নারীর অধিকার বিষয়ে তসলিমা নাসরিনের চিন্তাধারা এবং তার জবাবে আমার কিছু বক্তব্য
লিখেছেন লিখেছেন ইনতেহাব হোসাইন জাওয়াদ ০৪ জুন, ২০১৪, ০৭:২৯:০৫ সন্ধ্যা
তসলিমা নাসরিন সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বললেন- “কোন ধর্মেই নারীদেরকে সমান অধিকার দেয়া হয়নি,সকল ধর্মই পুরুষতান্ত্রিক”। তার এই কথাগুলোর বিরুদ্ধাচরন আমি করবো না। হ্যাঁ! আমিও স্বীকার করি যে অন্যান্য ধর্মের মত ইসলামও সর্বক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষের সমান অধিকার বা মর্যাদা দেয়নি।
নাস্তিকরা প্রায়ই বলে- যে সৃষ্টিকর্তা নারীর প্রতি এধরনের বৈষম্য করতে পারেন তার দেয়া নিয়ম মেনে এই পৃথিবী চলতে পারে না। মানুষের জন্য কোনটা ভাল,কিভাবে পৃথিবীটাকে সাজালে মানুষের কল্যাণ হবে তা ঠিক করবে মানুষ নিজেই- কোন সৃষ্টিকর্তা নন। নারীর সমান অধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে তাই সবার আগে ধর্ম থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। এসবই হল নাস্তিকদের কথা। এখন আসুন দেখা যাক- ধর্মের বিধিবিধান বাদ দিয়ে গিয়ে সত্যি সত্যি যদি নাস্তিকদের চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী পৃথিবী সাজানো হয় তাহলে কেমন হবে-
ধরে নিলাম নারী-পুরুষ উভয়ে সমান অধিকার পাওয়ার যোগ্য। তবে সমান অধিকার ও মর্যাদা পাওয়ার জন্য তাদেরকে অবশ্যই সমপরিমান কাজ সমান দক্ষতার সাথে করে দেখাতে হবে। কেউ কম কাজ করবে আর কেউ বেশি কাজ করবে তা হবে না। এই সমান কাজ ও অধিকারের ব্যাপারটি বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমেই নারীরা দাবি তুলবে- আমরা একা কেন সন্তান গর্ভধারন করবো- সব কষ্ট আমরা করবো আর সন্তান পরিচিত হবে পিতার পরিচয়ে এটা হতে পারে না। সুতরাং এখন থেকে পিতাদেরকেই গর্ভধারন করতে হবে। (নাস্তিক ভাইয়েরা, প্রস্তুত আছেন তো?)
মেয়েরা আরো দাবি করবে- সৃষ্টির শুরু থেকেই আমরা সন্তানকে স্তন্যদানের কাজটা করে এসেছি,এবার এই দায়িত্বটাও পুরুষদেরকে দেয়া হোক। (এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে কে কে প্রস্তুত আছেন চেহারাটা একটু দেখাবেন?)
সামনে তো ফুটবল বিশ্বকাপ। নাস্তিকদের দাবি মানলে- এই বিশ্বকাপে কেবল পুরুষরা প্রতিদ্বন্ধিতা করবে তা তো হয় না,সমান অধিকার বলে কথা। প্রতিটা দলের অর্ধেক খেলোয়াড় হতে হবে পুরুষ আর বাকি অর্ধেক থাকবে নারী। (কি নাস্তিক আপুরা,তোমরা পুরুষদের সাথে ফুটবল খেলতে রাজী আছো তো?)
পুরুষরা দাবি তুলবে- আমরা এতদিন উপার্জন করেছি,নারীদের ভরনপোষনের ব্যবস্থা করেছি,তাদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়েছি,এখন থেকে তারাই উপার্জন করুক আর আমরা হাউজ হাজবেন্ড হয়ে ঘর সামলাবো। আমরা এতদিন তাদের নিরাপত্তার দেখভাল করেছি,এখন থেকে মেয়েরাই আমাদের নিরাপত্তা দিবে (নাস্তিক আপুরা, আর ইউ রেডি?)
উপরে কয়েকটা উদাহরন দেখালাম মাত্র। এরকম আরো হাজার হাজার উদাহরন চাইলেই দেখানো যায়। তবে সেটার প্রয়োজন দেখিনা,কারন যে বুঝে সে ইশারাতেই বুঝে আর যে বুঝে না চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও সে বুঝবে না। আমি কি বুঝাতে চেয়েছি তা যারা বুঝার তারা এতক্ষণে ঠিকই বুঝে গেছেন। নাস্তিকদের কথা মত যদি পৃথিবী সাজাতে যান, নাস্তিকদের যুক্তি মেনে যদি সমাজ কাঠামোর মানদন্ড স্থির করেন- তাহলে পৃথিবীটাকে আর এগোতে হবে না,বরং পৃথিবী থমকে যাবে। নাস্তিকরা মাঝে মাঝেই বলে- শুধু ছেলে আর মেয়েতেই বিয়ে হতে হবে এমনটা কেন? একটা মেয়ের সাথে আরেকটা মেয়ের কিংবা একটা ছেলের সাথে আরেকটা ছেলের বিয়ের অধিকার দেয়া উচিত। সব মানুষ যদি এই ধারনায় বিশ্বাসী হয়ে সত্যি সত্যি এমনটা করা শুরু করে তাহলে পৃথিবীতে আর কোন মানুষের জন্ম নেয়া লাগবে না। একদিন মানুষশূণ্য হয়ে যাবে এই পৃথিবী। পুরুষদের পক্ষে সম্ভব নয় গর্ভধারন করে সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা, সম্ভব নয় নবজাতককে দুদ্ধপান করিয়ে মায়ের অভাব পুরন করা। এইসব দায়িত্ব পুরুষদেরকে দিলে কোন নবজাতককে এই পৃথিবীর মুখ দেখা লাগবে না। একইভাবে নারীদের পক্ষেও সম্ভব নয় পুরুষদের সকল কাজ সমাধা করা। নারীদের পক্ষে মাদার তেরেসা হওয়াটা সম্ভব, কিন্তু নিউটন,আইনস্টাইন, গ্যালিলিও হওয়া সম্ভব না। অন্তত ইতিহাস সেটা বলে না। মেয়েদের পক্ষে হয়তো বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব, কিন্তু উন্নত বিশ্বের কোন দেশের সেনাপ্রধান হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং যাকে যেখানে মানায় তাকে সেখানেই থাকতে দিন। যার যেটা কাজ তাকেই সেটা করতে দিন। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া নিয়ম ভেঙে নিজস্ব নিয়ম প্রবর্তন করতে যাবেন তো বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী। কার মর্যাদা কিরকম হওয়া উচিত,কার অধিকার কতটুকু থাকা উচিত কিংবা কার কর্তব্য কি হওয়া উচিত তা আমাদের চেয়ে আমাদের সৃষ্টিকর্তা অনেক ভাল জানেন এবং বুঝেন। এই সহজ জিনিসটা আমরা যতদিন না অনুধাবন করতে পারবো ততদিন আমরা বিভ্রান্তির সাগরেই হাবুডুবু খেতে থাকব...
(ফেসবুকে আমি>> এখানে ক্লিক করে পাঠিয়ে দিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট!
বিষয়: বিবিধ
১৬৩২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
েমন কি রমনি নাম নিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারে না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন