জাফলং ভ্রমণের পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন, টিপস, আকর্ষনীয় স্পটের বর্ণনা (এইচডি ফটোসহ)
লিখেছেন লিখেছেন ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৯:২২ সন্ধ্যা
জাফলং এর নাম একবারও শুনেনি এমন লোক বাংলাদেশে খুজে পাওয়া দুস্কর। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে জাফলং অন্যতম। যারা জাফলং যাওয়ার নিয়্যত করেছেন তারা এই লেখাটি পড়লে নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হবেন। এর আগেও জাফলং ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকে ব্লগ লিখেছেন। কিন্তু আমি সিলেটের ছেলে হওয়ার সুবাদে অনেক ভেতরের তথ্য আপনাদেরকে জানাতে পারবো আশা করছি।
সিলেটের ছেলে হয়েও সময় ও সুযোগের অভাবে দীর্ঘ ২৪ বছরের জীবনে একবারের জন্যও জাফলংয়ে যাওয়া হয়নি আমার। ভাবলাম, এই লজ্জা এবার ঘুচানো দরকার। অতএব, সঙ্গী বাছাই করলাম, দিন-ক্ষণও চুড়ান্ত করা হল। সেদিন টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টি এমনিতে ভাল লাগলেও কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় বৃষ্টিটা উপদ্রব ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা ঝামেলা ও ভোগান্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই হঠাৎ উপদ্রব দেখে আমার এক কাজিন বেঁকে বসলো। এই ভ্রমণ স্থগিত করার জন্য অনুরোধ করলেও আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা। শেষ মুহুর্তে শিডিউল ক্যানসেল করার কোন মানেই হয় না। তাছাড়া, এবার মিস হলে হয়তো আর কখনোই যাওয়া হবে না। তাই বৃষ্টিকে সঙ্গী করেই আমরা রওয়ানা হলাম জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে...
কপালটা ভালই বলতে হবে, সারিঘাট পৌছানোর পূর্বেই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল- যদিও আকাশটা তখনও মেঘলা। তবে স্বীকার করতেই হবে- মেঘলা আকাশ প্রকৃতিতে আরো বৈচিত্র এনে দিয়েছিল।
দেখার মত যা যা আছেঃ রয়েছে স্বচ্ছ পানির সারি নদী (যদিও নাব্যতা সংকটে এর সৌন্দর্য্য এখন অনেকটাই ম্লান), রয়েছে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন সুউচ্চ পাহাড়ের সারি, রয়েছে রাবার বাগান ও পানের বরজ, জিরো পয়েন্ট এর খুব কাছেই রয়েছে সমতল ভূমির চা বাগান। রয়েছে উপজাতিদের গ্রাম (খাসিয়া পল্লী), ভারতের মেঘালয় সীমান্তে অবস্থিত সুউচ্চ পাহাড়, ঝরনা, ঝুলন্ত সেতু আপনার মন কেড়ে নেবে নিঃসন্দেহে। সঙ্গে ডিএসএলআর ক্যামেরা থাকলে অসাধারন কিছু ফটো ক্যাপচার করার সুযোগ পাবেন। তবে ডিএসএলআর যদি না থাকে, অন্ততপক্ষে একটি পয়েন্ট-এন্ড-শ্যুট ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কেননা স্মার্টফোনের ক্যামেরায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সেভাবে ধরা দেয় না...
কিভাবে যাবেনঃ প্রথমে আপনাকে দুরপাল্লার বাস অথবা ট্রেনে করে সিলেট শহরে আসতে হবে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাস এবং ট্রেনে সিলেটে আসার সুবিধা রয়েছে। সিলেটে আসার পর সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে জাফলংগামী বাসে করে খুব সহজেই গন্তব্যস্থানে পৌছাতে পারেন। এটা একেবারেই সাশ্রয়ী। তবে আরেকটু আরামদায়ক পরিবেশে ভ্রমন করতে চাইলে সিলেট শহরের যে কোন স্থান থেকে সিএনজি অথবা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও জাফলং যেতে পারেন। পুরো দিনের জন্য সিএনজি/মাইক্রো রিজার্ভ করলে ১৫০০-২৫০০ টাকা খরচ পড়তে পারে। এছাড়া খাসিয়া পল্লী, রাবার বাগান, জমিদার বাড়ি ইত্যাদি স্থান দর্শন করার জন্য আপনাকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। জাফলংয়ের সন্নিকটে থাকার মত কোন হোটেল/মোটেল নেই। আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখা খুবই জরুরী, হাতে পর্যাপ্ত সময় রেখে জাফলং যেতে হবে, নইলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ রেখেই মনে আফসোস রেখে ফিরে আসতে হবে। আমি মনে করি সিলেট শহর থেকে সকাল ১০ টায় রওয়ানা দেয়া যেতে পারে। সন্ধ্যার পর যাতায়াত করাটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ বিধায় দিনের আলো থাকা অবস্থাতেই ফিরতি পথ ধরতে হবে।
মাইনাস পয়েন্টঃ সিলেট শহর থেকে তামাবিল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে যেতে পারলেও জিরো পয়েন্ট এর যত নিকটে আপনি যাবেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট রাস্তাটি আপনার দৃষ্টিগোচর হতে থাকবে। ভ্রমণের আনন্দ ম্লান করে দেয়ার জন্য এরকম একটি রাস্তাই যথেস্ট। আরেকটা খারাপ দিক হল- জাফলংয়ের সৌন্দর্য্য এখন অনেকটাই ম্লান। দশ বছর আগের জাফলংয়ের সাথে বর্তমান জাফলংয়ের রাত-দিন ব্যবধান। এখন এটা যতটা না পর্যটন স্পট তারচেয়ে অনেক বেশি হল বিজনেস স্পট। পাথর ব্যবসায়ীদের দাপটে পরিবেশ হারিয়েছে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য। এসব দিক বিবেচনা করে ভ্রমণের জন্য আমি জাফলংয়ের চেয়ে সিলেটের লালাখাল, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীমঙ্গল, মাধবকুন্ড এসব জায়গাকেই বেশি সাজেস্ট করে থাকি।
বি.দ্র. সর্বপ্রথম আমার ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান- এখানে
বিষয়: বিবিধ
৪৫৪৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন