সিলেটের স্বর্গরাজ্য বিছানাকান্দি ভ্রমণের পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস এবং আকর্ষনীয় স্পটের বর্ণনা (এইচডি ফটোসহ)

লিখেছেন লিখেছেন ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪২:২২ রাত



চল না ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে...

চলুন, এরকম একটি জায়গা থেকে আপনাদেরকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। যদিও এখানে কোন নদী এসে থেমে যায়নি, বরং নদী তার পথচলা শুরু করেছে এই স্থানটি থেকে... ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত সুউচ্চ পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণা থেকে উৎপত্তি হয়েছে সেই নদীর। হ্যা! ভ্রমণপিয়াসুদের নতুন আকর্ষন বিছানাকান্দির কথাই বলছি। এক কথায় বলতে গেলে এটা হল পাহাড়, পাথর, ঝর্ণা ও নদীর অপরুপ এক সন্ধিস্থল। শত বছরের পুরাতন পাথর থেকে শুরু করে নবজাতক পাথর পর্যন্ত সবই পাবেন বিছানাকান্দিতে...

যা দেখবেন: পাথুরে নদীর স্বচ্ছ নির্মল পানিতে হবে জলকেলী, ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকবে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত সুউচ্চ পাহাড় আর ঝর্ণা!! এমনই লোভ জাগানিয়া সৌন্দর্য্যে ভরপুর বিছানাকান্দি। ইচ্ছে হলে পুরো পরিবার নিয়ে যেতে পারেন, কিংবা যেতে পারেন দল বেধে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। অবশ্য কেউ যদি শুধু বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড নিয়ে যান তাহলেও মজা খুব একটা কম হবে না। ছোট-বড়, সব বয়সের সবার জন্যই বিছানাকান্দি হল একটা পারফেক্ট এন্টারটেইনমেন্ট প্যাকেজ।







সোনালী পাথরের বিছানায় একটু ঘুমিয়ে নিলে ক্ষতি কী!?



বিছানাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: কেউ কেউ বলেন বর্ষাকালই হল বিছানাকান্দি যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়, আবার অনেকে বলেন শীতকালে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। একেকজনের মুখে একেকরকম কথা শুনে বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আসলে বছরের কোন সময়টা বিছানাকান্দি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত? আর মতভেদটাই বা কিসের জন্য? আসলে দুই ঋতুতে দুই ধরনের সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। আমি এখন সেগুলোই সংক্ষেপে বলবো। তারপর আপনি নিজেই ঠিক করবেন- কোন ঋতুতে আপনি বিছানাকান্দি ভ্রমণ করবেন...



বর্ষাকালে যাওয়ার সমস্যা হল- আপনি নিজের ইচ্ছামত ঘুরে বেড়াতে পারবেন না, কারন পুরো বিছানাকান্দি থাকে পানির নিচে, ফলে আপনাকে নৌকার দ্বারস্থ হতে হবে। হেটে হেটে নিজের ইচ্ছা-স্বাধীনভাবে এ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ কম। তবুও বর্ষাকালে অসংখ্য পর্যটক বিছানাকান্দি ভ্রমণে আসেন, কারন ঐ সময়টাতেই বিছানাকান্দির আসল সৌন্দর্য্য ধরা দেয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ঝর্ণা এবং নদীর সৌন্দর্য্য অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। বর্ষাকালে নদীতে থাকে প্রচন্ড স্রোত, নদীতে থরে থরে সজ্জিত শিলাখন্ডগুলোর সাথে স্রোতের চলমান সংঘর্ষ এক অপরুপ দৃশ্যের জন্ম দেয়। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে তাই নদীর বেশিরভাগ এলাকা থাকে জলহীন। যেদিকে তাকাবেন শুধু পাথর চোখে পড়বে।



শীতকালে নদীতে কোন স্রোত থাকে না, উজান থেকে নেমে আসা সামান্য কিছু পানি পর্যটকদেরকে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে সেই ঘোলের স্বাদটাও একেবারে মন্দ না। এই লেখাটির সাথে যে ছবিগুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন তার সবগুলোই শুষ্ক মৌসুমে তোলা। শুষ্ক মৌসুমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নিজের ইচ্ছা-স্বাধীনভাবে এ্যাডভেঞ্জার করা যায়, ফটো তোলা যায়, যেখানে খুশি সেখানে যাওয়া যায়, নৌকার মাঝির ইচ্ছার উপর নির্ভর করতে হয় না। এছাড়া আরেকটা ব্যাপার বলে রাখা ভাল, বিছানাকান্দি আসার পূর্বে ২ কি.মি. কাচা রাস্তা হেটে অথবা নৌকায় করে আসতে হয়, বর্ষাকালে হেটে আসলে কাদায় মাখামাখি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু শীতকালে এই ঝামেলাটা নেই। সুবিধা-অসুবিধা সবই বললাম, এবার আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কখন যাবেন বিছানাকান্দি। আমার সাজেশন হবে- বর্ষার শেষের দিকে অথবা শীত ঋতু আগমনের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বিছানাকান্দি ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।



ছোট-বড় সবার জন্য মানানসই ভ্রমণের জায়গা হল বিছানাকান্দি!

বিছানাকান্দি ভ্রমণের সুবিধা ও অসুবিধা: বিছানাকান্দিতে পৌছানোর পূর্বে আপনাকে ২ কিমি কাচা রাস্তা হাটতে হবে, তাও যেমন তেমন কাচা রাস্তা নয়, অকল্পনীয় রকমের খারাপ একটি রাস্তা। বর্ষাকালে গেলে কাদার সাগর পাড়ি দিতে হবে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে গেলে আপনাকে ধুলোর মহাসাগর পাড়ি দিতে হবে। সঙ্গে মেয়েমানুষ থাকলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না।



টিপস: এবার সবচেয়ে মূল্যবান কিছু কথা বলবো, মন দিয়ে শুনুন থুক্কু পড়ুন!!

১। শুষ্ক মৌসুমে বিছানাকান্দি যাওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতি অবশ্যই একটা করে নোজ-মাস্ক নিবেন। এটা যে কতটা কাজে দেবে তা না গেলে অনুধাবন করা অসম্ভব।

২। সম্ভব হলে সোম অথবা বুধবারে বিছানাকান্দি ভ্রমণে যান। বিছানাকান্দি ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। সোম এবং বুধবারে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত বাজার বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। অর্থ্যাৎ সপ্তাহে এই দুই দিন বিছানাকান্দি সীমান্ত দিয়ে আপনি বিনা পাসপোর্টে ভারতে ঢুকতে পারবেন এবং ঐ দেশের বাজার থেকে যে কোন ভারতীয় পণ্য কেনাকাটা করার সুযোগ পাবেন।

৩। নদীর স্বচ্ছ পানির নিচে থাকা পাথরগুলো অসম্ভব রকমের পিচ্ছিল এবং কোন কোনটি খুবই ধারালো হয়ে থাকে। একটি ভূল পদক্ষেপ মারাত্মক দূর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়াতে পারে। পিচ্ছিল শিলায় পা পিছলে পড়ে গেলে হাত-পা কেটে ছড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। বাচ্চাকাচ্চা সঙ্গে থাকলে তাদেরকে দেখে রাখুন। নইলে আনন্দ করতে এসে দিনশেষে কান্নাকে সঙ্গী করে ফিরতে হবে। সম্ভব হলে অতিরিক্ত এক জোড়া স্যান্ডেল সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।

৪। স্মার্টফোন-ক্যামেরা সহ মূল্যবান গ্যাজেটগুলো সাবধানে রাখুন। পিচ্ছিল পাথরে পা দিয়ে হাটার সময় কিংবা সাতার কাটার সময় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী সঙ্গে না রাখাই ভাল। পানিতে পড়ে অথবা ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৫। বর্ষাকালে নদীতে ভয়ংকর স্রোত থাকে- চোখের দেখায় অনেক সময় এর বিপদের মাত্রাটা অনুধাবন করা যায় না। অতএব, সাবধান থাকুন।

৬। খাবার এবং পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু নিজ দায়িত্বে পরিত্যক্ত খোসা, মোড়ক, বোতল ফেরৎ নিয়ে আসুন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত বিছানাকান্দি যেন নোংরা ও অপরিস্কার না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।



যেভাবে যাবেন বিছানাকান্দি: ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাস এবং ট্রেনে করে সিলেটে আসতে পারেন। সিলেট শহরের যে কোন স্থান থেকে রিকশা অথবা সিএনজিতে করে আম্বরখানা পয়েন্টে চলে আসুন। অতঃপর আম্বরখানা থেকে সরাসরি বিছানাকান্দি যাওয়ার সিএনজি/মাইক্রোবাস ভাড়া করতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ৪০০ টাকা। মাইক্রোবাস ভাড়া করলে ১০০০ টাকার মত খরচ পড়তে পারে। এটা শুধু যাওয়ার জন্য, আসার সময় একইরকম খরচ পড়বে। এছাড়া অল্প খরচে যেতে চাইলে আম্বরখানা থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে করে হাদারপার যেতে পারেন, সেখান থেকে শীত মৌসুম হলে হেটে আর বর্ষা ঋতু হলে নৌকায় করে স্বর্গরাজ্য বিছানাকান্দিতে পৌছাতে পারবেন।



সবাইকে বিছানাকান্দি ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপাতত বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে নতুন কোন আকর্ষনীয় স্পটের বর্ণনা নিয়ে আবারও হাজির হবো- ইনশা আল্লাহ। হ্যাভ এ্যা নাইস ট্যুর...



ফেসবুকে আমি আছি- এখানে

বিষয়: বিবিধ

৩৬৭৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

297751
২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
শিত বা বর্ষা যে ঋতুই হোক এই ধরনের পাথুরে নদিতে সাবধানে চলা উচিত। কারন পাথর এর জন্য সবসময়ই বিভিন্ন আন্ডারকারেন্ট এর সৃষ্টি হয়।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
241574
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন
297771
২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২৩
সালসাবীল_২৫০০ লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে! ধন্যবাদ
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
241572
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
241573
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
297896
২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৭
হতভাগা লিখেছেন : অস্থির পোস্ট । ইন শা আল্লাহ যাবার ইচ্ছা আছে । বিছানাকান্দি নাম করনের শানে নযুল কি ?
২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
241217
ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ লিখেছেন : সঠিক জানা নেই। সম্ভবত পাথরের বিছানা বুঝাতেই এই নামকরণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File