বার্মা বনাম বাংলাদেশ যুদ্ধ কি তবে আসন্ন? কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ? বার্মার পারমানবিক শক্তি অর্জনের সম্ভাবনা কতটুকু?

লিখেছেন লিখেছেন ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ ১০ মার্চ, ২০১৫, ০৮:২১:২৮ রাত



বাংলাদেশের জনগণ জন্মগতভাবেই শান্তিপ্রিয়। আক্রমন নয়, কেবলমাত্র আক্রান্ত হলেই বাঙালী প্রতিহত করায় বিশ্বাসী। আর তাই আমরা দেখতে পাই- একদিকে বৌদ্ধ অধ্যুষিত বার্মায় মুসলমানদের ঘর-বাড়ি, মসজিদ জ্বালিয়ে দিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, অন্যদিকে মুসলমান অধ্যূষিত বাংলাদেশে বৌদ্ধ উপজাতীদেরকে রাজার হালে রাখা হয়েছে। এরপরও পার্বত্য এলাকায় এইসব সন্ত্রাসী বৌদ্ধ ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছে। এইসব উপজাতী সন্ত্রাসীদের কারনে পার্বত্য এলাকার বাঙালীরা আজ নিজ দেশে পরবাসী। এদেশের সরকার পাহাড়ীদের জন্য বিশেষ কোটা তৈরি করেছে, যার ফলে যোগ্য বাঙালীদেরকে বঞ্চিত করে অযোগ্য-অপদার্থ উপজাতীদেরকে সরকারী চাকরীতে ঢুকানো হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীগুলোতে পর্যন্ত এইসব উপজাতীরা ঢুকে গেছে বিশেষ কোটার সুবিধা নিয়ে। এরা যে সূচ হয়ে ঢুকে হয়ে একদিন ফাল হয়ে বেরোবে না তার কি গ্যারান্টী? একদিন যে এই বার্মার দ্বারাই বাংলাদেশের জনগণ শাসিত হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় গোপনে পারমানবিক অস্ত্র তৈরির আয়োজন করছে বার্মা। এটা এতদিন সন্দেহের পর্যায়ে থাকলেও এখন এটা বেশ ভিত্তি পেয়েছে। কিছুদিন আগে একটা জাতীয় দৈনিকে এব্যাপারে একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও ছাপানো হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে বার্মা তাদের সামরিক শক্তিমত্ত্বা বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী সীমান্ত অঞ্চলে নতুন করে একাধিক বিমান ও নৌ ঘাঁটি স্থাপন করার পেছনে তাদের উদ্দেশ্যটা কি তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এব্যাপারে খুব একটা মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। বার্মা আসলে কি চায়? বার্মা চায় বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি) এবং সম্ভব হলে কক্সবাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে। বিভিন্ন কারনে পার্বত্য জেলাগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। এই অঞ্চলটির দখল নিতে পারলে হতদরিদ্র দেশ বার্মা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে। এদিকে পার্বত্য জেলাগুলোর অধিবাসী উপজাতীরাও খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের জাতভাই বার্মার সাথে মিশে যেতে চায়। কারন বাংলাদেশের অধীনে থাকলে তারা সারাজীবন সংখ্যালঘু হিসেবেই থাকবে, অন্যদিকে বার্মার সাথে কোনমতে একবার মিশে যেতে পারলে তারাই হয়ে যাবে বার্মার সংখ্যাগরিষ্টদের একজন। এটা তাদের দীর্ঘদিনের লালিল স্বপ্ন। এবং তারা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টার কোন ত্রুটি করবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার মত পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আমাদের আছে কি?

অষ্ট্রেলিয়ার দৈনিক সিডনি হেরাল্ড এর প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বার্মার সেনাবাহিনীতে বিদেশে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সেনাদের নিয়ে গোপনে গড়ে তোলা হচ্ছে নিউক্লিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং পরমাণু কমপ্লেক্স। আর মিয়ানমারের এই গোপন পারমাণবিক চুক্তি ও প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে সহায়তা করছে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি বার্মার উদ্দেশ্যে উত্তর কোরিয়া থেকে সন্দেহভাজন উপকরণ নিয়ে একটি জাহাজের যাত্রা, বার্মায় বিশাল বিশাল সুড়ঙ্গ খননের ছবি ও দু'দেশের একটি গোপন বৈঠক থেকে এ সন্দেহ আরো ভিত্তি পেয়েছে। উল্লেখ্য, বার্মা এর আগে পারমানবিক অস্ত্র তৈরির ব্যাপারে সহায়তার জন্য রাশিয়ার কাছেও ধর্ণা দিয়েছিল। এই অঞ্চলে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য কৌশলগতভাবে বার্মাকে চীনের প্রয়োজন। তাই গণচীন নিজ স্বার্থেই বার্মাকে সামরিক স্থাপনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। নিকট অতীতে বেইজিং বার্মাকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে। ওয়াশিংটনের একটি গবেষণা সংস্থারর সভাপতি ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন- "সন্দেহজনক কোন একটি ঘটনা ঘটছে। পরমাণু কর্মসূচীতে উত্তর কোরিয়া মিয়ানমারকে সহায়তা দান করছে বলে মনে করা হচ্ছে।"

ধারনা করা হয়, রাখাইন রাজ্যে এই পারমানবিক স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে। এজন্যই এর আশপাশের ২৬টি গ্রামের মানুষকে আশ্রয়হীন করা হয়েছে- যাদের অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

বার্মার এই বিশাল সামরিক আয়োজনকে কেবলমাত্র সীমান্ত পাহারা কিংবা সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রস্তুতি ভাবার কোন অবকাশ নেই। তাদের দীর্ঘমেয়াদী এবং বড় ধরনের কোন পরিকল্পনা রয়েছে এটা এখন প্রায় নিশ্চিত। আর তাদের এই পরিকল্পনাটা যদি বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে হয় তাহলে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। কেননা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামরিক শক্তিমত্ত্বার দিক দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই মিয়ানমারের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে। এরকম চলতে থাকলে অচিরেই মিয়ানমার বাংলাদেশের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাবে। আর তখন স্বাভাবিকভাবেই বার্মা বাংলাদেশকে আক্রমন করতে আর দ্বিধা করবে না। সম্ভবত তারা এরকম একটি সময়ের অপেক্ষাতেই আছে। এবং একই সাথে বাংলাদেশের সাথে নিজেদের শক্তিমত্ত্বার পার্থক্যটা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ জনগণ এবং সরকারকে এব্যাপারে সময় থাকতে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করবো। নইলে ঈজরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনকে গ্রাস করেছে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকেও ঐভাবে গ্রাস করে নেবে বার্মা। মনে রাখতে হবে, বার্মার আশেপাশে একমাত্র বাংলাদেশই আছে যাদের সাথে তারা যুদ্ধে জড়াতে পারে, তাই বার্মার সামরিক শক্তিবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। কেননা এই শক্তিবৃদ্ধির পেছনে অবশ্যই কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকতে বাধ্য। আর সেই উদ্দেশ্যটা যদি হয় বাংলাদেশকে ঘিরে তাহলে আমাদেরকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তারা যদি তাদের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে চায় তাহলে সেটা বাংলাদেশের উপর দিয়েই যাবে- কেননা তাদের নিকটবর্তী আর কোন প্রতিপক্ষ তাদের নেই। প্রতিবেশী দেশের এই শক্তিবৃদ্ধির প্রদর্শনী বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। আর বার্মা যদি কোনমতে একবার পারমানবিক শক্তিমত্ত্বা অর্জন করে ফেলে তাহলে বাংলাদেশ তাদের কথায় উঠতে-বসতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশকে তখন আর গোণারও প্রয়োজন মনে করবে না বার্মা। এদিকে বার্মার একাধিক মিত্র রাষ্ট্র রয়েছে যারা বার্মাকে সবধরনের সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু বাংলাদেশকে এধরনের সহায়তা দেয়ার মত সেরকম কোন বন্ধুরাষ্ট্র নেই। বাংলাদেশের একাধিক শত্রু রাষ্ট্র থাকলেও বন্ধু রাষ্ট্র নেই বললেই চলে। যারা আছে তারাও সুযোগমত পেলে বাংলাদেশকে একহাত দেখে নেয়ার জন্য প্রস্তুত। সুতরাং বাংলাদেশকে যা করার নিজ চেষ্টাতেই করতে হবে।

*সর্বপ্রথম আমার ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত। যার লিংক- এখানে

বিষয়: বিবিধ

২১৫৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

308248
১০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:০৯
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানই তার স্বাধীনতার জন্য হুমকি স্বরুপ।
১০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:১৭
249307
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন
308249
১০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:১৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অস্ত্রশক্তি দিয়ে যুদ্ধ হয়না। তবে যা বললেন তা ভয়াবহ। বাংলাদেশ এদিকে গুরুত্বারোপ না করলে সমস্যা আছে। ঈমানী জোশে বলিয়ান আর্মী ছাড়া যুদ্ধে যা থাকে তা হল অস্ত্রবল। এটা নিয়ে বাংলাদেশ টিকতে পারবে না। চারিদক থেকে যখন ষড়যন্ত্র,তখন তারা আছে ক্ষতায় যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। হালুয়া রুটি ভাগাভাগির মারামারিতে লিপ্ত
০৩ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
253711
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
308256
১০ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:২৪
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : ভয়ংকর তবে অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশ এমনি এক দেশ চারিদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত হয়েও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয়।
308257
১০ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:৫০
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : এত কাল আমরা ভারত নিয়েই চিন্তা করেছি এখন বার্মাকে নিয়েও চিন্তা করতে হবে।
০৩ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
253712
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : আমাদের শত্রুর কোন অভাব নেই। অভাব হল বন্ধুর। বাংলাদেশের সেরকম কোন বন্ধুরাষ্ট্র নেই- যারা যুদ্ধ বাধলে বাংলাদেশকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে।
308265
১১ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৪৪
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : একদম যথার্থ বলেছেন , বাংলাদেশের একাধিক শত্রু রাষ্ট্র থাকলেও বন্ধু রাষ্ট্র নেই বললেই চলে। যারা আছে তারাও সুযোগমত পেলে বাংলাদেশকে একহাত দেখে নেয়ার জন্য প্রস্তুত। অনেক ধন্যবাদ
308345
১১ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:১৫
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : আবস্হা খুব ভাল মনে হয়না
308370
১১ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : হুম ভাল বিশ্লেষণ। দেখা যাক হাদিসে তো গযওয়ায়ে হিন্দের কথা আছেই। আজ হোক বা কাল আমাদেরকে তো তার সামনা সামনি হতেই হবে।
০৩ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫০
253713
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : ইন-শা-আল্লাহ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File