সেই মিছিল থেকে জীবনের মিছিল
লিখেছেন লিখেছেন বিবলোফিল ২৭ মে, ২০১৪, ১২:৫২:০৪ দুপুর
মিছিলের শ্লোগান কানে আসা মাএ দৌড় দিতাম বাসা থেকে । চেয়ারম্যান নির্বাচনে আনারস মার্কার মিছিল । সারা এলাকা ঘুরে এসে হাইস্কুল মাঠে মুড়ি দিত খেয়ে আবার বাসায় । এরপর জুম্মার নামাযের পর সালমান রুশদির বিরুদ্ধে মিছিল । কলেজের পুকুরে গোসল করতে যেতাম মিছিল শুনেই গোসল করা বাদ দিয়ে মিছিলের শ্লোগান শুনতাম । ছোট বলে ওই মিছিলে যেতে পারতাম না । বার বার মনে হত কলেজে উঠলে হয় মিছিল কাকে বলে দেখাবো ।
কলেজের সেই মিছিলের শ্লোগান ছিল "চশমা ওয়ালি বুবুজান নৌকা নিয়া ভারত যান " তারপর "দেশের মানুষ খুধায় মরে খালেদা জিয়া মেকআপ করে " এসব শ্লোগান এর মানে বুঝিনা । কেন নৌকা নিয়ে ভারত যাবে, আর কেন মেকআপ করে ।
মাদ্রাসার মাঠে রান রান খেলতাম । খেলাটা অনেকটা আমেরিকার বেস বল খেলার মত । একজন আস্তে করে বল দেয় সেটাকে ব্যাট দিয়ে মেরে ব্যাট রেখে গোল সীমানা দেয়া ইটের পাশে দিয়ে দৌড়াও । অন্যপখ্খের ফিল্ডার যতখন না সেটাকে ছুড়ে দেয়া পেলেয়ার এর কাছে না পাঠায় । ছুড়ে দেয়া পেলেয়ার হাতে বল এলে ইট ধরে থাকতে হবে । ইট না ধরে থাকলে আউট । আমার সাথের খেলোয়ার যখন আবার ব্যাট দিয়ে মারবে তখন আমি আবার দৌড়াব । এরকম খেলবার সময় মাদ্রাসার দেয়ালে একদিন লেখা দেখলাম শিবিরে + দিন । মানে বুঝিনা শিবির কি ? সাল টা আজ আর মনে নেই । অবশ্য সেসময় মাদ্রাসার ও হাইস্কুলের রুমের দেয়ালে লেখা দেখতাম মেরী +নয়ন বা মেরী + সমীর । সেসময় মেরী আপা ছিল আমাদের পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী । সেই মেরী আপা আজ কোথায় কেমন আছে জানিনা । নয়ন বা সমীর কারও সাথেই মেরী আপার বিয়ে হয়নি ।
৯০ সাল গনজোয়ার । ঢাকা থেকে সব নাটকের বিখ্যাত মানুষ রা গেলেন । হাইস্কুল মাঠে জনসভা করলেন । ভোট দিতে বল্লেন । বিশাল মন্চে একে একে বক্তৃতা দিলেন । ঝুনা চৌধুরী, তারেক আনাম, রোকেয়া প্রাচী, সহ অনেকেই । বাকীদের নাম ভুলে গেছি । যা বুঝলাম ধানেরশীষ আর নৌকা বাদে কোথাও ভোট দেয়া যাবেনা । সভা শেষ বক্তারা চলে যাচ্ছে । জাতীয় পার্টি মিছিল বের করেছে । "এরশাদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে"
আমি দৌড় মিছিলে । শিল্পীদের মাইক্রোবাস ঘিরে আমরা মিছিল করছি । শিল্পীদের গাড়ীর বহর মাঠ থেকে বের হয়ে হাইস্কুলের রাস্তা ধরে ঢাকা রংপুর হাইওয়ে দিকে যাচ্ছে । হঠাত আওয়ামীলীগ এর আজাদুল ভাইরা এসে দিল এক দাবরানী আমি ছোট বলে চড় থাপ্পর খেলাম না । জান নিয়ে দৌড় দিলাম । নিরানদার দোকনের ঝাপের নীচে । মিছিল ভেংগে দিয়ে আজাদুল ভাইরা শ্লোগান দিচ্ছে "শিল্পীদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে" ।
আমি মনে মনে নিজেকে বীর ভাবলাম মিছিল করছি মার খাইনি । আজাদুল ভাইদের সাথে মিছিল করতে চাইলাম আবার মনে হল দাবরানী খাওয়া পার্টি যদি এসে মারে । কিন্তু আগুন কেন জ্বলবে এটা বুঝলাম না ।
আবাহণী মোহামেডানের মিছিল । এই মিছিল গুলোর শেষ হত গোবর ছোড়াছুড়ি করে । এরপর হুমায়ন আহম্মেদ এর নাটকের বাকের ভাইয়ের ফাসির বিরুদ্ধে মিছিল ।
উঠলাম কলেজে মিছিল করবো ভয় হয় । আমি কোন দলের সবাই জেনে যাবে বা ট্রেডমার্ক হয়ে যাব । সবচেয়ে বড় ভয় আব্বা জানলে বাড়ীর ভাত বন্ধ । মিছিলে যাওয়া আর হলনা ।
ঢাকা কলেজে পড়বার সময় মিছিল দেখি, মিছিল নীলখেত হয়ে মধুর ক্যান্টিন যায় । এই শহরে, রাস্তায় কত বরন্যরা মিছিল করেছে । আবার পুরনো ভুত যাইনা একটু মিছিলে এখানে তো আর কেউ দেখবেনা । একদিন গেলাম । নীলখেত হয়ে মধুর ক্যান্টিন । আবার ফিরে এলাম । আসার পর ঢাকা কলেজের সামনে লীডার সবাইকে আনারস খাওয়ালেন । আমিও খেলুম । লীডার আমাকে বল্লেন তোকে নিয়মিত মিছিলের সামনে দেখতে চাই । লম্বা চওরা আছিস মিছিলের সামনে থাকবি । সময়টা ছিল এমন গরম । পরে জানলাম এ্রই লীডার এর মিছিল যত বড় হয় ওর ডিমান্ড সিনিয়র লীডার দের কাছে তত বেশি হয় । নিউমার্কেট, নীলখেত, গ্যালাক্চি, এরাম বারে চাদার পরিমান বাড়ে । রুমে আসার পর মনে হল ধুর ও ভূয়া, এই সব মিছিল ফিছিল মানুষ করে । সেই শেষ ।
আসিফ নজরুল স্যার আফ্রিকান স্টাডিজের উপর লন্ডনে ডিগ্রী নিতে যাবার সময় স্যারের ভিসার কাজ করতে গিয়ে রোকেয়া প্রাচীর সাথে দেখা হলে ১৮ বছর আগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিলাম, আপা অনেকখন হাসলেন ।
আর এখন মিছিল দেখলে হোন্ডা ঘুরিয়ে পালাই । মাঝে মাঝে মিছিলের পেছনের লোকরা হাত দিয়ে ইশারা করে পাশে দিয়ে যেতে বলে তখন বুঝি এটা সরকারী দলের মিছিল । সেই মিছিল আর আজ জীবনের মিছিল । পালাবার কিংবা ভয়ের মিছিল ।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন