পেশা ও জীবিকা: আসলে কী অর্থ না অন্য কিছু?

লিখেছেন লিখেছেন আনসারী১৪ ২২ মে, ২০১৫, ১২:৩৩:০৯ দুপুর

আমাদের সমাজে নানা রকম মানুষের নানা রকম পেশা রয়েছে।

কেউ শিক্ষক কেউ ব্যবসায়ী কেউ কৃষক কেউ বা দিন মজুর শ্রমিক।বিভিন্ন রকমের পেশায় মানুষের আগ্রহ কেন? এর জবাব কী হবে হয়তো আমার সাথে আপনাদের মতের ভিন্নতা থাকতে পারে তবে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, তা হল জীবিকা। জীবিকার তাগিদেই মানুষ নিজেকে কোন না কোন কর্মে জড়িত করেন।আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল।একজন ডাক্তার খুব কষ্ট ও পরিশ্রম করে ডাক্তারী পড়াশুনা শেষ করে পেশায় একজন ডাক্তার হন কিসের জন্য মানব সেবার জন্য না জীবিকার জন্য?সত্যকে আড়াল করে হয়তো আপনি বলবেন রুগীর সেবার জন্য। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা কী?হত দরিদ্র ঘরের কোন সন্তান মেডিকেল পাশকরে ডাক্তার হতে পারে না(ব্যতিক্রম থাকতে পারে)।মধ্যবিত্ত অথবা ধনী পরিবারের সন্তানরাই সাধারনত: ডাক্তার ও ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা করেন। ইচ্ছে করলে তারা কিন্ত সম্পুর্ন ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে সমাজের দায়টুকু তারা পরিশোধ করতে পারেন কিন্তু তারা করনে না।তারা উচ্চ ভিজিটে রুগীর চিকিৎসা করেন। এমনকি যত বেশী টাকা ভিজিট তত ভাল ডাক্তার এই নগ্ন প্রতিযোগিতাই নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেন।কিন্তু তাদের সমালোচনা করার মত মানুষের যথেষ্ট অভাব রয়েছে আমাদের বর্তমান সমাজে। কিন্তু গরীব ঘরের সন্তান মেধা থাকা স্বত্তেও অর্থের অভাবে মাধ্যমিক পর্যন্ত শেষ করতে না পেরে পেশা হিসেবে রিক্সা শ্রমিকে নিজের নাম লেখায়। সেই রিক্সাচালক যখন আমাদের কাছে নায্য ভাড়া দাবী করেন তখন ২৫টাকার স্থলে ২০টাকা দিয়ে সাথে একটা ধমকও দিয়ে নিজের প্রভাব জাহির করার চেষ্টা করি।

ডাক্তারের ভিজিট ৫০০টাকার পরিবর্তে ২০০টাকা কমিয়ে ৩০০টাকা দিলে ডাক্তারের খুব ক্ষতি হয়ে যাবেনা। কিন্তু একজন রিক্সাওয়ালা আপনার ২৫/৩০ টাকা দিয়ে কোন ফ্ল্যাট কিনবেন না। সে এই টাকা দিয়ে সন্ধ্যায় চাল কিনে বস্তির সেই খুপড়ি ঘরে অপেক্ষারত অনাহারী অর্ধাহারী শিশু, সন্তান ,ভাইবোন ,স্ত্রী পরিজনের খাবার বন্দোবস্ত করবেন।

তাই বলে আমি বলতে পারিনা যে, ডাক্তার সাহেবের চিকিৎসা ফি বাবদ আয় করা অর্থগুলো অবৈধ।সবার উপার্জন বৈধ।তবে বৈধ উপার্জনের মধ্যেও কিছু আছে যে গুলো দেখতে আপাত: দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে।

উপরের কথাগুলো বললাম আপনাদের বিবেকে একটু নাড়া দেওয়ার জন্য।

যারা শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য অন্তর থেকে মঙ্গল কামনা করি।আজকে একটি পত্রিকায় কলাম পড়লাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শ্রদ্ধাভাজন স্যারের লেখা ।স্যার তার বাল্য শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারন মুলক কিছূ কথা লিখেছেন। খুব ভাল লেগেছে লেখাটি।নিজেদের জন্য দুয়া করি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও একজন ভাল শিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠার তৌফিক দেন। কিন্ত স্যার শেষের দিকে কিছূ কথা বলেছেন তা আমাদের জন্য মেনে চলা বাস্তবতার নিরীখে সহজ সাধ্য নয়।তিনি বলতে চেয়েছেন "যে সকল শিক্ষক ছাত্রদের প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা নেন অথবা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার নম্বর কম বেশী করেন তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেন।স্যারের শিক্ষকগন তার কাছ থেকে কখনও টাকা নেননি" ।টাকার বিনিময়ে অথবা টাকা ছাড়াই যে ভাবেই হোক মন্দ কাজ সবার কাছে সবসময়ই অন্যায়।শিক্ষকদের জন্য তা আরও গর্হিত।এব্যাপারে বিবেকবান ব্যক্তিরা সবাই একমত। কিন্তু একজন শিক্ষক যদি তার ক্লাসের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়ে তার কাছ থেকে টিউশন বাবদ কিছু টাকা গ্রহন করেন তাহলে কী তা অন্যায় হবে।ঢাকা শহরে যারা স্কুল কলেজে শিক্ষকতা করেন তারা বেতন ভাতা বাবদ যে পরিমান অর্থ পান তা দিয়ে তাদের বাসা ভাড়াও হয়না।তারা কী করবেন? একজন শিক্ষক তার পেশাদারিত্ব বজায় রেখে তার জীবিকার তাগিদে কী করতে পারেন?

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে পরিমান বেতন ভাতা ও সম্মানী পান তাতে তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একজন প্রাইমারী অথবা হাইস্কুল অথবা কলেজের শিক্ষকের আর্থিক উপার্জন কেমন? তা সবার অজানা নয়। তাহলে কী একজন শিক্ষক সমাজে সাচ্ছন্দ্যপুর্ণ পরিবেশে বাস করার অধিকার রাখেন না? তাহলে কী একজন শিক্ষক তার জীবিকার তাকিদে প্রাইভেট টিউশনি বাদ দিয়ে বিকল্প কোন উপায় অবলম্বন করবেন? আর বিকল্পটা কী তা কী বলতে পারবেন? একজন শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনি বাদ দিলেই কী ছাত্ররা আর কোচিং এ যাবেন না? এতেই কী ছাত্রদের বেশী মঙ্গল হবে? বাস্তবধর্মী পরামর্শ ও সুচিন্তিত মতামত কামনা করছি।

প্রত্যেক ব্যক্তির হালাল ও বৈধ উপার্জন করার অধিকার আছে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321806
২২ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৩৪
চোথাবাজ লিখেছেন : প্রত্যেক ব্যক্তির হালাল ও বৈধ উপার্জন করার অধিকার আছে।
২২ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:০২
262876
আনসারী১৪ লিখেছেন : সে কথায় বলতে চাচ্ছি।
ধন্যবাদ
321818
২২ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৪১
হতভাগা লিখেছেন : মানুষ লেখাপড়া করেই জীবিকা অর্জনের জন্য । প্রকৃতপক্ষে যে কেউ কোন কাজই করে জীবিকা অর্জনের জন্য, কিছু পাওয়ার জন্য ।

বর্তমানের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়াতে সবাই চায় বিত্তশালী হতে । চায় রাতে ঘুমানোর পরের দিন সকালে উঠে জেগে দেখবে যে সে বিশাল বড় লোক হয়ে গেছে ।

এরকম একটা প্রতিযোগিতায় সবাই চায় তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে । ১০০ টাকা ভিজিট নেওয়া নরমাল ( এম.বি.বি.এস.)ডাক্তারও আছে , আছে হাজার টাকা ভিজিট নেওয়া অসাধারন ডাক্তাররাও ।

আবার দেখবেন বৃষ্টি বা অবরোধের সময় রিক্সা ভাড়া নিত্যদিনের চেয়ে ডাবল হাঁকানো রিক্সাওয়ালাও । আর সি.এন.জি ওয়ালারা তো মিটারের চেয়ে কমপক্ষে ২ গুন বেশী ভাড়া নেয় কন্ট্রাক্টে ।

কেন এসব করে তারা ? নিজেকে বিশাল বড় লোক দেখতে চায় তারা তা সে যে পজিশনেই থাকুক না কেন। অন্যের অসুবিধাকে পুঁজি করে সুবিধা মত ধুমসে চার্জ করে বসে ।

প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বলে অল্পতেই বেশী পেতে চায় ।
২২ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:০১
262875
আনসারী১৪ লিখেছেন : "অন্যের অসুবিধাকে পুঁজি করে সুবিধা মত ধুমসে চার্জ করে বসে । " এটা নিঃসন্দেহে অন্যায় ও জুলুম।
ধন্যবাদ @ মি.হতভাগা
321862
২২ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : জুলুমবাজ ডাক্তারদের কসাই বলা হয় আড়ালে কিন্তু ভাড়া সামান্য বেশী চাওয়া রিক্সাওয়াা পায় নগদ গালাগালি, চড় থাপ্পড়৷ডাক্তারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফি আর রিক্সাওয়ালার অতিরিক্ত চাওয়ার পিছনে কারণ দুটি ভিন্ন৷ আর শিক্ষক যদি বেতন কম পাওয়ার কারণে টিউশনি করেন তাতে দোষ হবার কথা নয়, কিন্তু তিনি যদি ক্লাশে তাঁর দায়িত্ব সঠিক পালন নাকরে ছাত্রদের টিঊশন নির্ভর করে তোলেন কিংবা তাঁর ব্যাচে পড়লে নির্ঘাত পাশের লোভ দেখান তাহলে নিশ্চয়ই তা অন্যায়৷ বেতনে না চললে পেশা বদল করার এখ্তেয়ার তাঁর অবশ্যই আছে৷ তাইবলে তাঁদের বেতন কমই রাখা হোক এটাও বলিনা৷ এটা নিয়োগ কারীদের দেখা উচিৎ৷ধন্যবাদ
২৫ মে ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৫
263538
আনসারী১৪ লিখেছেন : আপনার সাথে আমিও একমত।
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File