সফর মাসের শেষ বুধবার : আখেরী চাহার শোম্বাহ (ইবাদাতের মোড়কে বিদআ'ত)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০২:৫৬:৫৪ দুপুর
বহু মানুষ সফর মাসের শেষ বুধবারকে একটি বিশেষ দিবস গণ্য করে এবং এতে বিশেষ আমল আছে বলে মনে করে।
‘মকসুদুল মোমিনীন’ ও ‘বার চান্দের ফযীলত’ এবং এ জাতীয় যেসব অনির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকা এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তাতে এই বিষয়টি রয়েছে।
(মকছুদুল মুমিনীন, বার চান্দের ফযীলত জাতীয় অনির্ভরযোগ্য বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী) সফর মাসের শেষ বুধবারকে আখেরী চাহার শোম্বাহ বলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবনের শেষ দিকে একবার এক ইহুদীর যাদুর কারণে ভীষণ অসুস্থ হন এবং এই দিনে একটু সুস্থতা বোধ করেন এবং গোসল করেন ও মসজিদে জামাতে শরিক হন। খুশি হয়ে হযরত ওসমান রা. তাঁর নিজ খামারের ৭০টি উট জবাই করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। খুশিতে আত্মহারা সাহাবীগণ আনন্দ প্রকাশ ও শুকরিয়া আদায় করেছিলেন রোযা রেখে, নফল নামায পড়ে এবং হামদ-নাত গেয়ে। সুতরাং এটা মুসলমানদের খুশির দিন এবং তা উদযাপনের একটি দিবস।
এ ছাড়াও এ জাতীয় বইগুলোতে এ দিনের বিভিন্ন করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন যেমনটি ভিত্তিহীন উপরোক্ত বিবরণ। কারণ-
১. হাদীস বিশারদ ও ইতিহাসবিদ কারো মতেই সুস্থতার তারিখ সফরের আখেরী চাহার শোম্বা ছিল না। (দ্র. ফাতহুল বারী ১০/২৩৭ : আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ২/১৫৪; শরহুয যুরকানী ৯/৪৪৬-৪৪৭)
২. জাদুর ঘটনা হাদীস ও সীরাত-গ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে এসেছে। কিন্তু কোথাও জামাতে শরীক হতে না পারা ও জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পর গোসলের কথা নেই।
৩. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়েছে সোমবারে। এর চার-পাঁচদিন পূর্বে তাঁর সুস্থতার জন্য যে সাত কুঁয়া থেকে সাত মশক পানি আনা হয়েছিল এবং সুস্থতার জন্য তার দেহ মোবারককে ধৌত করা হয়েছিল তা কি বুধবারের ঘটনা না বৃহস্পতিবারের? ইবনে হাজার ও ইবনে কাছীর একে বৃহস্পতিবারের ঘটনা বলেছেন। (দ্র. ফাতহুল বারী ৭/৭৪৮, কিতাবুল মাগাযী ৪৪৪২; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/১৯৩; সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী ২/১১৩)
৪. যদি বুধবারের ঘটনা হয়ে থাকে তবে সফর মাসের শেষ বুধবার কীভাবে হচ্ছে? রসমের পৃষ্ঠপোষকতাকারীগণ সকলে ইন্তেকালের তারিখ বারো রবিউল আওয়াল বলে থাকেন। সোমবার যদি বারো রবিউল আওয়াল হয়ে থাকে তাহলে এর পূর্বের বুধবার তো সফর নয়, রবিউল আওয়ালেই হচ্ছে।
৫. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অনেক মুসিবত এসেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নাজাত দিয়েছেন। তায়েফ ও অহুদে আহত হয়েছেন, আল্লাহ তাকে সুস্থ করেছেন। একবার ঘোড়া থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, যার কারণে মসজিদে যেতে পারেননি, আল্লাহ তাঁকে সুস্থ করেছেন। তাঁর সুস্থতা লাভের এই সব আনন্দের স্মৃতিগুলোতে কি দিবস উদ্যাপনের কোনো নিয়ম আছে? তাহলে আখেরী চাহার শোম্বাহ, যার কোনো ভিত্তি নেই, তা কীভাবে উদযাপনের বিষয় হতে পারে?
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইবে সঠিক দ্বীনের উপর চলার তাওফীক দান করুক।
বিষয়: বিবিধ
১৮৫০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে অতীব যত্নের সাথে উপস্থাপনের জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।
লিখাটি পড়ে পাঠকমহল এর প্রয়োজনীয়তা ও মর্মার্থ অনুধাবনে সচেষ্ট হবেন আশাকরি।
আপনার প্রাঞ্জল উপস্থিতি ও সরব বিচরণ অব্যাহত থাকুক নিষ্প্রাণ ব্লগ বাড়ীতে এই প্রত্যাশা।
এক ভাই হোয়াটসএ্যাপে ছাহার শোম্বা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন।
তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গিয়ে আমারও অনেক জানা হলো।
সুন্দর ও উদ্ধিপনা মূলক মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া জানাই। অনেক অনেক মোবারকবাদ।
যেমন: জুমআর নামায, ঈদের নামায, জানাযার নামায, বিয়ে শাদী, জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী, শবে কদর এক দিনের জন্য, শবে বরাত, শবে মেরাজ, আশুরাসহ যে কোন মৌসুমী অনুষ্ঠান ও মৌসুমী ইবাদাতে অতি অতি উৎসাহী।
বেশি উৎসাহ দেখাতে গিয়ে ধর্ম থেকে আবেগকে প্রশ্রয় দেয়া যেন দৈনন্দিন ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।
এই আবেগের বিরোদ্ধে যে সকল আলেম ওলামা প্রচারণা চালান, তাদেরকে ওহাবী ট্যাগ লাগিয়ে সমাজে হেয় করা হয়।
এভাবে দিন দিন যেন গুমরাহী বেড়েই চলছে। আল্লাহ তার বান্দাহদের সঠিক বুঝ দান কারী।
লবীদ ইবনে আসাম নামক ইয়াহুদী ব্যক্তি ও তার কণ্যা, বোন মিলে রাসূল (সাঃ) এর একজন ইহুদি খাদেমের সাহায্যে তার ব্যবহৃত চিরুনী ও চুল সংগ্রহ করে সুতার তাগা দিয়ে চুল ও চিরুনীর সাহায্যে তাবিজ বানিয়ে রাসূল (সাঃ) এর উপর কালো জাদু প্রয়োগ করে। এক্ষেত্রে এ যাদুকে একটি খেজুরের ছড়ার আবরণের নীচে রেখে লাবীদ সেটাকে বনী যুরাইকের যারওয়ান বা যী-আযওয়ান নামক কুয়ার তলায় একটি পাথর চাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখে। নবী (সাঃ) এর ওপর প্রভাব পড়তে পূর্ণ এক বছর সময় লাগলো। বছরের শেষ ছয় মাসে মেজাজে কিছু পরিবর্তন অনুভূত হতে থাকলো। শেষ চল্লিশ দিন কঠিন এবং শেষ তিন দিন কঠিনতর হয়ে গেলো। তবে এর সবচেয়ে বেশী যে প্রভাব তার ওপর পড়লো তা কেবল এতটুকুই যে, দিনের পর দিন তিনি রোগা ও নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলেন। কোন কাজের ব্যাপারে মনে করতেন, তিনি করে ফেলেছেন, অথচ তিনি তা করেননি। নিজের স্ত্রীদের সম্পর্কে মনে করতেন, তিনি তাদের কাছে গেছেন, কথা বলেছেন অথচ বাস্তবে তাদের কাছেই যাননি। আবার কোন কোন সময় নিজের দৃষ্টির ব্যাপারেও তাঁর সন্দেহ হতো। কিন্তু এসব প্রভাব তাঁর নিজের ব্যক্তিসত্ত্বা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। এমনকি তার উপর দিয়ে কি ঘটে যাচ্ছে তা অন্যেরা জানতেও পারেনি। পরবর্তীতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর কাছে অধিক অধিক দোয়া ও ইবাদত করতে লাগলেন তার সমস্যা কি? তা জানার জন্য। মহান আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে দুজন ফেরেশতার কথোপকথন দ্বারা জানিয়ে দেন যে, লাবিদ ইবনু আসাম তাকে জাদু করেছে আর এর প্রভাবেই তিনি অসুস্হ হয়ে গেছেন। অর্থাৎ তাকে যে জাদু করা হয়েছে এটা তিনি নিজেও জানতেননা আবার জাদুর প্রভাবে তিনি কুরআন ভুলভাল পড়ছেন, ভুল খুৎবা দিচ্ছেন এমন কোন কিছুই কখনো ঘটেনি যা দেখে মানুষ বুঝতে পারতো যে, তিনি অসুস্হ অর্থাৎ তার অসুস্হতার বিষয়টি ছিল একদমই গোপন। কাজেই যেসব বলা হয় সেসব সঠিক না। জাঝাক আল্লাহ ভাইয়া সুন্দর পোস্টের জন্য।
আলহামদু লিল্লাহ ভালো আছি।
আপনার স্ববিস্তার মন্তব্যের দ্বারা অজানা কিছু বিষয় ক্লিয়ার হল। জাযাকিল্লাহ খাইরান।
সাথে সাথে আমার ক্ষুদ্র লিখাটিও পূর্ণতা পেল। অনেক অনেক শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন