সাহাবাগণের রাঃ সমালোচনা করা জায়েজ আছে?
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:৫৮:২০ রাত
প্রশ্ন:
এক গবেষক আলেম বলেছেন যে, হাদীসে সাহাবায়ে কেরামকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু তাদের গীবত ও সমালোচনা করতে আলাদাভাবে নিষেধ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত জানতে চাচ্ছি।
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
সত্যিকার কোন আলেম উপরোক্ত কথাটি বলতে পারে না। এটি আলেম নামে কোন শিয়াপন্থী ব্যক্তির উক্তি হতে পারে।
সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কে গালি দিতে নিষেধ করার কী প্রয়োজন? গালিতো যে কোন সাধারণ মানুষকে দেয়াই হারাম। সেখানে সাহাবায়ে কেরামগণকে দেয়া যে হারাম হবে, সেটি বলার কি অপেক্ষা রাখে?
হাদীসে পরিস্কার শব্দে সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলতে, তাদের সমালোচনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ، ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلاَ نَصِيفَهُ
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার সাহাবীকে سب ছাব্ব তথা মন্দ বলো না। যদি তোমাদের কেউ এক উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও দান করে, তবু তাদের এক মুদ বা তার অর্ধেকের সমপরিমাণও হবে না। [বুখারী, হাদীস নং-৩৬৭৩]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»
হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে মন্দ বলবে, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ। [আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২৭০৯, ফাযায়েলে সাহাবা, আহমাদ বিন হাম্বলকৃত, হাদীস নং-৮]
عَن ابْنِ عُمَر؛ أَن النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ.
হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তার উপর আল্লাহর অভিশাপ। [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫৭৫৩, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৭১, ]
من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে তাকে প্রহার কর। {জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২}
অভিধানে سب ছব্ব এর অর্থ কি?
অভিধানে سب ছাব্ব সরাসরি গালিকে বলে না, বরং গালির দিকে ধাবমান নিন্দাবাদকে বলে। [মুজামুল ফারকুল লাগাবিয়্যাহ, নং-১১৭৪]
হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-যে কথা সমাজে খারাপ ও দোষ এবং ত্রুটি হিসেবে বলা হয় তা’ই سب ছব্ব {আস সারেমূল মাসলূল-৫৩৪}
আরবীতে গালি বুঝাতে ব্যবহৃত হয় شتم শব্দ। “শাতাম” অর্থ হল গালি। سب ছাব্ব অর্থ সরাসরি গালি নয়। বরং যথার্থ অর্থ হল, মন্দ বলা, খারাপ বলা ইত্যাদি।
হাদীসেতো সাহাবায়ে কেরামগণকে গালি দেয়া না দেয়া বিষয়ে বলাই হয়নি। বলার প্রয়োজনই নেই। কারণ, গালিতো কোন ব্যক্তিকেই দেয়া বৈধ নয়। হাদীসে সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে মন্দ বলা, তাদের কটুক্তি করা, তাদের সমালোচনা করতে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “শাতাম” তথা গালি শব্দ ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছেন “ছাব্ব” তথা মন্দ বলা।
অর্থাৎ সাহাবাগণকে মন্দ বলা, তাদের নিন্দাবাদ করাই বৈধ নয়। গালি দেয়াতো বহু দূরের বিষয়।
আল্লাহ তাআলা সাহাবা বিদ্বেষী শিয়া রাফেজীদের থেকে উম্মতে মুসলিমার ঈমানকে হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
বিষয়: বিবিধ
১৯১৬ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজেদের জীবন যে কত ভুলে ভরা, এটা চিন্তাও করে না।
সাহাবাদের সমালোচনা কেন করেন? এ প্রশ্নের একটাই উত্তরঃ আমি সমালোচনা না করলে কি হবে, ইতিহাস তো কাউকে ছাড়ে না।
আসলে ঐসব ইতিহাস লিখনগন শিয়া ছিলেন কিনা তাও জানার বিষয়।
আর ইতিহাসে কিছু থাকলেই যে সব সত্যি হবে এমনও তো নয়।
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ
জাযাকাল্লাহ খাইরান @ তবুও আশাবাদী।
জাযাকাল্লাহ খাইরান @ তবুও আশাবাদী।
মুল্যয়নের জন্য শুকরিয়া। জাযাকিল্লাহ
ইতিহাস লিখতে গেলে চুল ছেড়া পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ দরকার হয়ে পড়ে। নতুবা পাঠকে নিকট ব্যাপারটা পরিষ্কার হবেনা। কেননা ডকুমেন্টারী কথা না বললে পাঠকের লক্ষ্য হাসিল হবেনা লেখকের উদ্দেশ্য পূরণ হবেনা। ইতিহাস লিখতে গেলেই আলোচনার প্রয়োজন হবে। এটাকে ভুল বলা যাবেনা।
সমালোচনার মুল লক্ষ্যই হল ভুল তালাশ করা। আগেকার দিনে চলচিত্র বানিয়ে স্বয়ং প্রযোজক তার নির্মিত ছবির মূল্যায়ন করার জন্য দক্ষ সমালোচকের কাছে পাঠাত, তাদের কে পারিশ্রমিক দিত। সাহিত্যের ক্ষেত্রে এখনও হয়ে থাকে। উদ্দেশ্য সাহিত্য কিংবা চিত্রটিকে আরো সুন্দর করা, আরো গ্রহনযোগ্য করা।
সুতরাং সমালোচনা যদি দোষ তালাশ করে নোংরা ঘাঁটাঘাটির মতলব থাকে তাহলে নিষিদ্ধ। আর সমসাময়িক চিন্তা, পরিবেশ, পরিস্থিতির আলোকে নেওয়া কঠিন সিদ্ধান্তগুলো কেন ব্যর্থ হয়েছে সেটার কারণ নির্ণয় করে; নিজেরা শিক্ষা নেবার জন্য হয় তাহলে সর্বদাই সমালোচনা জায়েজ। ফাইনালী সকল সমালোচনার মূল লক্ষ্য থাকতে হবে নিজেদের কে আরো বেশী প্রজ্ঞাবান করা। ধন্যবাদ
সাহাবাদের সম্মানের ব্যপারে এতাে এতো পরিষ্কার সহীহ হাদীস ও সরাসরি কুরআনের আয়াত থাকার পরও যারা সাহাবীদের নিন্দায় ব্যস্ত (অনলাইনে অফলাইনে), তারা কতটুকু প্রজ্ঞাবান তাও কিন্তু ভাবতে হবে।
ধন্যবাদ বড় ভাই।
অন্যের সমালোচনা না করলে,
নিজে কে ত জাতে তোলা যায় না,
আর যদি সেটা সাহাবীদের হয়,
তাহলে ত, সোনায় সোহাগা।
কেমন আছেন বিবর্ণাপি!
অনেক দিন পর দেখা।
আপনার বিশ্লেষণটা চমৎকার।
বর্তমান যামানায় মা বাবা ভাই বোন ও সন্তানদের মাঝেও তো একতা নেই।
সেখানে সাহাবীদের ব্যপারে কটু মন্তব্য ও দোষারোপ করার সাহস দেখানো মনে হয় মাটিতে দাড়িয়ে চাঁদ ছোঁয়ার অলিক স্বপ্ন দেখা।
ধন্যবাদ আপি।
শুকরিয়া জনাব। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার খাবারের পোষ্টগুলো অনেক মিস করছি।
যাদের উপর মহান আল্লাহ তায়ালা রাজি হয়ে গেছেন, তাদের কে গালি গালাজ করা কোন মুসলিমের কাজ নয়। তবে তাদের কাজগুলো থেকে ভালো কিছু হাসিলের উদ্দেশ্যে এবং সময়োপযোগী কিছু সিদ্দান্ত নেওয়ার বেলায় আলোচনা/সমালোচনা হতে পারে। তবে তাহা সাহাবীদের সম্মানের দিকে খেয়াল করেই করা উচিত।
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন