতের পাথরের উপর দিয়ে স্বর্গে আহরনে কথা।গাধা বা খচ্চরের পিঠে চড়ে স্বর্গারহন সেই সরল গল্পেরই অনুপ্রেরণা বলা যায়।

এই গোটা লেখাটায় দেখানো হয়েছে আর্যরা এমন এক জাতি যারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িছিটিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, পুরানকে স্থানীয়দের ধর্ম বিশ্বাসে ও পুরানের সঙ্গে একটা সংমিশ্রন করে।মূল ধর্মীয় কনসেপ্ট, ঈশ্বরের রূপ তাদের সূর্য পুরান অনুযায়ীই এগিয়েছে।যেহেতু আর্যরা জয়ি হয়েছিল তাই তাদের বিশ্বাসই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।আজতক জগতের সমস্ত ধর্ম পুরান ও অবতার আর্যদের সূর্য পুরান থেকেই উত্থিত।একমাত্র ইসলাম ছাড়া।কিন্তু ইসলাম সূর্য পুরান থেকে জন্ম নেয়া গল্প ও চরিত্রকে নিজেদের দাবী করে, তাদের সৃষ্টিতত্ত্বকে গ্রহণ করে, তাদের নানা উপকথাকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেকে অসত্য, অলীক, মিথ্যাই প্রমাণ করেছে।পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম মানুষের কল্পনা ও সৃষ্টিশীল ক্ষমতা থেকে তৈরি।আমাদের এখন সময় এসেছে গ্রীক পুরানের মত এদের যাদুঘরে প্রবেশ করানোর।বড়জোর এসব নিয়ে হলিউডি সিনেমা তৈরি হতে পারে।চমৎকার টিভি সিরিয়াল।কমিকস বই।… মিছিমিছি গভীর বিশ্বাস করে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করার কোন মানে হয় না…।

(তথ্যসূত্র: পৃথিবীর ইতিহাস, THE ORIGIN OF RELIGIONS)

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File