অর্জন ও বর্জনের মধ্য দিয়েই পরিপূর্ণতা (রামাদানের সমাপ্তি পোষ্ট)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০১:০৮:০৩ দুপুর



ছোট্ট একটি উপমা দিয়ে রামাদানের লিখাগুলো ইতি টানতে চাই। যেমন ধরুন আমরা বাড়িঘর সাজানোর জন্য বিভিন্ন ফার্নিচার ব্যবহার করি। আর এ ফার্নিচার তৈরী হয় কাঠ থেকে।

কাঠ যদি গাছ হিসেবে বনে থেকে যেত, তাহলে দামী ফার্নিচার হতে পারতো না, ঘরের শোভাও বৃদ্ধি পেতো না।

গাছকে অনেক মূল, কাণ্ড, ডালপালা, বাকল, ফুল, ফল পাতা এবং শিকড় ইত্যাদি বর্জন করতে হয়।

অর্জন করতে হয় অনেক কিছুঃ যেমন নাট, পেরেক, বার্ণিশ, রং সহ অনেক সরাঞ্জাম, যা একটি গাছকে ফার্নিচার হতে সাহায্য করে।

তেমনি ভাবে একটি মানুষকে সঠিকভাবে গড়ে উঠতে হলে মহান আল্লাহর নির্দেশিত বিধানগুলো অর্জন ও বর্জনের মাধ্যমে তৈরী হতে হবে।

একটি কথা উল্লেখযোগ্য গাছ কিন্তু নিজে নিজে বর্জন ও অর্জনের দ্বারা নিজে নিজে ফার্নিচার হয়ে যায় না। কারণ গাছ একটি জড় বস্তু, যার নিজের কোন ক্রিয়া ক্ষমতা নেই। তাই গাছের হিসেব ও শেষ বিচার নেই।

কিন্তু একজন মানুষকে আল্লাহ তায়ালা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ অর্জন ও বর্জনের মাধ্যমে নিজেকে তৈরী করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই তো তার কর্মের হিসেব একদিন দিতে হবে।

রামাদানের ধারাবাহিক আমলগুলোর বর্ণনায় "করণীয়" আমলগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরেছিলাম, আজ সমাপ্তিতে এসে বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে সামান্য কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম।

শরীয়ত যা বর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছে

শরীয়তের পক্ষ থেকে মূলত: ছোট-বড় সকল গোনাহ ও পাপ সর্বদা বর্জন করার নির্দেশ এসেছে। আর রামাদান মাস ফযীলতের মাস এবং আল্লাহর ইবাদাতের প্রশিক্ষণ লাভের মাস হওয়ায় এ মাসে সর্বপ্রকার গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করা অধিক বাঞ্ছনীয়। তদুপরি রামাদান মাসে সৎকাজের সওয়াব ও নেকী বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, তাই রামাদানের সম্মান ও ফযীলতের কারণে এ মাসে সংঘটিত যে কোন পাপের শাস্তি অন্য সময়ের তুলনায় ভয়াবহ হবে এটাই স্বাভাবিক।

এজন্যেই রোযাদারদের উচিত তাকওয়া বিরোধী সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ পরিপূর্ণভাবে বর্জন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَه»

‘‘যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করে না তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৪)

‘‘মিথ্যা কথা ও তদনুযায়ী কাজ’’ কথাটি দ্বারা মূলত: রোযা অবস্থায় উম্মতের সকলকে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। আর ‘‘আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’’ কথাটি দ্বারা রোযা অসম্পূর্ণ হওয়ার, কিংবা কবুল না হওয়ার অথবা রোযার সওয়াব না হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِم»

‘‘তোমাদের কেউ রোযার দিনে অশ্লীল কথা যেন না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সাথে ঝগড়া করলে শুধু বলবে, আমি রোযাদার ।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৫)

উপরোক্ত হাদীস দু’টোর আলোকে সারকথায় আমরা বলতে পারি যে, আমাদের ঈমান, আমল ঠিক রেখে ইসলামী বিরোধী সকল কাজ বিশেষভাবে রামাদানে এবং আমভাবে সর্বদাই বর্জন করতে হবে। তাহলে আমাদের সিয়াম সাধনা হবে অর্থবহ এবং এ সাধনার মূল লক্ষ্য তাকওয়া অর্জন করা হবে সহজসাধ্য ।

আল্লাহ আমাদের সকল আমল কবুল করুন এবং আমাদের সবাইকে আরো উত্তম আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

বিষয়: বিবিধ

১৪২৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373825
০৩ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০১:৪০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি অনেক ভালো লাগলো অর্জন আর বর্জনের মাধ্যমেই পূণতা হাসিল করতে হয় অনেক অনেক ধন্যবাদ
০৩ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:৫৪
310209
আবু জান্নাত লিখেছেন : অনেক শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর

373831
০৩ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৯
নাবিক লিখেছেন :
‘‘যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করে না তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৪)
শুধু খাদ্য ও পানীয় বর্জন করা রোজাদারের সংখ্যাই বর্তমানে বেশি।

লেখাটা ভালো লাগলো।
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ১১:৫১
310239
আবু জান্নাত লিখেছেন : গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কৌট করেছেন, অনেক অনেক শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর

373890
০৪ জুলাই ২০১৬ রাত ০১:৩৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫
310297
আবু জান্নাত লিখেছেন : শুকরিয়া। ঈদ মোবারাক Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File