১ম পর্ব-সিয়ামের সাথে সংশ্লিষ্ট আমলসমূহ (সংক্ষিপ্ত পোষ্ট)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৮ জুন, ২০১৬, ০৩:৩৫:৩৮ দুপুর



রামাদানের ফজিলত সম্পর্কে আগের পর্বে আলোচনা করেছিলাম।

আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রামাদানের ফজিলত

এবার রামাদানের আমলগুলোকে সংক্ষেপে ধারাবাহিক পোষ্ট করার ইচ্ছা করেছি, ইনশা আল্লাহ। আজকে প্রথম পর্ব:

১. রোযার নিয়্যাতঃ

রাতেই রোযার নিয়্যাত করতে হবে। সুনান আন-নাসাঈ গ্রন্থে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ لَمْ يُبَيِّتِ الصِّيَامَ مِنَ اللَّيْلِ قَبْلَ الْفَجْرفَلاَ صِيَامَ لَه»

‘‘যে ব্যক্তি ফজর উদয়ের পূর্বে, রাতেই রোযার নিয়্যাত করেনা, তার রোযা হবে না।’’ (সুনান আন-নাসাঈ, হাদীস নং ২৩৩২)

২. দেরী করে সেহেরী খাওয়াঃ

সেহেরী খাওয়া একটি বরকতময় বৈশিষ্ট্য যা আল্লাহ এ উম্মাতকে দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَر»

‘‘আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহেরী খাওয়া।’’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৪)

সেহেরী বরকতময় হওয়ার প্রমাণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী,

«تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِى السُّحُورِ بَرَكَة»

‘‘তোমরা সেহেরী খাও, কেননা সেহেরীতে রয়েছে বরকত।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮২৩ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৩ )

দেরী করে সেহেরী খাওয়ার দলীল হল, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,

«تَسَحَّرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ قُلْتُ كَمْ كَانَ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالسَّحُورِ قَالَ قَدْرُ خَمْسِينَ آيَةً»

‘‘আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহেরী খেয়েছি। অত:পর তিনি নামাযে দাঁড়ালেন।’’ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন জিজ্ঞাসা করলেন, আযান ও সেহেরীর মধ্যে কতটুকু সময়ের পার্থক্য ছিল? যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘‘পঞ্চাশটি আয়াত পরিমাণ।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮২১ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৬ )

৩. তাড়াতাড়ি ইফতার করাঃ

সূর্য অস্ত যাওয়া নিশ্চিত হলে তাড়াতাড়ি ইফতার করা রোযাদারের জন্য মুস্তাহাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ»

‘‘মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের উপর থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অনতিবিলম্বে ইফতার করবে।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৫৬ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৮)

৪. কি দিয়ে ইফতার করবেঃ

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يُفْطِرُ عَلَى رُطَبَاتٍ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّىَ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَعَلَى تَمَرَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ»

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রুতাব’ (শুকনা নয় এমন) খেজুর দিয়ে নামাযের আগে ইফতার করতেন, রুতাব পাওয়া না গেলে শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাও পাওয়া না গেলে তিনি কয়েক ঢোক পানি পানে ইফতার করতেন।’’ (উত্তম সনদে ইমাম আহমাদ, হাদীস নং ১২৬৭৬ ও আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৬)

৫. রোযাদারকে ইফতার করানোঃ

সহীহ সনদে তিরমিযী ও আহমাদ বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ إِلَّا أَنَّهُ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْء»

‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায়, সে উক্ত রোযাদারের সাওয়াবের কোনরূপ ঘাটিত না করেই তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’’ (সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭ ও মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৭০৩৩)

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৫ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371425
০৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৪১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আংকেলজ্বী।
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১১:৩৪
308239
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ শ্রদ্ধেয়া খালামনি।
371427
০৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আংকেলজ্বী।

সংক্ষেপে রোযার ফযিলতগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করেছেন মাশাআল্লাহ। আশাকরি সাবলীল এই লিখাগুলো থেকে অনেকেই উপকৃত হবে।

আপনার নেক নিয়্যতকে শ্রদ্ধা জানাই। লিখতে থাকুন। আংকেলজ্বী।
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১১:৩৬
308240
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ হে শ্রদ্ধেয়া গুরুজীয়া।

আপনার দোয়া ও আন্তরীকতা অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক, আমীন।

371443
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৩১
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু । রোযার ফযিলতগুলো খুবী সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করেছেন,আলহামদুলিল্লাহ্‌ । জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১১:৩৯
308241
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ শ্রদ্ধেয় মিয়াজী ভাই। রোজা সম্পর্কে আপনার থেকে আরো ছড়া কবিতা চাই। সময় করে লিখুন প্লিজ। জাযাকাল্লাহ খাইর।

371446
০৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সংক্ষেপে সিয়াম সাধনার ফযিলত গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত করেছেন মাশ-আল্লাহ। এই লিখাগুলো থেকে অনেকেই উপকৃত হবে। মহান আল্লাহ আপনাকে উভয় জাহানে পরিপূর্ণ কল্যাণ দান করুন। জাযাকুমুল্লাহ।
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১১:৪২
308243
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ আপু। সারগর্ভ মন্তব্যটি উৎসাহ যোগাবে। অনেক অনেক শুকরিয়া আপি। জাযাকিল্লাহ।

371465
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১০:১৬
আফরা লিখেছেন : লিখাটা তো ভালই লাগল কিন্তু সমস্যা হল আমি তো এতদিন পর্যন্ত কখনো রোজার নিয়ত করিনি , আমি জানি ও না নিয়ত কি !! সেহেরী খেলাম এটাই তো নিয়ত জানতাম।


এত কষ্ট করে এত বছর রোজা রাখলাম এখন তাহলে কি হবে !! Crying Crying Crying
০৯ জুন ২০১৬ রাত ১২:৩৪
308252
আবু জান্নাত লিখেছেন : নিয়্যাত মানে মনে মনে সংকল্প করা, মুখে উচ্চারণ বাধ্যতামূলক নয়। করলে করলেন না করলে নেই। তবে অন্তরে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা যে আমি কাল রোজা রাখার জন্য সাহরী খাইতেছি। ব্যাস এতটুকু মনে সংকল্প যথেষ্ট।

রোজা সম্পর্কে আপনার লিখা কোথায়????Crying Crying Crying
371472
০৮ জুন ২০১৬ রাত ১০:৪৪
বিন হারুন লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে এ মেহনতের উত্তম প্রতিদান দিন....আমীন
০৯ জুন ২০১৬ রাত ১২:৩৪
308254
আবু জান্নাত লিখেছেন : আমীন। জাযাকাল্লাহ খাইর।
০৯ জুন ২০১৬ রাত ০১:২২
308274
বিন হারুন লিখেছেন : আ-মীন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File