স্মৃতিগুলো মনে পড়ে

লিখেছেন লিখেছেন আমির হোসেন ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:১২:১২ রাত

স্কুল জীবন শেষ করে আজ কলেজে পা রাখলাম। যাদের সাথে দশটি বছর লেখাপড়া করলাম, তাদেরকে ছেড়ে আসতে খুবই কষ্ট হয়েছে। তবুও আসলাম। তারা কতইনা আপন ছিল আমার। কত জায়গায় ঘুরেছি তাদের সাথে। স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে কাশেম, নজরুল, আরাফাত ও জয়নাল খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল আমার। ক্লাশে একটু ফাঁক পেলেই আড্ডায় মেতে থাকতাম আমরা।

আমি ছিলাম ক্লাসের ফাস্টবয়। সবাই আমাকে ক্লাশের নেতা নির্বাচন করেছিল। আমি যা বলতাম ওরা তা শুনত। যখন কোন অন্যায় দেখতাম তার প্রতিবাদ করতাম। তারা আমার পিছনে থাকত। কখনো পিছপা হতো না। তাইতো আজ কলেজে এসে আমার মনে পড়ে সেই ফেলে আসা বন্ধুদের নিয়ে সোনালী স্মৃতিময় দিনগুলির কথা। মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। যেদিন আমরা ক্লাশের সবাই মিলে শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম ঐতিহ্যবাহী সোনার গাঁওয়ে। আমাদের মধ্যে শ্রেণী শিক্ষক হিসেবে ছিলেন রহিছ স্যার। কাশেম, নজরুল, আরাফাত ও জয়নাল আমরা সব সময় এক সাথে থাকতাম। তাই সেখানে গিয়েও আমাদের পঞ্চজুটি ভাঙ্গেনি। আমার হাতে ছিল ক্যামেরা। গেটে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম একটি পুকুর। এখানে পাঁচ বন্ধু মিলে ছবি তুললাম। তারপর একের পর এক ছবি তুলে সমস্ত ফিল্ম শেষ করলাম। আজও সেই ছবিগুলো দেখলে মনে হয় এখনও বুঝি সেই সোনার গাঁওয়েই আছি।

রহিছ স্যার ছিল আমার প্রিয় স্যার। ওনি আমাকে খুব আদর করতেন। ওনার সাথে সেদিন সোনার গাঁওয়ে যেতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়েছিল। সেদিন অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সোনার গাঁও থেকে ফিরে আসতে হল। সোনার গাঁও যেন আমাকে বলছে, ‘আশিক আর একটু থেকে যাও।’ তাইতো সেই স্মৃতিগুলোমনে পড়ে আজও।

আমার সবচেয়ে দুঃখের স্মৃতি হলো আমি যখন এস.এস.সি পরীক্ষা দেই তখনকার স্মৃতিটা। আমরা পাঁচ বন্ধু পাশাপাশি সিটে পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার পিছনে ছিল জয়নাল। নবম পরীক্ষার চলছে। তখন বাজে ১২:৪৫ মিনিট। এমন সময় ম্যাজিস্ট্রেট এসে জয়নালকে লক্ষ্য করে বললো, ‘দাঁড়াও’। এ কথা শুনতে পেয়ে আমার শরীর থর থর করে কাপতে লাগল। না জানি আমাকে চেক করে কিনা। তবে আমি ছিলাম নিশ্চিত। কারণ আমার কাছে তখন কোন নকল ছিল না। তারপরও আমার ভয় বেড়েই চলল। এদিকে জয়নালের সমস্ত শরীর চেক করল। তার পকেট থেকে একটা কাগজের টুকরা পেল। সাথে সাথে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে বহিস্কার করে খাতাটা নিয়ে দ্রুত চলে গেলেন। তখন জয়নাল জ্ঞানহারা হয়ে বেঞ্চের উপর পড়ে গেল। থেমে গেল আমাদের কলম। হায়রে নির্মমভাগ্য। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ জয়নালের মত একটা ভাল ছাত্র বহিস্কার হয়ে গেল। অথচ যারা নকলের উপর ভরসা করে পরীক্ষার হলে আসে তারা দিব্যি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা খাতা জমা দিয়ে জয়নালকে রূম থেকে বের করে মাথায় পানি দিলাম। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে এলে ওকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসি। জয়নালের মা ছিল অসুস্থ। ছেলের এ পরিণতির কথা শুনে সাথে সাথে তার মা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেল।

বন্ধু জয়নালের জীবন থেকে খসে গেল একটি রঙিন জীবন। যা আর কখনো ফিরে আসবে না। কলংকের দাগ লেগে গেল সমস্ত শরীরে। বন্ধুর সেই দৃশ্যটার কথা মনে হলে আজও বুকটা ছ্যাত করে উঠে। এসে যায় চোখে জল।

রচনাকাল-এপ্রিল ২০০০ খ্রিস্টাব্দ।

বিষয়: সাহিত্য

১২৬৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252674
০৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:২২
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:১৯
200283
আমির হোসেন লিখেছেন : ধন্যবাদ
252696
০৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১২
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : স্মৃতিচারণ খুব ভালো লাগলো এবং জয়নালের জন্য দুঃখ সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

ঘটনা নিশ্চয় অনেক আগের?
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:২২
200286
আমির হোসেন লিখেছেন : ঘটনাটি অনেক আগের। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
252702
০৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৯
কাজি সাকিব লিখেছেন : ভালো লাগলো
252727
১০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:০৪
এনামুল হক এনাম লিখেছেন : ভালো লিখেছেন, অনেক ধন্যবাদ ।
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:২২
200287
আমির হোসেন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
252753
১০ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:২০
আফরা লিখেছেন : আহারে......তার পর জয়নালের কি হল ?
256670
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
আমির হোসেন লিখেছেন : জয়নাল এখন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজে লেগে গেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File