৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্ব- ওমরা পালন, ইতেকাফ ও সকল প্রকার নফল ইবাদাত (সংক্ষিপ্ত পোষ্ট)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৭ জুন, ২০১৬, ১২:১৭:৫৪ রাত



৩য় ও ৪র্থ পর্ব এখানে

পাঁচঃ উমরা পালন

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي»

‘‘রামাদান মাসে উমরা করা হজ্জের সমতুল্য’’ অথবা ‘‘আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য’’। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৬৯০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৬)

ছয়ঃ ইতেকাফ

রামাদান মাসের শেষ দশদিন ইতেকাফে বসা অতি উত্তম ইবাদাত। শুরুতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশদিন ইতেকাফে বসেন। এরপর লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে মাঝের দশদিন ইতেকাফে বসেন। এরপর যখন লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশদিনে হওয়া স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন থেকে তিনি শেষ দশদিন ইতেকাফে বসতে লাগলেন। অত:পর তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণ ইতেকাফে বসেন। হাদীসে এসেছে,

«اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ الْأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ فَاعْتَكَفَ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْه وَسَلَّمَ خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْيَرْجِع..... »

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশদিন ইতেকাফ করেন। (সাহাবারা বলেন) আর আমরাও তার সাথে ইতেকাফ করলাম। এরপর জিবরীল আসলেন এবং বললেন, যা আপনি অনুসন্ধান করছেন তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মাঝের দশদিন ইতেকাফ করলেন। (সাহাবারা বলেন) আমরাও তার সাথে ইতেকাফ করলাম। এরপর জিবরীল আসলেন এবং বললেন, যা আপনি অনুসন্ধান করছেন তা আপনার সামনে রয়েছে। তারপর বিশ রামাদান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দিলেন এবং বললেন, যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ইতেকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে.....”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮০)

অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামতের মতে ইতেকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কেফায়া। অর্থাৎ প্রত্যেকটি এলাকার জুমআ মসজিদে কিছু লোক ইতেকাফ করলে এলাকাবাসী অন্তত এই সুন্নাত তরকের গুনাহ থেকে বেছে যাবেন।

মহিলাদের ইতেকাফের ব্যাপারে ও অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে। নিরাপত্তা ও পর্দা পালনের সুবিধার্থে ঘরেও ইতেকাফ করতে পারবেন।

সাতঃ বেশী বেশী দো‘আ, যিকর এবং ইস্তেগফার করা

রামাদানের দিনগুলোতে পুরো সময়টাই ফযীলতময়। তাই সকলের উচিত এ বরকতময় সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা- দো‘আ, যিকর ও ইসস্তেগফারের মাধ্যমে। কেননা রামাদান মাস দো‘আ কবুল হওয়ার খুবই উপযোগী সময়, যেমন প্রবন্ধের শুরুতে একটি হাদীসের বর্ণনায় বলা হয়েছে।

সকল প্রকার ইবাদতে নিজেকে ব্যাপৃত রাখা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসে অন্য মাসের চেয়েও বেশী বেশী ইবাদাত করতেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল রামাদান মাসে সকল ধরনের ইবাদাত বেশী বেশী করা। তিনি ছিলেন সবচেয়ে দানশীল এবং রামাদানে আরো বেশী দানশীল হয়ে যেতেন, কেননা এ সময়ে তিনি সদকা, ইহসান ও কুরআন তেলাওয়াত, নামায, যিকর ও ইতেকাফ ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদাত অধিক পরিমাণে করতেন। তিনি রামাদানে এমন বিশেষ ইবাদাত সমূহ পালন করতেন যা অন্য মাসগুলোতে করতেন না। (যাদুল মাআ‘দ ১/৩২১)

সালাফে সালেহীনগণ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে এ মাসকে অধিক গুরুত্ব দিতেন এবং সকল ইবাদাতের জন্য অবসর হয়ে যেতেন। এমন কি ইমাম মলেক রাহেমাহুল্লাহ ও ইমাম যুহরী রাহেমাহুল্লার ন্যায় ব্যক্তিবর্গও শিক্ষাদান ও ফাতওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে বিশেষ ইবাদাত যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে - তার জন্য নিজেদের নিয়োজিত রাখতেন।

বিষয়: বিবিধ

১৫১০ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372223
১৭ জুন ২০১৬ রাত ০১:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
309143
আবু জান্নাত লিখেছেন : শুকরিয়া বড় ভাই।

372226
১৭ জুন ২০১৬ রাত ০২:১৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam.....
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
309144
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

372229
১৭ জুন ২০১৬ রাত ০২:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাল লাগল। আল্লাহ রমজানে বেশী বেশী ইবাদত করার তৌফিক দিন। ধন্যবাদ।
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৮
309145
আবু জান্নাত লিখেছেন : এ মাসে শয়তান বন্ধি হওয়ায় অন্য মাসের চেয়ে ইবাদাত করা অনেকটা সহজ।

আমীন।

জাযাকাল্লাহ

372230
১৭ জুন ২০১৬ রাত ০২:৫৪
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়ের ।
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৯
309146
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আনতি ফাজাযাকিল্লাহ।

372244
১৭ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:১৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। ভালো লাগলো।
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:০০
309147
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, শুকরিয়া বড় ভাই।

372257
১৭ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৫১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : জাঝাক আল্লাহ প্রিয় ভাইয়া। আপনার প্রচেষ্টা আল্লাহ সফল করুক।
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:০০
309148
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আনতি ফাজাযাকিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়া কবুল করুক। আমীন।


372269
১৭ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:২৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আংকেলজ্বি।

ওমরা, ইতেকাফ ও নফল ইবাদতের উপর চম্ৎকার লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

অনেক শ্রমসাধ্য লিখাগুলো মহান রব কবুল করুণ। আমীন।
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:০৪
309149
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ শ্রদ্ধেয়া আন্টিজী।
ওয়া আনতি ফাজাযাকিল্লাহ।
আমার জীবনে এখনো ইতেকাফের সুযোগ হয়নি, অথচ আমার ছোট ভাই, সে প্রায় রামাদানেই ইতেকাফ করে। এখনো সিঙ্গেল তো, তাই সহজ।
কিন্তু বিয়ের পর যেন কঠিন হয়ে যায়।
আপনার দোয়ায় আমীন।

372339
১৮ জুন ২০১৬ রাত ০৪:০৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।

কিতাব শামীর এর এর রেওয়াতের রেফারেন্স দিয়ে দেখলাম মহিলারা নিজ গৃহে ইতিকাফ করতে পারে আবার অন্য স্কলারদের(হানাফি নন) মতামত হলো মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ হবে না । বিষয়টা কিভাবে দেখবো ?

আল্লাহ আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
309151
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ শ্রদ্ধেয়া আপি।

মহিলাদের ইতেকাফ সম্পর্কে মাসয়ালা :
নারীরাও ঘরে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে ইতেকাফ করতে পারে। তবে তার জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হায়েজ ও নেফাস থেকে পাক থাকতে হবে। তারা ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতেকাফ করবেন। এটা মহিলাদের জন্য মসজিদের মতো। অর্থাৎ পানাহার, নিদ্রা সে জায়গায়ই করতে হবে। যদি শারীরিক বা শরয়ি কোনো প্রয়োজন না হয় তবে অত্র স্থান ত্যাগ করলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।

যদি ঘরে শুরু থেকেই নামাজের স্থান নির্দিষ্ট থাকে তাহলে সেখানেই ইতেকাফ করবে। সেখান থেকে সরে অন্যত্র ইতেকাফে বসা জায়েয নেই। যদি আগে থেকে নামাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত না থাকে তবে ইতেকাফের সময় স্থান নির্ধারিত করে নেবে এবং সেখানে ইতেকাফ করবে। ঘর ছেড়ে মসজিদে ইতেকাফ করা মহিলাদের জন্য মাকরুহ। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১১


হানাফিদের পক্ষে এব্যাপারে কোন শরয়ী দলিল আছে কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে বড় বড় কয়েকজন আলেমের কাছে, ইনশা আল্লাহ দু'একদিনের মধ্যে উত্তর পাবো।
তখন এখানে পোষ্ট করবো। Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck

২৫ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:০৯
309739
আবু জান্নাত লিখেছেন : এই ওয়েব সাইট থেকে কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ। এখানে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File