ভবিষ্যদ্বানী কি আসলেই সম্ভব? জ্যোতিষশাস্ত্র, পানি পড়া, তাবিজ-কবচ এগুলার ব্যাপারে কি বলে ইসলাম?
লিখেছেন লিখেছেন ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ ০৬ জুন, ২০১৪, ০৮:২২:১৯ রাত
এইবারের বিশ্বকাপে নাকি ভবিষ্যদ্বানী করবে "তামার" নামক একটা কচ্ছপ! সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে মানুষ বলতে পারে না ২ মিনিট পরে তার কপালে কি অপেক্ষা করছে আর সাধারন একটা কচ্ছপ নাকি বিশ্বকাপের ভবিষ্যদ্বানী করবে!? এই তালিকায় আরো আছে চীনের ক্ষুদে পান্ডা ও জার্মান হাতি নেলি। কচ্ছপ, হাতি, পান্ডা এরা কি বুঝে বিশ্বকাপ কি জিনিস? সবচেয়ে অবাক লাগে যখন দেখি বিশ্বখ্যাত বিগ-জ্ঞানী স্টিফেন্স হকিন্সও এইসব পশুপাখির দলে নাম লেখিয়ে বিশ্বকাপের ভবিষ্যদ্বানী করে। আরে বলদ তুই এই পৃথিবীবে আর কয়দিন বেচে থাকবি সেইটা পারলে ভবিষ্যদ্বানী করে দেখা। এই হচ্ছে আমাদের আজকের যুগের বিগ-গ্যান ও বিগ-গ্যানিদের অবস্থা!! এরাই আবার নিজেদেরকে চরম আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করে। এখন তো মনে হচ্ছে তথাকথিত আধুনিক বিজ্ঞানটাই কুসংস্কারে নিমজ্জিত!
অথচ ইসলাম ১৪৫০ বছর আগেই ঘোষনা করেছে- অদৃশ্যের খবর একমাত্র আল্লাহর কাছে। হিন্দ, বৌদ্ধ এসব ধর্মে জ্যোতিষশাস্ত্রকে বৈধতা দেয়া হলেও ইসলাম ধর্মে এসব ভন্ডামির কোন সুযোগ নেই। এসব কুসংস্কারের কোন জায়গা নেই ইসলামে। যারা জ্যোতিষি সেজে ভবিষ্যদ্বানী করে তাদের প্রত্যেকেই ভন্ড। জ্যোতিষী বলে দিল- কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্য এই সপ্তাহটা শুভ কাটবে। অথচ কত কুম্ভ এই সপ্তাহে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে, কত কুম্ভ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, কত কুম্ভ অপহরনের শিকার হয়েছে, ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে- তার খবর কে রাখে???
বিজ্ঞান এদেরকে স্বীকৃতি দিলেও দিতে পারে কিন্তু ইসলাম দেয় না। হাজারো অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও আবহাওয়া অফিস এখনো নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না আগামীকাল বৃষ্টি হবে নাকি হবে না। আবহাওয়া অফিস হয়তো বললো- "এই সপ্তাহে বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই" অনেক সময় দেখা যায় ঠিক তার পরেরদিনই মুষলধারে বৃষ্টি এসে হাজির!!
"আল্লাহ্ই তিনি যিনি বায়ুপ্রবাহ পাঠান। তারপর তারা মেঘ সঞ্চার করে, তখন তিনি যেমন ইচ্ছা করেন তা ছড়িয়ে দেন আকাশের মধ্যে, তারপর একে তিনি টুকরো টুকরো করেন, ফলে তোমরা দেখতে পাও তার নিচে থেকে বৃষ্টি বেরিয়ে আসছে, অতঃপর যখন তিনি তা পড়তে দেন তাঁর বান্দাদের যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তার উপরে, দেখো! তারা উল্লাস করে, যদিও ইতিপূর্বে এটি তাদের উপরে বর্ষণের আগে পর্যন্ত তারা ছিল নিশ্চিত নিরাশ।" (আর রুম- ৪৮-৪৯)
ইসলাম ১৪৫০ বছর আগে যে পরিমান আধুনিকতা দেখিয়ে গেছে বিজ্ঞান আজকের যুগেও সেই পরিমান আধুনিক হতে পারেনি। আজকের যুগেও অধিকাংশ মানুষকে দেখি তাবিজ-কবচ, পানি পড়া, জ্যোতিষশাস্ত্র এসব কুসংস্কারে বিশ্বাসী, তাহলে ১৪৫০ বছর আগের মানুষগুলো কেমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল? অথচ সেই সময়ে নাযীলকৃত কুরআনে বলা হয়েছে-
"নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ -- তাঁর কাছেই রয়েছে ঘড়িঘন্টার জ্ঞান, আর তিনি বর্ষণ করেন বৃষ্টি, আর তিনি জানেন কি আছে জরায়ুর ভেতরে। আর কোনো সত্ত্বা জানে না কী সে অর্জন করবে আগামীকাল। আর কোনো সত্ত্বা জানে না কোন দেশে সে মারা যাবে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পূর্ণ-ওয়াকিফহাল। (লুকমান-৩৪)
এই আয়াতটির মাধ্যমে জ্যোতির্বিদ্যাকে এক কথায় তুলোধুনো করে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যদ্বানীর কোন সুযোগই রাখা হয়নি ইসলামে।
জ্যোতিষী বা ভবিষ্যৎ দ্রষ্টাদের নিয়ে রাসুল (স) বলেছেন - যদি কেউ কোন গায়েবী বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তা'র কাছে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তবে ৪০ দিন পর্যন্ত তার কোন নামায কবুল হবে না। [১৩২]
ঠিক তেমনি তাবিজ-কবচের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহর স্ত্রী জয়নব রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: "একদিন আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা। এতে আমার জন্য ঝাঁড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে তিনি কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : ঝাড়-ফুঁক, সাধারণ তাবিজ ও ভালোবাসা সৃষ্টির তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক।" (আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)
ইসলামী বিধান অনুযায়ী- কেউ যদি তাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়ি, সামুক-ঝিনুক, গিড়া, হাঁড়, তাগা-তামা-লোহা বা অনুরূপ কোন ধাতব বস্তু গলায় বা শরীরের কোথায়ও ধারণ করে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, ঐ গুলো বালা-মুসিবত দূর করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখে, তবে তা বড় শিরক। আর যদি এ ধরনের ধারণা না হয়, তবে তা ছোট শিরক। অর্থ্যাৎ বুঝাই যাচ্ছে এ জিনিসগুলো ইসলামসম্মত নয়। ভাবলে আশ্চর্য্য হয়ে যাই- বর্তমান এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও অসংখ্য মানুষ এইসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করে, আস্থা রাখে। অথচ ইসলাম সেই ১৪৫০ বছর আগে এইসব জিনিসকে নিরুৎসাহিত করেছে, নিষিদ্ধ করেছে। কোন সাধারন মানুষের পক্ষে ১৪৫০ বছর আগে এতটা আধুনিক চিন্তাভাবনা করা সম্ভব নয়, এতটা কুসংস্কারমুক্ত থাকা সম্ভব নয়- এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক একটি ব্যাপার। ইসলাম যে একটি অলৌকিক ধর্ম, কুরআন যে একটি ঐশীগ্রন্থ আর হযরত মুহম্মদ (সাঃ) যে একজন ঐশী রাসূল তা এই ব্যাপারগুলো থেকেই স্পষ্ট।
ইসলাম আধুনিকতার সর্বোচ্চ চুড়ায় আরোহন করেছে সেই ১৪৫০ বছর পূর্বে... তাই আমরা বলতেই পারি ইসলামই সর্বাধুনিক, ইসলামই প্রগতি...ইসলাম কুসংস্কারমুক্ত, ইসলামই একমাত্র সত্য...
বিষয়: বিবিধ
১৮২৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাবিজ সংক্রান্ত প্রশ্ন
মন্তব্য করতে লগইন করুন