অকৃত্রিম ভালবাসা...
লিখেছেন লিখেছেন মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন ১৭ জুন, ২০১৪, ১০:৩২:৩৭ সকাল
প্রতিদিনের মত আজকেও রহমান মিয়া খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছেন। বউকে তাড়াতাড়ি একটা ডিম ভেঁজে দিতে বললেন। সারাদিন প্রচুর খাটুনি যায় তাই একটা ডিম খেলে ভালো বল পাওয়া যাবে এমনটাই ধারণা তার। চুলা থেকে এক পিস কয়লা নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে তাঁর রিক্সার সামনে গেলেন। রিক্সায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ভাবছেন,
"আহ! কবে একডা মুটুর ওয়ালা রিক্সা কিনুম। শুধু ইস্টার্ট দিতি পারলেই কাম শেষ। রিক্সারে আর টানতে হইবোনা রিক্সায় আমারে টাইনা নিয়া যাইবো".
তবে তাঁর বর্তমান রিক্সাটা তিনি খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন। একটা নতুন বেল লাগিয়েছেন যেটা থেকে পুলিশের গাড়ির মত সাউন্ড বের হয়। এতে তিনি বেশ মজা পান। কারন রিক্সা চালানোর সময় নিজের মধ্যে একটা পুলিশ পুলিশ ভাব চলে আসে। বাকি রিক্সাওয়ালাদের মনে হয় ভিলেন। তিনি আবার সব ধরনের প্যাসেঞ্জার নেন না। এই যেমন প্রেমিকপ্রেমিকার জোড়া দেখলেই তিনি সাফ জানিয়ে দেন নিবেন না। কারন এরা রিক্সায় উঠলেই রিক্সাটারে জাতীয় পার্ক বানিয়ে ফেলে।
--ও শুক্করের মা, একটা ডিম ভাঁইজতে এতক্ষণ লাগে ক্যারে? কেন যে তোমারে বিয়া করলাম!
--দেখো শুক্করের বাব, সকাল সকাল জগড়া করইন্না কথা কইবা না একদম। আমিও মেট্রিক পাস মাইয়া। আমারে বিয়া করবার পারছো হেইডা তোমার সৌভাগ্য।
--চেয়ারম্যান বাড়ির কামের ভুয়া ছখিনা রে বিয়া করলে কত ভালো অইতো। মাঝেমধ্যে ভাড়া নিয়া গেলে কি আদর যত্নটাই না করে। কামেও মাশাল্লাহ ওস্তাদ।
--কি কইলা তুমি? ঠিক আছে তুমি ছকিনা রে বিয়া কইরা সুখী হও। আমি গেলাম বাপের বাড়ি।
--হয়েছে আর বাপের বাড়ি যাওয়া লাগতো না। ডিম ভাইজা দাও। আর চা বানাও একটু।
--ডিম ভাঁজতে পারুম না। চীন থেইকা নাকি নকল ডিম বাংলাদেশে আইতাছে। এইটা যে নকল না কেমনে বুঝুম?
--আস্তাগফিরুল্লাহ মাইয়া কই কি? ডিম বলে আবার নকল আছে। ডিম হইলো আল্লার দান। আল্লাহ পাক প্রথমে মুরগির পেঠে ডিম ঢুকাই দিছে। আর মুরগী সেগুলা আমাগোরে দিতাছে।
-- আরে তুমি যেই পেপারের টুকরো দিয়ে মুড়িয়ে ডিমগুলা আনছ হেই পেপারে পড়ছি আমি। আমি কিন্তু মেট্রিক পাস। বাংলা রিডিং পড়তে পারি। স্কুলে আমার রিডিং পড়া শুনে কুদ্দুস স্যার খুব সুনাম করত।
--ও মোর জ্বালা কেন যে শিক্ষিত মাইয়া বিয়া করলাম..!
--কি কইলা তুমি? ঠিক আছে আমি গেলাম বাপের বাড়ি। তুমি থাকো।
এই বলে রহমান মিয়ার বউ ব্যাগ গোছাতে লাগলো। তাই দেখে রহমান মিয়া বউয়ের পাশে এসে হাত ধরে বললো,
--এই শুক্করের মা তুমি রাগ করছ?
--আমি থাকবো না আর তোমার সাথে। চলে যাবো। আর আসবো না।
--ধুর আমি না হয় রাগের মাথায় এসব কইছি। তাই বলে তুমি আমারে ছাইড়া চলে যাইবা। আমারে কে ডিম ভাঁইজা দিবো, কে চা বানাই দিবো, ভাত রাইধা দিবো!!
এসব বলেই তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। আর তাঁর বউ তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
--ঠিক আছে যামু না। তাইলে কথা দেও আমার লগে আর জগড়া করবা না।
বউয়ের কপালে একটা চুমু খেয়ে তিনি বললেন,
--ঠিক আছে। আর করমু না। কথা দিলাম।
রহমান মিয়ার আর কথাটা রাখা হয়না। প্রতিদিন এভাবেই শুরু হয় জগড়া আর ভালোবাসা দিয়ে.....
বিষয়: সাহিত্য
১৩৯২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/2662/sottolikhon/47148#181356
নাম যে কোন একটা ধরে নিতে পারেন..
লিঙ্কটা কেন দিলেন বোধগম্য হল না।।
তীর হারা ঐ ঢেউয়ের সাগর। কোলে নবজাতের আগমন। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ছুটে চলে অনন্তের দিকে.............
মন্তব্য করতে লগইন করুন