পুরষ্কার

লিখেছেন লিখেছেন আমির হোসেন ০৬ জুন, ২০১৪, ১১:০৩:৫৪ রাত



সুবর্ণা ও সজিব ওরা দু’ভাইবোন। সুবর্ণা বড় নবম শ্রেণিতে পড়ে। সজিব ছোট ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। কয়েকদিন যাবত দু’জনেই পড়ালেখা নিয়ে খুবই ব্যস্ত। কারণ সামনে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে হবে ওদেরকে। প্রতিযোগিতায় দু’জনেরই নাম দেয়া হয়েছে। সুবর্ণা প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতা দিবে আর সজিব কবিতা আবৃতি করবে। সজিব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘লিচু চোর’ কবিতাটি আবৃতি করবে। তাই সজিব বাড়িতে প্রতিদিন ‘লিচু চোর’ কবিতাটি চর্চা করছে। সুবর্ণার জানা নেই ওর ভাগ্যে কোন বিষয় পড়ে। তাই ও অনেক গুলো বিষয় নিয়ে নিয়মিত চর্চা করছে।

১২ জুন প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে। তাই ওরা দু’জনেই সেদিনটির জন্য অধির অপেক্ষা করছে কবে সেই শুভ দিনটি ওদের মাঝে আসবে। যতই দিন ঘনিয়ে আসতে লাগল, ততই তাদের মন উসখুস করতে লাগল। দেখতে দেখতে সেই দিনটি প্রায় নিকটবর্তী হয়ে গেল। আর মাত্র দু’দিন বাকী।

সুবর্ণা তার বাবাকে বলছে, বাবা তুমি কিন্তু আমাদের সাথে অনুষ্ঠানে যাবে।

তার বাবা বললেন, অবশ্যই যাব।

সজিব তার মাকে বলছে, মা তুমিও কিন্তু আমাদের সাথে যাবে।

তার মা বললেন, যাব আমরা দু’জনেই তোদের সাথে যাব। যা এখন গিয়ে কবিতাটি বার বার পড়। পুরষ্কার কিন্তু অবশ্যই আনতে হবে।

মা তুমি দোয়া করিও অবশ্যই পুরষ্কার আনব।

সকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির ডাকে সুবর্ণা ও সজিবের ঘুম ভাঙ্গল। জলমলে রোদ এসে আঙ্গিনায় পড়ল। দু’ভাইবোন গোসল করে কাপড় পড়ে রেডি হল। দশটা বাজার পূর্বেই তাদেরকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হবে।

মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে সু্বর্ণা ও সজিব যথাসময়ে অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হল। সেখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা দলে দলে উপস্থিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে অনুষ্ঠানস্থল মানুষে জমজমাট হয়ে গেল।

উক্ত অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতার অনেকগুলো বিভাগ করা হয়েছে। ষষ্ট শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘ক’ বিভাগ। নবম-দশম শ্রেণি ‘খ’ বিভাগ। কলেজ ও মাদ্রাসার আলিম ও ফাজিল শ্রেণির জন্য ‘গ’ বিভাগ। সেই অনুসারে সজিব ‘ক’ বিভাগে এবং সুবর্ণা ‘খ’ বিভাগে পড়েছে।

দশটা বাজার সাথে সাথে অনুষ্ঠানটি কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল। প্রথমে ‘ক’ বিভাগের কুরআন তেলাওয়াত। তারপর ‘খ’ বিভাগের কুরআন তেলাওয়াত। এভাবে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতা চলছে। সুবর্ণা ও সজিব অপেক্ষা করছে কখন তাদের পালা আসবে। দু’জনেরই মন ছটফট করছে।

অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতি, রচনা লিখা, উপস্থিত বক্তৃতা, সুন্দর হাতের লেখা, হামদ-নাত, কোরআন তেলাওয়াত কৌতুক, নৃত্য- ইত্যাদি পর্ব করা হয়েছে।

এবার ‘ক’ বিভাগের কবিতা আবৃতির পালা। প্রথমে ভাষ্যকার আশিক নামের একজন ছেলেকে ডাকছেন। সে মঞ্চে গিয়ে একটি কবিতা আবৃতি করল। এভাবে কয়েকজনের নাম ডাকা হল।

সজিব ভাবতে লাগলো, আমিতো এ বিভাগেই আছি। আমি কি পারব সুন্দর করে আবৃতি করতে। পারব কি পুরষ্কার ছিনিয়ে আনতে। এমন সময় ভাষ্যকার সজিবের নাম ঘোষণা করল। সজিব চমকে উঠল। তারপর দ্রুত সজিব মঞ্চে চলে গেল। সালাম দিয়ে ওর পছন্দের ‘লিচু চোর’ কবিতাটি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় সুন্দর করে আবৃতি করল। কবিতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত লোকজন করতালি দিল। তারপর আরও কয়েকজন কবিতা আবৃতি করল।

এবার ‘খ’ বিভাগের উপস্থিত বক্তৃতার পালা। প্রথমে সুবর্ণার নাম ঘোষণা করা হল। সুবর্ণা মঞ্চে চলে আসল।

পাঁচজন বিচারক বসেছেন। বিচারকগণ কয়েকটি কাগজে উপস্থিত বক্তৃতার বিষয়গুলো লিখলেন। সুবর্ণাকে বলা হলো একটি কাগজের টুকরা হাতে নেয়ার জন্যে। সুবর্ণা একটি কাগজ হাতে নিল। কাগজ খুলে দেথে তার বিষয় হলো ‘বাংলাদেশের নারী নির্যাতন’। সময় দেওয়া হল ৫ মিনিট। অতএব ৫ মিনিটের মধ্যে বিষয়ের সাথে মিল রেখে তার বক্তব্য শেষ করতে হবে।

সুবর্ণা তার বক্তৃতা শুরু করলো- উপস্থিত আজকের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, উপস্থিত বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী, উপস্থিত শ্রোতা ভাই ও বোনরা আসসালামু আলাইকুম। ভাগ্যের লিখন যায় না খণ্ডন। তাই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমার বিষয় নির্বাচন হলো ‘বাংলাদেশের নারী নির্যাতন’। আমি একজন নারী। নারী হয়ে নারী নির্যাতনের করুন চিত্রগুলো এখন আপনার সামনে তুলে ধরছি।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা আজ আমরা প্রবেশ করেছি একবিংশ শতাব্দিতে। নতুন শতাব্দীতে কেমন আছে বাংলাদেশের নারীরা? এই প্রশ্নের উত্তর সুখকর নয়। কারণ এককথায় বলতে পারি বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা ভাল নেই। বর্তমান সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। বাড়ছে ভয়াবহ নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ ও নারী পাচারের মতো ঘটনা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের চেয়ে ঢের বেশী নারী নির্যাতন হচ্ছে পথে, ঘাটে, গৃহে, কর্মস্থলে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নারীর করুণ চিত্র। বর্তমানে দেশের সরকার প্রধান ও বিরোধী দলের নেতা দুজনই নারী। কিন্তু এই নারীরা কি পেরেছে সমাজ থেকে যৌতুক প্রথা চিরতরে বন্ধ করতে? পেরেছে কি ধর্ষণের সেঞ্চুরীর হাত থেকে নারীদেরকে বাঁচাতে? পেরেছে কি এসিড নিক্ষেপের হাত থেকে আঁখির মতো অসহায় মেয়েদেরকে বাঁচাতে? পেরেছে কি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী থেকে শিক্ষাঙ্গনকে কলঙ্কমুক্ত করতে?

প্রিয় ভাইয়েরা একটু লক্ষ্য করুন। পুরুষ কর্তৃক নারী নির্যাতনের মধ্যে ধর্ষণ আমাদের সমাজে এক চরমতম সংকট ও মারাত্মক আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়েন তাদের কাছে ধর্ষণ শব্দটা বেশী পরিচিত। এমনকি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ধর্ষণ শব্দটির সাথে আজ পরিচিত। বর্তমানে পত্রিকা হাতে নিলে কিংবা টেলিভিশনের সংবাদ দেখলে প্রথমে ভেসে আসে ধর্ষণের লোমহর্ষক কাহিনী। পত্রিকার পাতায় এমন কোন দিন বাদ নেই যে ধর্ষণের খবর আসে না। পত্রিকার খবর ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে কত নারী যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। দেশের কোথাও না কোথাও ৩ বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। ধর্ষণের নেশায় কিছু মানুষরুপী নরপশুরা এসব নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর। বর্তমানে এসব মানুষরূপী নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু কন্যা, বৃদ্ধা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। আগে ধর্ষণ হতো গোপনে আর এখন ধর্ষণ হয় প্রকাশ্যে খোলা মাঠে, চলন্ত বাসের মধ্যে। যেখানে একজন নারীকে হাত পা বেঁধে দল বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণ কারীরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়না, ধর্ষণের পর খুন করা হয় ধর্ষিতাকে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব করেও ধর্ষকরা শান্তি পাচ্ছে না। তারা এখন ধর্ষণের দৃশ্যকে ভিডিও করে ব্ল-ফিল্ম বানিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে। ইদানিং ইন্টানেটেও ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। যা জাহেলিয়াতের যুগকে হার মানাচ্ছে। জানি না এর পরের অবস্থা কি হবে। কি আছে নারী কপালে।

এছাড়াও বর্তমানে নারীরা পুরুষ কর্তৃক যত প্রকার নির্যাতিত হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে যৌতুকের শিকার। বর্তমানে এ যৌতুক একটি প্রথা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যা নারী সমাজের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুকের ফলে কত নারীর সোনার সংসার ভেঙ্গে তছনছ হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। কত নারী যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে তারও কোন পরিসংখ্যান নেই। যুগ যুগ ধরে এ যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়ে আসছে। আজ যৌতুক নামক এ কু-প্রথাটি ক্রমান্বয়ে সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের নারীরা উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে কিন্তু যৌতুকসহ বিভিন্ন অশুভ সামাজিক প্রথা সামাজিকভাবে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত হবার পথে এখন প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। দেশে যৌতুক বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যৌতুক প্রথার ফলে আজ নারীর মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। তারা আজ সমাজে মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে না। কাজেই এই মানবতা বিরোধী কু-প্রথার অচিরেই অবসান হওয়ার দরকার। তা না হলে এই বাংলাদেশ নামক ক্ষুদ্র দেশে পরিবারে কখনও শান্তি আসবে না। নারী যাতে নিগৃহীত নিপীড়িত না হয় এ জন্য এ হীন যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে এখনই গণআন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জন্য দরকার সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ। যৌতুকের ফলে অসহায় গরীব কন্যাদায়গ্রস্থ পিতারা পড়েন বেশী বিপদে। অনেক কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে দেখছি তার কন্যাকে বিয়ে দেয়ার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্যের হাত পাততে। এর চেয়ে লজ্জা একজন পিতার জন্য আর কি হতে পারে বলুন। এত কষ্ট, ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করেও একজন কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা তার কন্যাকে বিয়ে দিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কন্যার শশুর বাড়ি থেকে পুন: পুন: চাপ আসতে থাকে নতুন বাজেট পাস করার জন্য। বাপের বাড়ির লোকজন যদি নতুন বাজেট অনুমোদন করে তাহলে বউ খুব ভাল, লক্ষ্মী। আর যদি বাজেট অনুমোদন করতে দেড়ী হয় বা পাস না হয় তাহলে শুরু হয় নির্যাতন। বধুর প্রতিটি কথা স্বামী, শশুর-শাশুড়ির নিকট তেতো লাগে। এক সময় শুরু হয় ঐ অসহায় নারীটির প্রতি শারীরিক, মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনের স্টিমরোলার এতই বর্বরোচিত ও নির্মম যে তা মুখে আনাও দুষ্কর। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা, লাঠি দিয়ে আঘাত, এসিড নিক্ষেপ, ছুরিকাঘাত ইত্যাদি। তারপর নির্মমভাবে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা। হত্যার পর ছুরি বা ব্লেট দিয়ে যৌনাঙ্গ, স্তন ক্ষত বিক্ষত করা, খুনের পর সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। এমন খবরও সংবাদ পত্রের পাতায় উঠে আসে। এ ব্যাপারে যদি কন্যা পক্ষ থানায় মামলা করে তা নেয়া হয় না। কারণ ইতিমধ্যে থানা কর্তৃপক্ষের সাথে খুনীদের সমঝোতা হয়ে যায়। আর যদি মামলা নেয়া হয় তাহলে কন্যা পক্ষকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য জীবনাশের হুমকি দেয়া হয়।

এবার আসুন এসিড নিক্ষেপের কথা বলি। সম্প্রতি দেশে হঠাৎ করেই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। কারণে অকারণে নারীর প্রতি এই মরণ এসিড নিক্ষেপ হচ্ছে। এসিড নিক্ষেপের ফলে ঝলছে যায় আক্রান্ত নারীর শরীর। তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মানুষ এতোটা পাষাণ হয় কিভাবে? এর উত্তর আমার জানা নেই। আজ আমরা যে নারীকে এসিড নিক্ষেপ করছি আমাদেরও তো মা বোন আছে। তাহলে আমরা কেন এতটা নির্মম হয়। আমাদের বিবেক কি একবারের জন্যও নাড়া দেয় না? আজকে যাকে এসিড নিক্ষেপ করা হলো সে যদিও বেঁচে যায় তাহলে হয়তো এই ক্ষত নিয়ে সারা জীবন চলতে হবে।

তাছাড়া কর্মসংস্থানের লোভ দেখিয়ে অনেক নারী বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। বাজারের পণ্যের মতো নারীকে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক নারীকে অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের কি কোন উপায় নেই?

বাংলাদেশের নারী নির্যাতনে আরো অনেক কারণ আছে সময় স্বল্পতার কারণে আর বলতে পারলাম না। পরিশেষে নারী সমাজের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আমাদের অধিকারের জন্য আরো সচেতন হতে হবে। বুঝে নিতে হবে আমাদের হিসাব নিকাশ। পুরুষ শাসিত এই সমাজে আমাদেরকে শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর হতে হবে। মুখ বুঝে সহ্য না করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তাহলে নারী জাতির ভাগ্য পরিবর্তন হবে। ধন্যবাদ সকলকে।

বক্তৃতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত লোকজন করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানালো। তারপর ভাষ্যকার পর্যায় ক্রমে আরো কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর নাম ঘোষণা করল। কারো ভাগ্যে পড়েছে ‘মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য’, কারো বা ‘ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক’ ইত্যাদি। তারপর পর্যাক্রমে অন্যান্য পর্বগুলো শেষ হলো।

প্রধান বিচারকের নিকট ফলাফল এসে উপস্থিত হল। প্রধান অতিথি বক্তৃতা করলেন। তিনি সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অনেক মজার মজার ঘটনা শেয়ার করলেন। তাদেরকে ভবিষ্যতে ভালভাবে গড়ে উঠার জন্য উৎসাহ দিলেন।

তারপর প্রধান বিচারক সাহেব ভাষন দেন। তিনি একজন নামকরা লোক। লোকেরা সবাই তাকে ভালোবাসেন।

মধ্যহ্নভোজের পর পুরষ্কার বিতরণ শুরু হল। সুবর্ণা ও সজিব অপলক দৃষ্টিতে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে রইল।

প্রতি পর্বে তিনজনকে পুরষ্কার দেয়া হবে। বিচারক সাহেব প্রথমে কোরআন তেলাওয়াতের পুরষ্কার ঘোষণা করলেন। তাদেরকে একটি করে সার্টিফিকেট ও বই উপহার দেওয়া হল। এভাবে পর্যাক্রমে পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে।

এবার ‘ক’ বিভাগের কবিতা আবৃতির পুষ্কার ঘোষণার পালা। সজিবের মনটা উতাল পাতাল হয়ে যাচ্ছে কি জানি তার রেজাল্ট হয়। মনটা ছটফট করতে লাগল।

বিচারক সাহেব তৃতীয় পুরষ্কার ঘোষণা করলেন কিন্তু সজিব নয় অন্য একজনের নাম। সজিবের হার্টবিট আরো বেড়ে গেল। তারপর দ্বিতীয় পুরষ্কার এখানে তার নাম নেই। এবার বিচারক সাহেব বললেন, প্রথম পুরষ্কার পেয়েছে সজিব আহমেদ।

সজিব তার নাম মাইকে শুনতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল সুবর্ণাকে জড়িয়ে ধরল। মা আনন্দের সাথে বলছেন, কি হল সজিব তাড়াতাড়ি যা। পুরষ্কার নিয়ে আস।

সজিব মঞ্চে চলে আসল। প্রধান অতিথি খুব খুশী হয়ে পুরষ্কার ও সার্টিফিকেটটি তার হাতে তুলে দিলেন।

এবার ‘গ’ বিভাগের উপস্থিত বক্তৃতার পুরষ্কার ঘোষণা করা হচ্ছে। বিচারক সাহেব পর পর তৃতীয় ও দ্বিতীয় পুরষ্কার ঘোষণা করলেন। সুবর্ণার নাম না আসায় চিন্তিত হয়ে গেল।

বাবা বললেন, চিন্তা করিসনা মা তুই ফাস্ট হবি। ইতিমধ্যে বিচারক সাহেব বলতে লাগলেন, খুব আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আজকের প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতা বিভাগে এবং সকল বিভাগে যিনি সবোর্চ্চ নাম্বার পেয়েছেন তিনি হচ্ছেন...বলে বিচারক একটু থামলেন।

সুবর্ণার হার্টবিট আরো বেড়ে গেল। কি জানি কি হয়।

... তিনি হচ্ছেন সুবর্ণা আহমেদ। যিনি সকল প্রতিযোগিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। আপনারা করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান।

সুবর্ণার নাম ভাষ্যকারের মুখে শুনতে পেয়ে আনন্দে দিশেহারা হয়ে লাফিয়ে উঠলো সে। সজিব ও তার পিতা-মাতাও আনন্দে আত্মহারা।

সজিব বললো, কি আপু মঞ্চে যাও।

সুবর্ণা মঞ্চে গিয়ে তার পুরষ্কার গ্রহণ করলো। মুহু মুহু করতালিতে মুখরিত মঞ্চ। চারপাশ থেকে ফুল ছিটানো হচ্ছে। এবার ভাষ্যকার সুবর্ণাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলেন।

সুবর্ণা তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, সত্যি আমি ভাবতে পারিনি যে এত বড় পুরষ্কার পাব। এ পুরষ্কার আমার একার নয়। আপনাদের সকলের। আমি পুরষ্কার পেয়ে ভীষণ খুশী। আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে ভবিষ্যতে আরো ভাল করতে পারি। ধন্যবাদ সকলকে।

তারপর অন্যান্য সকল পুরষ্কার বিতরণ করল। সবার শেষে মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসল। রোদের তেজ আস্তে আস্তে কমতে লাগল। সজিব সুবর্ণা ওদের মা-বাবা সবাই আনন্দের সহিত বাড়ি ফিরল।

রচনাকাল- জানুয়ারি ১৯৯৯ খিস্টাব্দ।

বিষয়: সাহিত্য

১২২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

231569
০৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:৪২
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৭ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৩৪
182442
আমির হোসেন লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
231585
০৭ জুন ২০১৪ রাত ১২:১২
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবা। ভালো লাগলো।
১৭ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৩৪
182443
আমির হোসেন লিখেছেন : ধন্যবাদ সন্ধাতারা

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File