কবি আল মাহমুদের বামপন্থী থেকে ডানপন্থী হয়ে উঠার কাহিনী....
লিখেছেন লিখেছেন ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:২০:২৫ রাত
এক সময় নাস্তিকতার আদর্শ লালনকারী কবি আল মাহমুদ হঠাৎ করে কিভাবে ইসলামপন্থী হয়ে গেলেন? বিস্ময় জাগানিয়া এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে একটি ইতিহাস। কবির নিজের ভাষায়-
আমি এক বছর বিনা বিচারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকার সময় একখানা পবিত্র কুরআন আমার স্ত্রী আমাকে জেলখানায় দিয়ে এলে আমি তা অর্থসহ আদ্যোপ্রান্ত পাঠ করা শুরু করি। আর প্রথম পাঠেই আমার শরীর কেঁপে ওঠে। এর আগে কোনো গ্রন্থ পাঠে আমার মধ্যে এমন ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়নি। যেন এক অলৌকিক নির্দেশে আমার মস্তক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মূলত এরপরই কবি মার্ক্সবাদী দর্শন ত্যাগ করে ইসলামী জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ হন কবি। ইতিহাসে বামপন্থা থেকে ডানপন্থায় কনভার্টেড হওয়ার দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। সেই হিসেবে কবির এই প্রত্যাবর্তন অনেকটা অপ্রত্যাশিত এবং অকল্পনীয়ই বটে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে যে বামপন্থী চিন্তাচেতনা তিনি আকড়ে ধরে ছিলেন সেটা ত্যাগ করে হয়ে হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর ডানপন্থী! তবে তার এই পরিবর্তন দেশের সেক্যুলার সমাজ স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তারা আল মাহমুদকে বর্জন করতে লাগল। আর বামপন্থীদের বিরাদভাজন হয়ে কোন কবি-সাহিত্যিকই টিকে থাকতে পারেন না। অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল বামপন্থী ভাবাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারনে মিডিয়াতে কবিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকলিস্টেড করে রাখা হয়েছে। নতুন প্রজন্ম যাতে তার সম্পর্কে জানতে না পারে সেজন্য পাঠ্যবই থেকেও তার কবিতা অপসারন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে কবি আল মাহমুদ ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধা। সেই তিনি যখন প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলেন তখন অনেকেই সেটা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। ফলে তার প্রতি অবহেলা এবং অনাদর আরো বেড়ে গেল। এখানে একটা কথা না বললেই নয়, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে আল মাহমুদ ছিলেন সাম্যবাদী বামপন্থী দলের সমর্থক। ১৯৭৪ সালে জাসদ সমর্থিত 'দৈনিক গণকণ্ঠ'-এর সম্পাদক থাকা অবস্থায় রক্ষীবাহিনী এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার জীবনটা তার জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। ঐ সময়ই তিনি ডানপন্থী হিসেবে কনভার্টেড হয়ে যান।
প্রথমদিকে সেক্যুলার হওয়ার কারনেই হয়তো অধিকাংশ সাহিত্য অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট। পরবর্তীতে ডানপন্থায় কনভার্টেড হওয়ার পরও তিনি সেই অভ্যাসটা পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারেননি। একটা সময় এগুলো লিখেই তিনি বামপন্থীদের কাছে প্রচন্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু এখন তাকে নিয়ে কোন মাতামাতি নেই। বাংলা সাহিত্যে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা কবি হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বামপন্থা থেকে ইসলামপন্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার কারনে আজ তাকে বাতিলের খাতায় ছুড়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আছেন, কিন্তু মিডিয়া দেখেও না দেখার ভান করছে। সচেতনভাবেই তাকে বর্জন করা হচ্ছে। একটা সময় যাকে মাথায় তুলে রাখা হত, সেই কবিকে আজ অযত্ন আর অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। হয়তো এটাই তার প্রথম জীবনের ভুলের শাস্তি।
তবে এটাও সত্য, শেষ ভাল যার, সব ভাল তার! ইসলামও অনেকটা এই নীতিতেই বিশ্বাসী। আর তাই জীবনেও শেষ মুহুর্তেও যদি কেউ সত্য পথের অনুসারী হয়ে মারা যায় তবে তাকে সফল বলা যায়। ইসলামপন্থীরা পৃথিবীতে অবহেলিত হবে, লাঞ্ছনার শিকার হবে, কষ্ট ভোগ করবে- অন্যদিকে অবিশ্বারীরা অর্থ-বিত্ত-খ্যাতি নিয়ে সুখ ও সাচ্ছ্বন্দের জীবন অতিবাহিত করবে এটা খোদ কুরআনের ভবিষ্যদ্বানী- যা সত্যে পরিণত হতে বাধ্য। আর তাই আল মাহমুদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তিনি যদি প্রকৃত ঈমানদার হন, তবে তার ভাল কাজের প্রতিদান পরকালে অবশ্যই পাবেন।
আপাতত কবির জন্য শুভকামনা রইল। প্রার্থনা করি- তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন, পরিপূর্ণ হেদায়েত লাভ করেন এবং আল্লাহ যেন তার অতীত জীবনের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন
বি.দ্র. সর্বপ্রথম আমার ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত, যার লিংক- এখানে
বিষয়: সাহিত্য
২৩৭২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন