কান্নার রোযা, রোযার কান্না আর ডবল রোযা
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২০ জুন, ২০১৬, ০২:৪৭:৩২ দুপুর
ছোটকালে রোজার সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করে নাই এমন লোকের সংখ্যা একেবারে নগন্য।
আমরা সমবয়সি তিন খালাতো ও মামাতো ভাই ৬ বছর থেকেই রোযার প্রতিযোগীতা করতাম। বেশির ভাগ মামার বাড়িতেই থাকতাম। নানীকে বলে রাখতাম আমাকে জাগাতেই হবে, না জাগালে আমি কালকে সারাদিন কিছুই খাবো না।
ভোর রাতে চুপে চুপে উঠে সাহরী খেতাম, যেন বাকি দু'জন টের না পায়, কারণ আমার রোযা যেন তাদের চেয়ে বেশি হয়। অথচ বড় মামা ছোটদের রোযা রাখাটা একেবারেই সহ্য করতেন না, এত অল্প বয়সে সারাদিন উপোস করলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে ইত্যাদি। তাই বড় মামার অজান্তেই খেতাম।
আমাদের রোযার প্রতিযোগীতা দেখে একদিন নানী বললেনঃ তোর সেজ মামা ছোটকালে একদিন রোযা রেখেছিল, আসরের পর সে কি কান্না! পেটের ক্ষুধায় অসহ্য হয়ে পড়েছিল, কিন্তু আমি তাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করে সময়টি কাটিয়েছিলাম। শুধু মাত্র রোযায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য তাই করেছি। আর তোদেরকে পিটিয়েও রোযা ভাঙ্গানো যায় না।
আমার আম্মার চাচাতো বোন স্বর্ণা খালা, সে তো পুরো এলাকায় ছোটদের কাছে প্রসিদ্ধ ছিল। তার চেয়ে কেউ বেশি থাকতে পারতো না, মানে একটা রোযাও মিস করতো না। তার রোযাগুলো পরিবারের সবার মাঝে ভাগ করে দিত। মায়ের জন্য ৫টা, বাবার জন্য ৫টা, ভাইয়ার জন্য ৫টা, ভাবীর জন্য ৫টা। মরহুম দাদার জন্য ৫টা, মরহুমা দাদীর জন্য ৫ট।
এতে করে স্বর্ণা খালা ঈদের দিনে সবার থেকে অনেক পুরস্কারও পেত।
তখন আমার খুব আফসোস হতো, তাদের ফ্যামিলির সবাই রোযা রাখার পক্ষে, অথচ আমার বড় মামা কেন বিরোধীতা করে?
যখন নূরানী মাদরাসায় পড়তাম, তখন সারাদিন উচ্চ স্বরে পড়ার কারণে দুপুরের পর অনেকটা নিঃতেজ হয়ে যেতাম। তখন নানী বলতেন, কিছু খেয়ে নে, তোরা তো ছোট, এখন কিছু খাবি, আর বিকালে আমাদের সাথে ইফতার করবি, ব্যস তোদের একদিনে দুটি রোযা হবে।
নানীর পরামর্শ বেশ কাজ দিল, প্রায় এক সাপ্তাহ এভাবে দৈনিক ডবল রোযা রাখলাম, কিন্তু একদিন মাদরাসায় গিয়ে যখন ছাত্রদের মাঝে রোযার আধিক্যের হিসাব চলছিল, আমার হিসাব শুনে সবাই তো অবাক, বলিস কি! তোর এত রোযা?
ডবল রোযার প্রসঙ্গে আসতেই সবাই হুজুরকে প্রশ্ন করলো, হুজুর আসল কথাটাই বললেন, ব্যস, আমার কান্না আর কে দেখে
বাড়িতে গিয়ে নানীর সাথে সে কি ঝগড়া........................
এর পর থেকে নানী আর কোন দিন রোযা ভাঙ্গতে বলেন নি। প্রতিদিন ভোর রাতে অনেক আদর করে জাগিয়ে দিতেন।
আমার নানী আলহামদু লিল্লাহ এখনো আছেন। মা শা আল্লাহ এখনো অনেকটা মজবুত।
প্রতিবার দেশে যাওয়ার সময় নানীর জন্য দুধ পাউডার ও টেঙ্ক পাউডার হাদিয়া হিসাবে নিয়ে যাই।
অনেক দরদী নানি আমার..................
(শ্রদ্ধেয় ব্লগার গাজি ভাইয়ের অনুরোধে ছোটকালের স্মৃতি লিখা)
বিষয়: বিবিধ
১৬১৯ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে আসছি......
আপনার নানীজানের অভিজ্ঞতার কথা অন্নেক সুন্দর হয়েছে। ডাবল রজা...অন্নেক মজা।
অবশেষে কান্না......
অম্ল মধুর স্ম্রিতি......নানীর অশেষ প্রীতি... এক কথায় অতুলনীয়।
আপনার নানীজানের সুস্থতা ও কল্যাণের জন্য অনেক দোয়া রইলো।
হৃদয়স্পর্শী লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার স্মৃতিও লিখুন না প্লিজ, এধরনের কাহিনী আমার পড়তে ইচ্ছে হয়। আর ফিরে যেতে মন চায় অতীতে।
সুন্দর দোয়া ও চমৎকার অনুভুতি প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
আপনার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করুক আমীন।
আমার ছোট বেলা নানী বাড়িতে ছিলাম । কারন আমাদের থাকার কোন জায়গা ছিল না ।
আমরা ছিলাম আশ্রিত, অসহায় ,খালামনি ,মামাদের সামনে কোন কথা বলতে বা কিছু করতে খুব ভয় পেতাম ।
যাক যা বলতে চেয়েছি ,আমার ঘুম ছিল খুব পাতলা মামনি সেহেরীতে আমাকে জাগাত না কিন্ত আমি একাই জেগে যেতাম ।আমরা থাকতাম দুতালাতে আর খাবার রুম ছিল নিচ তলাতে ।মামনি রান্নাকরার জন্য আগেই নীচে চলে যেত যেদিন আমি ও ঐ সময় জাগতাম সেদিন মামনির সাথেই নীচে চলে যেতাম আর যেদিন পরে জাগতাম সেদিন নীচে নেমেও ঘরে ঢুকার সাহস পেতাম না কারন রুমের দরজা আটকানো না থাকলেও ভিরানো থাকত । দরজার বাহিরে দাড়িয়ে নক করারও সাহস পেতাম না কারন ঘরে ২/১জন খালামনি বা মামারা খাকত কে আবার কি বলে এটা ভেবে খুব ভয় হত।কিন্ত ঘরে তো আমকে ঢুকতে হবে তাই আমি কিছু একটা শদ্ধ করতাম আমার নানী এটা বুঝত তখন নানীমনি বলত মনি আয় তখন আমি ঘরে ঢুকতাম ।মাসে ২০ দিন ই এরকম হত ।
ভাইয়া আপনার হাসি-কান্নার স্মৃতিচারন খুব ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ ।
আমরা ছিলাম আশ্রিত, অসহায়
এই শব্দগুলো জীবন থেকে মুছে ফেলুন। দেখবেন জিবনটাকে অনেকটা হালকা মনে হবে।
আশ্রিতা হবেন কেন? আপনার মা কি আপনার নানার মেয়ে নন? উনি কি পিতার উত্তরাধিকারী নন? তাতে আশ্রিত ও অসহায় হবার কিছু নেই। মনটাকে একটু শক্ত করে বুঝিয়ে দিন, তা ছিল আল্লাহ পক্ষ থেকে এক বিশাল পরিক্ষা।
"আওয়াজ করতেন, নানী ডাকলে ভিতরে যেতেন।" কথাগুলো কতটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, আহ আমার জান্নাতমনি আমাকে বলে আমার জন্য সাইকেল আনতে হবে, না আনলে মেরে ফেলবো। মানে বাবার উপর অনেকটা অধিকার নিয়ে কথা বলে, বড় মন নিয়ে। অথচ আপনার বাবার বিয়োগে আপনাদের ছোটকাল অনেকটা অসহায় ছিলেন তা জানি, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অতীতকে বর্তমান দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন, এটাই শুকরিয়া।
কোন সময় অতীতের স্মৃতি মনে আসলে বর্তমানকে সামনে রেখে মনটাকে শক্ত করে নিবেন, এত অন্তত কিছুটা স্বস্তি অনুভব হবে।
ধন্যবাদ
ইফতারী খেতে বসলে আগে বুট+মুড়ি খেয়ে নিতাম । নামাজ পড়ে এসে পরে দেখিয়ে দেখিয়ে ভাগের পিয়াজু , বেগুনি খেতাম ।
এমন দিনও গেছে যে না খেয়ে রোজা রেখেছি - মাশা আল্লাহ তেমন কোন সমস্যা হয় নি । গত বছরও এরকম ২/১ টা রোজা রেখেছিলাম ।
এরকম রোজা আপনারা অনেকেই রেখেছেন । আমার কাছে মনে হয়েছে রোজায় পানির পিপাসাটাই বেশী অনুভূত হয় ক্ষিদে লাগার চেয়ে।
না খেয়ে রোযা আমার জীবতে হয়তো ২/৩টার বেশি হবে না। পিপাসাটাই অসল।
আপনার স্মৃতি জেনে ভালো লাগলো। আরো কিছু এড করে একটি পোষ্ট দিতে পারেন। ধন্যবাদ।
সুন্দর লিখেছেনঃ।
সময় করে লিখুন আপনার রামাদান স্মৃতি। ধন্যবাদ
স্মৃতিচারণ হেব্বি হয়েছে, কিন্তু নানীকে আপনার ইয়ে ইয়ে ইয়ের জান্নাতের মায়ের কানে লাগাবো
স্বপ্ন তো কল্পনা থেকে হয়, সিলেক্ট করলেই তো কল্পনা করবেন। কিছু হয়েছে কি? নাকি অজানা স্বপ্নেই বিভোর?
রোজা রেখে উচ্চস্বরে পড়া টা বোধ হয় ঠিক নয়। এটা তো জরুরি নয়।
তখন তো রোযা রাখা অপশনাল ছিল। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন